শিরোনাম |
সূত্র | তারিখ |
আইয়ুবের অভিযোগের জবাবে আজম খানের চিঠি | আজম খানের কাগজপত্র | ১৬ই জুন,
১৯৬২ |
আরইজিডি/এ.ডি.
(মূল অনুলিপি)
ব্যক্তিগত/গোপনীয়
লাহোর ক্যান্টনমেন্ট
১৬ই জুন, ১৯৬২।
নংঃ– এমএকে/এক্স/পি.
প্রাপক,
ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান.এন.পিকে., এইচ.জে.,
রাষ্ট্রপতি-পাকিস্থান,
রাওয়ালপিন্ডি।
জনাব,
আমি আপনার ৭ই জুন, ১৯৬২ তারিখে চিঠি-নং – ৩৭৪-পিএপি/৬২’র বিষয়বস্তু নিয়ে অত্যন্ত বিস্মিত ও ব্যথিত। এই নিয়ে কিছু বলার আগে আমি আপনাকেআপনার ১২ই এপ্রিল, ১৯৬২ সাল তারিখের চিঠির কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, যেখানে আপনি উল্লেখ করেছিলেন-
“দুঃখজনকভাবে আমার পদত্যাগ পত্র গ্রহণের সময় আপনি বারংবার আমার চমৎকারকাজেরপ্রশংসাকরেছিলেনএবংবলাহয়েছিলযেকোনবৈধপদ্ধতিতেআমাকেসহায়তাকরারপাশাপাশিতুমিআমারপ্রতিসর্বোচ্চশ্রদ্ধাপোষণকর।“
আমি তা আমার কাজের প্রতি আপনার আন্তরিক প্রশংসা মনে করেছিলাম- বুঝতে পারিনি যে আপনি আমার সাথে রাজনীতিরচাল দিয়েছেন। আমি এখন বুঝতে পারলাম যে আপনার ৬ই জুন, ১৯৬২ সালের চিঠিতে আপনি যা বলেছিলেন তা আসলে বুঝাতে চাননি এবং আপনার অসন্তোষ প্রকাশ হতে বিরত রেখেছিলে যাতে আমি তৎক্ষণাৎ প্রদেশ না ছাড়ি এবং এইভাবে আমাকে ব্যবহার করেছিলে যাতে আমি আপনাকে আপনার নির্বাচনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার সুযোগ হতে বঞ্চিত না করি। এখন আপনি পূর্ব পাকিস্তানে আমার কাজের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ নিয়ে এসেছেন, এই উদ্দেশ্যে আপনি যা বলেছেন ‘সরাসরি রেকর্ড রেখে, আমি মনে করি, আমি নিজের প্রতি সৎ এবং জনতার প্রতি সরাসরি কিছু কথা বলা এবং তা সম্পূর্ণ করার জন্য, আপনাকে আমার প্রত্যুত্তর রেকর্ড করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।‘
আমি সম্পূর্ণরূপে বুঝতে অক্ষম কেন আপনি মনে করেছিলে যে আমার ত্রুটি আছে যা আরোপিত নয়, আপনি আমাকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হিসেবে নিযুক্ত হতে জোর করেছিলেন, টানা দুই বছর তা করেছিলেন এবং যখন আমি আমার পদত্যাগকরেছিলাম, আমার পদত্যাগ পত্র গ্রহণের পরিবর্তে আমাকে বোঝানোর জন্য জেনারেল বুরকিকে পাঠিয়েছিলেন যাতে আমি থাকি এবং গভর্নর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া নিয়ে আপনিআপনার সর্বোচ্চটুকু দিয়েই আমাকে বুঝিয়ে নিরস্ত করেছিলেন।এই বিষয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায় যে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে কোনপ্রকার বলপ্রয়োগ করা হয়নি এবং ৭ই জুন, ১৯৬২ সাল তারিখে আপনার চিঠিটি নিঃসন্দেহে পরিষ্কার চিন্তার ফসল। যাই হোক,আপনার প্রতিটি বিষয় আমি আলাদাভাবে দেখবো।
আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত প্রথম বিষয়, যা-
“অর্থনৈতিক নিয়মকানুন ও সম্পদ বন্ঠন সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নেই, আপনি যখন কোন প্রকল্প হাতে নেন তখন আপনার এমন আকাঙ্খা থাকে যে যদি প্রয়োজন হয় তবে সমস্ত ক্রিয়াকলাপের মূল্য দিয়ে হলেও আপনার প্রকল্পের প্রতি পুরো দেশের সম্পদ অপসারিত হবে”
“জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে আপনি কোন দাবীতে কখনই ‘না’ না বলার যুক্তি নির্ধারণ করেছেন, উপরন্তু সেই দাবী অসম্ভব বা প্রকাশ্যে অযৌক্তিক হতে পারে, একইভাবে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার কৃতিত্ব এবং কোন কিছু বাতিল করতে হলে তার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেন। সহ্য করার নুন্যতম সীমানা আপনি গ্রহণ করেছেন।”
পর্যাপ্ত সময় ছাড়াই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আমাকে তাদের অসম্ভব ও প্রকাশ্যে অযৌক্তিক দাবী মেনে নেওয়ার মধ্যে নিয়ে যায়, যার জন্য, তোমার বিবৃতানুযায়ী,কেন্দ্রের দিকে সকল দোষ চাপিয়ে দেওয়াকালীন আমি এসবের সকল কৃতিত্ব গ্রহণে থাকবো।তাছাড়া অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন বর্জনের এমন কোন পর্যায়ে আমি নেই যে একটি নির্দিষ্টি প্রকল্পের জন্য দেশের পুরো সম্পদ অপসারণের আকাঙ্খা পোষণ করবো।কেউ যদি এমনতরো গল্প তোমাকে বিশ্বাস করাতে চেষ্ঠা করে তবে তা নিছক হিংসাএবং তা তোমার যৌক্তিক বিচারবুদ্ধিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার জন্যই। তুমি নিজেই সকল প্রকল্প ও প্রাদেশিক চাহিদা বাস্তবায়নে তহবিলের সুবিবেচনা, অনুমোদন ও বরাদ্দে অনুসৃতি নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছো।কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী আমার দায়িত্ব ছিল প্রাদেশিক শোষন ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুমোদন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ প্রকল্পের বিন্যাস করা তুলে ধরা।কেন্দ্র যদি একবার বার্ষিক বন্টন নির্ধারণ করে তবে প্রদেশ দ্বারা অন্য কোন দাবী তোলার সুযোগ থাকে না এবং একই সাথে কেন্দ্র প্রদেশের জন্য করা বন্টনের অঙ্গীকার পরিবর্তন করতে পারবে না।এখানে সন্দেহ নেই যে গর্ভনরের সম্মেলনে আমাদেরঅনুমোদন নিয়ে কেন্দ্রী আর্থিক পরিষদ ও অন্যান্য সংস্তার সাথে আমাদের কঠিন লড়াই হয় যা ছিল স্বাভাবিক ছিল এবং তা অভিযোগ হিসেবে না এনে সেরা উদ্দীপনা হিসেবে দেখা উচিত ছিল।
আমার পদত্যাগ সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় উত্থাপিত হয় যখন আমাকে আপনি গভর্ণর হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে যেতে অনুরোধ করেছিলে। এই বিষয়টি পুরোপুরিভাবে বেশ কয়েকবার আলোচনা করা হয়। এছাড়াও আমার চিঠি বা পদত্যাগ পত্রে আপনার চিঠির তৃতীয় অনুচ্ছেদের বক্তব্যের সম্পূর্ণ উত্তর হিসেবে লিখিত আছে যা আলোচনাধীন।আপনার স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে, আমি সেই পদত্যাগপত্রের একটি অনুলিপি এই সাথে সংযুক্ত করছি। আপনার সেই বক্তব্য, পূর্ব পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে চলে যাওয়ার জন্য আমাকে প্রায় বাধ্য করেছিলেন যা আমাকে বিস্মিত করেছে।এটা শুধুমাত্র তারপরেই ছিল যখন আপনি জেনারেল বুরকিকে বলতে পাঠিয়েছিলে, আপনার মেজাজ হারিয়ে ফেলা এবং পূর্ব বাংলায় যাওয়ার ব্যাপারে আমি ভীত এমন অভিযোগের জন্য আপনি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে আসছেন,যদিও আমি আপনার জন্য অপেক্ষা না করেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম।আমি তা করেছিলাম আপনাকে বিব্রতকর অবস্তা হতে বাঁচাতে এবং এটাও প্রমাণ করতে যে আমি পূর্ব পাকিস্তানে যেতে ভীত ছিলাম না যদিও কেন্দ্রে আমার কাজ এবং বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন ছিল অসম্পূর্ণএবং সেই সময় আমার চলে যাওয়া ছিল মানুষের জন্য ক্ষতিকর যা আমি আমার ১৪ই এপ্রিল’৬০ তারিখের পদত্যাগ পত্রে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছি। চলে যাওয়ার জন্য কেউ আমাকে বাধ্য করেনি। প্রকৃতপক্ষে, আপনি জানতেই না যে ঢাকার উদ্দেশ্যে আমি রওনা দিয়ে ফেলেছি এবং না আপনার মাধ্যমে বিশেষ কোন উড়োজাহাজের ব্যবস্তা করা হয়েছে। যাতে সেখানে সঠিক সময় পৌঁছাতে পারি, এই জন্য সেই কালবৈশাখীর সময়েও একমাত্র উপায় একটি ছোট উড়োজাহাজে করে আমাকে ১২ ঘন্টার মতো রাত্রকালীন আকাশভ্রমণ করতে হয়েছিল।এটা অত্যন্ত অন্যায় যে আপনি সেই ঘটনাকেই আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন যেখানে আমি আপনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর আমার কাজ নিয়ে আমার সম্পর্কে সম্পর্কে সুবিবেচক হিসেবে মন্তব্য করেছো।
আমার বিরুদ্ধে আরো একটিবিষয় উত্থাপন, যা-
“আপনি কেন্দ্রের প্রতিনিধি ছিলেন। প্রতিনিধির জনপ্রিয়তা বলতে সদরের প্রতি জনপ্রিয়তাকে বোঝানো উচিত। আপনার পরিচালনা, তৎসত্ত্বেও, প্রায়ই বিপরীত ফলাফল আনছিল। এটা পূর্বপাকিস্তানের জনগণের মধ্যে এমন প্রভাব ফেলেছিল যে, কোন কিছু পেতে অনাগ্রহী ও সমবেদনাহীন কেন্দ্রের প্রতি ক্রমাগত যুদ্ধের দিকে ধাবিত করছিল।একবারের জন্যেও আপনি উল্লেখ করেন নি যে আপনার প্রকৃত আবেগ পূর্ব পাকিস্তানের উন্নতির মধ্যে এবং তা ত্বরাণ্বিত করার জন্য এবং এর জন্য আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন। একবারের জন্যেও আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে, বৈদেশিক পুঁজি সংগ্রহে আমাদের যে পরিমাণ সংগ্রাম করতে হয়, কোন একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পে বা জাতীয় ভিত্তিক সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্যান্য দেশের তাদের আরোপিত অনুদান ও ঋনের সীমাবদ্ধতা তা তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেননি।আপনি বলেন ‘পরম বিশ্বস্ততা ও একনিষ্ঠতা’র সাথে আপনি কাজ করেছেন। আমি এটা সংশোধন করতে পারি এই বলে যে আপনি ‘চরম শক্তি ও উদ্দীপনা’র সাথে কাজ করেছেন। আমি ভীত যে,‘পরম বিশ্বস্ততা ও একনিষ্ঠতা’কে মহৎউদ্দেশ্যেরবদলেব্যক্তিগতজনপ্রিয়তারকাছেবলিদেওয়াহয়। ফলাফল ছিল অনিবার্য। আপনার এইভাবে অগ্রসর হওয়ার অন্তর্নিহিত বিপদ সম্পর্কে আপনাকে আমি বারংবার সতর্ক করেছিলাম।পাকিস্তান-বিরোধী মতালম্বীরা দ্রুতই এই অবস্তাকে কাজে লাগিয়েছে এবং তাদের কার্যক্রম দ্বারা জাতীয় স্বার্থকে বিপন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানে শাসন মুক্ত করার দাবী গঠন করেছে।এই ঘটনার পরে আপনি আইন শৃঙ্খলার সাথে জড়িত বিতর্কিত বিষয়গুলো এড়ানো শুরু করেন।“
আপনার সকল নীতি আমার দ্বারাই অভিক্ষিপ্ত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু যখনই আপনার চিন্তাধারার সাথে আমি আন্তরিকভাবেই অসম্মত হয়েছি তা অকপটে এবং সম্পূর্ণরূপে জানাতে দ্বিধাগ্রস্ত হইনি।সর্বত্রই আমার প্রচেষ্টা ছিল মানুষের এবং দেশের স্বার্থে এবং নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির জন্য নয়।এটা সন্দেহাতীতভাবে সকলের মনে সম্পূর্ণই স্পষ্ট যে, পাকিস্তানের উভয়স্তানে আমার করা সকল কাজের কৃতিত্ব সরকার ও আপনার কাছে চলে গিয়েছে।এটা এমন জরুরী ছিলো না যে আমার পথ থেকে সরে গিয়ে আপনাকে তোষামোদ করতে হবে, সত্যি হচ্ছে, আমি চাটুকারীতায় যাই না যা তুমি ব্যক্তিগতভাবে জানো এবং আপনাকে তা বারংবার বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। আপনি যদি এই নীতিতে অসন্তুষ্টও হোন,তবে এ নিয়ে আমার মন বিরক্ত হবে না যেখানে আমি তাই করেছি যা সৃষ্টিকর্তা এবং দেশ আমি করবো বলে আশা করে।
আমার ‘পরমবিশ্বস্ততাওএকনিষ্ঠতা’ নিয়েআপনারতথাকথিতমন্তব্যেআমিকোনযুক্তিদেখতেপাচ্ছিনা।যখন আপনি সি-ইন-সি কমান্ড হিসেবে আপনার মেয়াদ তিন দফায় বাড়িয়েছেন,যদিও এটা সেনাবাহিনীর প্রথা বিরোধী ছিলো এবং পদোন্নতির সম্ভাবনা যথেষ্ট পক্ষপাতদুষ্ট ছিল, আমি নিস্কৃতির জন্য আবেদন করিনি কিন্তু ব্যক্তিগত সুবিধার বদলে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য পরম বিশ্বস্ততা ও একনিষ্ঠতার সাথে একই রকম উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে সেবা অব্যাহত রেখেছি।
আমি এও আশা করি যে আপনি ভুলে যান নি ১৯৫৮ সালে যখন আমার জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে এবং আমার আর্মি কর্মজীবন জলাঞ্জলী দিয়ে দেশের এবং জাতীর স্বার্থে আমাকে বিপ্লবের মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।আবার সশস্ত্র বাহিনীতে আমার স্থায়ী কমিশন বঞ্চিত করে যখন ১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমাকে সময়ের আগেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান তখন আর্মি নিয়মকানুনাযায়ী আমি দীর্ঘমেয়াদের জন্য সম্পূর্ণ উপযুক্ত ছিলাম।আপনার কাজে আমি প্রশ্ন করিনি বরং আমরা যখন খুবই দূর্বল সময় পার করছিলাম তখন জাতিকে ভোগ করতে হবে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরী না করে ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকার করে নিয়েছিলাম।দুর্ভাগ্যবশত আপনি সব সময়ই আপনার কল্পিত আশঙ্কা হতে পরমার্শ নিতেন বলে মনে হতো। যদিও আমি পদত্যাগ করেছি, তবুও আমার জনপ্রিয়তা আপনাকে তাড়া দেয় বলে মনে হচ্ছে।আপনার চিঠির বিষয়বস্তু বিচারে
আমি মানতে বাধ্য হয়েছি যে ১৯৬২ সালের ১৪ইমে তারিখে পাকিস্তান টাইমসে ‘ফারুকের উপর টাস্ক’শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশিত এবং পরবর্তীতে সম্পাদকের বিকৃত ও বিতর্কিত সকল কথা অনুপ্রাণিত ছিল।
দু’বারই আমার পদত্যাগের মূল বিষয়কে পাল্টে দেওয়াতে আপনি এতোটাই অখেলোয়াড়সুলভ ছিলেন যে যা একজন পুরনো সৈনিক ও কমরেড হিসেবে জানতে পেরে আমার কাছে চরমতম ধাক্কা ছিল।আমার উভয় পদত্যাগপত্র থেকে পরিষ্কারভাবে এই বিষয়গুলোই বাইরে আনা হয়েছে।উভয় ক্ষেত্রেই আপনি জেনারেল বুরকিকে আপনার হয়ে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পাঠিয়েছেন এবং আমার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য ব্যক্তিগতভাবে আপনি পুরনো পারিবারিক বন্ধুত্বতার উপরে আমার অনুভূতি, পেশাগত কমরেড হিসেবে এবং আমি ও আমার কাজের প্রশংসার মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন।এমনকি আমার পুরো কর্মজীবনে আপনার আগের কথোপকথন বা চিঠিপত্রে .এইসব মিথ্যা ও অন্যায় অভিযোগের কোন ইঙ্গিত ছিলো না।
আমার অভিযোগের প্রত্যুত্তরে আমার পরামর্শ নেওয়া হয়নি যা, কিছু ব্যাপারে আমার কাজ করায় গুরুতরভাবে প্রভাব বিস্তার করছিল এবং গঠনতন্ত্রসহ বেশ কিছু ব্যাপারে আমার পরামর্শ অগ্রাহ্য করা হয়-যেখানে আপনার বক্তব্য ছিল শুধুমাত্র গঠনতন্ত্র নিয়ে আমার পরামর্শ দিয়েছি-আমি দুঃখের সাথে বলছি, তা বেঠিক এবং ভুল ছিল- যেন তাড়াহুড়ো মধ্যে আপনি গঠনতন্ত্র নিয়ে না আসেন।১৯৫৯ সালে যখন আপনার চাহিদামত গঠনতন্ত্রের রুপরেখায় প্রাথমিক গণতন্ত্রের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রথম আমাদেরকে জানান, আমি অভিমত দিয়েছিলাম, আমরা যেন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন এবং জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের পরিকল্পনায় মনোযোগ দেই এবং বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য প্রতিনিধিদের উপর গঠনতন্ত্র গঠন ছেড়ে দেই যেখানে এই বিষয়ে আমরা কোন রকমের কর্তৃপক্ষ ছিলাম না।
আপনি আপনার চিঠিতে এর পরের অনুচ্ছেদেই জানিয়েছেন যে, গঠনতন্ত্রের বিধান সম্পর্কে আমি আমার ধারণা ব্যক্ত করেছি যখন তা গভর্নরের সম্মেলনে আলোচনা করা হচ্ছিল।কিন্তু এখানে আবার, আমি দুঃখের সাথে বলছি, যে বক্তব্যে সেইসব ধারণাগুলো বিবেচনায় আনা হয় বা আমি যে বিষয় উথাপন করেছিলাম সেইসবের বিষয়ের পক্ষে আমি কোন যুক্তি নিয়ে অগ্রসর হওয়া জন্য আমি কোন পদক্ষেপ নেইনি, তা একেবারেই ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, যখন গঠনতন্ত্রের বিধান সম্পর্কে প্রচন্ড বাক-বিতন্ডার মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে আমি বারংবার মৌলিক অধিকারের স্বপক্ষে সমর্থনযোগ্য, আধিপত্য বিস্তারকারী ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা তৈরী করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুজ্জাগরণ ইত্যাদি নিয়ে যুক্তি দেখাচ্ছিলাম, আপনি আমার দিকে চিৎকার করার পর্যায়ে গিয়ে বলছিলেন আমি এতো চিন্তিত কেন- গঠনতন্ত্র আমাকেই স্বাক্ষর করতে হবে, তোমাকে নয় আজম’।এরপর,গঠন্তন্ত্রের বিধান সম্পর্কে আমাকে পূর্ণ আস্তার সাথে গ্রহণ করা হয়। অতএব, আমি মনে করি, আবারো বলছি যে গঠনতন্ত্রের বিধান সম্পর্কে আমি আপনাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং আপনি তা মেনে নেওয়া বা বিবেচনা করতেও প্রস্তুত ছিলেন না।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গভর্নর হিসেবে আমার সাথে শলাপরামর্শ করা ছাড়াই আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তে আমার তীব্র প্রতিবাদকে উল্লেখ করে, আপনার চিঠিটি নিম্নরূপ-
“আমি বিশ্বাস করি তুমি জনাব সোহরওয়ার্দীর গ্রেপ্তারকে উল্লেখ করছো। একই সময়ে জনাব সোহরওয়ার্দী পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তার গ্রেপ্তারী ছিল। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে যে কোন প্রকারের গঠনতন্ত্রের বিরোধীতার জন্য পাকিস্তান-বিরোধী কার্যক্রমের সাথে সক্রিয়ভাবেই যুক্ত ছিলেন। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব তোমার ছিল। কিন্তু আপনি তা করেননি কারণ আপনি আপনার ব্যক্তি জনপ্রিয়তা নিয়ে অধিকতর মনোযোগী ছিলেন এবং আমার কর্মপন্থা বাস্তবায়নেও তুমি অতোটা মনোযোগী ছিলে না যা উচিত ছিল। যাই হোক, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধকে আমি এড়িয়ে যেতে পারিনি। অতএব, তাকে করাচিতে হেফাজতে নেওয়া হয়
এবং এই পরিস্থিতি সম্পর্কে তোমাকে একজন মন্ত্রীর মাধ্যমে জানানো যাকে প্রথমেই পাওয়া উড়োজাহাজে করেই ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমি জানি না এছাড়া আমি আর কি করতে পারতাম।“
সরকারী প্রাথমিক নীতিমালা অনুযায়ী আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঘটনাস্থলেই কোন ব্যক্তির উপর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আগে এ নিয়ে পরামর্শ করা উচিত। যদি জনাব সোহরওয়ার্দীর বিরুদ্ধে কোন তথ্য থেকে থাকে তবে তা কিছু সময়ের জন্যে হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে ছিল। এমন না যে, গ্রেপ্তারের কয়েক ঘন্টা আগে এসব জড়ো করা হয়েছে। যাতে বলা যায় যে আমার সাথে পরামর্শ করার জন্য কোন সময় তোমার ছিল না, এমন পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তারের জন্য তুমি আমাকে নির্দেশ দিতে পারতে বা এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় আমি আমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তুমি আমাকে বদলি করতে পারতে। যে প্রক্রিয়ায় আপনি এবং আপনার সরকার এই পরিস্থিতি পরিচালনা করেছে তা স্পষ্টতই গভর্নর হিসেবে আমার প্রতি অন্যায্য ছিল। যদি আমার সাথে এ নিয়ে আলোচনা করা হতো অথবা এ নিয়ে সমুচিত নোটিশ দেওয়া হতো তবে হয়তো পরিস্থিতি বিবেচনায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারতাম যা প্রদেশে আপনার উপস্থিতি থাকাকালীন সময়ে গ্রেপ্তারের জন্য উত্থিত হয়েছিল। এ নিয়ে আমি বক্তব্যে আপনাকে মনে করিয়ে দিতে পারতাম যে আপনি যা করেছেন তা আদতে পিঠে ছুরি মারার মতোই এবং এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে এর বাইরে করা যায় এমন কোন কিছুই ঘটেনি যা খুবই প্রয়োজনের সাথে আমি করতে পারতাম এবং এর স্বাক্ষী আপনি ছিলেন। আমি কি এমন পরিস্থিতি সামাল দেইনি যা শাসনের মাধ্যমে করেছি, এমন বিপর্যমুলক পরিণতি আমি আপনার কাছে আগেই উল্লেখ করেছি। এমতাবস্থায়, আপনার বিবৃতির পক্ষে কোন যুক্তি নেই যা-
“আমি এমন মনোভাবের আভাস পেয়েছি যে এই বিশ্রী পরিস্থিতি মোকাবেলায় দৃঢ়তার প্রয়োজন ছিল যেখানে তোমার কাছে তা অরুচিকর ঠেকেছে। এ নিয়ে আমার অসন্তোষ প্রকাশ করাই আমার দায়িত্ব ছিল। তাই যখন তুমি পদত্যাগ করলে এবং চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়োর মধ্যে আছো, তখন আমার কাছে এইটি গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না।“
সেই সময়ে আপনি যদি মনে করতেন যে ঘটনাস্থলেই উপস্থিতি থেকে এ’রকম বিশ্রী পরিস্থিতি দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা আমার কাছে অরুচিকর ঠেকেছে তবে আপনি সেই পুরো পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধারণা করে নিতেন এবং নিজেই পুরো দায়িত্বটি আমার কাঁধে চাপিয়ে দিতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ জারি করতেন। আপনি তা করেন নি। অন্যদিকে যতক্ষণ আপনি ঢাকায় ছিলেন ততক্ষণ এই পদক্ষেপের জন্য আপনি আপনার অসন্তোষ প্রকাশ করেন নি। আমি যে পদ্ধতিতে পূর্ব পাকিস্থানের বিষয়গুলো মোকাবিলা করছিলাম তা নিয়ে আপনি আপনার মনোভাব শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্থানে ফিরে যাওয়ার পরেই ব্যক্ত করেছেন।
আপনি উল্লেখ করেছেন যে আমার দ্রুত চলে যাওয়া নিতান্তই স্পষ্ট ছিল। ১১ই মার্চ আমি আমার পদত্যাগপত্র লিখেছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত ১০ই মে পর্যন্ত থেকে যেতে সম্মত হই। আপনি যদি সত্যিই এমন মনোভাব পোষণ করতেন যে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমার অক্ষমতা এবং যেহেতু আমার দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপে আপনি অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং প্রদেশ ছেড়ে যেতে আমি উদ্বিঘ্ন ছিলাম তবে কিছুতেই আপনি আমাকে থেকে যেতে বলতেন না। দেশের প্রতি আপনার কর্তব্য হিসেবে প্রতিবারই আমাকে তৎক্ষণাৎ অব্যাহতি দিতে পারতেন এবং থেকে যাওয়ার জন্য আমাকে প্ররোচিত করতেন না। এছাড়া আমার কাজ করা নিয়ে আপনার অসন্তোষ যতটুকু, তাতে গভর্নর হিসেবে আমার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার জেদ এটাও পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে যে সেই সময়ে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, আমি একাই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবো। আমার পদত্যাগ পত্রে উল্লেখিত যুক্তিগুলো ‘বানোয়াট’ ছিল না।
এটা আমাদের সবার কাছে বেশ ভালই করেই জানা আছে যে এই দেশ ব্যক্তি খামখেয়ালীপনা ও মানসিকতা, প্রশাসনে অযৌক্তিক হস্তক্ষেপেরকারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনেক সময় ব্যক্তি উচ্চাভিলাষের জন্যেও দৃঢ় নীতিসমূহে ও শাসনে মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা যদি সেইসব নীতির উপর আপোষ করতাম তবে হয়তো বিপ্লবের মূল লক্ষ্যকে দমন করতে পারতাম।
অতএব, পদত্যাগ করা ছাড়া আমার অন্য কোন পথ খোলা ছিল না যেখানে নির্দিষ্ট মূলনীতিগুলোর অবমাননা করা হয়েছে যা আমি ইতোমধ্যেই ১৯৬২ সালের ১১ই মার্চ তারিখে আমার পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করেছি, যে জন্য আপনার তৎক্ষণাৎ ইশারা ছিল যে এই বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগত আলোচনার অবকাশ আছে যা আপনি আপনার পূর্ব পাকিস্তান সফরের সময়ে আলোচনা করার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন, যা আপনি করেছিলেনও কিন্তু আমি গভর্নর হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে অসম্মত হয় এবং আমাকে দ্রুত অব্যাহতি দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে আমার সিদ্ধান্তেই স্থির ছিলাম।
এক মাস পরে আপনি আমার কাজের প্রশংসা করে একটি চিঠি পাঠান এবং অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমার পদত্যাগ গ্রহণ করতঃ আপনি নিম্নলিখিত পরামর্শ দিয়েছিলেনঃ- “ আইনত ১৯দিন বাদ দিয়ে চার মাসের ছুটি দেওয়ার জন্য আমাকে অনুমোদন করতে হলো, যা তোমার লভ্য। অতএব, যদি তুমি তা উপভোগ করতে চাও তবে অনুগ্রহ করে তা আমাকে জানাও। এইটি গুরুত্বপূর্ন, যেহেতু সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসানের জন্য জন্য এইসব পরিবর্তনগুলোর প্রস্তাবনা যতদ্রুত সম্ভব আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে হবে”
আমার তাৎক্ষণিক প্রত্যুত্তর দয়া করে লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে-
“আপনার ১২ই এপ্রিলের চিঠির জন্যে ধন্যবাদ। কার্যালয়ে দায়িত্বকালীন দেশের প্রতি আমার সেবার জন্য আপনা যে সদয় মন্তব্য করেছেন আমি তার প্রশংসা করছি। যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে আমি বারংবার জোর দিয়েছি যে, আমার পদত্যাগ আমার নীতিগত বিষয়ের প্রতি দৃঢ় ধারণার উপর চালিত, যা উর্ধ্বতন কার্যালয়ের প্রতি আকর্ষণকে অগ্রাহ্য করার প্রভাব রেখেছে এবং আমার উদ্বেগ ছিল আমাকে কম সময়ের মধ্যে অব্যাহতি দেওয়ার উপরে, এছাড়াও যদি ১০ই মে’র আগে আমার উত্তরসূরীর যোগদান করা অসম্ভব হয়, ততোদিন পর্যন্ত থেকে যাওয়ার জন্য আপনার অনুরোধের সাথে দ্বিমত রাখছি না। কার্যভার সমর্পণের পরে আমি ছুটিতে থাকতে চাই কি না সম্পর্কে, নীতিমালার মধ্যে আমার অধিকার নিয়ে আমি সম্পূর্ণই অবগত আছি, কিন্তু, যেহেতু আমি নৈতিকতার দিক থেকে পদত্যাগ করছি, তাই আমি আমার লভ্য ছুটি উপভোগ করার প্রকাশ করিনি।“
আপনার যে বিষয়টি ভুলে গেলে চলবেন না যে আপনার প্রতিনিধি হয়ে আমি পূর্ব পাকিস্তানে গিয়েছিলাম এবং তা সামরিক শাসন চলাকালে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ভেতরেই। প্রতিনিধি হওয়ার পাশপাশি আমাকে গভর্নরের সম্মেলনেঅনুষ্ঠিত জনতার দাবী ও নানান সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। যদি আমি ব্রিটিশ সময়ের আমলাতান্ত্রিক সরকারের একজন গর্বিত এজেন্ট হিসেবে আচরণ করতাম, তবে পূর্ব পাকিস্তান নিজেদেরকে কলোনী হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় তাদের বারংবারের উত্থাপিত অভিযোগের সঠিক বিচার করা হতো।
আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়েই আপনাকে জনতার কাছাকাছি নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। আমি খুব ভালভাবে মনে করতে পারি যে সেই বৃহৎ ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী অবস্তা মূল্যায়ন করতে আপনি যখন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেছিলেন, স্বাভাবিকভাবেই আমি ভেবেছিলাম যে আপনি নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে আমার চাইতেও বেশী উদ্বিঘ্ন এবং সেইসব এলাকার পুরুষ, নারী ও শিশুদের আত্মবিশ্বাসকে উজ্জ্বীবিত করতে প্রেরণাদায়ক কিছু বলবেন। তাই আমি আপনার জন্য একটি ভ্রমণের ব্যবস্তা করি, কিন্তু এর একমাত্র মানে ছিল যে বিশ্বের এক প্রান্তে এই দ্বীপপুঞ্জে হেলিকপ্টারে করে যাওয়া এবং আপনাকে এইসব এলাকা পরিদর্শন করার জন্য আমি কখনই দুঃখবোধ করি না কেননা মাসব্যাপী আপনার সামরিক সচিব এবং এয়ার মার্শালকে ব্যাখ্যা করতে হয়েছে কেন আপনাকে ঝুঁকি নিয়ে হেলিকপ্টারে করে তা করতে বলেছি।
জনপ্রিয়তা অর্জনের অভিপ্রায় আমার ছিল না। আমার একমাত্র উদ্বেগ ছিল পুরো প্রদেশ জুড়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দূর্যোগে নিপীড়িত দুঃখীদের সাহায্য করা নিয়ে, সেই সাথে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা। বিশেষ করে জনতা তাদের চরম কষ্ট ও বিপদের মধ্যে আসতে থাকা সাহায্যে আমার ব্যক্তি নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যতাকে অগ্রাহ্য করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে
তাদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। বলা যায় যে আমি আমার ব্যক্তি জনপ্রিয়তার জন্য বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের বদলে ত্যাগ করার চেষ্টা করেছি অথবা ‘আর্থিক অনিয়মের’ মাধ্যমে আমি জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করেছি, আমার প্রতি যা শুধুমাত্র একটি গুরুতর অবিচার করাই নয় বরং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অনুভূতি ও সম্মানের উপর উপর প্রবল ধাক্কা ছিল।ঘুষের বদৌলতে আমার জন্য কান্না করা অথবা পূর্ব পাকিস্তানে নিয়ন্ত্রণ কমানোর উদ্দেশ্যে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করার অভিপ্রায়ে সেই পাকিস্তান-বিরোধী মতবাদকে ছড়িয়ে যেতে দেওয়া বলা হলে তা তাদের উপর চরমতম অপমান আরোপের চাইতে বেশী কিছু হতে পারে না।
কালক্ষেপণ ছাড়াই আমার দায়িত্বকালীন সময়ে পাকিস্তানের সেই অংশ কেন্দ্রের খুব ঘনিষ্ট হয়েছিল। জাতীয় ঐক্য ও উন্নতির স্বার্থে সেই দুই বছর আমি যেভাবে আন্তরিকতা ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছিলাম তা কিছুতেই আপনি অস্বীকার করতে পারেন না অথবা পুরো জাতির যে কেউই এর স্বাক্ষী আছে।
আমি এই বলে আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই যে সৃষ্টিকর্তা এবং আমার জাতি আমার বিচারক হউক, স্বতন্ত্র মতামত কখনই নির্ভরযোগ্য হিসেবে উল্লেখিত হবে না, তা সে যতই উর্ধ্বতন ব্যক্তি হোক না কেন।
এইসব বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করা আমার জন্য সুখকর নয়, কিন্তু আপনার চিঠি আমার কাছে এর বিকল্পযোগ্য আর কিছুই রাখেনি এবং ১৯৬২ সালের ৭ই জুন তারিখে আপনার চিঠিতে আনীত গুরুতর অভিযোগে আমি আমার সততার মধ্যে উত্তরহীনভাবে ছেড়ে দিতে পারি না।
(মোহাম্মদ আযম খান)
লেফট্যানেন্ট জেনারেল।
সামরিক আইন আজ শেষ হচ্ছে
রাওয়ালপিন্ডি, জুন ৭- ৪৪ মাসের পুরানো মার্শাল ল ন্যাশনাল এ্যাসেম্বল এর ১৫৬ জন সদস্য সহ আগামীকাল সকাল থেকে শেষ হতে যাচ্ছে, দেশের তৃতীয় “ জাতীয় সংসদ” এটার জন্মের ১৫ বছর আগে,রিপোর্টস এপলিকেশন। একটি রক্তপাতহীন বিপ্লব যেটা কিছু মিনিটের ভিতরেই গত সকাল ৯টার সময় পাকিস্তানের উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ৭ অক্টোবর দেশের উপর থেকে বাতিল হতে যাচ্ছে যেখানে নির্বাচন কমিশনার প্রধান হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করবেন, এছাড়া জাতীয় পরিষদের আনায়ন নিশ্চিত করতে হবে যেটা প্রেসিডেন্ট আইয়ুব সুরাহা করেন।
রাষ্ট্রপতির মন্ত্রিসভা পদত্যাগ
রাওয়ালপিন্ডি, জুন-৭ – নতুন সংবিধান অনুযায়ী আজ সন্ধ্যায় মন্ত্রীসভার সদস্যরা রাষ্ট্রপতির দপ্তরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন………(পরদিন সকালে) রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগ পত্র গ্রহন করেছেন এবং সামরিক আইনে ৪৪ মাস ধরে মন্ত্রীরা যে সেবা দিয়েছে, ওই সেবার জন্য তাদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি পৃথক ভাবে চিঠি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। দুইজন মন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ মনির এবং জনাব আব্দুল কাদের, যাদের নতুন আইন অনুযায়ী আগামীকাল সন্ধ্যার মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধীনস্ত নতুন মন্ত্রীসভার দ্বায়িত্ব অর্পন করা হবে। এর আগে মন্ত্রীরা তাদের অফিসে সর্বশেষ অংশগ্রহনের জন্যে শহরে উপস্থিত হয়েছেন। রাজধানীতে মন্ত্রীদের মধ্যে যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা হলেন লে.জেনারেল ও.আ.বুরকি, জনাব মঞ্জুর কাদের, লে.জেনারেল কে.এম.শেখ, জনাব এফ.এম.খান, জনাব হাবিবুর রহমান, জনাব জাকির হুসাইন এবং জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো। আটঘন্টা পর রাষ্ট্রপতির বাসভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে নতুন সংবিধান অনু্যায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহন করবেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি জনাব কর্নোয়ালিশ মেসরাজ। মোহাম্মদ মুনির এবং আব্দুল কাদির নতুন সংবিধানের অধীনে আনুষ্ঠানিক ভাবে আগামীকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রপতির বাসভবনে এ শপথ গ্রহন করবেন। এই শপথ অনুষ্ঠান দেশের “নতুন সাংবিধানিক শাসন” শুরু নিশ্চিত বা চিহ্নিত করে।
সামরিক আইন নিষ্পত্তিঃ
অন্য এক বার্তায়, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আজ কুটনৈতিকদের সাথে বসে এক নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছেন, এবং যা ১৮ জুন নতুন সংবিধান প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের পর সামরিক আইন মামলা নিষ্পত্তির জন্য অসুবিধা অপসারন করবে । এই অধ্যাদেশ বলে, সামরিক আইন কতৃপক্ষ কতৃক সামরিক আইন শাসনকালে জারি করা সকল বাক্য আইনত প্রেরন করা হয়েছে এবং তাদের দরপত্র অনু্যায়ী সকল নিষ্পত্তি বাহিত হবে। অধ্যদেশটি এটাও বলে যে, সামরিক শাসন চলাকালে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রদানকৃত সকল মৃত্যুদন্ড কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে হয়েছিল।
সুচনাঃ “গণতন্ত্র” আব্রাহাম লিংকনের ভাষায়, জনগনের জন্য জনগনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জনগণের সরকার। এটা জনগণের মতামত ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সরকার গঠন করে, নাগরিকদের সুখ শান্তি ও উন্নতি করার লক্ষ্যে কাজ করে এবং আইনের দৃষ্টিতে সবার মান সমান। যদিও এটা সব সময় মুসলিম ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিরাজমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয় না। সকল গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মুলে রয়েছে সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব এবং সাম্যতার ইসলামীক চিন্তাধারা। এর বাহ্যিক অভিব্যাক্তিতে ইসলাম ব্যাক্তির বদলে সমাজের উপর গুরুত্ব আরোপ করে, যেটা যেকোন সাম্প্রদায়িক উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করা সংস্থার জন্য প্রথম পদক্ষেপ। একটি গুরুত্ব পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপাদান যার সাক্ষী ইতিহাস তা হচ্ছে অন্যান্য বিশ্বাসের উপরে ইসলামের সাধারন সহিষ্ণুতা । সূরার ঐশ্বরিক আদেশ যা শাসনকর্তাকে সাধারন মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে বাধ্য করে তা গণতান্ত্রিক সরকারের সাধারন তত্ত্ব গুলো নির্দিষ্ট করতে যে কোন বড় ধর্মের একমাত্র প্রচেষ্টা। অবশেষে, সম্পূর্ণ সমাজের দ্বারা অনুষ্ঠিত মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি একটি ধর্মীয় পবিত্রতা দেয় যা ইজমা নীতিকে মুসলিম বিশ্বাসের গণতান্ত্রিক সারাংশ উল্লেখ করে। অতএব,আজকের প্রেক্ষাপটে, ইসলামী হওয়ার প্রয়াস সমাজে তাদের রাজনৈতিক জীবনে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে যা শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক ভিত্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়। পাশ্চাত্যে গণতন্ত্র প্রাথমিক ভাবে কিছুটা অপূর্নাঙ্গ ভাবে আবির্ভূত হয় (যেহেতু এর ভিত্তি ছিল প্রচীন গ্রিসের রাজ্য গুলোতে দাসত্ব, যেখানে প্রত্যেক মুক্ত নাগরিক সরকার ব্যবস্থায় অংশ হতে পারতো । এসব তথাকথিত প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রগুলো ছিল সমমাতৃক রাজ্য শাসন যেখানে দাসদের অধিকার কখনো শাসক গোষ্ঠির সাথে সমান হয়নি। সমষ্টিগত এবং ব্যক্তি স্বার্থের সনাক্তকরণ যা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি অভিব্যাক্তি খুঁজে পায় এবং গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার সারাংশ, তা অনুপস্থিত ছিল। এখন গণতন্ত্র যেরকম তা অধিকাংশেই গ্রেট বৃটেনের অবদান মনে করা হয়। সরকারের একটি ভিত্তি হিসাবে এটা শুধুমাত্র গত ১০০ বছরেই বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, কিন্তু বর্তমানে তা সরকারের একমাত্র ভিত্তি হিসাবে স্বীকৃত যা আসলেই মানুষকে স্বাধীন করে এবং গঠন মুলক দিকে চালিত করে। যদিও সরকারের গন্তান্ত্রিক ভিত্তিতে সমস্যা হল যদি কর্মরত মানুষজন গণতান্ত্রিক নীতিতে প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ না হয়, সংগঠনের সফলতা নিশ্চিত করা কঠিন। গণতন্ত্র এমন কিছু নয় যা এক রাতে মানুষজন গ্রহন করেছে। বৃটিশরা যাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী গণতান্ত্রিক সংগঠনের অগ্রগামী বলা হয় তা করতে ইংল্যান্ডের কণর্ধারদের ১২১৫ সালে ম্যাগনাকার্টা চুক্তির পরে সাতশ বছর সময় লেগেছে। ১৯২৮ সালে প্রথম একুশোর্ধ মেয়েদের ভোটের অধীকার দেওয়া হয়। রাজনৈতিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশের তুলনামুলক ধীর প্রক্রিয়া বৃটেনে গণতন্ত্রের সৃষ্টি করে। কিন্ত ঐতিহাসিক এই শিক্ষা অমান্য করে প্রায়শই অন্যত্র সফল হওয়া প্রথা প্রবর্তন করার প্ররোচনা দেখা যায় যা আবশ্যম্ভাবী ভাবে ভিন্ন সামাজিক পরিবেশে খাপ খায় না, বা অন্য জাতির রাজনৈতিক প্রয়োজন মেটায় না। এধরনের অবস্থায় ধার করা রাজনৈতিক সংগঠন গুলো অকার্যকর নেতৃত্বের সুযোগ করে দেয় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করে, রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা এবং দুর্নীতি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিরুদ্ধাচরন করে এ অবস্থায় যদিনা পরিস্থিতি সামাল দিতে শক্তিশালি নেতৃত্বের আবির্ভাব না ঘটে তাহলে দির্ঘস্থায়ী কলহ অবধারিত হয়ে যায়। কিন্তু যেইমাত্র সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা আসে তখনই একটি তুলনামূলক রাজনৈতিক ভাবে সচেতন সম্প্রদায়ের উচিৎ সময় নষ্ট না করে উপযুক্ত রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করা। এগুলো এই আলোকে বলা যে, জাতির উদ্দেশ্যে তার প্রথম সম্প্রচারে মাননীয় রাষ্ট্রপতি স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন তার একমাত্র অভিপ্রায় যতদ্রুত সম্ভব সাংবিধানিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
সামরিক শাসনের গত সাড়ে তিন বছরের কর্মপদ্ধতিকে এই লক্ষ্যের একটি সূচক বলা যায়। এতটাই, যে বিদেশী পর্যবেক্ষকরা পর্যন্ত মন্তব্য করেছেন সামরিক শাসনের অধীনে পাকিস্তান তথাকথিত অনেক গণতান্ত্রিক সরকার শাসিত দেশের চেয়ে বেশী গণতান্ত্রিক। এর কারণ খোঁজার জন্য খুব বেশী দূর যাওয়ার দরকার নেই। যদিও মনে করা হয়েছিল যে গণমাধ্যমের হাত পা বেঁধে ফেলা হবে এবং মত প্রকাশের সকল স্বাধীনতা হরণ করা হবে। কিন্তু, গণমাধ্যমের উপর নিতান্তই অপরিহার্য সামান্য কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল,তাও ক্ষেত্রবিশেষ। সরকারের কর্মধারায় ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যাবহার সুস্পষ্টভাবেই অনুপস্থিত ছিল এবং বিচারিক প্রক্রিয়াদি তার স্বাভাবিক গতিতেই পরিচালিত হচ্ছিল। প্রশাসন বেসামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছিল এবং জনগণের ইস্যুতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছিল নুন্যতম। এমনকি গত তিন বছরের গতিবিধি গণতন্ত্রের জন্য সুদূরতম হুমকি হয়েও দেখা দেয়নি। যে কারনে, পাকিস্তানে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে যুক্তরাজ্য সরকারের উপেক্ষা সত্ত্বেও, আইনের শাসনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা বিরাজ করেছে। জনগণ স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি অনুভব করেছে। আমাদের একটি তুলনামূলক উন্নত পেশাদার এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী রয়েছে,যেটা প্রতিদিনই বাড়ছে। ইসলামে নিহিত সাম্যের বানী, পশ্চিমাদের দ্বারা শোষিত উদার মানবিকতা, যা কিনা জনগনের শ্রেণী বিভেদের ভাবনা থেকে প্রতিকৃত, যার রাজনৈতিক রূপ পেতে পারে একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনকে সম্পূর্নভাবে পৃথক রাখা হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের উপর মানুষ সবসময়ই আস্থা ও শ্রদ্ধা বজায় রেখেছে- বিচার বিভাগ। স্পষ্ট মতপ্রকাশ, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সুস্পষ্ট দায়িত্ব বিভাজন একটি গণতান্ত্রিক সরকারের চাহিদার দিকেই নির্দেশ করে। কিন্তু একটি সাংবিধানিক সরকারের সাফল্যের জন্য আমাদের অবশ্যই অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নতুন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রচারের পূর্বে পূর্ববর্তী সংবিধানের ব্যার্থতার কারন অনুসন্ধান ও নতুন সংবিধানে সেগুলো পরিহার করা একান্ত জরুরী।
যুক্তরাজ্যে সংসদীয় সরকারের প্রসার
বর্তমানে বহুল প্রচলিত গণতন্ত্রের কাঠামোকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে- সংসদীয় গনতন্ত্র ও প্রেসিডেন্সিয়াল গনতন্ত্র। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রের সাথেই পরিচিত, যাকে মন্ত্রীপরিষদ পদ্ধতিও বলা হয়। এই পদ্ধতিতে আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল অথবা দলসমূহ থেকে নির্বাহী নির্বাচিত হন এবং ততক্ষন পর্যন্ত বহাল থাকেন যতক্ষন সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পুষ্ট থাকেন। ব্রিটিশ সংবিধান, যাকে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রসূতি বলা হয়, তাতে সংসদীয় গণতন্ত্রের তত্ত্ব ব্যাখ্যা নির্দেশ করা রয়েছে। এই পদ্ধতির ধীর বিকাশের অন্যতম মূল কারন ছিল বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র, যার শান্তিপূর্ণ অবসানের এবং সাধারনের মতের প্রতিফলনের একমাত্র উপায় গণতন্ত্র। একটু একটু করে সমস্ত ক্ষমতাই জনগনের প্রতিনিধিদের করায়ত্ত হয়। গোটা কাঠামোটি অত্যন্ত ধীরে আকৃতি লাভ করে। রাজার সাথে আলোচনার অধিকার উপভোগকারী শ্রেণী অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হয়েছে, যতক্ষণ না জনগনের সরকারের ধারনাটি মাথাচাড়া দেয়। বিংশ শতকে জনগনের শাসক নির্বাচনের ধারনাটি পূর্ণরূপে, শক্তিশালীভাবে এবং চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ জনগনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বদলে ক্রম পরিবর্তনের অভ্যাসের প্রতিফলন হিসেবে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে রাজ পরিবারকে প্রতীকী ক্ষমতায় রেখে কার্যকরী ক্ষমতা জনগনের হস্তান্তর করা হয়। রাজা এবং মুকুটের মধ্যকার সম্পর্ক এতটাই নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয় যে, সরকার কাঠামোয় আর কোন বড় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা একেবারেই দূরীভূত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে, সংসদীয় গণতন্ত্র অত্যন্ত সফল, যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এর সাফল্য কিছু নির্দিষ্ট শর্তের উপর নির্ভর করে যেগুলো পাকিস্তান সহ আরও কিছু দেশ পূরন করতে সক্ষম নয়। বেশ কিছু প্রভাবকের উপর ইহা নির্ভর করে, যেগুলো অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে পরস্পরের সাথে সম্পৃক্ত এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক আচরণের মিশ্রনে তৈরি।
উদ্বুদ্ধ নির্বাচক মন্ডলী
উদাহরনস্বরূপ, জাতীয় নীতির বিভিন্ন বিষয়ে উদবুদ্ধ নির্বাচক মন্ডলী একটি মতামত গঠন করতে সক্ষম। শিক্ষা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে ৭৫ বছরের জন্য। গড় প্রাপ্ত বয়স্ক, যাদের মানসিক সমস্যা নেই…………………..যদি নীতিমালার বিষয়ে কোন মতামত তৈরীতে সক্ষম হন এবং অন্তত এমনতরো কিছু করতে সক্ষম হন যাতে তার ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করতে পারে।.প্রত্যেক বাড়িতেই খবরের কাগজ রাখে, তাছাড়া প্রায় সকল বাড়িতেই একটি করে রেডিও অথবা টেলভিশন সেট আছে। অতএব জনগণ রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রশ্নে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করতে সক্ষম।
পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধি
শতাব্দীধরে বৃদ্ধির পর সিস্টেমটি পূর্ণ পরিপক্বতা অর্জন করেছে। তার উপাদেয় এবং সংবেদনশীল প্রকৃতি এই যে, নির্বাচকমণ্ডলী বা নেতাদের অদক্ষতা দ্বারা কোনো পশ্চাতৎপদটায় ভুগতে চায় না।
তথ্য গণমাধ্যমের ভূমিকা
সেখানে একটি সতর্ক এবং কণ্ঠ্য প্রেস আছে যা সকল স্তরের মানুষকে অবগত এবং শিক্ষিত করে। খবরের কাগজ পাঠ ব্রিটেনে একটি জাতীয় অভ্যাস। অসংখ্য এবং ব্যাপকভিত্তিক সংবাদ ও মতামত প্রচারের চ্যানেল রয়েছে। নির্বাহীর জনসমক্ষে অসাদচরণের ব্যাপারে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
দ্বিদলীয় ব্যবস্থা
দ্বিদলীয় ব্যবস্থা যা মূলত ইতিহাসের একটা দুর্ঘটনা, এর একটি অংশ দেশে রাজনৈতিক অভ্যাস গঠন করেছে। সংসদীয় প্রক্রিয়া তার ‘দক্ষতা ও জীবনীশক্তি অনেক হারাবে যদি এটা দুই দলের বেশি দলের সাথে কাজ করে, যেমন হয়েছে ফ্রান্সে। তৃতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্রের সংবিধান (১৮৭০-১৯৪০), ১৮৭০ সালের ড্রাফট, ঘনিষ্ঠভাবে ব্রিটিশ মডেল অনুসরণ করে, কিন্তু বড় সংখ্যক গ্রুপের অস্তিত্ব থাকায় ফ্রেঞ্চ পার্লামেন্টে ব্রিটেনের মত একক দলের মন্ত্রণালয় থাকার সকল সম্ভাবনা অচল করে দিয়েছে। বিভিন্ন মেজরিটির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত জগাখিচুড়ি ক্যাবিনেটে একে অন্যের উপর চড়াও হয়। ফ্রান্সের সংসদীয় ইতিহাসের ৩য় এবং ৪র্থ প্রজাতন্ত্র ফ্যান্টম মন্ত্রণালয়ের একটি পরিদৃশ্য। এই কারণে সংসদীয় সরকার একজন ব্রিটিশ ও ফরাসি কাছে ভিন্ন জিনিষ বোঝায়।
জনমত
ব্রিটিশ নেতৃত্ব জনমতে খুবই সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীলতার ইঙ্গিত ব্রিটিশ ইতিহাসে পরিষ্কারভাবে অনেকবার দেয়া হয়েছে। জনাব এমসি ডোনাল্ড সংসদে সুবিধাজনক সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকার পরও ১৯৩৪ সালে বেকারত্ব সহায়তা রেগুলেশন তৈরি করেছিলেন। জনাব ব্যাল্ডউইনকেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও ১৯৩৫ সালের হাবশী সংকটে স্যার স্যামুয়েল হোয়ারেকে কুরবানী দিতে হয়েছিল। ১৯৪০ সালে জার্মান আক্রমণের বিরুদ্ধে নরওয়ে রক্ষার জন্য এবং পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে জার্মান সামরিক অনু প্রবেশের বিরুদ্ধে ব্যর্থ প্রচেষ্টা দ্বারা নিজেকে জাহির করার জন্য জন অভিমত সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার পতনেরকারণ হয়। সম্প্রতি হিসাবে ১৯৫৬ সালে স্যার এন্থনি ইডেন তাঁর সুয়েজ ভেঞ্চার পর পদত্যাগ করতে হয়েছিল
যদিও সেখানে কোন আনুষ্ঠানিক ভোট হয় নি, জনগণের দৃঢ় এবং জবরদস্ত প্রতিকূল মতামত প্রধানমন্ত্রী যেতে বাধ্য করে।
ব্রিটিশ মেজাজ
ব্রিটিশ মানুষের খাপ খাইয়ে নিতে এবং আপস করার একটি অসাধারণ ক্ষমতা আছে যা একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় যেখানে রাজনীতি সামাজিক উত্থান ছাড়াই চলতে পারে। লর্ড বেলফোর বলেছেন. “গণতন্ত্র মৌলিকভাবে একটি মানুষ এক সময়ে আগে থেকেই উপলব্ধি করতে পারে যে তারা
নিরাপদে চালককে এবং তাদের নিজেদের সংযমকে সহায়তা করতে পারে তাই বিপজ্জনক রাজনৈতিক সংঘাতের বিভক্তিতে তাদের অসুবিধা হয় না। বেশিরভাগ ব্রিটিশ মানুষের মধ্যে এই অভিযোজন ক্ষমতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় ১৯৪৫-৫০সালে লেবার সরকারের কল্যাণমূলক আইনের মাধ্যমে। প্রোগ্রামটি সম্পত্তি বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল বিপ্লব এবং রাজনৈতিক পণ্ডিতরা যেমন লাস্কি (Laski)এর মতে এসব সংস্কারের চেষ্টা সমগ্র সিস্টেম সহজে ধ্বংস করে দিতে পারে। কিন্তু সিস্টেম বেঁচে গেছে। পরিবর্তিত অবস্থায় অভিযোজনের এর ক্ষমতা খুব কম সমাজই দেখাতে পেরেছে।
সংবিধানের কনভেনশন
অবশেষে, সিস্টেম বুঝতে পেরেছে যে ক্ষমতাধারীরা সম্মানের একটি কোড অনুসরণ করে। এই অলিখিত কোড নজির ও রীতিনীতিতে নিহিতথাকে, সম্মিলিতভাবে সংবিধানের নিয়মাবলী বলা হয়। কনভেনশন আইন নয় এবং তা প্রত্যাখ্যাত হতে পারে যখন তারা পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে পারে না। করণীয় এবং করণীয় নয় উভয় রাজনৈতিক আচরণে তারা অঙ্গীভূত এবং প্রায়ই এমন কিছু করতে সক্ষম যা আইনের কোন কোড পূরণ করতে সক্ষম নয়। যদিও আইনত প্রয়োগযোগ্য নয়, তা সত্ত্বেও তাদের সক্ষমতা মোটামুটিভাবে নিয়মিত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের মত জোড়ালো। তারা জনগণকে সার্বভৌমত্ব নীতির উপাদান দেয়। রাজনীতিবিদরা তাদের মান্য করে, এমনকি যদি এটা তাদের অফিস এবং কর্তৃত্বহারা করে তা সত্ত্বেও। নিয়মাবলী কিছু এরূপ: সংসদ সদস্যদের তাদের দল যাই হোক না কেন প্রলোভন ত্যাগ করবেন না; কোন মন্ত্রী যদি সহকর্মীদের সাথে যথাযথ সমঝোতা করতে না পারেন তাহলে শক্তি বজায় রাখা সম্ভব হয় না; কোন মন্ত্রিপরিষদ একটি প্রতিকূল সংসদীয় ভোটের পরিণতি এড়াতে পারে না। এই ব্যবস্থায় বিরোধী দল সরকারের অংশ। এটা নিছক বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা নয়। এটা মতাদর্শ ও নেতৃত্বের মধ্যে একটি স্পষ্ট বিকল্প উপলব্ধ। একটি সরকার সারাদেশে যখন তার নিয়ন্ত্রণ হারায় এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
অন্যান্য দেশে ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যর্থতা সহজে বোঝা যাবে যদি আমরা ব্রিটেনে তার সাফল্যের ফোয়ারার চিনতে পারি। সিস্টেম এত স্পর্শকাতর যে এটা অকেজো অবস্থার অধীনে বিকাশ লাভ করতে পারে না. পাকিস্তানে অনেক ফাঁদ এড়ানো যেত, এটি উপলব্ধি করার সময় এসেছে।
পাকিস্তান সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার
সাংবিধানিক সরকারের নতুন কোন রূপ তৈরি হবার পূর্বে প্রথমে কারণগুলা যাচাই করা জরুরী যেগুলো পাকিস্তানের সাংবিধানিক সরকারকে ১৯৫৬ এর সংবিধান বাতিল পর্যন্ত নিয়ে গেছে এবং নির্ধারন করতে হবে এতে সরকারের অবদান কতখানি।
সংসদীয় ব্যবস্থার কিছু বন্ধু জোর দিয়েছিল যে সংসদীয় সরকারের কোন ব্যর্থতা ছিল না এবং শুধুমাত্র যখন ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সাধারণ নির্বাচনের পর পূর্ণ ভাবে সূচনা হয়ে যেত। তাদের মতে, ব্যর্থতার কথা বলা অন্যায্য, এট একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা যা তার সম্পূর্ণতা জারি করা হয় নি এবং সত্যিই বিচার ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এর কারণ একটি সন্দেহজনক ভাবনা যেটি হলো এই যে ১৯৫৬ সালের সংবিধান দেশকেএকটি সম্পূর্ন নতুন সিস্টেম দিয়েছেন । কিন্তু আসলে সেটি ঠিক নয়।
আগস্ট ১৯৪৭ সালে, যখন পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বে এসেছিল ভারত সরকার শাসন আইন ১৯৩৫ এর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। এই অভিযোজিত আইন পাকিস্তান সরকারের একটি টাইপ যা সাধারণত রাজত্বগুলোতে সংসদীয় সরকারের সাংবিধানিক কাঠামো সাদৃশ্য। ১৯৫৬সালের সংবিধানে সাধারণত ১৯৩৫এর অভিযোজিত আইনের প্যাটার্ন অনুসরণ করে।
এটা গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা কিছুটা খর্ব করে প্রাদেশিক সরকারগুলোকে ব্যাপকতর ক্ষমতা দিয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্দেশিকা মূলনীতির একটি বিশদ বিবৃতি অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং ইসলামি আইনের সাথে সাদৃশ্য রেখেদেশের আইনসংক্রান্ত পরিকল্পিত বিধানকে ডিজাইন করা হয়েছে। কিন্তু এই সংবিধানের মৌলিকত্বকেগুরুত্বের দিক থেকে খুব বেশী বিবেচনা করা হয়নি। এটা সাংবিধানিক মৌলিক প্রকৃতি নিয়ে নতুন কিছু আনেনি। এমনকি তার ভাষা অনেকাংশে ‘অভিযোজিত অ্যাক্ট’ এর মত একই ছিল। এটি বিদ্যমান সংসদীয় প্রতিষ্ঠানকে অক্ষত রেখেছে।
সংসদ বা মন্ত্রিসভা সিস্টেম দ্বারা কি বোঝানো হয় একটি পরিষ্কার ছবি দিতে তার প্রধান বৈশিষ্ট্য নীচে দেয়া হলঃ
১) রাষ্ট্র প্রধান মূলত একটি আনুষ্ঠানিক পদ যদিও তিনি নির্বাহীগণের কার্যাদি অনুমোদন করেন -মন্ত্রীদের কর্মের উপর তাঁরকতৃত্ব থাকে। তার বিচক্ষণতা, যদি থাকে, অত্যন্ত পরিস্থিতি দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং সীমিত।
২) নির্বাহী মন্ত্রীদের একট গ্রুপ আছে যাএয়া ক্যাবিনেটে একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করে।
(এই দুটি জিনিস অনুমান করা যায়, প্রথমত সেখানে সমষ্টিগত দায়িত্ব এবং দ্বিতীয়ত দলের এক লোক একটা উদীয়মান ভূমিকা পালন করে এবং একটি অধিনায়কের কাজ করে-ইনিই প্রধানমন্ত্রী)
৩) মন্ত্রীরা আইনসভার সদস্য।
৪) মন্ত্রীবর্গ হলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যরা।
(যদি কোয়ালিশন সরকার গঠন করা হয় তবে মেজরিটি দলের মন্ত্রী সংখ্যা বেশি থাকে)
৫) মন্ত্রী পদে বহাল শুধুমাত্র যদি তারা পরিষদের আস্থা ধরে রাখেন।
৬) মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে তার অধীনস্থ পোর্টফোলিওর জন্য দায়ী এবং তার সঠিক ক্রিয়ার জন্য ক্রমাগত পরিষদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
১৯৫৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের অপারেটিং সরকার ব্যবস্থায় এই প্যাটার্ন অনুসরণ করলে এটা স্পষ্ট হবে। এমনকি বিশেষ করে ১৯৫৩সাল থেকে ঘটনাগুলোতে দ্রুত নজরে বোলালে, এটা বেশ স্পষ্ট হবে যে এই প্যাটার্ন সফলভাবে কাজ করে নি। সংবিধান কমিশন একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
ব্যর্থতার কারণসমূহ
সংবিধান কমিশন বিষদভাবে সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার প্রশ্ন পরীক্ষা করেছে। এটা প্রশ্নমালা এবং বড় সংখ্যক সাক্ষাত্কার দ্বারা পরিচালিত ছিল। কমিশনের কাছে পাওয়া মত অনুযায়ী সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
১) সঠিক নির্বাচন এবং প্রয়াত সংবিধানের পূর্ণতার অভাব।
২) মন্ত্রণালয় ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্র প্রধান দ্বারা সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যগুলার মধ্যে সরকারের কাজকর্মের সঙ্গে অযাচিত হস্তক্ষেপ।
৩) নেতৃত্বের দুর্বলতার ফলে দলে সুপরিচালনা ও সুশৃঙ্খলতার অভাব, রাজনীতিবিদদের চরিত্রগত দুর্লবতা এবং প্রশাসনে তাদের অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ।
কমিশনের মতে, ব্যর্থতার প্রকৃত কারণ, বরং প্রথম দুই গ্রুপের তুলনায় শেষে উল্লিখিত গ্রুপের মতামতে পাওয়া যাবে। একটি গবেষণায় অক্টোবর ১৯৫৮ সালে সাংবিধানিক সরকারের চূড়ান্ত পতনের এই বিষয় প্রমাণিত হয়েছে।
১) সঠিক নির্বাচনের অভাবঃ এটা বলা যায় না যে পরিষদ নির্বাচিত করা হয় নি। প্রথম গণপরিষদ পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়, এটি সংবিধান প্রণয়নের জন্য অভিপ্রেত ছিল। এটি ১৯৫৪ সালে বিলোপ করার পূর্ব পর্যন্ত দপ্তরে অব্যাহত ছিল, এবং পরোক্ষভাবে নির্বাচিত একটি দ্বিতীয় গণপরিষদে প্রাদেশিক আইনসভা এর জায়গা নেয়। যেহেতু এই পরিষদের পর রাজ্যে নির্বাচন সংঘটিত হয়েছিল, এটাতে অনেক নতুন সদস্য ছিল, যারা সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে রাজ্যে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে অফিসে আসেন। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্কদের ভিত্তিতে ভোটদান রাজ্যে সম্পদশালী অথবা ভিন্ন ধরনের জনপ্রতিনিধি আনতে পারেনি। জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ নির্বাচনের পর একই প্যাটার্ন নিঃসন্দেহে পুনরাবৃত্তি হয়ে যেত।
২) রাষ্ট্র প্রধান দ্বারা হস্তক্ষেপঃ এই সময়ের মধ্যে সংবিধান কমিশনের দৃশ্য এরকমই ছিল যদিও রাষ্ট্র প্রধান হস্তক্ষেপ করেছিলেন, কারণে তিনি করতে পেরেছিলেন ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ও সংহতি অভাবের জন্য। তারা আরো উল্লেখ করে যে সংসদীয় সরকার সেই সকল দেশেই কার্যকর যেখানে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র রয়েছে, যেখানে রাষ্ট্র প্রধান কোন দলের সদস্য নন অথবা নির্বাচিত কিন্তু অফিসে এসেছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রধান প্রথমত, কিছু রাজনৈতিক পার্টি জন্যে, এবং দ্বিতীয়ত, তিনি অফিসে আসেন কারণ জনগণের আস্থা তার সাথে থাকে। এই ক্ষেত্রে, যদি উভয় রাষ্ট্র প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হন, তাদের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য। ভারত, যেখানে সংসদীয় ব্যবস্থা বলবৎ হয়, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার পর থেকে সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্র প্রধান, এটা তাৎপর্যপূর্ণ যে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে বর্তমান ভারতীয় সংবিধানের অধীনে, সার্বভৌম ইংল্যান্ডের চেয়ে তিনি বেশি ক্ষমতাবান কিনা। ” সরকার একটি সংসদীয় ব্যবস্থা, একটি রাজ্য নির্বাচিত প্রধান সবসময় পার্টি রাজনীতিতে ক্ষমতাশীল, যদি তিনি এরূপ নীচে নামেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো তার হস্তক্ষেপ গ্রহন করে-এই ত্রুটি সিস্টেমের অংশ হয়ে যাবে।
৩) দলীয় শৃঙ্খলার অভাব ও রাজনীতিবিদদের চরিত্রের দুর্বলতাঃ ১৯৫৩থেকে ঘটনাবলী দ্রুত এক নজরে দেখলে দেখা যাবে যে এটা নেতৃত্বের এবং সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল দলের অভাব এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে চরিত্রগত অভাব এবং প্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপ যা পাকিস্তানে সাংবিধানিক সরকারের চূড়ান্ত ভাঙ্গনের জন্য দায়ী।
১৯৫৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর অব্যাহতি
অ) এটা একটি সুপরিচিত নিয়ম যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো ছাড়া তার অফিসে হারাতে পারে না। এপ্রিল ১৯৫৩সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দলের অবিসংবাদিত কমান্ডে ছিলেন। তিনি তার বাজেট সংসদের অনুমোদন এবং লাহোর ব্যাঘাতের পর পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অপসারণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সামান্য অসুবিধাজনক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। তবুও রাষ্ট্র প্রধান তাকে অফিস থেকে আচমকা ছুড়ে ফেলেন এবং সরকার প্রধান তার নিজের প্রার্থীকে সে জায়গায় বসান। নতুন প্রধানমন্ত্রী একটি অজানা মুখ ছিল। এই উচ্চতায় পৌছানোর পূর্বে ৫ বছর তিনি দেশে ছিলেন না। তবুও মুসলিম লীগ সংসদীয় দলের পরিকল্পনানুসারে তার “বরখাস্ত” মুহূর্ত পর্যন্ত বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছিল, এমনকি আলোচনার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া গভর্নর জেনারেলদের পছন্দ সমর্থন করেছিল। তারা সরকারের নতুন নেতা প্রত্যাখ্যান দ্বারা গভর্নর জেনারেলের জন্য একটি বিশ্রী অবস্থা সৃষ্টি করতে পারতেন। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর কি পার্টি সমর্থন নিখাদভাবে ছিল, এটি অসম্ভব্ যে গভর্নর-জেনারেল এরকম কিছু না বুঝে করবে। এটা সত্য যে নতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ মন্ত্রিসভা পূর্ববর্তী প্রশাসন থেকে আনা হয়েছিল এই ইঙ্গিত দিয়ে যে, গভর্নর জেনারেলের ক্যাবিনেটে বন্ধু ছিল যারা তাদের নামমাত্র প্রধান বিরুদ্ধে তাকে দিয়ে পাশ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।
গণপরিষদের বিলুপ্তি (১৯৫৪)
খ) প্রধান দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি গভর্নর-জেনারেলকে টাড় ক্ষমতার আরেকটি এবং আরও নাটকীয় বিবৃতি প্রদানে সমর্থ করেছিল। এটি ছিল গণপরিষদ ভেঙে দেয়া যা অক্টোবর ১৯৫৪ সালে এসেছিল। এটা দলগুলোকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে এবং দেশেকে বিস্মিত করে দেয়। এটা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে মুসলিম লীগের দীর্ঘ আধিপত্য অবসান করে। লীগাররা এটা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ছিল, কিন্তু তারা যেটা বিশ্বাস করত যে গভর্নর-জেনারেল অংশ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তার বিরুদ্ধে কোনো সংগঠিত পদক্ষেপ নেয় নি। এটা কৌতুহলী যে, পাঞ্জাব ও সিন্ধু মধ্যে সংক্ষুব্ধ পক্ষের কয়েকজন সদস্যের গভর্নর-জেনারেল ধন্যবাদ ভোট দেয় এবং দেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে তাকে প্রশংসিত করা হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৬)
গ) সংহতির প্রাক্কালে পশ্চিম পাকিস্তানে ভিন্ন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়। গভর্নর জেনারেল তার ব্যক্তিগত বন্ধু হওয়ার জন্য ইন্টিগ্রেটেড প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টাকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। তিনি এতদুদ্দেশ্যে প্রচারণা চালান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কিছু নেতা থেকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি পান। এটি সংসদীয় অনুশীলনের বিপরীত ছিল। একটি সংসদীয় ব্যবস্থায়, প্রথা রাষ্ট্র প্রধানকে তার রাজনৈতিক পছন্দগুলি তৈরীর এবং রাজনীতিবিদদের দাবী চেপে ধরা থেকে বিরত রাখে।
প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার অধিকার সাংবিধানিকভাবে প্রাদেশিক আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের উপর অর্পিত ছিল যা এখনো অস্তিত্ব নাই বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত দলে যোগদানের জন্য প্রস্তুত ছিল না যার উপর সরকারের সমর্থন ছিল। নেতা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের খেয়ালী সদস্যদের দূরে সরিয়ে তার নিজের দল গঠন করেন। কৌশলটি কাজ করে কারণ এর কুশীলবেরা দলের মধ্যে তাদের ইচ্ছা পূর্ণ না হওয়ার অসন্তোষ নিয়ে অবগত ছিল এবং এই অবস্থা থেকে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির ব্যাপারে আত্নবিশ্বাসী ছিল।
আরও কিছু অনিয়মসমূহঃ
(ঘ) সরকারের তৃণমূলের নেতারা যখনই তাদের ক্ষমতা বিপদাপন্ন বুঝতে পারে তখনই তারা সরকারের প্রাথমিক নীতিগুলো উপেক্ষা করে, এড়িয়ে যায় কিংবা বিরোধিতা করতে থাকে। উপ-নির্বাচনের প্রতিকূল ফলাফল নিয়ে প্রাদেশিক মন্ত্রী এত ভীত ছিলেন, যা থেকে ঠিক হয়, একটি কারণে অথবা কিছু বছরের জন্য আইনসভার ফাঁকা থাকা ৩৪ টি আসনের একটিতেও নির্বাচন হবে না। একই প্রদেশে, একজন গভর্নর একটি ক্ষুদ্র দলের নেতাদের দ্বারা সরকার গঠন করে পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ব্যবহারের গুণ হারায়। ফলশ্রুতিতে, মন্ত্রী আইনসভায় ক্ষমতাবিহীন হয়েছিল। কেবল একটি বিভাগের ফলাফলে এটি টিকে থাকতে পারে না। শাসনতন্ত্র প্রলম্বিত করার মাধ্যমে এটি বিরহিত হয়েছিল এবং গভর্নর বাজেট “নির্ধারণ”-এর পর তা পুনঃস্থাপিত হয়। একইভাবে, রাষ্ট্রপতির শাসন পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশে জারি করা হয়েছিল যখন সে তার প্রিয় দল দ্বারা বিপক্ষকে অবমাননা করার ইচ্ছা করে, যে দল কিনা প্রতিটা ক্ষেত্রে মৌলিক নীতি ভঙ্গ করেছে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে পুরাতন সকল প্রতিশ্রুতি পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করে।
বস্তুত, তাই, স্থগিত প্রতিষ্ঠান অথবা অনুরূপ কিছুর পোশাকি যুক্তিগুলো সমর্থনের পক্ষের মানুষ দুর্নীতির সমার্থক, সঠিক কাজ করা, দ্বিমুখী আচরন করে এবং সুশৃঙ্খল সরকারের অনুপস্থিতি। এমনকি আমাদের কিছু সংখ্যক যদি আমাদের জনগোষ্ঠীর জন্য গনতন্ত্র চর্চার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে এখনও পুরাতন রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনে তাদের বিশ্বাস রাখে, তাদের স্বপ্ন সত্যি হতে পারে কেবল ব্যস্ততাহীন এবং সহনশীল পৃথিবীতে যা শত বর্ষ না হলেও কয়েক দশক ধরে চলমান একটি শুদ্ধাশুদ্ধি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে পরিত্রানের জন্য কাজ করতে সুযোগ দিত। তার আগে সাংবিধানিক কমিশনের পাওয়া সকল প্রমাণের সতর্ক বিবেচনার পর এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে,
“……………সংসদীয় ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে আমাদের, হয় এর বিশুদ্ধতা কিংবা পরিমার্জন প্রস্তাবের একটি বিশাল ঝুঁকি চলমান রাখতে হবে এবং আমরা মনে করি না এই অবস্থায় আমাদের এমন ঝুঁকির সামর্থ্য পাব।”
রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে গনতান্ত্রিক সরকারের অন্য একটি সুপরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি। সংসদীয় ব্যবস্থা সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত উদাহরণ হিসেবে উন্নিত হয় কেবল গ্রেট ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা, এখানকার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সর্বাপেক্ষা পুরাতন এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ।
রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থায়, উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক রীতিতে প্রধান কার্যনির্বাহী, আইনসভা ও বিচারকগণের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন থাকে। ক্ষমতার এই বণ্টন নির্ভর করে স্বতঃসিদ্ধতা, কেন্দ্রের নির্দেশনা, যা একটি সরকারে মানুষের উপর মানুষ দ্বারা শাসিত হওয়ায় এতে একটি বিশাল প্রতিবন্ধকতা লুকায়িত আছেঃ আপনাকে অবশ্যই প্রথমে শাসিতকে নিয়ন্ত্রন করায় সরকারকে সক্ষম করতে হবে এবং পরবর্তী দায়িত্ব নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা সরকারের এমনই দায়িত্ব যে এই ক্ষমতার বণ্টন এবং সংশ্লিষ্ট ভারসাম্যে প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়। রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার মূলনীতিগুলো নিম্নবর্ণীতঃ
(১) আইনসভার রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হয় এবং নির্বাচকরা তাকে সরকারের কার্য নির্বাহী কাজগুলি করতে সরাসরি ক্ষমতা প্রদান করে।
(২) সে কার্যক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকবে এবং আইনসভার সে তার কোন রাজনৈতিক কৌশলের বিপক্ষের একটি বিরোধী ভোট দ্বারা অপসারিত হতে পারবে না কিন্তু বিশেষ অভিশংসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে পারে।
(৩) আইন সভা স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হবে এবং কার্যক্ষেত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকবে।
(৪) সংসদীয় ব্যবস্থার ন্যায়আইনসভার কার্যসমূহ কার্য নির্বাহী স্বাধীনভাবে করবে এবং প্রধান নির্বাহী তা বিলুপ্ত করতে পারবেন না।
(৫) আইনসভা হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন তৈরির কমিটি এবং কোন প্রস্তাবনাই কমিটির ভোট আইন হিসেবে পরিগণিত হতে পারবে না।
(৬) আইনগুলোর ব্যাখ্যার দায়িত্ব বিচারকগণের এবং কার্য নির্বাহী তাদের নীতিমালার আলোকে লিখিত সংবিধানে রূপ দানের জন্য নির্দেশ করে।
কার্যত, কার্য নির্বাহী ও আইনসভার মধ্যকার ক্ষমতার একটি পূর্নাজ্ঞ বণ্টন ব্যবস্থার কার্যক্রমকে অসম্ভব করে তুলত, এবং সত্যিকার অর্থে, যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থায় ক্ষমতার প্রকৃত বণ্টন হয় না। কার্যত কিছু ক্ষমতার মিশ্রন হচ্ছিল এবং তিন স্তর বিশিষ্ট সরকারের “বিচারিক অধিকার” বিলম্বিত ও হ্রাস পাচ্ছিল।
গবেষণায় সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার কারণ পূর্বে আলোচনা হয়েছে, যাপুনরায় উল্লেখ করা হলঃ
(১) রাষ্ট্র প্রধান, প্রধান কার্য নির্বাহী ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার মতবিরোধ।
(২) দলীয় শৃঙ্খলার অভাব এবং রাজনীতিবিদদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরন বৃদ্ধি পায় এবং সরকারগুলো পতন হয়।
(৩) দিন দিন কার্য নির্বাহীকে প্রশাসনিক কাজ করতে আইনসভার সদস্যরা হস্তক্ষেপ করেরাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছিল।
এসব বলার পর সাংবিধানিক কমিশন প্রস্তাব করে যেঃ
আমাদের এমন একটি সরকার থাকা উচিৎ যেখানে কেবল মাত্র একজন সব কিছুর প্রধান থাকবেন, তার উপর একটি স্বাধীন আইনসভার সদস্যদের দ্বারা একটি কার্যকরী নিয়ন্ত্রনের চর্চা থাকবে, যা হোক, তাদের ব্যাক্তিগত রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশাসনের কাজে গুরুতর হস্তক্ষেপ করা হবে না। এই ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থায় রয়েছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফল… সংসদীয় ব্যবস্থার সাথে এই ব্যবস্থার মূল পার্থক্য হচ্ছে যে, পরেরটিতে যখন কার্য নির্বাহী প্রধান তারসংখ্যাগরিষ্ঠদলের সাহায্যের উপর একক ভাবে প্রতিনিয়ত নির্ভরশীল, রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার রাষ্ট্রপতি একই ভাবে জনগণের প্রতিনিধি যিনি কার্য পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল নন। যদি আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান তার বিপক্ষে যায়, যদি তিনি অচলাবস্থা এড়িয়ে যেতে পারেন তিনি হয়ত থাকতে পারবেন, কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রী, তা তার অবস্থানে যতই শক্তিশালী হন না কেন, যদি প্রতিকূল কিছু ঘটে এবং তার দলের বেশীরভাগ লোক সমর্থন তুলে নেয় তবে একদিনের ভেতর কোন সত্যতা ছাড়া সহজেই তার আসন নাড়িয়ে দিতে পারে। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যকে তার অবশ্যই সন্তুষ্ট রাখতে হবে না হলে তাদের আগের অনেক মন্ত্রীর মত তারা তাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বেন। যেসব ব্যক্তি বিবেচনাধীন সময়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তারা যদি তাদের সমর্থকদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল না হতেন তাহলে তারা সঠিক পথেই ছিলেন বলে আমরা মনে করি।
এথেকেদেখাযায়যেপ্রেসিডেন্সিয়ালব্যবস্থাপাকিস্তানেবিরাজমানঅবস্থারজন্যউপযুক্ত।কিন্তুপ্রেসিডেন্সিয়ালসিস্টেমব্যর্থসংসদীয়সিস্টেমেরএকমাত্রবিকল্পহিসাবেচিন্তাকরাযায়না।একটিজাতিযারশুধুএকটিঔপনিবেশিকঅতীতআছে, যারপ্রধানপ্রয়োজনরাজনৈতিকঐক্যওসামাজিকসংস্কারওঅর্থনৈতিকউন্নয়নেরএকটিউচ্চাভিলাষীপ্রোগ্রাম, এসবঅবস্থাবিবেচনায়প্রেসিডেন্টপদ্ধতিবিশেষসুবিধাজনকহবেবলেমনেকরাহচ্ছে।
রাজনৈতিকদৃষ্টিকোণবিচারে, প্রথমবারেরমতএকদলমানুষকেএকটিস্বতন্ত্ররাজনৈতিকসত্তাহিসেবেঐক্যবদ্ধকরেতোলাখুবইকঠিনএকটিকাজ।আমাদেরক্ষেত্রেদুইঅংশেরভৌগোলিকবিচ্ছিন্নতাএটিআরোতীব্রকরেছে।এইঅবস্থাথেকেউত্তরণেরজন্যআমাদেরবর্তমানসরকারকেএকটিজাতীয়ঐক্যেরধারণালালনপালনকরতেসক্ষমহয়এমনঅবস্থাকার্যকরকরতেহবে।সমগ্রজাতিরপক্ষথেকেম্যান্ডেটনিয়েএকজনব্যক্তিকেসকলনির্বাহীকর্তৃত্বদানকরারদ্বারাএইনতুনসিস্টেমবাস্তবায়নসম্ভবহতেপারে।
দ্বিতীয়ত, আমাদেররাজনৈতিকবৃদ্ধিএখনোপ্রাথমিকপর্যায়েরয়েছে।একটিপৃথকনির্বাহীওআইনসভারসঙ্গেপ্রেসিডেন্সিয়ালব্যবস্থাদাঁড়করানো, রাজনৈতিকপ্রতিষ্ঠানগড়ারচেয়েতুলনামূলকসহজহবে। যেহেতু নির্বাহীআইনসভার কোন সরাসরি সমর্থনেরওপরনির্ভরশীলনয়।তাইক্ষমতাসন্ধানেপদ্ধতিপরিবর্তনকরলেওতাহবেঅর্থহীন।তাইরাজনৈতিকদলের ইচ্ছা অনিচ্ছায় সরকারের গঠন কিংবা পতন ঘটবে না।অন্যদিকেআইনসভাসদস্যরাক্ষমতারপিছনেনাদৌড়েজাতীয়ইচ্ছারপ্রতিফলনঘটানোরজন্যতাদেরনিজেদেরআসলকাজেরপ্রতি অধিকতর দৃষ্টিদিতেউৎসাহীহবে।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিকপ্রবৃদ্ধিরচ্যালেঞ্জমোকাবিলায়শুধুমাত্রএকটিকার্যকরনির্বাহীপরিষদপ্রয়োজনহবেতারাদিনেরপরদিনযেকোনচাপউপেক্ষাকরেস্বাধীনভাবেকাজকরতেসক্ষমহবেএবংগতিময়তাআরবলিষ্ঠতারসাথেঅর্থনৈতিকনীতিবাস্তবায়নকরতেসক্ষমহবে।
তারাকোনকায়েমীস্বার্থবাকোনদলেরচাপবাতাদেরপ্রতিআনুগত্যদেখাবেনা।সংক্ষেপেবলতেগেলে, এইনির্বাহীঅংশজাতিরকাছেদায়বদ্ধথাকবে, যদিওতারাজনমতেরপ্রতিসংবেদনশীলহবে।এটাআইনসভাকর্তৃকঅপ্রয়োজনীয়হয়রানিথেকেমুক্তহতেহবে।
ভোটাধিকার:
প্রাচীনগ্রীসেরশহরগুলোতে সরাসরিগণতন্ত্রপদ্ধতিছিল,যেখানেপ্রতিটিনাগরিকবিনামূল্যেপরামর্শএবংসিদ্ধান্তদিতেপারত।কিন্তুএটিশুধুমাত্রএকটিক্ষুদ্রব্লকবাএলাকায়বসবাসরতছোটসম্প্রদায়েরমধ্যেসম্ভব।কিন্তু অপেক্ষাকৃতবৃহৎজনগোষ্ঠীএবংএলাকারমাত্রারকথাআমলেনিলেআধুনিকরাষ্ট্রসৃষ্টঅসংখ্যজটিলতাএবংসরকারকেরক্রমবর্ধমানদায়বদ্ধতাসহনানাকারণে, আধুনিকগণতান্ত্রিকজাতিকেপ্রতিনিধিত্বমূলকগণতন্ত্রপদ্ধতিগ্রহণকরতেহবে, যেখানেনাগরিকরাবিশেষযোগ্যতারঅধিকারীকিছুব্যক্তিকেবয়স, সাক্ষরতা, সম্পত্তি, ইত্যাদি, দেখেজনগণেরইচ্ছাকেপ্রাধান্যদিয়েসরকারেরহয়েকাজকরবে।আরনির্বাচনইহবেএইঅনুমোদনেরজন্যযথাযোগ্যপদ্ধতি।
নির্বাচিতকরারব্যাপারেপ্রধানদুটিতত্ত্বরয়েছে।একটিতত্ত্বহলো, এটানেত্রীস্থানীয়নাগরিকেরস্বাভাবিকওসহজাতঅধিকারযদিনাসেনিজেরআচারবাঅন্যান্যসুস্পষ্টঅনধিকারচর্চাকরেনিজেকেঅযোগ্যকরে।অন্যটিহল, একটিসহজাতঅধিকারনয়বরংএকটিপাবলিকঅফিসেরকর্মচারীরমতজনগণেরভালোরজন্যকাজকরতেসক্ষমহবেবলেমনেকরাযেতেপারে।সংবিধানকমিশনেরমতেআধুনিকরাষ্ট্রব্যাবস্থায়আজকালরাজনৈতিকবিজ্ঞানীরাদ্বিতীয়টিকেইযথার্যওউপযুক্তবলেগ্রহণকরেছেন।যাইঘটুকনাকেন, দেখাযাবেযেসার্বজনীনপ্রাপ্তবয়স্কভোটাধিকারেরধারণারাজনৈতিকমঞ্চেএকটিআপেক্ষিকনতুনদিকহিসাবেবিবেচিতহবে।প্রায়প্রতিটিদেশেভোটাধিকারএকটিনির্দিষ্টসময়পরপরধীরেধীরেবাড়ানোহয়েছে।উদাহরণস্বরূপ, ইংল্যান্ডেদেখাযাবেযেভোটাধিকারসম্প্রসারণশিক্ষারসঙ্গেসঙ্গেহাতেহাতে পৌঁছেগেছে।
শিক্ষারহারওপ্রাপ্তবয়স্কভোটাধিকার
সংবিধানকমিশনউল্লেখকরেন:
“আমাদেরদেশেসাম্প্রতিকগণনাঅনুযায়ীশিক্ষিতেরশতকরাহারমাত্রপনের।এবংসেকারণেইংল্যান্ডেরসাথেতুলনাকরেব্যবস্থাগ্রহণকরাসমীচীনহবেনা।খুবকমসংখ্যকব্যক্তিআছেনযারাসংবাদপত্রপড়েন, এবংভোটেরপ্রতিজনগণেরউৎসাহওসচেতনতাওঅনেককম।সরকারেরপরিসংখ্যানেদেখাযায়, সার্বজনীনভোটাধিকারেরপূর্বপাকিস্তানপ্রদেশেঅনুষ্ঠিতগতনির্বাচনেশুধুমাত্র৩৭.২শতাংশভোটপড়ে।পশ্চিমপাকিস্তানেরসম্পর্কেএরকমতথ্যনাথাকলেওএটাসহজেইঅনুমেয়যেসেইসংখ্যাটাও এরচেয়েবেশীহবেনা।’’
এমতাবস্থায়দেখাযায়ভোটাধিকারেমানুষযেসুযোগপায়তাসঠিকভাবেতাদেরভালোরপক্ষেপ্রতিফলনকরতেতারাব্যর্থহয়।এমনকিযদিনির্বাচনেরপ্রক্রিয়াঅবাধওসুষ্ঠুহয়, প্রার্থীওতাদেরসমর্থকরাএইনির্বাচনেসঠিকভাবেভোটওদেয়, শুধুমাত্রভোটারদেরঅজ্ঞতারকারণেএইপদ্ধতিরসংবেদনশীলতাসঠিকমূল্যায়নহবেনা।এটাসুস্পষ্টযেজাতীয়সমস্যারসমাধানেরব্যাপারেএমনব্যক্তিরমতামতকখনইমঙ্গলজনকহবেনাযেতারনিজেরগ্রামেরবাইরেকিঘটছেসেব্যাপারেকোন জ্ঞান রাখেনা।
অতএব, সংবিধানকমিশনপ্রস্তাবকরেন,যেহেতুএকটিমানসম্মতভোটেরপ্রস্তুতিসময়সাপেক্ষব্যাপার, তাইবর্তমানেকিছুমৌলিকচাহিদারদিকেগুরুত্বদিয়েএকটিইলেক্টোরালকলেজএরআয়োজনকরাযেতেপারে।তবেভবিষ্যতেরজন্যতারাপরামর্শদেনযেভোটাধিকারসেইসবনাগরিকদেরথাকাউচিতযারাপাকিস্তানেনিম্নলিখিতযোগ্যতারঅধিকারী-
(ক) পর্যাপ্তপরিমাণেশিক্ষাঅর্জনকরেছে।যাতাদেরকেপড়তেএবংবুঝতেসাহায্যকরবেপ্রার্থীদেরসম্পর্কেপ্রকাশিতযোগ্যতাযাচাইকরতেএবংতারাতাদেরনিজনিজযথার্থতাহিসেবেতাদেরনিজস্বরায়দিতেসক্ষমহবে।অথবা –
(খ) যাদেরযথেষ্টসম্পত্তিআছেঅথবা অংশীদারীত্ব আছে – এতেকরেতারাতাদেরজন্যউপযুক্তপ্রতিনিধিনির্বাচনকরতেআগ্রহীহবে।
শিক্ষারহারওসম্পত্তিযোগ্যতা:
খুবপ্রায়ইদেখাযাবেযে, এইধরনেরযোগ্যতাসম্পন্নমানুষকেনিজেদেরকমিউনিটিরনেতৃবৃন্দহিসেবেবিবেচনাকরাহয়না।এছাড়াও, শিক্ষিতএবংসম্পত্তিওয়ালাশ্রেণীরমানুষেরচিন্তাধারারসাথেসাধারণজনগণেরমনোভাব মেলেনা।কিন্তুআমাদেরমূলপ্রয়াসহলসরকারকেএমনএকটিরূপদেয়াযাতেমানুষবৃহৎভাবেউপকৃতহয়এবংতাদেরমঙ্গলওসুখ বৃদ্ধি পায়।
অবস্থাএমনওহবেযেতারাসহজেইবাস্তবেতাদেরবিতর্কিতকরবেএবংক্ষমতারহস্তক্ষেপকরবে।সাক্ষরতাকেএকটিআনুষ্ঠানিকতাহিসাবেনিয়াযেতেপারেএবংরাজনৈতিকদলএমনলোকযতবেশীথাকারভিত্তিতেনিবন্ধনপ্রাপ্তহতেপারে।সম্পত্তিযোগ্যতাপরিমাপেরজন্যসারাদেশেকিছুপ্রমাণমাপেরইয়ার্ডস্টিকপ্রয়োজনহবে।সাক্ষরতাপরীক্ষারক্ষেত্রেমুখোমুখিঅনুরূপসমস্যারমতসমস্যারসম্মুখীনএখানেওহতেহবে।
মৌলিকগণতন্ত্রের মাধ্যমেনির্বাচন:
অনেকক্ষেত্রেমৌলিকগণতন্ত্রব্যবস্থাসংবিধানকমিশনকর্তৃকপ্রণীতপ্রস্তাবনারচেয়েভালো।প্রথমতঃ, এটাসার্বজনীনপ্রাপ্তবয়স্কভোটাধিকারেরউপরভিত্তিকরেতৈরি।দ্বিতীয়ত, এতে সম্প্রদায়ের কল্যাণওসেবা দানে আগ্রহীমানুষনির্বাচনেরউপরএকটি আলাদা উৎসাহ রাখে।প্রার্থীরাব্যক্তিগতভাবেভোটারদেরকাছেপরিচিতথাকেএবংএতেপ্রতিদ্বন্দ্বীপ্রার্থীদেরমধ্যথেকেভোটাররাপছন্দকরারসুযোগপায়।
এইঅবস্থারঅধীনেযারানির্বাচিতহয়েআসেতারাঅনেকটাউজ্জীবিতথাকেএবংদেখাযায়তারাঐসমাজেরএকজনউচ্চতরস্তরেরমানুষ।এইসত্যটিমৌলিকগণতন্ত্রতেগতনির্বাচনেলক্ষ্যকরাযায়।যেদেশেশিক্ষারহার১৫শতাংশ, ৮৪ভাগেরবেশীমানুষযাদেরনির্বাচিতকরেছেতারাহয়নিম্নমধ্যবিত্তবাসমাজেরউচ্চস্তরেরলোকজন।এধরনেরনির্বাচিতরাঅবশ্যইজাতিরউন্নয়নেরক্ষেত্রেঅনেক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিদিতেযাবেএবংসরকারেরকঠোরতরসমালোচকহবেযদিতারামনেকরেযেগৃহীতনীতিদেশেরস্বার্থ ক্ষুণ্ণ করছে – যাদেশেরসাধারণমানুষযারাঅল্পশিক্ষিতওসংবাদ – তথ্যবঞ্চিততাদেরজন্যমঙ্গলজনক।
এখানেমনেরাখতেহবে, মৌলিকগণতন্ত্রচর্চাএখনোনতুনএবংঅভিজ্ঞতাহীনপ্রতিষ্ঠান।সেজন্যকিছুলোকএরগুরুত্বউপলব্ধিকরেনিএবংকিছুলোকনির্বাচনপ্রক্রিয়ায়অংশগ্রহণকরেনি।ফলাফলআরওখারাপহতেপারত।ভবিষ্যতনির্বাচনেরসময়এগুলোগুরুত্বেরসাথেবিবেচনাকরতেহবে।
স্থানীয়সরকারপ্রতিষ্ঠানসমূহেরউপরপরোক্ষনির্বাচনেরপ্রভাব:
স্থানীয়সরকারেরসঙ্গেপরোক্ষনির্বাচনেরসমন্বয়েরব্যাপারেআপত্তিছিল।সবঅসুবিধাবিবেচনায়স্থানীয়সরকারপ্রতিষ্ঠানধ্বংসহবেএবংরাজনীতিকরনহবেবলেআওয়াজওঠে।এটা যে শুধু সুদূর কল্পিত আশঙ্কা তা নয় ভ্রান্ত ও বটে।এসবপ্রতিষ্ঠানেযেসবসমস্যাআসেসেগুলোমূলতস্থানীয়ধরণেরএবংশুধুমাত্রতাদেরনিজস্বছোটজনগোষ্ঠীরজন্যতারস্থানীয়গুরুত্বরয়েছে।জাতীয়নীতিপর্যায়েস্বার্থইউনিয়নপরিষদ / ইউনিয়নকমিটিদ্বারাব্যাহতহয়না।এসবপ্রতিষ্ঠানমূলতএমনকাজ, উন্নয়ন, সমাজসেবায়নিয়োজিতথাকেযাঐছোটএলাকারমধ্যেমানুষেরভাগ্যপরিবর্তনেসহায়কহয়।
বস্তুত,মৌলিকগণতন্ত্রব্যবস্থারশক্তিনিহিতথাকেনির্বাচতলোকদেরনিয়েগঠিত ইলেক্টরাল কলেজে যেখানেতাদেরমূললক্ষ্যথাকেসম্প্রদায়েরকল্যাণসাধনওউন্নীতকরন।এছাড়াজাতীয়পর্যায়েওতারাঅনুরূপমনোভাবওযোগ্যতাপ্রদর্শনকরবে।
অপরপক্ষে, যখননির্বাচনীকলেজস্থানীয়সরকারপরিচালনাওব্যবস্থাপনাথেকেবিচ্ছিন্নহয়, তখনসেটাসম্পূর্নএকটিরাজনৈতিকফোরামেপরিণতহয়এবংএটাযাচাইকরারউপায়থাকেনাযেতারাজনস্বার্থকাজচালিয়েযাবেন।জনগণেরকাছেএটিঅর্থহীনহয়েপড়ে।কারণযেউদ্দেশ্যেনির্বাচনীকলেজগঠিতহয়তারথেকেতাদেরনিজচাহিদারদূরত্বঅনেকবৃদ্ধিপায়।ফলেএইনির্বাচনহয়েপড়েএকটিনিছকআনুষ্ঠানিকতাএবংএইসিস্টেমটিঅপরিবর্তনীয়ভাবেরাজনৈতিকচক্রান্তএবংদুর্নীতিরজন্যএকটিবাহনহয়েওঠে।
জাতীয়সংসদেরক্ষুদ্রআসনবিন্যাস:
নির্বাচনেরবিপক্ষেদ্বিতীয়আপত্তিহলভোটারদেরতুলনায়আসনেরস্বল্পতা।প্রেসিডেন্টনির্বাচনেরক্ষেত্রেনির্বাচনীকলেজেরউপরএইআপত্তিথাকেনা – কারণযেখানেবর্তমানেপ্রায়৮০, ০০০লোকআছেওভবিষ্যতেসম্ভবত১,২০, ০০০হতেযাচ্ছে – তারাকোনভাবেইসহজম্যানিপুলেশনকরতেসক্ষমহবেনা।
আইনসভানির্বাচনেরক্ষেত্রে, প্রতিটিআসনেবর্তমানেপ্রায়৫০০ভোটারঅন্তর্ভুক্তএবংভবিষ্যতে৭৫০করাহবে।তাইএখানেআপত্তিআসতেপারে।এটাঅবশ্যমনেরাখাদরকারযে, প্রেসিডেন্সিয়ালপদ্ধতিতেআইনসভারক্ষমতাসরাসরিনির্বাহীপ্রভাবিতকরারসুযোগনেই।নির্বাচনেরউদ্দেশ্য, আইনসভা- যাসংসদীয়ব্যবস্থায়পরিচালিতহবে – যেখানেনির্বাহীসরাসরিআইনপ্রণেতাদেরওপর নির্ভরশীলছিল- সেটিওএক্ষেত্রেপ্রযোজ্যহবেনা।
আইনসভায়সংসদীয়সরকারনির্বাচনেরক্ষেত্রেসরকারপ্রভাবিতকরারসুযোগথাকেবলেঅনেকেএটাকেবিনিয়োগহিসাবেনেয়।এতেসরকারকেদিয়েক্ষমতাঅপব্যবহারকরেতারনিজেরবাদলেরলোকদেরসুবিধাদেয়ারসুযোগথাকে।নতুনব্যবস্থায়আইনসভারনির্বাচনেএমনসুবিধালাভেরকোনসম্ভাবনাথাকবেনা।তাইএটিকেএকটিব্যবসাউদ্যোগেসরাসরিআর্থিকবিনিয়োগহিসেবেগণ্যকরাহবেনা।এছাড়াও, যারামৌলিকগণতন্ত্রথেকেনির্বাচিতহয়েআসবেনতারাওসেবাকরতেউদগ্রীব হবেনএবংসমগ্রপ্রতিষ্ঠানটিএকহয়েজনস্বার্থেকাজকরতেপারবে।এঅবস্থায়, ইলেক্টোরালকলেজেরমধ্যেদুর্নীতিওচক্রান্তকোননির্বাচনেরফলাফলমীমাংসাকারীপ্রভাবের হতেপারবেনা।
এটিমনেরাখাদরকারযেনির্বাচনীকলেজেরপ্রতিটিসদস্যকিছুক্ষুদ্রগোষ্ঠীরমানুষদ্বারানির্বাচিত, প্রায়৫০০জনপ্রাপ্তবয়স্ক, যেখানেএকটিসাধারণওয়ার্ডেথাকে৮০০- ১২০০লোক।এতেনির্বাচিতব্যক্তিপ্রতিবেশীদেরচোখেচোখেথাকবেনএবংতিনিযদিকখনোঘুষদিয়েভোটদিতেবলেনসেটাওজনসাধারণেরকাছেছড়িয়েপরবে।এবংসেতারনিজেরসম্প্রদায়েরকাছেঘৃণিতহবেন, এবংপরবর্তী নির্বাচনেতারআস্থাওবিশ্বাসহারাবেন।
বুদ্ধিজীবিসমাজে বাদ পড়ার অনুভূতি:
মৌলিকগণতন্ত্রনির্বাচনীঅধিকারনিশ্চিতকরলেওএটাসম্ভবযেবুদ্ধিজীবীরানির্দিষ্টবিভাগেজাতীয়ওপ্রাদেশিকনির্বাচনেবাদঅনুভবকরতেপারে।কিন্তুবর্তমানসাংবিধানিকব্যবস্থাচিরস্থায়ীবাঅনমনীয়নয়এবংকিছুপদ্ধতিনিঃসন্দেহেযথাসময়েঠিককরেতাদেরবৃহত্তরঅংশগ্রহণনিশ্চিতকরাযেতেপারে।সেটাকরতেযেয়েশহরে, একটিনেতৃত্বেরক্ষেত্রেএকটিনির্দিষ্টযোগ্যতাকেগুরুত্বদেয়াসম্ভব – এবংএখানেশুধুমাত্রশিক্ষাবাসম্পত্তিযোগ্যতাকেইবিবেচনারমাপকাঠিকরাঠিকহবেনা।মৌলিকগণতন্ত্রেজাতীয়এবংপ্রাদেশিকস্তরেনেতৃত্বনির্বাচনগুরুত্বপূর্ণভূমিকাপালনকরবেকেনোনানির্বাচনেরপরোক্ষসিস্টেমেএসবপ্রতিষ্ঠানআমাদেরবৃহত্তমজনগোষ্ঠীযারাগ্রামেবাসকরেতাদেরউপরকার্যকরউপায়েপ্রতিনিধিত্বচালিয়েযাওয়ারনিমিত্তেএকটিশ্রেষ্ঠউপস্থাপনা।
অবিলম্বেনির্বাচনেরপ্রয়োজনীয়তা:
আমাদেরসবচেয়েগুরুত্বপূর্ণপ্রয়োজনহচ্ছেঅবিলম্বেসাংবিধানিকসরকারফিরিয়েআনা।যদিঅন্যকোননির্বাচনীব্যবস্থাঅবলম্বনকরাহয়, তাহলেএকটিভালোমানেরভোটেরপ্রস্তুতিওনির্বাচনকরতেকয়েকবছরলেগেযাবে – তাইএইবিলম্বপরিহারকরতেহবে।মৌলিকগণতন্ত্রেনির্বাচিতসদস্যদেরদ্বারাগঠিতনির্বাচনীকলেজঅবিলম্বেএকটিনির্বাচনঅনুষ্ঠানেরজন্যসবচেয়েসুবিধাজনকএবংসহজপদ্ধতি।এইকারণে, সংবিধানকমিশনপরামর্শদেনযেএইপদ্ধতিবর্তমাননির্বাচনেরজন্যগ্রহণকরাউচিত।
<2.26.173>
নয়জন জাতীয় নেতা বললেন বর্তমান সংবিধান অকার্যকর
নতুন ড্রাফট তৈরির জন্যে স্পেশাল বডি নির্বাচিত করতে হবে
(স্টাফ করাসপন্ডেন্ট মারফত প্রাপ্ত)
জনাব হামিদুল হক চৌধুরী, জনাব নুরুল আমিন, জনাব আবু হোসাইন সরকার, জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব মাহমুদ আলী, শেখ মুজিবর রহমান, জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া), সৈয়দ আজিজুল হক এবং পীর মোহসেনউদ্দিন আহমেদ (দুদু মিয়া) গতকাল যে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার বিরোধিতা করে বলেছেন “দ্রুত একটা স্পেশাল বডি নির্বাচিত করে দেশকে একটা শাসনতন্ত্র দেয়া যাতে এর গ্রহনযোগ্যতা জনগনের কাছে প্রশ্নবোধক না হয়”।
গণনাকরা একটি জরুরী গুনাবলী যা শাসনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। পূর্ব পাকিস্তানের নয় জনের মাঝে ছয়জন নেতা বলেছিলেন যে “বর্তমান সংবিধানের মৌলিক আইন সন্নিবেশন করার মত জনপ্রিয় ঐক্যমত এর মত প্রধানতম শক্তির অভাব আছে’ জনপ্রতিনিধিরা মেন্ডেট এর মাধ্যমে নির্বাচিত হন”।
বক্তব্যে বলা হয়-বর্তমান শাসনতন্ত্র গঠিত হয়েছিল জনপ্রিয় উইলকে অবিশ্বাস করে, যাই হোক যুক্তি পেশ করা হল।
নবনির্বাচিতসংসদসভাকেঅকার্যকারীবলেঘোষণাদেওয়াহয়এভাবে: “আনুমানিকতিনসপ্তাহবয়সীএইমন্ত্রীসভাইতিমধ্যেইকার্যসমাধানেঅক্ষমবলেপ্রমানিতহয়েছেযদিনাএটাসম্পূর্ণনতূনরূপেসংস্কারকরাহয়।”
অন্তর্বর্তীকালীনসময়েনতুনসংবিধানপ্রনয়নেরআগেপূর্বেরসংবিধানকেইঈষৎপরিবর্তিতকরেযোগ্যনেতাদেরদ্বারাকাজচলিয়েনেবারমতোকরেনিতেবলাহল।
এরমধ্যেএকটানির্দেশছিল১৯৫৬সালেরসংবিধানেপ্রনীতনাগরিকঅধিকারআইনকেইবর্তমানসংবিধানেরমধ্যেঅন্তর্ভূক্তকরেদেওয়া।এটাকেবলমাত্র “প্রেসিডেন্সিয়ালঅর্ডারে”ইসম্ভব।
বিবৃতিটিতেএটাওউল্লেখ্যছিলযেদুটোশাখাতেইঅর্থনৈতিকভারসাম্যহীনতারয়েছে।এখানেএমননির্দেশনাওছিলযে, সত্যিকারেরগনতন্ত্রেরপরিবেশআনয়নেরলক্ষেরাজনীতিচর্চারপথেবাধাগুলোকেঅপসারণকরতেহবে।
নেতারাএটাইবলেছেনযেরাজবন্দীদেরশর্তহীনমুক্তিএবংঅভিযুক্তরাজনৈতিকনেতাকর্মীদেরবিচারকাজবাতিলকরাইকেবলদেশেসুস্থরাজনৈতিকপরিবেশফিরিয়েআনতেপারে।
নয়নেতারমূলবক্তব্যেরসারাংশএরকমইছিল:
সামরিকশাসনেরঅবসানহয়েছে।ধোয়াশাচ্ছন্নদীর্ঘ৪৫মাসেরঅবসানহয়েছে।
গণতন্ত্রেরদ্বারউন্মোচিতহয়েছে।
<2.26.174>
__________ _____ ___ _______ _____ __
দেখেমনেহচ্ছেকেবলশুরুকিন্তুগণতন্ত্রএখনওআসেনি।ফিল্ডমার্শালআইয়ুবখানকর্তৃকজারিকৃতসংবিধানটিতেকিছুটাহলেওআশাআছে।*
এখনকারদিনেযেজিনিসটাজনগনেরমনেসর্বপ্রথমপ্রশ্নজাগায়সেটিহলদেশটিরসংবিধান।
এটাইছিলনির্বাচনপরবর্তীসময়েসবচেয়েপ্রধানআলোচ্যবিষয়।যদিওসেইনির্বাচনটাপ্রহসনেরনির্বাচনছিল।
মূলতসকলপ্রার্থীইগণতান্ত্রিকসংবিধানপ্রণয়নেরপ্রতিশ্রুতিদিয়েছিলেন।নির্বাচনশেষহয়েযাওয়ারছয়সপ্তাহেরমধ্যেইসত্যিকারেরএকটিকার্যকরীসংবিধানপ্রনয়নেরজোড়ালোদাবীউঠলো।আমরাক্রমান্বয়েইআমাদেরদায়িত্বপালনেব্যর্থহব, যদিনাআমরাসেইবিশেষবিষয় (সংবিধানবাস্তবায়ন) সংক্রান্তপ্রশ্নেরসম্মুখীনহই।আমরাবিশ্বাসকরিযেএইপ্রশ্নটাইএখনসারাদেশেপ্রধানআলোচ্যবিষয়।
পরিবর্তনইপ্রগতিরসাক্ষর:
পরিবর্তনেরমধ্যদিয়েগেলেইকেবলএকটিদেশেসত্যিকারেরউন্নতিআসতেপারে।আরএটাকেবলাতখনইসম্ভবযেখানেমুক্তভাবেবিতর্কএবংমতপ্রকাশেরস্বাধীনতাআছে।একটিগ্রহণযোগ্যস্থায়ীসংবিধানইকেবলএকটিজাতীকেএকতাবদ্ধএবংদৃঢ়রাখতেসাহায্যকরে।
সরাসরিজনগণেরপ্রতিনিধিছাড়াঅন্যকোনপুরাতনকোনখসড়াসংবিধানথেকেনতুনকিছুস্থায়ীহবেনা, এটাআমরাবুঝতেপেরেছিলাম।জনগণেরমধ্যেথেকেইপ্রতিনিধিআসতেহবে।আমরাএজন্যএটাবলছিযে, যেরকমসংবিধানইএটাহোকনাকেন,এটাসবদিকথেকেইগণতান্ত্রিকহতেহবে।কারণগণতন্ত্রেজনগনেরহাতেইথাকেসর্বভূতক্ষমতা।
নেতৃত্বঅবশ্যইজনগণেরদিকথেকেআসতেহবে।দীর্ঘস্থায়ীওদৃঢ়কোনব্যবস্থাকরতেহলেজনগনেরইচ্ছাকেসর্বাগ্রেপ্রাধান্যদিতেহবে।এবংএটাঅবশ্যইসামষ্টিকচিন্তাচেতনাকেপ্রতিফলিতকরবে।কোনপ্রকারলুকোছাপাছাড়াইজনগনেরমনেরকথাবলবে।
সকলশর্তাবলীমেনেসংবিধান:
সংবিধানসাধারণতবানানো হয়এমনভাবেদূরদর্শীতারসাথে ও সুপরিকল্পিতভাবেযেনএটাঅতীতেরশিক্ষাকেকাজেলাগিয়েভবিষ্যতেসম্ভাব্যসকলপ্রকারউত্থান-পতনসামালদিতেপারে।সংবিধানএমনভাবেইবানানোহয়যাতেএটাচিরস্থায়ীহতেপারে।আইনকেএতোটাইসূক্ষভাবেপ্রয়োগকরাহয়যাতেএটাসময়বাঅবস্থারপ্রয়োজনেআরোসূক্ষতরভাবেব্যবহারকরাযায়।
সংবিধানচিরস্থায়ীহওয়ারএকটাইশর্ত- যেএটাতেসকলশ্রেনীরজনগণেরমতামত,সম্মতিএবংচিন্তাধারারস্বাক্ষরথাকতেহবে।
আইনকেএমনভাবেসুসংগঠিতকরাহয়যেএটানিজেইপরবর্তীপ্রজন্মেরনিকটগ্রহণযোগ্যহয়েকাছেটেনেআনে।
সংবিধাননির্মানেসততাএবংআবেগেরসংমিশ্রণএকেশক্তভাবেঠেকিয়েরাখেএবংদূর্ভেদ্যকরেগড়েতোলে।জনগণেরইচ্ছারপ্রতিফলনযেখানেনেই, সেটাএকটুকরাকাগজবইকিছুইনয়।
<2.26.175>
বর্তমানসংবিধানেরকিছুমারাত্মকত্রুটিআছে:
বর্তমানপ্রচলিতসংবিধানটিবিভিন্নদিকথেকেঅসম্পূর্ণ, এমনসবআদেশ-নিষেধেপরিপূর্ণযেখানেজনগণেরপ্রতিনিধিরপ্রতিকোনআস্থানেই।এছাড়াও এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই সংবিধানটি তৈরীই করা হয়েছে জনগণের অনাস্থা নিয়ে এবং বিশেষ জনগোষ্ঠীকে সমস্যাগ্রস্থ ফেলার জন্যে।
৮০০০০ নির্বাচকের একটি দল কাজটি করেছে ৮ কোটির ও বেশি জনগণের উপর কর্তৃত্ব ফলানো হবে।
সংসদকে আসলে কোন ক্ষমতাই দেয়া হয়নি:
এমনভাবে সাংসদ নির্বাচন করা হয়েছিল যাতে সাংসদদের কোন ক্ষমতাই না থাকে। প্রেসিডেন্টের ইশারা ছাড়া এরা কিছুই করতে পারবেনা। এমনকি প্রেসিডেন্ট নিজেই সাংসদদের কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই রাষ্ট্র চালাতে পারে। গত তিন সপ্তাহের দেশ চালানোর ভংগি দেখেই এটা বোঝা হয়ে গেছে যে সংবিধান টি সম্পূর্নভাবে গোড়া থেকে সংস্কার না করলে এটা দিয়ে দেশ চালানো অসম্ভব।
এই মুহুর্তে সাংসদ এবং সরকারের মধ্যে সত্যিকারের কোন যোগাযোগের লক্ষন চোখে পড়ছেনা।
সাংসদদেরকে তাদের গুরুত্ব বোঝানো হচ্ছে যে তাদের কে তো সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে অথচ সত্যিকারের কোন কাজ করার ক্ষমতা তাদের ছিলনা। সরকারের প্রতি অনাস্থা ই সরকারের জনপ্রিয় তা কমিয়ে দিল। স্বাধীন সক্ষম মানুষের রাজনীতিতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা এবং অধিকার সরকারী কূটনৈতিক কৌশলের কারনে কমে যেতে লাগল। তার পরপরই আমরা প্রবলভাবে তাড়না অনুভব করলাম জনগণের হাতে একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠ সংবিধান তুলে দিতে।
মাত্র ৬ মাসেই গ্রহণযোগ্য সংবিধান সম্ভব:
গত ১৫ বছরের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি বিবেচনা করে বলা যায়, আগামী ৬ মাসেই নতুন গ্রহণযোগ্য সংবিধান প্রণয়ন সম্ভব।
তবে আমরা এখনও নিশ্চিত না যে এই নতুন সংবিধান টা কি প্রেসিডেন্ট কেন্দ্রিক হবে নাকি সাংসদীয় হবে। আমরা খুব ভালোমত ই জানি সাংসদীয় সংবিধানের অনুকূলে যে কারন গুলো থাকবে তার মধ্যে ঐতিহাসিক ভাবে কার্য সমাধানে পারদর্শী তার কারণই প্রধানতম হয়ে থাকবে। একইভাবে এই প্রশ্নও আসবে, আমরাজানি, যে সংবিধানটি ঐকিক হবেনা কি ফেডেরাল। এইপ্রশ্নটাও অবান্চিত নয়। কমবেশি সবরকম সমাধানই গ্রহনযোগ্য কারণ এই দুপ্রকার সংবিধানই আমাদের সাতন্ত্র ভৌগলিক অবস্থার সাথে খাপ খায়।
আন্তঃশাখায়সমন্বয়হীনতা:
দেশেরদুঅঞ্চলেরমধ্যেঅর্থনৈতিকঅসামঞ্জস্যতা ছিল চোখে পরার মত, যেটা পরবর্তীতে সবচে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়। আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করলাম এখন আর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের কারোরই কারোর প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নেই।পূর্ববর্তীতে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া যে সব অঞ্চল সমূহকে মাথা উচু করে দাড়াতে সহযোগিতা করার কথা ছিল, তারা তাদের প্রাপ্য সুবিধা পেলনা।
জনগনের নীতি নির্ধারণে অংশ নেয়ার কোন অবকাশই ছিলনা:
দুই অঞ্চলের মধ্যে অসামন্জস্যপূর্ণ অগ্রগতির পিছনে ছিল সংকীর্ণমনা অভিপ্রায় যেকারণে কিনা সাধারণ জনগন খুব কমই অংশ নিতে পারত নীতি নির্ধারণে। একবার জনমত গড়ে উঠেছিল অবশ্য কিন্তু সেটা বিশেষ সুবিধাভোগীগোষ্ঠীর মদদে পিছিয়ে পড়েছিল।
বিভিন্ন কারণে পাকিস্তানের দুই শাখার ভিতরে অসামনঞ্জস্য লক্ষনীয় হয়ে উঠলো, এর মূল কারণটাই ছিল পূর্বপাকিস্তানের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারনী প্রকৃয়ায় অংশ নেওয়ার মত রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিলনা আর অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছলতা বের করে নিয়ে আসার মতন সামগ্রিক অবস্থাও ছিল খুব কম বা ছিলনা বললেই চলে।
আরেকটা বিষয় হল, স্বাধীনতার পর থেকেই সকল প্রকার রাজনৈতিক ক্ষমতা মুষ্টিমেয় লোকের হাতে বন্দী। এখন পর্যন্ত এমন কোনও নির্বাচন হয়নি যেখানে জনগনের মতের প্রকাশ ছিল।
অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে কি করা হবে সেটাই ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশাসন হওয়া উচিৎ জনগনের জন্যে সহজলভ্য:
সামরিক শাসন তুলে ফেলায় যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল সেটিকে আরো প্রলম্বিত করতে এরকম আর ও কিছু কাজ করনীয় ছিল। কোন অবস্থাতেই প্রশাসনের সাথে সাধারণ জনগনের যোগাযোগে বাধা থাকা উচিৎ ছিলনা।এটা ছিল রাষ্ট্রপতি আইয়্যুব খানের প্রতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের জনগনের দ্বারা দেখানো প্রক্রিয়ায় স্থায়ী সংবিধান নির্মান করা ছিল সময়ের দাবী।এমনকি অন্তর্বর্তী কালীন সময়ে ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা দরকার ছিল কিন্তু সরকার সেগুলোকে ছাড়াই ভালোই চালিয়ে যাচ্ছিল।
মৌলিক অধিকার হলএকটি অবিচ্ছেদ্য অংশ:
এটা সত্যি যে নতুন সংবিধানে ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ছায়া থাকা আবশ্যক ছিল।কিন্তু সেগুলো হওয়া উচিৎ ছিল সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য, কেবল “চাপিয়ে দেওয়া আইন” হওয়ার কথা ছিল না।
এগুলো অতি সহজে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারিং বা সংবিধানের অনুচ্ছেদ অনুসারেই গ্রহনযোগ্যকরন হওয়া যেত।
<2.26.177>
সংসদ বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে:
যেটা এখন বেশি প্রয়োজন সেটা হল, বর্তমান সংবিধান মতে আপাতত একটা ভরসা করার মত সংসদ দাড় করাতে হবে। লোভ লালসার উর্ধমূখী হয়ে সংসদটি তৈরী করা হয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষা করতে হবে। তা নাহলে সংসদটির স্বাধীনতা যা আছে সেটাও যাবে। আস্থাই কেবল আস্থা ডেকে নিয়ে আসে সেটা ভুলে যাওয়া চলবেনা।
রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে:
বিচারহীন ভাবে বন্দী থাকা রাজনৈতিক কয়েদিদের আইন মেনেই মুক্তি দিতে হবে যা দেশের সার্বভৌমত্বের আত্নবিশ্বাস বাড়ানোর পরিবেশ নিয়ে আসবে।
রাজনীতিতে শৃঙ্খলা আনতে একাধিক পার্টির প্রয়োজন:
রাজনৈতিক ভিন্নমতের দলের উপস্থিতিই হল গনতন্ত্রের প্রমাণ। নিঃশ্বাস ছাড়া যেমন বেঁচে থাকা যায়না তেমনি একাধিক যোগ্যও বৈধপ্রার্থী ছাড়া নির্বাচন সংঘটিত হতে পারেনা। পার্টি মানেই শৃংখলা। একটি প্রতিনিধি দল কখনোই এমন কারো প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনা যাদের মধ্যে পূর্বে থেকে কোন সম্পর্কই নেই। নিজের কোন ইচ্ছা ছাড়া কোন পার্টি সংসদ বা পার্টি সদস্যকে বাধ্য করতে পারেনা।
সবশেষে, নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াই পারে পার্টিগুলোর ভেতরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে। তাই রাজনৈতিক দল সমূহকে লালন করার ক্ষেত্রে সকল বাধা সমূহ দূর করতে হবে। অন্তত সত্যিকারের গনতন্ত্রের সূচনা হওয়ার আগ পর্যন্ত। তারপরওআমরা চেষ্টা করে দেখব এই দেশটির প্রত্যেকটি লোকের, সে হোক যে কোন পেশার- তাকে এই বিশাল ঘটনার এক অংশীদার করে রাখতে।
জাতীয় ঐক্যের জন্যেও সাদৃশ্য দরকার:
শেষমেষ স্বীকার করতেই হচ্ছে আমরা অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এটার শিকার আমরা শুধু একাই না আর এটা অস্বাভাবিকও না। আমরা চাই, রাষ্ট্রযন্ত্রের সব অংগ প্রত্যংগ একসাথে কাজ করুক। একে অন্যকে বুঝুক যাতে সুবিধা হয় সম্ভাব্য অলংঘনীয় সকল পরিনতিকে মেনে নেওয়াতে।
ভাগ্য নিজ হাতে যাদের ঘাড়ে রাষ্টের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে, তাদের উপর এখন দায়িত্ব হল শান্তি নিয়ে আসা। সবাই একসাথে সমস্যা মোকাবেলা করার জন্যে কাধে কাধ মিলিয়ে দৃঢ় পায়ে দাড়াবে। আমরা নতুন সংবিধান বানানোর কাজটা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করব যাতে আমরা যে দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিয়েছি সেটা যেন সূচারূরুপে পালন করে যথাযথ ভাবে শেষ হয়।
পরবর্তী সংশোধনীসহ রাজনৈতিক দল আইন, ১৯৬২
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ
রাওয়ালপিন্ডি, ১৫ই জুলাই, ১৯৬২।
জাতীয় পরিষদের নিম্নলিখিত আইনটি ১৫ই জুলাই, ১৯৬২ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মতি প্রাপ্ত হয় এবং তা সর্বসাধারনের অবগতির জন্য নিম্নরূপে প্রকাশিত হলো।
১৯৬২ সালের ৩ নং আইন।
রাজনৈতিক দল গঠন ও নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রণীত আইন।
যেহেতু, সংবিধানের ১৭৩ অনুচ্ছেদে এরূপ শর্ত আছে যে, কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের আইন দ্বারা অনুমোদিত না হলে কোন ব্যক্তি নির্বাচনে নিজেকে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে প্রকাশ করতে পারবেন না;
এবং যেহেতু রাজনৈতিক দল গঠন এবং রাজনৈতিক দলসমূহের সদস্য হিসেবে নির্বাচনে তাদের নিজেদেরকে প্রকাশ করার জন্য অনুমতি প্রদান সমীচীন হয়ে পড়েছে;
এবং যেহেতু এই বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৩১-এর দফা(২)-এর অর্থানুযায়ী পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থে একতা অর্জনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিধান জরুরিঃ
সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরুপ আইন প্রণয়ন করা হলঃ
১।সংক্ষিপ্ত শিরোনামা এবং প্রবর্তনকাল – (১) অত্র আইনটি রাজনৈতিক দল আইন, ১৯৬২ নামে অভিহিত হবে।
(২) এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
২। সংজ্ঞাসমূহ – বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কিছু না থাকলে অত্র আইনে-
(ক) “সংবিধান” অর্থ ১৯৬২ সালের ১লা মার্চ প্রনীত পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের সংবিধান।
(খ) “বৈদেশিক সাহায্যের দল” অর্থ একটি রাজনৈতিক দল যেটি-
বিদেশি কোন সরকার অথবা কোন রাজনৈতিক দলের অনুরোধে গঠিত বা সঙ্ঘবদ্ধ; অথবা
বিদেশি কোন সরকার অথবা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সহযোগী বা সম্পৃক্ত;
বিদেশি কোন সরকার অথবা কোন রাজনৈতিক দল থেকে আর্থিক বা অন্য যেকোন উপায়ে সহায়তা নিয়ে থাকে অথবা বিদেশী কোন নাগরিক থেকে এর তহবিলের সিংহভাগ গ্রহণ করে থাকে।
২। ১৯৬২ সালের ৩নং আইনের ধারা ২-এর সংশোধন- রাজনৈতিক দল আইন,১৯৬২- এ, বর্ণিত আইনে নির্দেশিত, ধারা ২-এর দফা(গ)-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ দফা প্রতিস্থাপিত হবেঃ-
“(গ)” “ রাজনৈতিক দল ’ বলতে এমন একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তিসমষ্টি অন্তর্ভুক্ত, যে গোষ্ঠী বা ব্যক্তিসমষ্টি কোন রাজনৈতিক মত প্রচারের বা কোন রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর ঊদ্দেশ্যে কার্য করেন।’’
(১৯৬৩-এর অধ্যাদেশ নং ১ দ্বারা সংশোধন)
৩। নির্দিষ্ট কিছু দল গঠনে নিষেধাজ্ঞাঃ- (১) এমন কোন রাজনৈতিক দল গঠন করা যাবে না যেটি এমন কোন মতবাদ প্রচার করে বা এমন কোন পন্থায় কাজ করে যা ইসলামিক আদর্শের পরিপন্থী অথবা যা পাকিস্তানের নিরাপত্তা বা অখন্ডতার পরিপন্থী।
(২) কোন ব্যক্তি বিদেশি সাহায্যের কোন দল গঠন, সংঘবদ্ধ, প্রতিষ্ঠা বা আহ্বান করবেন না বা অন্য কোন উপায়ে এইরূপ কোন দলের সাথে সহযোগী হবেন না।
৪। বৈধ রাজনৈতিক তৎপরতাঃ- ধারা ৩-এর শর্ত সাপেক্ষে, ইহা বৈধ হবে-
(১) কোন ব্যক্তিসংস্থা বা সমিতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল গঠন, সংঘবদ্ধ বা প্রতিষ্ঠাকরণ;
(২) যেকোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, কোন একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য বা কার্য নির্বাহক হওয়া, অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে সম্পৃক্ত হওয়া; অথবা
(৩) যেকোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, সংবিধানের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের উদ্দেশ্যে, সদস্য হিসেবে নিজেকে বা অন্য কাউকে প্রকাশ করা, অথবা এই আইনের অধীনে সংগঠন, সংঘবদ্ধ বা প্রতিষ্ঠাকরণ নিষিদ্ধ নয় এমন কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন লাভ করা।
৩। ১৯৬২ সালের ৩নং আইনের ধারা ৫-এর সংশোধন- বর্ণিত আইনের ধারা ৫-এর উপধারা(১)-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ধারা প্রতিস্থাপিত হবেঃ-
‘‘(১) উপধারা(২) এর অধীনে অযোগ্য হয়েছেন এমন ব্যক্তি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য অথবা কার্য নির্বাহক, অথবা অন্য কোন উপায়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন না।’’
(১৯৬৩-এর অধ্যাদেশ নং ১ দ্বারা সংশোধন)
২। একজন ব্যক্তি কোন একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য বা কার্য নির্বাহক হতে অযোগ্য হবেন-
(ক) যদি তিনি যেকোনো আদালত কর্তৃক কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং অন্যূন দুই বছরের জন্য দ্বীপান্তর বা কারাদন্ডে দন্ডিত হন, যদিনা তার মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়;
(খ) যদি তিনি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২১ অথবা অনুচ্ছেদ ১২২ এর অধীনে কোন সরকারী পদে অধিষ্ঠিত হতে অযোগ্য হন, যদি না তার অযোগ্যতার সময়কাল অতিবাহিত হয়;
(গ) যদি তিনি পাকিস্তানের কর্ম হতে পদচ্যুত হন, যদিনা তার পদচ্যুতির দিন হতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়; অথবা
(ঘ) যদি তিনি, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, নির্বাচক সংস্থা (অযোগ্যতা) আদেশ,১৯৫৯ (P.O. No. 13 of 1959)-এর অনুচ্ছেদ ৭-এর দফা ২-এর অধীনে নির্বাচক সংস্থার সদস্য হওয়ার অযোগ্য হন।
৬। কিছু দলের ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টে উল্লেখঃ- (১) যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ধারা ৩-এর লঙ্ঘন করে কোন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে অথবা কোন কার্য পরিচালনা করছে, ইহা সমগ্র বিষয়টি সুপ্রীম কোর্টে পেশ করবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমূহের শুনানির পরে উক্ত বিষয়ে সুপ্রীম কোর্ট প্রদত্ত সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
(২) যেখানে সুপ্রীম কোর্ট, উপধারা ১-এর অধীনে, এই সিদ্ধান্ত দেন যে ধারা ৩-এর লঙ্ঘন করে কোন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে অথবা কোন কার্য পরিচালনা করছে, সিদ্ধান্তটি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হবে, এবং উক্ত প্রকাশনার ভিত্তিতে, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটি বিলুপ্ত হবে এবং ইহার সকল সম্পদ এবং তহবিল কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট বাজেয়াপ্ত হবে।
৭। শাস্তিঃ- যদি ধারা ৫-এর উপধারা ২-এর অধীনে অযোগ্য কোন ব্যক্তি কোন একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য বা কার্য নির্বাহক হন, অথবা সদস্য বা কার্য নির্বাহক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেন, সেই ব্যক্তি কারাদন্ডে যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
(২) কোন ব্যক্তি যিনি, ধারা ৬-এর উপধারা ২-এর অধীনে কোন রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হওয়ার পরে, নিজেকে ঐ দলের সদস্য বা কার্য নির্বাহক হিসেবে প্রকাশ করেন, অথবা উক্ত দলের জন্য কাজ করেন অথবা অন্য কোন উপায়ে উক্ত দলের সাথে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন, সেই ব্যক্তি কারাদন্ডে যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
৮। জাতীয় পরিষদ অথবা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হওয়ার অযোগ্যতাঃ- (১) কোন ব্যক্তি যিনি ধারা ৬-এর উপধারা ২-এর অধীনে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় অথবা প্রাদেশিক কমিটির কার্য নির্বাহকরূপে আছেন অথবা ধারা ৭-এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তিনি ঐরূপ বিলুপ্তি বা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দিন হতে পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত জাতীয় পরিষদ অথবা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন না।
(২) যদি একজন ব্যক্তি, কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বা মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে জাতীয় অথবা প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হওয়ার পর নিজেকে ইহা হতে প্রত্যাহার করে নেন, তিনি এইরূপ প্রত্যাহারের তারিখ হতে, ঐরূপ সদস্যপদের মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন, যদি না তিনি তার অযোগ্যতার কারনে সৃষ্ঠ উপনির্বাচনের মাধ্যমে পুণঃনির্বাচিত হন।
৯। অভিযোগ দায়েরের জন্য অনুমোদনঃ- কেন্দ্রীয় সরকারের লিখিত পূর্বানুমতি ব্যতীত এই আইনের অধীনে যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দায়ের করা যাবে না।
১০। বাতিলঃ রাজনৈতিক সংগঠন (অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬২ (XVIII of 1962), এতদ্বারা বাতিল করা হল।
ডব্লিউ.বি. কাদরি
