শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশবাসীর প্রতি সরকারের ৭- দফা নির্দেশাবলী | বাংলাদেশ সরকার, প্রচার দপ্তর | মে, ১৯৭১ |
স্বাধীন বাংলাদেশবাসীর প্রতি-
আজ দু’মাস যাবৎ সাড়ে সাত কোটি বাঙালী স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত। বাঙালির বীরত্ব, সংকল্প এবং ত্যাগ বিশ্বের মুক্তিকামী সকল জাতিকে চমৎকৃত করেছে। বাঙালী প্রমাণ করেছে সে এক বীর জাতি। আমাদের শত্রু পরাক্রমশালী এত কোনো সন্দেহ নাই। তাদের কাছে আছে সর্বাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ। কিন্তু বাঙালীর স্বাধীনতার অনির্বাণ দীপ নেভানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রক্তক্ষয় ছাড়া স্বাধীনতা আসে না। আমরা রক্ত দিয়েছি, দিচ্ছি এবং দেবো আজ সারা বিশ্বের জনমত আমাদের সপক্ষে, কেননা আমাদের সংগ্রাম ন্যায় ও সত্যের। জয় আমাদেরও অনিবার্য এবং আসন্ন। কোনো অবস্থাতেই তাই আমাদের মনোবল হারলে চলবে না। আমাদের মুক্তিফৌজ অবিশ্রান্তভাবে লড়ে চলেছেন দখলদার বাহিনীর সাথে। প্রতিদিন শত শত শত্রুসেনা নিহত হচ্ছে। আড়াই হাজার মাইল দূর থেকে ইয়াহিয়ারশাহীর পক্ষে এ যুদ্ধ বেশীদিন চালানো সম্ভব নয়। জয় আমাদের অবশ্যম্ভাবী। এই পরিপ্রেক্ষিতে সারা বাঙালী জাতির প্রতি স্বাধীন বাংলা সরকারের তরফ থেকে নিম্নলিখিত নির্দেশাবলী জারী করা হচ্ছে।
(ক) দখলদার বাহিনী এবং তথাকথিত পাক সরকারের সাথে কোনো প্রকার সহযোগিতা করা চলবে না। বাঙালী জাতির আনুগত্য শুধুমাত্র স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারই দাবী করেন। কোনো প্রকার খাজানা, কর এবং সরকারী শুল্ক ইত্যাদি পাক সরকারকে দেওয়া চলবে না।
(খ) আঠারো থেকে ত্রিশ বছর বয়স্ক সকল বাঙালী যুবক অবিলম্বে তাঁদের নিকটস্থ মুক্তিফৌজদের অধিনায়ক অথবা তাঁর প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবেন।
(গ) সারা বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিতেও পাট চাষ করা চলবে না। বিকল্পে আউস ধান চাষ করতে হবে।
(ঘ) গণধিকৃত দালালদের চিহ্নিত করা নিঃশেষ করতে হবে। আমাদের সংগ্রাম বিরোধী গোয়েন্দাদের নির্মূল করা প্রতিটি বাঙালীর পবিত্র কর্তব্য বলে বিবেচিত হবে।
(ঙ) কোন অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুন্ন করা চলবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য দাঙ্গাবাজদের চিহ্নিত করে তাঁদের নির্মূল করতে হবে।
(চ) মুক্তিফৌজদের সাথে সর্বপ্রকার সহযোগিতা আমাদের আশু মুক্তির একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এটা স্মরণ রেখে তাঁদের সাথে কাঁধের কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। পক্ষান্তরে, দখলদার পাক বাহিনীর চলার প্রতিটি পদক্ষেপে সৃষ্টি করতে হবে দুর্লংঘ্য প্রতিবন্ধক। ছলে বলে নস্যাৎ করতে হবে তাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।
(ছ) স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের এবং সরকারী, আধা সরকারী ও বেসরকারী সকল কর্মচারীদের শত প্রলোভন সত্ত্বেও পাক সরকারের অধীনে কাজে যোগ দেওয়া চলবে না। অনতিবিলম্বেই তাঁদের স্বাধীন বাংলা সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে মুক্তি সংগ্রামের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
অতি শিগগিরই স্বাধীন বাংলার মুদ্রা ও ডাকটিকেট চালু হচ্ছে। বিশ্বের সব জায়গা থেকে আমরা অস্ত্রশস্ত্র এবং ত্রাণ সহ সর্বপ্রকার সাহায্য পাচ্ছি। প্রতিটি বাঙালী সরকারী কর্মচারী বাংলাদেশের প্রতি তাঁদের আনুগত্য ঘোষনা করেছেন এবং মুক্ত এলাকায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার অতিশীঘ্রই বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের স্বীকৃতি লাভ করতে চলেছেন। দুর্বার গতিতে আজ সারা বাঙালী জাতি বিজয়ের পথে চলমান। কোনো বাধা কোনো বিঘ্নই আর তার গতি রোধ করতে পারবে না। যেহেতু আমরা নিঃশেষে প্রাণ দান করতে শিখেছি অতএব আমাদের ক্ষয় নেই, ক্ষয় নেই।
“জয় বাংলা”
স্বাধীন বাংলা সরকারের
প্রচার দপ্তর থেকে প্রচারিত।
————