You dont have javascript enabled! Please enable it!

জীবনচিত্র        নামঃ ডা. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী

                   Dr. A.F.M Abdul Alim Chaudhury

                                                   ডাকনামঃ টুনু

                                                   পিতার নাম : আবদুল হেকিম চৌধুরী

                                                   পিতার পেশাঃ জেলা স্কুল পরিদর্শক

                                                   মাতার নামঃ সৈয়দা ইয়াকুতুন্নেছা

                                                   ভাইবোনের সংখাঃ তিন ভাই, এক বোন; নিজক্ৰম-তৃতীয়

                                                   ধর্মঃ ইসলাম

                                                   স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-খয়েরপুর, উপজেলা-অষ্টগ্রাম,

                                                   জেলা-কিশোরগঞ্জ ।

স্ত্রীর নামঃ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী

বিয়েঃ ২১ ডিসেম্বর, ১৯৬৫

সন্তান-সন্ততিঃ দুই কন্যা

ডা. ফারহানা চৌধুরী নীপাঃ এমবিবিএস (ঢাকা), এমপিএইচ, নিপসম, মহাখালী ঢাকা

ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পাঃ এমবিবিএস, এমএস(চক্ষু), জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা

 

তথ্য প্রদানকারী

শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী

শহীদ চিকিৎসকের স্ত্রী

৬৬, ধানমন্ডি আ/এ, সড়ক নং-৭ এ

ঢাকা-১২০১

 

 

৬৮ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

 

আমার স্বামী

শহীদ ডা. আ ফ ম আবদুল আলীম চৌধুরী

শ্যামলী চৌধুরী

একাত্তরের কিছু আগে আজিমপুরের বাসা থেকে আমরা পুরান পল্টনের নতুন বাসায় চলে এলাম। বাসাটি ছিল তিনতলা। আলীম সেটি ভাড়া নিয়েছিল নিচের তলায় চোখের ক্লিনিক করবে বলে। কিছুদিনের মধ্যেই ক্লিনিক হয়ে গেল। একতলায় ক্লিনিক, দোতলা ও তিনতলায় আমরা থাকতাম। আরম্ভ হলো মুক্তিযুদ্ধ। ২৫ মার্চের রাতেই বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল আমাদের বাসায় এলেন। তিনি ছিলেন আমার ননদের বাসায়। তাঁকে দায়িত্ব পড়লো আমাদের ওপর। কয়েকদিন তাঁকে তিনতলার একটি ছোট ঘরে রেখে ২৯ মার্চ শাড়ি পরিয়ে আমরা সরিয়ে দিলাম। আমার ছোট ভাই স্বপন বোরকা পরিহিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবকে মরহুম আহমেদ ভাইয়ের বাসায় দিয়ে এলো। সেখান থেকেই তাঁকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর, বিকেল সাড়ে চারটা। ভারতীয় বোমারু বিমান অনবরত আঘাত হানছে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর। সম্ভবত পিলখানার দিকেই বোমাবর্ষণ হচ্ছিলো। ২৯/১, পুরানা পল্টনের বাসার দোতলার সামনের বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে বোমা হামলার দৃশ্য দেখছিল আলীম। মা আর আমিও ছিলাম ওর পাশে।

ও পাস থেকে বলছিল, ‘দ্যাখো, ভারতীয় বিমানগুলো ইচ্ছেমতো বোমা ফেলছে। মনে হচ্ছে, যেন এটা ওদের আকাশসীমা। আর এখনও মওলানা মান্নান বলে কিনা আমেরিকা ওদের রক্ষা করবে। সপ্তম নৌবহর নিয়ে ওরা এসে গেছে।’ কথাগুলো বলছিল আর প্রাণ খুলে হাসছিল। দেশ স্বাধীন হতে যে আর বাকি নেই একথা সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতোসেদিনই বলছিল, দেখে আর দু’একদিনের মধ্যেই আমরা স্বাধীন হয়ে যাব।

কয়েক মিনিট পরই আমরা একটা গাড়ির শব্দ পেলাম। দাঁড়িয়ে দেখি, মাটি লেপা ছোট মতো একটা মাইক্রোবাস এসে আমাদের বাসার নিচের তলার

গেটের সামনে দাঁড়িয়েছে।

তখন ছিল কারফিউর সময় এ গাড়ি দেখেই বুঝতে পারলাম,

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৬৯

 

ডা. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী

 

এটা পাকিস্তানিদের গাড়ি। এরকম গাড়ি প্রতিদিনই সময়ে-অসময়ে আসতো মওলানা মান্নানের কাছে। একাত্তরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি পুরানা পল্টনে আমাদের প্রতিবেশী তৎকালীন পিডিপির মতিন সাহেব মওলানা আবদুল মান্নানকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলেন। আমরা তখন মওলানার আসল পরিচয় জানতাম না। যুদ্ধকালীন সময়ে একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে বাড়িতে রাখার বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি জানালাম। মতিন সাহেব অনুনয়-বিনয় করে বললেন, কে বা কারা মওলানার দেশের বাড়িঘর জ্বলিয়ে দিয়েছে। ছেলেমেয়ে-পরিবার নিয়ে তিনি পথে বসেছেন। একটু আশ্রয় না দিলে ভদ্রলোকটি কোথায় যাবেন?

একথা শুনে পরোপকারী আলীমের মন নরম হয়ে গেল। কিন্তু আমি একদম বেঁকে বসলাম; অচেনা লোককে কিছুতেই এখানে জায়গা দেয়া যাবে না, জানিয়ে দিলাম আলীমকে। কিন্তু মতিন সাহেবের অনুরোধের চাপে আলীমকে রাজি হতেই হলো। শুধু তাই নয়, এক কাপড়ে চলে আসা মওলানা পরিবারকে তিন-চারদিন পর্যন্ত চা-নাশতা, দুপুর আর রাতের আহার, চাদর-বালিশ ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করতে হলো। দশ-বারোদিনের মাথায় সবকিছুই জানা গেল। সেই অসহায় ভদ্রলোকটি আর কেউ নন; আল বদর বাহিনীর সংগঠক মওলানা আবদুল মান্নান। আর তার বাড়িঘর জুলিয়ে দিয়েছে মুক্তিবাহিনী। শুনে কপালে করাঘাত ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকলো না। আলীম খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো। ওর করুণ দশা দেখে ওকে আমি আর কনো রকম দোষারোপ করিনি। আমার আপত্তির কথা বারবার বলে ওকে আর বিব্রত করার ইচ্ছে হয়নি। কেবল কাজকর্মে আমরা আরও সতর্ক হয়ে গেলাম। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল মওলানার ঘরবাড়ি জিনিসপত্রে ভরে গেছে। তাদের চালচলনে বুঝতে পারলাম তারা প্রচুর ধনসম্পদের মালিক। এরপর শুরু হলো তাদের বাড়িতে পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের আনাগোনা। বুঝতে পারলাম চুপিসারে এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু সে পথও বন্ধ হয়ে গেল দিন কয়েকের মাথায়। একদিন দেখি মওলানার গেট এবং আমাদের গোট দু’দিকেই দু’জন করে বন্দুকধারী পাহারায়। তবে এদের পোশাক একটু ভিন্ন ধরনের। পরে জেনেছিলাম, এরা আল বদর বাহিনীর লোক।

সেদিন আলীমকে ধরে নিতে এসেছিল এই আলবদরের লোকেরাই। গাড়ি থেকে নেমে ওরা মওলানার বাড়িতে প্রথম ঢুকেছে। তাই আমাদের মনে কোনো সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট পর আমাদের সিড়ির নিচে বাইরের দরজার বেল বেজে উঠলো। ওপর থেকেই দেখলাম দু’জন আলবদর বন্দুক উঁচিয়ে দরজা খুলতে বলছে।

আলীমকে জিগ্যেস করলাম, কী করবো? ও বললো, খুলে দাও। বলেই ও নিচের তলায় মওলানার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। ওকে এগোতে দেখে জিগ্যেস করলাম, কোথায় যাও? ও বলল, মওলানা সাহেরের কাছে। তিনি তো অসুবিধা হলেই যেতে বলেছেন। মওলানা সাহেব সবসময় আলীমকে বলতেন, ডাক্তার সাহেব। আপনি আমাকে বিপদে আশ্রয় দিয়েছেনআমি জীবন দিয়ে হলেও আপনাকে রক্ষা করবো।

মাঝে মধ্যে বাসা ছাড়ার কথা বললেই আলীম আমাকে বলতো, মওলানা সাহেব আমার কোনো ক্ষতি করবেন না। আমি তো তার কোনো ক্ষতি করিনি বরং আমি তার বিপদে সাহায্য করেছি।

সে ভরসাতেই আলীম সিঁড়ি দিয়ে নেমে মওলানার দরজায় প্রাণপণে শব্দ করতে থাকলোবারবার অনুরোধ করলো, মওলানা সাহেব দরজাটা একটু খুলুন। কিন্তু অনেকবার ডাকার পরও মওলানা দরজাটা খুললেন না। শুধু ভেতর থেকে বললেন, ভয় পাবেন না। আপনি যান। আমি আছি। আলীম তখন দৌড়ে ওপরে উঠতে যাচ্ছিল। কিন্তু ততক্ষণে ওরা ঢুকে গেছে ভেতরে। আলীম বলার পর বাসার কাজের ছেলে হাকিম আর মোমিন দরজা খুলে দিয়েছিল।

ঘাতকরা ওকে দেখেই বললো, হ্যান্ডস আপ। আপনি আমাদের সাথে চলুন।

আলীম বলল, কেন?

ওরা বলল, দরকার আছে।

ও কাপড় বদলে আসতে চাইলো। ওরা বললো, অন্য কাপড়ের দরকার নেই। কোথায় যেতে হবে জানতে চাইলে বলল, তা গেলেই জানতে পারবেন।

লুঙ্গি আর শার্ট পরেই আলীম ওদের সাথে চলে গেল। মওলানার মিথ্যে আশ্বাসে ও হয়তো বিশ্বাস

 

৭০ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

 

ডা. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী

 

করেছিল। ওরা দরজার বাইরে যেতেই হাকিম আর মোমিন দৌড়ে ওপরে এসে বলল, সাহেবকে ওরা নিয়ে যাচ্ছে। আমি মওলানার কাছে গেলাম। কাতর অনুনয়ে ভেঙে পড়লাম তার সামনে। কখনও লোকটার সাথে আমি কথা বলিনি। সামনেও যাইনি কখনো| আজ আর সেসবের কোনো বালাই ছিল না। মাইক্রোবাসাটা তখনও ছাড়েনি। বললাম মওলানা সাহেব, এখনও গাড়িটা ছাড়েনি। আপনি একটু দেখুন। দয়া করে ওদের বলুন, ওকে যাতে ওরা ছেড়ে দেয়।

মওলানা চুপ করে বসে থাকলোগাড়ি ছাড়ার শব্দ পাওয়া গেল। আমি আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম নাএই অবস্থা দেখে তিনি বললেন, অস্থির হবেন না। ওরা আমার ছাত্র। ওরাই ওনাকে নিয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার রাব্বিকেও নিয়েছে।

জিগ্যেস করলাম, কেন নিয়ে গেল?

বললেন, চিকিৎসার জন্য।

কোথায় জানতে চাইলে বললেন, সিএমএইচে (কমবাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল)

মওলানার কথা শুনে আমি কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে ওপরে উঠে এলাম। মিসেস রাব্বিকে ফোন করলাম। অনেক চেষ্টার পর পেলাম। তিনি বললেন, বিকেল চারটায় ডা. রাব্বিকে নিয়ে গেছে। কান্না জড়ানো গলায় তিনি বললেন, ওরা কি আর ফিরবে? একথা শুনে অসম্ভব ভয় পেয়ে গেলাম। নানা অস্পষ্ট আশঙ্কার দোলায় দুলতে লাগলাম ভেতরে ভেতরে। আবার নিচে ছুটে নেমে এলাম। মওলানাকে বললাম, আপনি আমাকে সঠিক খবর দিন ও কোথায় আছে? তিনি বললেন, এতো উতলা হওয়ার কিছু নেই।বললাম তো চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে। কাজ শেষ হলেই দিয়ে যাবে। ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের সাথে আমার কথা হয়েছে।

বললাম, শীতের কাপড় নেয়নি। ওগুলো পাঠাবার ব্যবস্থা করে দিন।

বললেন, সে ব্যবস্থা ওরাই করবে।

ওপরে উঠে আবার ফোন করতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার টেলিফোন সেট তখন শব্দহীন। আমার আরও দিশেহারা হওয়ার অবস্থা। আবার ছুটে গেলাম মওলানা সাহেবের কাছে। বললাম, টেলিফোন ডেড। আমি আপনার ফোন থেকে আলীমের সাথে কথা বলতে চাই।

তিনি বললেন, পাগল হয়েছেন? এখন ওরা ভীষণ ব্যস্ত। দেখছেন না, চারদিকে বোম্বিং হচ্ছে। এখন ফোন করা যাবে না। তবু পীড়াপীড়ি করতে থাকলামতখন তিনি বললেন, ঠিক আছে চলুন আপনাকে ডাক্তার সাহেবের কাছে নিয়ে যাই।

আমি খুশি হয়ে ওপরে উঠে এলাম। মাকে বললাম, যাই। কিন্তু মা যেতে দিলেন না। পরে বুঝেছি। এটাও ছিল মওলানার আর একটি চালাকি।

রাত ক্রমশ বাড়তে থাকে। কান পেতে বসে থাকি দরজার বেল শোনার জন্য। সামান্য খুটখাটের আওয়াজেও সচকিত হয়ে উঠছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল এবার নিশ্চিতই ও এসেছে।

এক সময় ভোর হলো। ভাবলাম রাতে আসেনি, এখন নিশ্চয় আসবে। বারান্দায় যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর তাকিয়ে থাকলাম।

১৬ এবং ১৭ ডিসেম্বর বহু খোঁজাখুঁজির পর সন্ধান পাওয়া গেল রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে। সেখানেই লাশ হয়ে পড়ে ছিল আলীম আরও অনেক বুদ্ধিজীবীর সাথে।

১৮ ডিসেম্বর ওকে বাসায় নিয়ে আসা হলো এবং আজিমপুর গোরস্তানে দাফন করা হলো। নিৰ্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার এসব বুদ্ধিজীবীর ওপর কী পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়েছিল তা যারা দেখেনি তাদের বোঝানো কষ্টকর। কী অদ্ভুত গোস্টাপো কায়দায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের চর আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনী দেশের প্রথম সারির বরেণ্য ব্যক্তিদের হত্যা করেছে তা শুধু হিটলারের অত্যাচারের কথাই মানুষকে মনে করিয়ে দেয়।

আলীমের হাত দুটি নারকেলের দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। চোখ বেঁধেছিল গামছা দিয়ে তা গলায় এসে ঠেকেছিল। কপালের বাঁ দিকে বেয়নেটের গভীর ক্ষত। বুকে অসংখ্য গুলি। তলপেটের বাঁ দিকে বেয়নেটের আঘাত। সব মিলিয়ে ক্ষতবিক্ষত বিভীষিকাময় এক চেহারা। দু’দিন আগে চোখের সামনে থেকে

 

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৭১

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৭২

 

ডা. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী

 

উঠে যাওয়া মানুষটির এ অবস্থা দেখে আমার সহ্যের সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেল। মনে হলো আর বেঁচে থাকা যাবে না৷ বেঁচে আর লাভ নেই।

আমার স্বামী ডা. এএফএম আবদুল আলীম চৌধুরী ১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জ হাইস্কুলে থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজেই যোগ দেন। ১৯৬১ সালে তিনি রয়্যাল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অব লন্ডন এবং রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব ইংল্যান্ড থেকে ডি ও ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি সিনিয়র হাউজ অফিসার(চক্ষু) হিসেবে রয়্যাল আই অ্যান্ড ইয়ার হাসপাতাল, ব্রাডফোর্স, রেজিস্টার (চক্ষু) হিসেবে লন্ডনের হুইপস ক্রস হাসপাতাল এবং সেন্ট জেমস হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে কর্মরত ছিলেন। দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (তদানীন্তন আইপিজিএমআর), ঢাকা মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং কুমুদিনী হাসপাতালে তাঁর পেশাগত জীবন কাটে। সংগঠক হিসেবে ডা. আলীম চৌধুরী তৎকালীন পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, পাকিস্তান চক্ষু চিকিৎসক সমিতি, এশিয়াটিক সোসাইটি অব পাকিস্তান ইত্যাদির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

আলীমের জীবনযাত্রা ছিল সাদামাটা। কখনও বিলাসিতার মোহ তাকে আচ্ছন্ন করেনি। আমাদের বাড়িতে কখনও কোনো আড়ম্বর ছিল না। এমনকি একটি ভালো সোফা সেটও ছিল না। কখনও একটি কিনতে চাইলে আলীম বলতো, মানুষ তোমার সোফার কাছে আসবে না। তোমার কাছে আসবে।

আত্মম্ভরিতা তার একেবারে অপছন্দ ছিল। এমনকি নিজের বিন্দুমাত্র প্রশংসাও অন্যের কাছে করাকে ভীষণ ঘূণা করতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় ও বহু কাজ করেছে যা কোনোদিন মুখ ফুটে বলেনি। বরং কখনও বলে ফেললে বলেছে, তোমার ডান হাত কাজ করবে, বাঁ হাত জানবে না।

আলীম বহু চাঁদা উঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে। গাড়ির বনেট ভর্তি করে ওষুধ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন ওষুধ ফ্যাক্টরিতে ঘুরে ঘুরেসেসব আবার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসতোতাঁদের একটি গোপন হাসপাতাল ছিল, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের রীতিমতো চিকিৎসা হতো।

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসই শুধু নয়, সারাজীবনই সে দেশের কাজে বিভিন্নভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। ছাত্রজীবনে যখন সে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিল তখন বিভিন্ন আন্দোলনে তার সক্রিয় অবদান ছিল।

১৯৫২-র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ও তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। এর আগে ১৯৪৮ সালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের যে ধর্মঘট হয় ও তাতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৫৪ সালে শহীদ দিবসে পতাকা উত্তোলনের অপবাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তান সরকারের কুনজরে পড়ে তাকে বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করতে হয়। ১৯৫৮ সালে আলীম লন্ডনে যায় ডিও পড়তে। সেখানেও পড়াশোনার সাথে সাথে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থেকেছে সে। ১৯৬২ সালে লন্ডনে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার পেছনে যাদের অপরিসীম অবদান ছিল, আলীম তাদের মধ্যে একজন। ও ছিল এর অন্যতম আহ্বায়ক এবং প্রথম সম্পাদক।

অত্যন্ত কর্মনিষ্ঠ আলীমের ভেতরে ছিল একটি সাহিত্যিক মনও। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, বিদ্রোহী কবি নজরুল ও নবযুগের বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর ছিলেন ওর অত্যন্ত প্রিয় কবি। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে এদের ওপর বক্তব্য এবং আলোচনায়ও অংশ নিয়েছে। নিজেও বেশকিছু প্ৰবন্ধ ও কবিতা লিখেছে।

ছাত্রজীবনে আলীম’দৈনিক ইত্তেহাদ’, ‘দৈনিক মিল্লাতের’ সাব এডিটর ছিল। ‘যাত্রিক’ নামে একটি প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকার সম্পাদনাও করেছে ও। শিক্ষক হিসেবেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিল আলীম। ছাত্রছাত্রীরা তাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করত। ‘গণমুখী চিকিৎসা’ পদ্ধতি চালু করার জন্যও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছে।

এ দেশের দরিদ্র জনসাধারণের প্রতি ছিল ওর গভীর মমত্ববোধ। নিজের গ্রামে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করেছে এবং ওষুধ দিয়েছে। গরিব রোগীদের কাছ থেকে কখনও ও ‘ভিজিট’ গ্রহণ করতো না। কোথাও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা মহামারী দেখা দিলে সাহায্য ও চিকিৎসা সংস্থা গঠন করে সবসময়ই ছুটে যেত দুর্গত এলাকায়।

 

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৭৩

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৭৪

ডা. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী

তৎকালীন পাকিস্তান মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আলীম জড়িত ছিল এর সাথে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে এতো ভালোবাসতো যে সে তাঁর দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের সাথে অ্যাসোসিয়েশনের কাজকর্মও একবারে রুটিনমাফিক করেছে শেষ দিনটি পর্যন্ত।

বড় বেশি কর্মব্যস্ত ছিল আলীম। তবুও এরই মধ্যে পরিবারের প্রতি তার মনোযোগ এবং কর্তব্য কখনো ব্যাহত হয়নি। বাবা, মা, ভাইবোনের প্রতি ছিল ওর অগাধ শ্ৰদ্ধা এবং ভালোবাসা। নিজের পরিবারেও ছিল অনন্য। সন্তানদের ভালোবেসেছে অত্যধিক। স্ত্রীর প্রতি ছিল শ্ৰদ্ধাবোধ এবং ভালোবাসা। অধিকার খাটানো দূরের কথা, তার বিনীত নম্র আচরণে মুগ্ধ ছিল চারপাশের সবাই। আমার বাবা অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসে তাঁর সমস্ত দায়দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেছিল। শুধু তাই নয় আমার মা, তিন ভাইবোন সহ পুরো পরিবারকেই নিজের কাছে রেখেছে আমৃত্যু।

বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-দারিদ্র্য, শোষণ ও বঞ্চনা ওকে পীড়িত করতো। তাই সক্রিয়ভাবে রাজনীতি না করলেও প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে একাত্ম হয়ে অন্তরালে থেকে কাজ করেছে। নামকরা প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বহু গোপন বৈঠক ওর চেম্বারে হয়েছে। প্রগতিশীল প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই সে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। পাকিস্তানের শাসকবৃন্দ যখন বাংলাদেশের বহু রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তখন প্রগতিশীল প্রায় সব দলেরই নেতা ও কর্মীদের চিকিৎসা এবং অর্থ দিয়ে সাহায্যে করার ব্যাপারে আলীম সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয়ও দিয়েছে ও সার্থকভাবে । ভগ্নমুখ প্রগতিবাদী দলকে পুনর্গঠিত করার জন্য সবসময় আলীমের একাগ্রতা ছিল লক্ষণীয়। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতি ইত্যাদির অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই আলীমের সাংগঠনিক তৎপরতার সঠিক পরিচয় পাওয়া যাবে। পাকিস্তান আমলে আত্মগোপনকারী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ করা এবং যোগাযোগ রক্ষা করা, অর্থ সাহায্য দেয়া ছিল ওর একান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে আলীম সর্বদাই ছিল সোচ্চার। এ বিষয়ে ছিল ও একেবারেই আপোসহীন। কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি অন্যায় দেখলে। ঘুষ, দুনীতির বিপক্ষে বহু ঝগড়াঝাঁটি করেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সাথে। এসব রোধ করার উদ্দেশ্যেই ডাক্তারদের চাকরি ‘নন-প্র্যাকটিসিং’ করার জন্য ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। এতে করে বহু লোকের বিরাগভাজন হয়েছে আলীম।

ছবি তোলা ছিল ওর ব্যক্তিগত শখ। ছাত্রজীবন থেকেই ও ছবি তুলতো। একবার ওর ছবি পুরস্কারও পেয়েছিল। আলীমের হাতের লেখা ছিল ঝকঝকে পরিষ্কার। ওর ইচ্ছে ছিল মেয়েদের নিজের হাতে লেখা শেখাবে, লেখাপড়া করবে। বলতো, আমার মেয়েদের সন্ধ্যাবেলা আমি নিজে পড়াবোসে সময় এক ঘণ্টা প্র্যাকটিস কমিয়ে দেব। আমার আদর্শে আমি তাদের গড়ে তুলবো।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মাঝে মধ্যেই ও বলতো, মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না কিন্তু ধরে-বেঁধে অসহায়ের মতো মারবো এটা আমি ভাবতে পারি না। নিজের জন্য ভাবি না, শুধু ভাবি তোমার জন্য, বাচ্চাদের জন্য। আমি না থাকলে ছোট দুটি শিশুকে নিয়ে তুমি কী করবে!

অসীম স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে গড়া এমন অসংখ্য সংসার তছনছ করে দিয়েছে একাত্তরের ঘাতকেরা। চিহ্নিত অপরাধী মওলানা আবদুল মান্নানের বিচার তো হয়নি, উপরন্তু জীবিতাবস্থায় তাকে সমাজের প্রথম সারিতে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। শুধু মওলানা মান্নানই নয় এমন বহু যুদ্ধাপরাধী, ঘাতক, দালাল, রাজাকার, আল বদর, আল শামসরা বাংলাদেশে নিরাপদে বসবাস করছে। তাদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে এমনভাবে যে আজ তারা সমাজ ও দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত, সব ক্ষমতার অধিকারী। অথচ এই স্বাধীন দেশে আমরা, আমাদের সন্তানেরা অবাঞ্ছিত, অবহেলিত, দয়া ও করুণার পাত্র। যে চেতনা সমুন্নত রাখতে গিয়ে রক্ত ঝরিয়েছে শহীদেরা, হৃৎপিণ্ড উপড়ে ফেলে দেশবাসীকে যে পতাকা উপহার দিয়েছে সেই শহীদের সন্তানেরা এতগুলো বছর ধরে কীভাবে দিন কটালো, কোথায় তারা আশ্রয় পেলো, কে তাদের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ, বাসস্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো, বাংলাদেশের কোনো মানুষ কি তার খোঁজ রেখেছে? দু’একটি ছাড়া কোনো সরকার কি এ দায়িত্ব পালন করেছে?

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৭৫

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৭৬

লন্ডনে উচ্চশিক্ষার্থে (বাম থেকে দ্বিতীয়)

মুক্তিযুদ্ধকালে যাদের বয়স ছিল ১, ২ অথবা তার সামান্য বেশি; হয়তো কেউ ছিল মায়ের গর্ভে, সেসব অগ্নি সন্তানের পিতৃমাতৃহারা হয়েও হারিয়ে যায়নি। তারা অন্যের দ্বার সাহায্যপ্রাপ্ত না হয়েও আজ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। চাকরিজীবী হওয়ার জন্য সংগ্রামরত। সৎভাবে বেঁচে থাকার অঙ্গীকারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আজ তারাই তাদের স্বজনদের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সংগঠিত এবং পিতৃমাতৃহন্তাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার, সংঘবদ্ধ; মুষ্টিবদ্ধ হাত তাদের উর্ধে সমুন্নত।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সব স্বাধীন দেশেই হয়েছে শুধু বাংলাদেশ ছাড়া। এখানে এসব ঘাতক, দালাল, আল বদর, রাজাকারদের নিরীহ জনসাধারণের মাঝে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিচারকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অবনত মস্তকে ধিক্কার পাওয়ার পরিবর্তে আজ ফুলের মালা গলায় নিয়ে তারা গর্বিত, নন্দিত। আমরা এদের কাউকেই ক্ষমা করিনি। কোনো দিনই করবো না। সমস্ত স্বাধীনতা বিরোধীদের জন্য রইলো আমাদের অপরিসীম ঘূণা এবং অসংখ্য ধিক্কার। আমরা তাদের বিচার দাবি করছি দেশবাসীর কাছে, বিশ্ব মানবতার কাছে।

 

(*প্রকৌশলী ইফতেখার কাজল সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক স্মৃতিকথা সম্পাদনা থেকে সঙ্কলিত।)

 

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৭৭

 

ডা. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী

 

প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ

 

ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা; তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২।

খ. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে(তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)

গ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, দলিলপত্র; সম্পাদনাঃ হাসান হাফিজুর রহমান; প্রকাশনাঃ তথ্য মন্ত্রণালয়, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ আষাঢ় ১৩৯১; জুন ১৯৮৪; ৮ম খণ্ড; পৃ. ৭০৭ ।

ঘ. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট; প্রকাশনাঃ বাংলাদেশ ডাক বিভাগ; ১ম পর্যায়; ১৯৯১ (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)

ঙ. স্মৃতি ১৯৭১; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ১ম খণ্ড, ২য় পুনর্মুদ্রণ, প্রকাশকালঃ প্রকাশকালঃ অগ্রহায়ণ ১৪০৬, ডিসেম্বর ১৯৯৯; পৃ. ১৬৯

চ. *মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক স্মৃতিকথা; সম্পাদনাঃ প্রকৌশলী ইফতিখার কাজল; প্রকাশনাঃ রক্তঋণ; প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২; পৃ. ১৪ ।

ছ. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় সংরক্ষিত শহীদ চিকিৎসকের স্মারক সামগ্ৰী।

জ. চারিতাভিধান; সম্পাদনাঃ সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ২য় সংস্করণ; প্রকাশকালঃ মাঘ ১৪০৩, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭; পৃ.২৮।

ঝ. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থ; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ১ম পুনর্মুদ্রণ, প্রকাশকালঃ পৌষ ১৪০০, জানুয়ারী ১৯৯৪; পৃ. ৪৭।

ঞ.  শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার, প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী, প্রকাশকালঃ আগ্রহায়ণ ১৩৯২, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫; পৃ. ২২

ট. দৈনিক সংবাদ বিশেষ সংগ্রাহক সংখ্যা-৩, যেসব হত্যার বিচার হয়নি; পরিকল্পনায়ঃ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। প্রকাশকালঃ সোমবার ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৮; পৃ. ৪, ৯, ৩৫, ৩৯।

ঠ. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস; সম্পাদনাঃ আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রথম খন্ড।

ড.  সেই রাজাকার; প্রকাশনাঃ মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, জনকণ্ঠ প্রকাশনী; প্রকাশকালঃ ৪ জুলাই ২০০১; পৃ. ২৪৪।

ঢ. একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়; সম্পাদনাঃ ড. আহমদ শরীফ, কাজী নূর-উজ্জামান এবং শাহারিয়ার কবির; প্রকাশনাঃ মুক্তিযুদ্ধ, চেতনা বিকাশ কেন্দ্র; ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৩৯৫, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯; পৃ. ৯৬।

ণ. সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ‘হানাদার বাহিনীর সহযোগী আলবদরদের হত্যার শিকার কয়েকজন’, জাতীয় দিবস সংখ্যা-১৯৭৩।

ত. একাত্তরে শহীদ ডা. আলীম চৌধুরী; লেখকঃ শ্যামল নাসরিন চৌধুরী; প্রকাশনাঃ আগামী প্রকাশনী; ২য় সংস্করণ প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪০৩, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭।

থ. বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা; লেখকঃ রফিকুল ইসলামঃ প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; প্রকাশকাল; ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৩৮০, ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭৩; পৃ. ১৬৬।

দ. দু’শো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা; লেখকঃ মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ নুরুল কাদির; প্রকাশনাঃ মুক্ত প্রকাশনী, ঢাকাঃ ৯ম সংস্করণ, প্রকাশকালঃ ১৩ মে ২০০২; পৃ. ৩৫৭।

৭৮ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

Reference:  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!