১৭ শ্রাবণ, ১৩ মঙ্গলবার, ৩ আগষ্ট ১৯৭১
-জেড ফোর্সের ৮ম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রেভো ও ডেল্টা এই দুই কোম্পানী যোদ্ধা নিয়ে ক্যাপ্টেন আমিন আহমদ চৌধুরী (মেজর জেনারেল বীর বিক্রম) এদিন নকশী বর্ডার আউন পোষ্ট আক্রমণ করেন। সুবেদের হাকিমের সহয়তায় এই আক্রমণ মুক্তিবাহিনী অর্জন করে বিপুল সাফল্য। দুঃসাহসিক এই যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা। আর মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব সাহসী ভূমিকা নিয়েছিলেন হাবিলদার তাহের। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জেড ফোর্সের কামালপুর যুদ্ধ, বাহাদুরবাদ আক্রমণ ও নকসী সংঘর্ষ বাঙালী সৈনিকদের প্রবল সাহসিকতার ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ দিনের সম্মুখযুদ্ধে বীরমুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আলিম আহমেদ চৌধুরী আহত হন।
-গ্রুপ ক্যাপ্টেন খন্দকার এবং কর্নেল রব ১ নম্বর সেক্টর পরিদর্শন করেন। তাঁরা এই সেক্টরের বিভিন্ন বিষয়ে মত বিনিময় করেন।
-সিলেট জেলার মেরাসনি এবং কলাছড়া চা বাগানে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ১ জন শত্রুসেনা হত্যা এবং ৩ জনকে আহত করে। রাজপুরে উড়িয়ে দেয়া হয় রেললাইন। লাতুমুরা, চাঁদনিয়ার শত্রু অবস্থানের ওপর আঘাত হেনে হত্যা করা হয় ১৯ জন শত্রুসেনা। অন্য হামলায় চৌদ্দগ্রাম ও মিয়ারবাজারে রাস্তায় টহলরত শত্রুসেনা ওপর আক্রমণ চালিয়ে ৪ জনকে খতম করা হয়। আহত অনেকে।
-ক্যাপ্টেন রশিদ এদিন আক্রমণ করেন তাহেরপুরের পাকিস্তানী ঘাঁটি। সীমান্ত থেকে ২৫ মাইল ভেতরে পুটিয়া থানার ঝলমলিয়া ব্রিজে হাবিলদার শফিকুর রহমানের দলের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। অক্ষত অবস্থায় মুক্তিবাহিনী ফিরে আসে। সাতকানিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন কুখ্যাত পাকিস্তানী দালাল। এদিন তাকে মুক্তিবাহিনী হত্যা করে।
-পাক সরকার ১২ আগষ্ট এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দেয়। শান্তি ও কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মৌলভী ফরিদ আহমদ এইচ এসসি পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের অংশ নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘কুচক্রীদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সফলতার সঙ্গে এসএসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুশমনয়া বর্তমানে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের জন্যে গুজব ছড়াচ্ছে। তিনি এসব গুজব রটনাকারীদের ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেয়াড় নির্দেশ দেন।
-বদর বাহিনী ও ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান মতিউর রহমান নিজামী চট্টগ্রামে ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের প্রতি উস্কানীমূলক বক্তব্য রাখেন। এতে রাও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা আবু নাসের ও মীর কাসেম আলী। (সংগ্রাম)
-এদিন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত (এনই-১৪৫ নোয়াখালী-১) (ছাগলনাইয়া পরশুরাম আসন) এমএনএ ওবায়েদ উল্লাহ মজুমদার ভারত থেকে পালিয়ে এসে পাকিস্তানী সামরিক সরকারের কাজে মতৈক জানায়।
এদিন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া খান অধুনা বিলুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবের বিচারের কথা ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, শেখ মুজিবকে দেশদ্রোহিয়ার অপরাধে আটক করা হয়েছে এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে তার বিচার করা হবে । (দি ডন)
-শ্রমিক ও রক্ষণশীল দলভুক্ত বেশ কয়েকজন প্রাক্তন মন্ত্রী ও বহু পার্লামেন্ট সদস্য এদিন শেখ মুজিবের মুক্তির দাবী সম্বলিত একটি প্রস্তাব বৃটিশ পার্লামেন্টে পেশ করেন। উল্লেখ্য, ১৫ জুন বৃটিশ পার্লামেন্টে পূর্ব বাংলায় গণহত্যা বন্ধ করার দাবী জানিয়ে সর্ব্জনাব জন ষ্টোণ হাউস, আর্নেষ্ট মারপলস, মাইকেল ষ্টুয়ার্ড, পিটার শোর ও এডওয়ার্ড দু,ক্যান প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। ঐ দিনের প্রস্তাবে ৩৫০ জন সাংসদ প্রস্তবটি সমর্থন করবেন বলে ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় এক সংবাদপ্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য বৃটিশ পার্লামেন্টের ২৫০ জন সাংসদ শেখ মুজিবুর সম্বলিত প্রস্তাব সমর্থন করেছিলেন।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী