২৯ শ্রাবণ, ১৩৭৮ রোববার, ১৫ আগষ্ট ১৯৭১
-জাতিসংঘের মহাসচিব উত্থান্ট এ দিন শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারে উদ্ধেগ প্রকাশ করে বার্তা পাঠালেন পাকিস্তানী সরকারের কাছে। পাকিস্তান সরকার মহাসচিব উত্থান্টের বিবৃতির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিব দেশ ও জাতির শত্রু। তার বিচার সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। শেখ মুজিবের বিচারে নাক গলিয়ে জাতিসংঘ তার সীমা ছাড়িয়া গেছে। এ দিনের পাকিস্তান সরকারের প্রতিবাদ নোটে বলা হয়ঃ Pakistan Government declared that this statement “exceeds both the bounds of humanitarian concern and the competence of the UN” and that it could not accept the proposition that any judicial decision of the individual case of Sheikh Mujibur Rahman will have any repercussions, unless Pakistan’s hostile neighbour India is encouraged to make them so” (KCA, p-24955)
-ভারতীয়নৌবাহিনীরসহযোগিতায়ব্যাপক পরিকল্পনা পর মুক্তিবাহিনীর এরিলারা দুঃসাহসিক আক্রমণ চালিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে সমরসরঞ্জাম ভর্তি দুটো জাহাজ ‘ এম ভি আল আব্বাস’, এম ভি হরমুজ, আর-ওরিয়েন্ট বার্জে বিস্ফোরোণ ঘটিয়ে ২০৫৯৬ টন যুদ্ধোপকরণ বিনষ্ট করে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো অনেক জাহাজ, নৌযান। এর সাংকেতিক নাম অপারেশন জ্যাকপট। জ্যাকপটের মূল পরিকল্পনা ছিলেন মেজর রফিক-উল-ইসলাম, বীরোত্তম আর ভারতীয় বাহিনীর ব্রিগ্রেডিয়ার সাবেক সিং। মাত্র ৬০ জন নৌ-মুক্তিযোদ্ধা লিমপেট মাইনের সাহায্যে শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। আতংক ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানী বাহিনীর মধ্যে। উল্লেখ্য, পরের দিনগুলোতে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরসহ বিভিন্ন নদীরবন্দরের ওপর বারবার নৌ-কমান্ডো হামলায় ৪৫ টি জাহাজ ডুবে যায়। ফলে, চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অকজো হয়ে পড়ে। নৌ-কমান্ডোদের হামলার ফলে বন্দরগুলোর আশাপাশের বসতি এলাকা জুড়ে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংশ বর্বরতা শুরু হয়। যাহোক, নৌ কমান্ডো বাহিনীর এই সাফাল্য মুক্তিযুদ্ধে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। রাজাকার বাহিনীড় অনেকে এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যে এগিয়ে আসে। (লেখক)।
এরাতে আক্রমণ চালিয়ে ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সড়কে দাউদকান্দি ফেরীঘাটের সমূহ ক্ষতিসাধন করেছেন মুক্তি সেনারা। ৮টি জাহাজ বহনকারী ফেরী, ষ্টিমারঘাট, জেটি, পলটুন, পুরোপুরি ধ্বংস হয়। নষ্ট হয়ে যায় জালানি আধার, অন্যান্য অনেক কিছু। সিলেট জেলার সুনামগঞ্জে ১টি কার্গো লঞ্চ, মোটরলঞ্চ, মোটর টাগ ৪ টি, সিমেন্ট ও গম ভর্তি বার্জ, ৩০০০ মণ গম, ২৫০০ মণ চাল, বৈদ্যুদিক সরঞ্জাম হস্তগত করে মুক্তিযোদ্ধারা। (স্বাঃ যুঃ দঃ)।
-ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং ইন্দোনেশিয়া সফর শেষে প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে উল্লেখ করা হয় যে, দু’ দেশই মনে করেন যে, শরণার্থীদের তাদের নিজের দেশে ফিরে যাবার মত একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া বাঞ্ছনীয়। (বিডি-২ পৃঃ ১৫৮)
-এদিন সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা” পত্রিকায় ঢাকার চারুকলা ইনসিটিউটের ছাত্র কাজী গিয়াস উদ্দীনের ‘জয় বাংলা” সাপ্তাহিকীর জন্য আঁকা ‘বঙ্গবন্ধুর পোট্রেট’ ছাপা হয়। কাজী গিয়াস আরো কয়েকটি প্রচার পুস্তিকার কভার-শিল্প ছিলেন, তন্মধ্যে সিকান্দার আবু জাফর প্রণীত অভিযোগ উল্লেখ্যযোগ্য। (ডঃ কাজী গিয়াস বর্তমানে জাপানে প্রবাসী, ‘বাংলাদেশের প্রথম পিএইচডি)।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী