You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.20 | বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ এ এইচ এম কামরুজ্জামান এর সাক্ষাৎকার বিবরণী - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনাম

সুত্র তারিখ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথীকটি সাক্ষাৎকারের বিবরন হিন্দুস্থান টাইমস, নয়াদিলী ২০ মে, ১৯৭১

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ এ এইচ এম কামরুজ্জামান এর সাক্ষাৎকার বিবরণী
২০ মে, ১৯৭১

” দুর্দান্ত প্রচেষ্টার পরেও পাকিস্তান মিলিটারির গুপ্তসভা বাংলাদেশে তাদের অধীনস্থ এলাকাগুলোর ন্যায়সভা পুনস্থাপনে ব্যর্থ হয় এবং তারা কখনো একাজে সক্ষম হবেও না।” – এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ এ এইচ এম কামরুজ্জামান এ কথা U.N.O. কে জানান।
” বাংলাদেশের প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্টরা সশস্ত্রবাহিনী কে সমর্থন না করার পণ নেয়। সেনা কার্যকলাপকে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস অধিকারের বিরুদ্ধাচারণ হিসেবে গণ্য করতে শুরু করে।”
তিনি জিজ্ঞেস করেন, যদি পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের স্বাভাবিক অবস্থা দাবি করে, তবে কেন আন্তর্জাতিক সংস্থা আর তাদের অংশবিশেষ হতে বাংলাদেশকে বাদ রাখা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি বর্হিবিশ্ব থেকে লুকানোর জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মিথ্যা গল্প সাজানো শুরু করে। “তারা জানত, বাংলাদেশে যদি কোন নিরপেক্ষ সংস্থা অনুমোদন করা হয়, তবে তাদের মিথ্যা প্রচারণা আর সাজানো নকশা উন্মোচিত হয়ে যাবে।”
পাকিস্তানি প্রজ্ঞাপনের (propaganda) প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন,জাতিগত আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রশমিত করার জন্যে সেনাবাহিনীকে মধ্যস্থতা করতে হয়েছিল; এই মুক্তিযুদ্ধ কোন ধর্মের বিরুদ্ধে ছিল না।
” আমাদের সংগ্রাম ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। ইসলামের নীতি আর শিক্ষাকে অবশ্যই সংরক্ষণ করা হবে। অন্য ধর্মেরও নীতি আর শিক্ষাকে প্রতিপালন করা হবে। আমরা শোষণবঞ্চিত একটি রাষ্ট্র কল্পনা করি। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি সমমাত্রিক আর শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে নারী – পুরুষে ভেদাভেদ থাকবে না, যেখানে মানুষ জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে বিবেচিত হবে। “
” যারা বাংলাদেশকে তাদের মাতৃভূমি হিসেবে স্বীকার করে এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত থাকবে, তারা আমাদের ভাই। আর যারা স্বদেশদ্রোহীর ভূমিকা পালন করবে, তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন, আমাদের শত্রু, বাংলাদেশের শত্রু। তারা জনতার আদালতের আসামী (tried by)।”
তিনি বলেন, ” পাকিস্তানিদের সমস্যার একমাত্র সমাধান হল তাদের সৈন্যবাহিনী অপসারণ করে ক্ষমতা বাংলাদেশের জনতার কাছে হস্তান্তর করা। রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক মানদণ্ডের বিচারে বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা কখনোই পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে একটি জাতি গঠন করতে পারত না। “
ইতিহাসে পাকিস্তানি সৈন্যদলের এহেন নৃশংসতার আর কোন সাদৃশ্য মেলেনি। “আমাদের নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করা হয়, নারীসমাজের শালীনতার চূড়ান্ত অবমাননা করা হয়েছিল, ঘর-বাড়ি সব ধ্বংস করে ফেলেছিল। “
পাকিস্তানি সশস্ত্রবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল, বাঙ্গালীদের তাদের নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করা, যেন তারা বাংলাদেশ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশবিশেষ, এই মিথ্যাকাহিনী বহাল রাখতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশের মানুষ বীরত্বপূর্ণভাবে তাদের এই প্রচেষ্টা প্রত্যাহত করেছিল এবং প্রত্যাহত করতে থাকে।
আওয়ামী লীগের ইস্তেহারের বর্ণনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন শুধুমাত্র জনতাভিত্তিক-ই নয়, বরং সকল দুর্নীতি আর আমলাতন্ত্রের উর্ধে থাকবে বলে ঘোষিত হয়।
———————————-