You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.23 | ৬ ভাদ্র, ১৩৭৮ সোমবার, ২৩ আগষ্ট ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৬ ভাদ্র, ১৩৭৮ সোমবার, ২৩ আগষ্ট ১৯৭১ 

৭ নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর নাজমুল হক এখানে বেশ ক’বার পাকসেনাদের উপর হামলা পরিচালনা করেন। এদিন ক্যাপ্টেন ইদ্রিস এবং সুবেদার মেজর মজিদ যৌথভাবে কানমার্টে পাকসেনাদের ওপর হামলা চালায়। প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর মুক্তি যোদ্ধারা কানমার্ট দখল করেন। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্য কানমার্ট আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু হটে যায়। উল্লেখ্য, ১৪ আগষ্ট থেকে পাকসেনাদের কানসার্ট অবস্থানের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা মর্টার শেলিং অব্যাহত রেখেছিল।

  অবরুদ্ধ ঢাকা মহানগরীর এ দিনের সংবাদপত্রের সংবাদ সম্বন্ধে আবু জাফর শামসুদ্দিন লিখেছেন, ‘পাকিস্তানী পররাষ্ট্র বিভাগের স্থায়ী সেক্রেটারী  সুলতান আহমদ তেহরান মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ পাকিস্তানী  কূটনীতিবিদদের নিয়ে যে বৈঠক করেছেরন তা চলছে। আলোচ্য বিষয় বাংলাদেশ সমস্যা এবং পাকভারত সমস্যা। মনে হয়, ইরানের শাহের পশ্চাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়াও থাকতে পারে— তার প্রমাণ বাংলাদেশ সরকারের তরফ হতে প্রদত্ত বিবৃতি। আবু সাঈদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদান, শেখ মুজিবের বিনাশর্তে মুক্তি এবং পূর্ববঙ্গ হতে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণরূপে অপসারণ— এই শর্তদ্বয় পূরনের পূর্বে কোনো কথাবার্তা চলতে পারে না। ইতিপূর্বে মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব রজার্স শেখ মুজিবের বিচারে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শোনা যায়, দ্বিতীয় একটি বার্তায় নাকি মিঃ রজার্স শেখ মুজিবের বিচারের ব্যাপারে পাকিস্তানকে সাবধান করে দিয়েছেন এবং মুজিবের  কিছু ঘটলে তার গুরুতর পরিণতির বিষয়ে ইয়াহিয়া সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়েছেন। ভয়েস অব আমেরিকা বলেছেন, শেখ মুজিবই আপসের একমাত্র সূত্র। অষ্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বৃটিশ কমনওয়েলভুক্ত রাষ্ট্র বেনামীতে মার্কিন বক্তব্যই প্রকাশ করেছেন। ( আত্নস্মৃতিঃ পৃঃ ২৮৮-৮৯)

  লন্ডনে পিডিপি নেতা মাহমুদ আলী এদিন বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর কর্মকান্ডের সাফাই গেয়ে এক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলছি পত্র-পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয়েছে পরিস্থিতি ঠিক তার বিপরীত। উল্লেখ্য, এসময়ে লন্ডনে বাঙ্গালী নিধনের স্বপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী প্রচারণা কাজে নিয়জিত ছিলেন মাহমুদ আলী, জামির উদ্দিন আলী, ব্যারিষ্টার আব্বাস, বেগম আখতার সোলায়মান প্রমুখ। এদিন ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় জনৈক আবুল হায়াতের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিরোধী কতিপয় যুক্তিসহ একটি পত্র প্রকাশিত হয়।

পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কর্মরত বাঙ্গালী ফ্লাইট লেঃমতিউর রহমান ২০ আগষ্ট মশরুর বিমান ঘাঁটি থেকে টি-৩৩ বিমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য যাত্রা করেন। ৪০ মাইল চলার পর সহযাত্রী পাইলট অফিসার রশিদ মিনহাজ লেঃ মতিউরের অভিপ্রায় বুঝতে পারে। ৭ মিনিট বিমান নিয়ন্ত্রন নিয়ে ধস্তাধস্তীর পরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমানকে মরণোত্তর ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ সম্মানে ভূষিত করেন।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী