শিরোনাম |
সূত্র | তারিখ |
গণতন্ত্রের প্রতীক মিস ফাতেমা জিন্নাহ কে নির্বাচিত করুন | পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী ছাত্র সমাজের প্রচারপত্র | ডিসেম্বর ১৯৬৪ |
আইয়ুবকে পরাজিত করিয়া
গণতন্ত্রের প্রতীক মিস ফাতেমা জিন্নাহ কে নির্বাচিত করুন
নির্বাচনী কলেজের সদস্য ও দেশবাসীর প্রতি ছাত্র সমাজের আহ্বান
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসন্ন :
ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতার বুকের রক্তে যে আইয়ুবশাহীর হাত এখনো রহিয়াছে সিক্তকলঙ্কিত,সেই জুলুমশাহীকে সমুলে নিপাত করিবার দিন আসিয়াছে। আজ দিন আসিয়াছে বিগত ছয় বছরের অত্যাচার-নির্যাতন আর নির্মম শোষণের জবাব দান করিবার।ছয় বছর পূর্বে যে ডিক্টেটর আইয়ুব দেশবাসীকে গোলামীর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়া নিজের একনায়কতন্ত্রকে চিরস্থায়ী করিবার ষড়যন্ত্র করিয়াছিল, যে আইয়ুব দেশবাসীকে গরু-ছাগল আখ্যা দিয়ে নিজেকে“সর্বশ্রেষ্ঠ” রাষ্ট্রপরিচালক ও মহাশক্তিশালী বলিয়া ঘোষণা দিয়েছিল সেই “মহাশক্তিধর” আইয়ুবের পদতলে আজ ভূমি কাঁপিতেছে থরথর।শোষিত-নির্যাতিত পাকিস্তানের আজ ১০ কোটি নরনারী পরাধীনতার শিকল ছিঁড়িয়া জাগিয়া উঠিয়াছে বিসুভিয়াসের মত।জনতার রুদ্র রোষের লেলিহান বহ্নিশিখায় পতঙ্গের মত পুড়িয়া ভস্মীভূত হইবে দোষমন সব , পাপী-তাপী ,অত্যাচারী ,শোষক , শাসকের দল। আজ আসিয়াছে সেই দিন। ঘোষিত হইবে স্বৈরতন্ত্রের পরাজয় আর গণতন্ত্রের মহান বিজয় ।
আগামী ২রা জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়বে। শুধু এই দেশবাসীরই নয়, সমগ্র পৃথিবীর দৃষ্টি আজ এই নির্বাচনের প্রতি নিবন্ধ হইয়াছে।কেননা এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইতেছে গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের প্রশ্নে-স্বাধীনতা ও মুক্তি বনাম গোলামী ও জুলুমবাজের প্রশ্নে। এই নির্বাচনই নির্ধারিতকরবে পাকিস্তানের ইতিহাসের ভবিতসৎ গতিধারা।সুতরাং আসন্ন নির্বাচন অপেক্ষা গুরুত্তপূর্ণ ঘটনা পাকিস্তান বাসীদের নিকট আর কিছুই হয়তে পারে না।কিন্তু জনগনের সুনিশ্চিত বিজয়ের মুখে,ক্ষমতার মোহে অন্ধ জুলুমবাজ আইয়ুবশাহী মরণ কামড় হানিতে পারে। তাই সতর্কতাই জনগনের বিজয়ের গ্যারান্টি ।
নির্বাচনী কলেজের সদস্যদের প্রতি আবেদন :
জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটের অধিকার কাড়িয়া লইয়া তাদেরকে ঠুঁটো জগন্নাথ করা হইয়াছে। আজ আপনাদের ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইবে।আপনারাই আজ জনগণের আশা পূরণের মালিক। দেশবাসী চায় গণতন্ত্র,চায় মিস ফাতেমা জিন্নাহার বিজয়।তাই ফাতেমা জিন্নাহকে জয়যুক্ত করাই আজ আপানদের কর্তব্য।কিন্তু ক্ষমতাসীন চক্র আজ মিথ্যা প্রচারের বাণ ছুটাইয়াছে। আইয়ুব শাহী আপনাদের বিভ্রান্ত করিতেছে যে, মিস জিন্নাহ জয়যুক্ত হলেই বুনিয়াদি গন্ততন্ত্র ভাঙ্গিয়া দেওয়া হইবে।তাহারা পবিত্র ধর্মের নামেও মিথ্যা প্রচার চালাইয়াছে।দেশপ্রেমিক ছাত্র সমাজের উপর ভরসা থাকিলে এইসব মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত না হইয়া উপযুক্ত জবাব দান করুন মিস জিন্নাহকে ভোট দিয়ে। শাসকশ্রেণী আজ আপনাদের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রে নামিয়াছে। ভয়ভীতি, প্রলোভন দেখাইয়া তারা আজ আপনাদের বিপথগামী করিতে চায়। কিন্তু সুনিশ্চিত ভাবে জানিবেন যে, আপনাদের সাথে আছে সংগ্রামী ছাত্র সমাজ আর জাগ্রত দেশবাসী। তাই প্রলভনের ফাঁদে পা না দিয়ে নিঃসঙ্কুচে নিজের দায়িত্ব পালন করুন-মিস জিন্নাহকে জয়যুক্ত করুন। এই মহান কর্তব্য পালনে সফল হইলে ইতিহাসে আপনারা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকিবেন, সন্দেহ না। কিন্তু এই কর্তব্য পালনে অবহেলা করিলে, কিংবা দেশবাসীর সহিত বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করিলে ইতিহাস প্রতিশোধ গ্রহন করিতে ভুলিবে না। ক্ষমা করিবে না পূর্ব পাকিস্তানের বিপ্লবী ছাত্রসমাজ। আর জবাব দিতেই হইবে সেদিন জনতার দরবারে। আমরা সুনিশ্চিত ভাবে গভীর আত্মবিশ্বাসের সহিত ঘোষণা করিতেছে-আইয়ুবশাহীর উচ্ছেদ হইবেই হইবে। আপনাদের কাছে আবেদন, এই ঐতিহাসিক কর্তব্য পালনে আপনারা অকুতোভয়ে সামিল হোন ।
দেশবাসীর প্রতি আবেদন :
সর্বশ্রেণীর জনসাধারণ বিশেষ করে কৃষকসমাজের প্রতি আমাদের বিশেষ আবেদন, শোষকদের উচ্ছেদের জন্য সর্বশক্তি নিযুক্ত করুন। গত ছয় বছর ধরে জনসাধারণের ও বিশেষ করে কৃষক সমাজের চরম সর্বনাশ সাধন করিয়াছে এই আইয়ুব সরকার। কৃষি পণ্যের মূল্য কমিয়াছে আর মূল্য বাড়িয়াছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির। খাজনা, ট্যাক্স বাড়িয়াছে বহুগুণ। ধনিকের ধন বাড়িয়াছে, গরীব হইয়াছে আরও নিঃস্ব। তাহার উপর চলিয়াছে অত্যাচার, জুলুম-জবরদস্তি। আজ তাই এই অত্যাচারী শোষকদের পরাজিত করিবার জন্য সর্ব শ্রেণীর মানুষদের সর্ব শক্তি দিয়েই চালাইতে হইবে প্রচেষ্টা ।কেবলমাত্র বুনিয়াদী গণতন্ত্রীদের ভোট দিয়ে বসিয়া থাকিলেই চলবে না। কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত সকল শ্রেণীর মানুষদেরই ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত ভাবে এগিয়ে আসতে হবে নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্যেই। নিজ প্রচেষ্টা দ্বারাই করিতে হইবে ভাগ্যের পরিবর্তন। মরিবার পূর্বেও আইয়ুবশাহী জনগণের বিরুদ্ধে সর্বনাশা ষড়যন্ত্র আঁটিতেছে। আইয়ুবের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করিয়ে মিস জিন্নাহকে জয়যুক্ত করিতেই হইবে। ইহাই আমাদের বাঁচিবার পথ। তাই আসুন আজ সকলে মিলিয়া নির্দিষ্ট কর্মসূচী অনুযায়ী কাজ করিয়ে মিস জিন্নাহর বিজয়কে সুনিশ্চিত করিয়া তুলি। আসুন আজ বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা করি, শোষণের দিন শেষ, দিন শেষ জুলুমবাজির।
ছাত্র সমাজের কর্তব্য :
ছাত্রসমাজ আজ দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করিতেছে, গ্রহন করিতেছে বলিষ্ঠ শপথ। গণতন্ত্রের প্রতীক ফাতেমা জিন্নাহকে জয়ী করিবই করিব। এই শপথ রক্ষা করিবার জন্য আজ প্রতি ছাত্রকে চারণের বেশে ছড়াইয়া পড়িতে হইবে গ্রাম বাংলার পথে পথে। হাটে-মাঠে-ঘাটে, শহরে-বন্দরে সর্বত্রই চালাইতে হইবে প্রচার। ছাত্র সমাজকে যাইতে হইবে জনতাকে সংঘবদ্ধ করিবার কাজে। নির্বাচনী কলেজের প্রতিটি সদস্যের নিকট পৌঁছাইতে হইবে দেশবাসীর ম্যান্ডেট: “ফাতেমা জিন্নাহকে ভোট দাও, পালন কর দায়িত্ব”। যেকোন মূল্যেই আজ উচ্ছেদ করিতে হইবে আইয়ুবশাহকে। এই আইয়ুবশাহীর উচ্ছেদের জন্যই গত তিন বছর ধরে শত নির্যাতনের মুখে বুলেটের সামনে বুক পাতিয়া, বেয়নেটের নিচে দাঁড়াইয়া আমরা ছাত্র সমাজ নির্ভীকভাবে চালাইয়াছি সংগ্রাম। আইয়ুবশাহী বুলেটের নাম জানা-অজানা শহীদদের অতৃপ্ত আত্মা আজ দিয়েছে আমাদের কানে কানে ডাক। ডাক দিতেছে অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠ হতে বন্দী ভাইয়েরা। আজ আসিয়াছে দেশের ডাক, মায়ের ডাক। এই ডাকে আমরা সাড়া দিবই। উচ্ছেদ করিবই স্বৈরাচারী শাসকদের। তাই প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে পালন করিতে হইবে নিন্মের কর্মসূচী। ইহাই ছাত্র সমাজের কর্তব্য।
কর্মসূচী:
০ সকল ইউনিয়ন এবং সম্ভব হইলে সকল ইউনিটে ‘ফাতেমা জিন্নাহ নির্বাচনী’ কমিটি গঠন। রাজনৈতিক, অরাজনইতিক, ছাত্র, যুবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে ইহা গঠন করা।
০ সকল ইউনিটে অথবা আঞ্চলিক ভিত্তিতে জনসভা করিয়া নির্বাচনী কলেজের প্রতিটি সদস্যের উপর মিস জিন্নাহার সমর্থনে ম্যান্ডেট প্রদান ও শপথ গ্রহন।
০ শহরে-গ্রামে-গাঁয়ে-গঞ্জে সর্বত্র প্রচার, জনসভা,পথসভা, ছোট ও বড় মিছিল অনুষ্ঠান।
০ ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রের নির্বাচনী কলেজের সদস্যদের উপস্থিত করা ও ক্ষমতাসীনদের কব্জা হইতে তাহাদের রক্ষা করা।
০ ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রের নিষিদ্ধ সীমার বাহিরে হাজার হাজার গণজামায়েতের ব্যবস্থা।
০ শত্রু পক্ষের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করিবার জন্য সর্বসময়ে প্রয়োজনীয় তৎপরতা।
০ মিস জিন্নাহর নির্বাচনী তহবিলে অর্থ প্রদান ও অর্থ সংগ্রহ ।
পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী ছাত্র সমাজ
ঢাকা