২৩ ভাদ্র ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
-আট সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হওয়ার, এই উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ সরকারকে রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগ্রামে সহায়তা করে। প্রথম বৈঠকে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তন্মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতায় অবিচল আস্থা জ্ঞাপন, শেখ মুজিবের মুক্তি, ভারত সরকারের সহায় ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতাসহ সরকারের নীতির প্রতি সকলের আস্থাজ্ঞাপন করে।
-কাজী জহিরুল কাইউম কলকাতাস্থ মার্কিনী কস্যুলারের সঙ্গে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থার জন্য বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। আশ্রয়দাতা ভারত সরকার বিষয় টিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে এদিন দ্বিমুখী ধারা সৃষ্টি হয়। (বিশদ বিবরণ সেপ্টেম্বর ৩০ দ্রঃ)
-মুক্তিবাহিনী গেরিলা তৎপরতা অবরুদ্ধ বাংলাদেশের যশোর কুমিল্লা, ফরিদপুরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার কাজে বেশী মনযোগ দেয়া হয়।
-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান চোধুরী এম এন এ, ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কে এম ওবায়দুর রহমান এম এন এ কলকাতাস্থ করাননি ম্যানসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর চালু করেন। সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় কর্মীদের ভীর চলতে থাকে। বিভিন্ন যুবশিবির ও শরণার্থীশিবির থেকে আওয়ামী লীগের জেলা, মহকুমার নেতা ও কর্মীবৃন্দ যোগাযোগ রক্ষা করেছে। শিল্পী কাজী গিয়াসের আঁকা বঙ্গবন্ধুর একটি প্রোষ্টেট ছবি এই প্রধান কার্য্যলয়ে টানানো য়য়। এছাড়া কল্যাণী, বনগাঁও বহরমপুর ও আগরতলায় আওয়ামী লীগের যোগাযোগ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। সর্ব জনাব কাজী হেদায়েত হোসেন, মোল্লা জালাল উদ্দিন, শামসুদ্দিন মোল্লা, আব্দুর রব ছেরনীয়াবাদ, ডঃ আলী উদ্দিন ও আলহাজ জহুর আহাম্মেদ চৌধুরী সংগঠনের তরফ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করেন,
-জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৬ তম অধিবেশনে পাকিস্তান ১৬ সদস্য প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেছে। পিডিপি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী (সিলেট) প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করবেন। আগা-শাহী সহ-নেতা হলেন। বেসরকারী প্রতিনিধি হচ্ছেনঃ বিচারপতি জনাব জাকিউদ্দিন (লাহোর), শাহ আজিজুর রহমান (ঢাকা), জুলমত আলী খান (ঢাকা), কামাল ফারুকী (করাচী), ডঃ বেগম ইনায়েত উল্লাহ, মিসেস রাজিয়া ফায়েজ (খুলনা), ডঃ ফাতেমা সিদ্দিক (ঢাকা বিঃ), এটি সাদি (ঢাঃ হাঃ কোঃ), খোকন বাবার (লাহোর)। অন্যান্য সরকারী প্রতিনিধিগণ। উল্লেখ্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ২১ সেপ্টেম্বর ১ শুরু হয়।
-জেনারেল নিয়াজী মহাদেবপুর (রাজশাহী), পাবনা ও বগুড়া জেলার সীমান্ত এলাকায় শিক্ষারত রাজাকারদের পরিদর্শন করে। মহাদেবপুর ও পাবনায় শান্তি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, আমাদের সন্তানদের হিন্দুদের অধীনে যেতে দেবনা। আমরা আমাদের মা বোনদের তাদের দয়ার উপর ছেড়ে দিব না। ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমনদের মোকাবিলার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য উপদেশ দেন। (দৈঃ পাঃ)
-ঔপনিবেশিক দেশ ও জনগণকে স্বাধীনতাদানের ঘোষণা কার্যকরকরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘ বিশেষ কমিটির সভায় বিশ্বশান্তি পরিষদের ভারতীয় প্রতিনিধি মিঃ ভি কে কৃষ্ণমেনন বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের জন্য কমিটি হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, বাংলাদেহসে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। (সাঃ জঃ বাঃ)
-পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ প্রশ্ন ও বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিশালী লবীকে মোকাবেলা করার জন্য পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলে হামিদুল হক চৌধুরী, মৌলবী ফরিদ আহমদ ও বিচারপতি এ কে এম বাকের, বিচারপতি হামিদুর রহমান, ডঃ সৈয়দ সাজ্জাত হোসেন, এ কিউ এম শফহিকুল ইসলাম, ব্যারিষ্টার আখতার উদ্দিন, আব্দুস সবুর খান ও ফজলুল কাদের চৌধুরী অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানান। (দৈঃপাঃ)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী