You dont have javascript enabled! Please enable it! শহীদ ডা. আতিকুর রহমান | মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক - সংগ্রামের নোটবুক

আমার বাবা

শহীদ ডা. আতিকুর রহমান

মিমি রহমান

 

নশ্বর এই পৃথিবীতে মানুষ যতদিন অবস্থান করে তার সিংহভাগ সময় সে ছুটে বেড়ায় অর্থ, বিত্ত আর বৈভবের পেছনে। তবে তাদের মাঝে এমনও ক্ষণজন্ম মানুষ থাকেন যারা এসব কিছুর উর্ধে উঠে কেবল মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। সে রকম প্রচারবিমুখ এক নিভৃতচারী মানুষ ছিলেন আমার বাবা শহীদ ডা. আতিকুর রহমান। তিনি বিখ্যাত কনো ব্যাক্তি ছিলেন না, তবে একজন সত্যিকারের মানুষ ছিলেন।

আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, তাকে আমি খুব অল্প সময়ের জন্য পেয়েছি। যতটুকু সময় পেয়েছি, তাতে তাঁর সম্পূর্ণ মূল্যায়ন আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমার বয়স ছিল খুবই অল্প। নিজের অল্প পরিসরে দেখা ও মা বা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে জানা।

বাবাকে আমি আব্বু বলে ডাকতাম। আব্বু ৭ ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হয়ে তিনিই সর্বপ্রথম এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন! আব্বর বয়স যখন সাত বছর তখন তাঁর বাবা মারা যান। বড় ভাইয়ের ওপর নির্ভর করে তাকে পড়াশোনা করতে হয়।

কলকাতা থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর ইচ্ছা ছিল ইন্টারমিডিয়েট কর্মাসে পড়বেন। কিন্তু আর্থিক দৈন্য ও পরনির্ভরশীলতা তাকে ইচ্ছামতো কর্মক্ষেত্র পছন্দ করা থেকে বঞ্চিত করে। মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ থেকে এলএমএফ পাস করে চাকরি নিয়ে ফরিদপুরে চলে যান। ডাক্তারি পাস করার পর মনে করেন গ্রামের মানুষেরা চিকিৎসাসেবা থেকে অবহেলিত এবং গ্রামে গেলে গরিব অসহায়দের সেবা করা যাবে।

যথারীতি চাকরি ও বিবাহ করা এবং এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক হওয়া। মা বেঁচে থাকা অবস্থায় দু’বার তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চাকরি হয়, কিন্তু মাকে শেষ দেখা দেখতে পাবেন না বলে সে চাকরি প্রত্যাখ্যান করেন। ভাগ্য সবসময় তাকে বঞ্চিত করেছে। নিজের মার মৃত্যুর সময় মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্ৰীনগরের নিজ গ্রাম থেকে নড়িয়ায় (বর্তমান শরীয়তপুরে) মাকে শেষ দেখা দেখতে যেতে পারেননি বলে একটা অনুশোচনা কাজ করতো।

 মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৩৭

Reference:  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