সচিব
ঢাকা গেজেটে প্রকাশিত, ৫ম খন্ড, তারিখ ৩১শে জানুয়ারি, ১৯৬৩
পাকিস্তান গেজেট হতে পুনঃপ্রকাশিত, তারিখ ৭ই জানুয়ারি, ১৯৬৩
পাকিস্তান সরকার
আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়
আইন শাখা
প্রজ্ঞাপন
রাওয়ালপিন্ডি, ৭ই জানুয়ারি, ১৯৬৩।
নং- F.৩২(১)/৬২- Pub – ৬ইজানুয়ারি, ১৯৬৩সালেরাষ্ট্রপতিকর্তৃক তৈরিকৃত নিম্নলিখিত অধ্যাদেশটি জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশিত হলঃ-
১৯৬৩ সালের ১নং অধ্যাদেশ
রাজনৈতিক দল আইন,১৯৬২ সংশোধনের নিমিত্তে একটি অধ্যাদেশ
যেহেতু নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্য পূরণকল্পে রাজনৈতিক দল আইন,১৯৬২ (১৯৬২ সনের ৩নং আইন) এর সংশোধন সমীচীন হয়ে পড়েছে;
এবং যেহেতু জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে নাই এবং আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি বিদ্দ্যমান আছে বলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে;
এখন, অতএব, সংবিধানের ১৭৩ অনুচ্ছেদের সাথে পঠিত অনুচ্ছেদ ২৯ দফা(১) কর্তৃক ন্যস্ত ক্ষমতার প্রয়োগকল্পে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিম্নোক্ত অধ্যাদেশটি তৈরী এবং জারি করা হলঃ
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনামা এবং প্রবর্তনকাল – (১) অত্র অধ্যাদেশটি রাজনৈতিক দল(সংশোধন) অধ্যাদেশ, ১৯৬৩ নামে অভিহিত হবে।
(২) এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
২। ১৯৬২ সালের ৩নং আইনের ধারা ২-এর সংশোধন- রাজনৈতিক দল আইন,১৯৬২- এ, বর্ণিত আইনে নির্দেশিত, ধারা ২-এর দফা(গ)-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ দফা প্রতিস্থাপিত হবেঃ-
“(গ)” “ রাজনৈতিক দল ’ বলতে এমন একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তিসমষ্টি অন্তর্ভুক্ত, যে গোষ্ঠী বা ব্যক্তিসমষ্টি কোন রাজনৈতিক মত প্রচারের বা কোন রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর ঊদ্দেশ্যে কার্য করেন।’’
৩। ১৯৬২ সালের ৩নং আইনের ধারা ৫-এর সংশোধন- বর্ণিত আইনের ধারা ৫-এর উপধারা(১)-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ধারা প্রতিস্থাপিত হবেঃ-
‘‘(১) উপধারা(২) এর অধীনে অযোগ্য হয়েছেন এমন ব্যক্তি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য অথবা কার্য নির্বাহক, অথবা অন্য কোন উপায়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন না।’’
৪। ১৯৬২ সালের ৩নং আইনের ধারা ৭-এর সংশোধন- বর্ণিত আইনের ধারা ৭-এ, উপধারা(২)-এর পরে, নিম্নলিখিত উপধারা (৩) সংযোজিত হবে,যথাঃ-
‘‘(৩) যদি ধারা ৫-এর অধীনে অযোগ্য হয়েছেন এমন ব্যক্তি কোন রাজনৈতিক দল অথবা একইরুপ অযোগ্য অন্য কোন ব্যক্তির রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশগ্রহণ অথবা নিজেকে নিয়োজিত করেন, সেই ব্যক্তি কারাদন্ডে, যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে, অথবা জরিমানা দন্ডে, অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
৫।১৯৬২ সালের ৩নং আইনে নতুন ধারা ৮ক সংযোজনঃ- বর্ণিত আইনের ধারা ৮-এর পরে নিম্নলিখিত ধারা ৮ক সংযোজিত হবে,যথাঃ-
‘‘ ৮ক। (১) অত্র আইনের পূর্বোলিখিত বিধান সমূহে যা কিছুই থাকুক না কেন, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ধারা ৫-এর উপধারা (২)-এর অধীনে অযোগ্য বিবেচিত একজন ব্যক্তি রাজনৈতিক তৎপরতা চরিতার্থ করছেন বা করার চেষ্টা করছেন, সেখানে লিখিত আদেশের মাধ্যমে, উক্ত ব্যক্তিকে অনুর্ধ্ব ৬ মাসের জন্য নিম্নলিখিত কোন কর্মকাণ্ড করা হইতে বিরত থাকার আদেশ প্রদান করতে পারেন-
(ক) সংবাদ সম্মেলনসহ যেকোন সভা আহ্বান; অথবা (খ) সংবাদ মাধ্যমে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করা।
(২) উপধারা (১)-এর অধীনে কোন আদেশ, নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পুনবিবেচিত হবে এবং উক্ত পুনঃবিবেচনা সাপেক্ষে যদি কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন মনে করেন তাহলে উক্ত মেয়াদকে আরো ছয় মাসের জন্য বর্ধিত করতে পারেন।
(৩) উপধারা (১)-এর অধীনে কোন আদেশ লঙ্ঘনকারী যেকেউ কারাদন্ডে, যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে অথবা জরিমানা দন্ডে, অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
(৪) অত্র ধারার অধীনে কোন আদেশ এই আইনের যেকোনো বিধান লংঘনের কারনে আদেশপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির দায়কে কোনভাবে প্রভাবিত করবে না।
মোহাম্মদ আইয়ুব খান, এন. পিকে. এইচ.জে.
ফিল্ড মার্শাল
রাষ্ট্রপতি
আব্দুল হামিদ
সচিব
দি পাকিস্তান অবজারভার
মঙ্গলবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৬২
১৯৬২ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবারের “দি পাকিস্তান অবজারভার” এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সালে “শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট” বাতিলের প্রতিবাদে সারা প্রদেশে হরতাল পালিত হয়। হরতালে ঢাকায় গুলি, লাটিচার্জ ও কাদুনে গ্যাস নিক্ষেপে একজনের নিহত ও শতাধিক আহত হন, এবং অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভরত লোকজনের উপর পুলিশের গুলি, টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জে গতকাল (সোমবার) একজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের দাবীতে ছাত্র-ছাত্রী ও জনসাধারনের বিক্ষোভ ও মিছিলের মধ্য স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়।
শহরের আইন-শৃংখলা রক্ষায় প্রশাসনকে সাহায্যের জন্য দুপুরের দিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়; শহরের ও উপশহরের পাঁচ থানাধীন এলাকায় পুনরায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এদিকে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হরতাল পালনের খবর আসতে থাকে। যশোরে বিক্ষোভরতদের উপর পুলিশের প্রকাশ্য গুলির খবর পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে পুলিশ-জনসাধারন সংঘর্ষের পর সেনা মোতায়েন করা হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় সরকার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একজনের মৃত্যু ও ৭৩ জনের আহত হওয়ার কথা জানায়। এছাড়াও সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৫৯ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে সরকার।
শহরের দোকানপাট, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা ও আধা-সরকারী অফিস এখনও বন্ধ ছিল। হরতালের প্রতি জনসাধারনের সমর্থন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। সরকারী অফিসে উপস্থিতির হার কম ছিল বলে জানা নায়।
বেলা আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে সচিবালয়ের সামনের তোপখানা রোডে কিছু পিকেটার জনসাধারনকে হরতাল পালনের ডাক দেন। তারা তখন চলন্ত গাড়ী বাধা দেন। তখনই পুলিশের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে। ছাত্র-ছাত্রীরা ইট-পাটকেল ছুড়ে জবাব দেন। পুলিশ দৌড়ে সচিবালয়ে ঢুকে গেট বন্ধ করে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ভেতর থেকে বেলা ১১ টার কয়েক মিনিট পুর্বে একটি মিছিল বের হয়।
এরইমধ্যে ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজে পুলিশি অভিযান ও জগন্নাথ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর টিয়ার-গ্যাস নিক্ষেপের খবর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হওয়া ছাত্র-জনতার কাছে পৌছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে জড়ো হওয়া বিভিন্ন দিক হতে আগত মিছিল একসাথে স্লোগান দিতে দিতে আদালতের দিকে যায়।
পুলিশ প্রথম বড় ধরনের একশনে যায় হাইকোর্টের সামনে জড়ো হওয়া ছাত্র-জনতার উপর। এর আগে সেখানে হরতাল সমর্থকরা অনেকগুলো গাড়ী আটকে দেন ও টায়ার পাংচার করেন, গাড়ী ভাংচুর করে রাস্তায় উল্টিয়ে রাখেন, লাঠি হাতে পুলিশের সাথে ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় করেন।
কার্জন হলের মাইন গেইটের সামনে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের একটি দল প্রাদেশিক মন্ত্রী খাজা হাসান আসকারীর মার্সিডিস বেঞ্জে আগুন ধরিয়ে দেন। সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার পথে মন্ত্রী পিকেটারদের কবলে পড়েন। মন্ত্রীকে গাড়ী থেকে জোর করে নামিয়ে দিয়ে গাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মন্ত্রী এরপর হেটেই সচিবালয়ে যান।
এরপর মিছিল পুলিশের বাধা ছাড়াই এগিয়ে যায়। তখন জগন্নাথ কলেজ থেকে কয়েকশত ছাত্র-ছাত্রী মিছিলে যোগ দেন। হাইকোর্ট ভবনের মেইন গেইটে পুলিশী ব্যারিকেড বসানো হয়। হরতাল-কবলিত গাড়ী উদ্ধারগামী ফায়ারব্রিগেডের গাড়ী বিশাল মিছিলে আটকা পড়ে ঘটনাস্থলে পৌছতে ব্যার্থ হয়।
মিছিলটি পুলিশী ব্যারিকেডের মুখোমুখি না হয়ে আব্দুল গনি রোডে অবস্থিত সচিবালয়ের দিকে যেতে থাকে, এবং মিছিলের অর্ধেক কোনরকম পুলিশী বাধা ছাড়াই এগিয়ে যায়। মিছিলকারীদের কেউ কেউ পাথর ছুড়ে মারলে পুলিশ ট্রাক থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে বিক্ষোভকারীদের আক্রমন করে ছত্রভংগ করে দেয়। তীব্র যন্ত্রনায় একজনকে হাটু ধরে কাতরাতে দেখা যায়, এবং তাকে কমিশনার অফিসে জোর করে ঢোকানো হয়। দশ বছরের কম বয়সী এক বালকও আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা ইট ছুড়ে জবাব দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সংঘর্ষকারীরা পুনরায় জড়ো হয়ে জোর করে আব্দুল গনি রোদের দিকে এগিয়ে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে ইট নিক্ষেপ চললেও মিছিলটি প্রায় বিনা বাধায় জিন্নাহ এভিনিউ হয়ে নবাবপুর টালিগড়ের দিকে এগিয়ে যায়।
এদিকে ক্রমেই বড় হতে থাকা ছাত্রদের একটি মিছিল শান্তিপূর্নভাবে দুপুর ১২ টার দিকে রাতখোলা পৌছায়। এইসময়ে ট্রাফিক পুলিশবাহী একটি পিকয়াপ দক্ষিন দিক থেকে মিছিলের দিকে এগিয়ে আসে। পুরো রাস্তাজুড়ে মিছিল থাকায় এটি আর এগুতে পারছিলো না। বিক্ষোভরত অনেকে ইট ছোড়া শুরু করেন। এসময় কিছু ছাত্র-ছাত্রী এগিয়ে এসে গাড়ীটি ঘিরে ধরলে ইট ছোড়া বন্ধ হয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তায় গাড়ীটি পূর্ন গতিতে জেলা জজ কোর্টের দিকে পিছু হটে। ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে গাড়ীটি রেখে যান এবং পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে আদালত এলাকায় ঢুকে পৌছান। মিছিলের অগ্রভাগ আদালত ভবন নিরাপদে পাড়ি দেওয়ার পর পুলিশ আদালত ভবন থেকে মিছিলে লাঠিচার্জ করে মিছিলকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলে।
বিক্ষোভকারীরা তখন পুলিশের ও আদালত ভবনের দিকে ইট নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ তখন পুনরায় লাঠিচার্জ করে মিছিলটি দ্রুত ছত্রভংগ করে দেয়। এক বালক সহ অনেকেই তখন আহত হন।
ইট, পাথর ও টিয়ার-গ্যাসের খালি শেলে পুরো রাস্তা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়।
এদিকে ইপিআর-এর একটি দল ভিক্টোরিয়া পার্ক ক্যাম্পে অপেক্ষমান ছিল। ফায়ার ব্রিগেডের একটি ভ্যান আদালতের দিকে যাওয়ার সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের মুহুর্মুহ ইট নিক্ষেপের কবলে পড়ে। ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা, যাদের অনেকেই আহত, ভ্যানটি ফেলে নিরাপদে আশ্রয় নেন।
এরপরই পুলিশ ভয়ানক লাঠিচার্জ করে ও মুহুর্মুহ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে রাস্তা খালি করে দেয়।
বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটের দিকে রুটিন সতর্কবানী দিয়ে পুলিশ বিক্ষিপ্ত মিছিলে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। তিন রাউন্ড গুলি করা হয় বলে সরকারের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মিছিলকারীদের কেউ কেউ পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারেন। পুলিশ তখন গনহারে লাঠিচার্জ করে রাস্তা খালি করে দেয়। কালেক্টোরেটের উত্তর গেইটে থাকা সাধারন মানুষের উপরও পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এই নির্বিচার লাঠিচার্জ থেকে কেউ রেহাই পাননি এমনকি ছোট ছোট বালকদেরও ছাড় দেয়নি পুলিশ। ঘটনা কাভার করতে আসা এক সাংবাদিকও রেহাই পাননি; তাকে একটি পুরনো ০১১ দিয়ে আঘাত করা হয়। ঠিক তখনই মেডিকেল কলেজ থেকে একটি এম্বুলেন্স এসে লাঠিচার্জে আহত অনেককে দ্রুত সরিয়ে নেয়।
ছত্রভঙ্গকৃত মিছিলটি চার্চ ও মুকুল থিয়েটার এর সামনে পুনরায় জড়ো হওয়া শুরু করলে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশ তাদের উপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এর কয়েক মিনিট পরই ইপিআরের একটি আর্মড কার এসে ঘটনাস্থলে পৌছায়। এর কিছুক্ষন পরে ১২ টা ৫৫ মিনিটে রাইফেলের শব্দ শোনা যায়। এরপরই কালেক্টোরেট বিল্ডিং এর উত্তর গেইটের উত্তরদিকে সবাই আতংকিত হয়ে ছত্রভংগ হয়ে যান।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে পড়লে গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যাক্তিকে ক্ষত-বিক্ষত পেট নিয়ে কালেক্টোরেট ভবনের বিপরীতে অবস্থিত প্রাদেশিক একুইজিশন অফিস এর বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বেলা ১ টা ৫ মিনিটের দিখে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি এম্বুল্যান্স এসে নিয়ে যায়। দুপুর থেকে বিকেল এমনকি সারা রাত অসংখ্য মানুষ এসে ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড ও ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে।
বেলা ২ টা ৩০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের ও আশেপাশের সকল রাস্তার নিয়ন্ত্রন নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে সেনাবাহিনীর একটি শক্তিশালি গ্রুপ মোতায়েন করা হয়। বিকেলের ২০ মিনিটের বৃষ্টি পুলিশ ও দর্শনার্থী সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে বাধ্য করে।
যশোরঃ যশোর থেকে এপিপি জানিয়েছে, পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৪১ জন পুলিশ সদস্য ও পুলিশ সুপার সহ অন্ততঃ ৪৩ জন আহত হয়েছে।
চট্টগ্রামঃ বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রী ও পুলিশের মধ্যে ৫০ জন পুলিশসহ শতাধিক আহত হওয়ার পর প্রশাসনকে সাহায্যের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ২৭ জন ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।