You dont have javascript enabled! Please enable it!

                                        শিরোনাম

                সূত্র             তারিখ
রাজনৈতিক সমাধানের প্রশ্নে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজররুল ইসলাম কর্তৃক ৬ই জুনে পেশকৃত চার দফা প্রস্তাব            জয় বাংলা      ১৮ জুন, ১৯৭১

বাংলার মানুষ আর কোন গোঁজামিলের সামধান গ্রহণ করবে না -সৈয়দ নজরুল ইসলাম

গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম গত ৬ই জুন সংগ্রামী বাঙ্গালী জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক বেতার ভাষণে বলে, গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আটক সকল গণ-প্রতিনিধিদের অবিলম্বে মুক্তিদান, বাংলাদেশের মাটি থেকে হানাদারবাহিনী ফিরিয়ে নেয়া, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান এবং পশ্চিম পাকিস্তানী শোষকশ্রেনী কর্তৃক এ যাবৎ বাংলাদেশ থেকে অপহৃত ধনসম্পদ ও গত আড়াই মাসের লড়াইয়ে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের যে ক্ষতি সাধন করেছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে তা নির্ণয় করে লুন্ঠিত ধন প্রত্যর্পণ ও পূর্ণ ক্ষতিপূড়ণের দ্বারাই কেবল রাজনৈতিক সমাধান আসতে পারে অন্যথায় রাজনৈতিক সমাধানের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।
তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রাজনৈতিক সমাধান বা আপোস মীমাংসা সম্পর্কে যে জল্পনাকল্পনা চলছে সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ কোন গোঁজামিলের সমাধান গ্রহন করবে না।
আমাদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনদিন সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে সকল বাঙালী হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান একসাথে লড়েছেন- বুকের তপ্ত লহু ঢেলে দিয়ে বাংলার মাটি সিক্ত করে তারা এটাই প্রমাণ করেছেন যে, এদেশের প্রতিটি প্রাণ এক্যবদ্ধ, অভিন্ন।
স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রামে হিন্দু কৃষক জীবন দিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন মুসলমান কৃষক। মসজিদ পুড়েছে হানাদার দস্যুদের হাতে, পুড়েছে মন্দির গীর্জা আর বৌদ্ধ বিহার বিধ্বস্ত হয়েছে। বর্ব পাক-সেনারা হত্যা করেছে ডঃ গোবিন্দ দেব, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, জ্যোতির্ময় গুহু ঠাকুরতা ও ফজলুর রহমানকে। আমরা একসঙ্গে লড়েছি, একই সাথে জয়ী হবো। এবং জয়ী আমরা হবই।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, হানাদার দস্যু ইয়াহিউয়ার বর্বর সৈনিকদের নির্মম অত্যাচার কৃষক-মজদুর, ছাত্র, শিক্ষক, মধ্যবিত্ত আর অসংখ্য মানুষ বাংলার শ্যামল মাটির বুক ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, শত্রুহননের পর মুক্ত স্বদেশে ফিরে আমরা তাঁদের আপন ভিটেমাটিতে প্রতিষ্ঠিত করবই।
মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের প্রশংসা করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সীমত সামর্থ্যের জন্য আপনাদের প্রয়োজন সর্বক্ক্রেত্রে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বিভিন্ন রণাঙ্গনে আপনারা যে উসীম অটল
মনোবলের পরিচয় দিচ্ছেন, তাঁর জন্যে আজ সারা বাঙালী জাতি গর্বিত দেশমাতৃকার বীর সন্তান আপনারা। এ সংগ্রামে আপনাদের যেসব সাথী শহীদ হয়েছেন, যারা পঙ্গু হয়েছেন তাঁদের পরিবারবর্গের রক্ষণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব আমার সরকার ইতিপূর্বেই গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকেরা আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
————

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!