You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনাম

সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টার একটি প্রতিবেদন                 বাংলাদেশ সরকার               

১০ মে, ১৯৭১

বাংলাদেশঃ অবস্থা ও সুযোগ
রেহমান সোবহান
বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা
মে ১০ ১৯৭১

প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে , বৃহৎ শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা ও নিস্কৃয়তা বুঝতে পারা কস্টসাধ্য। আদর্শবাদী হিশেবে যখন ২,০০,০০০ বাঙালীর পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের বিশ্বের মনযোগী হওয়া উচিত, এটা দুঃখজনক যে তাদের রাজনৈতিক বিবেচনা এতোটাই বিকারগ্রস্ত যে তাঁরা প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত থাকছে।

আমরা এখন একটি জনপ্রিয় নির্বাচিত দল এবং একে ধরে রাখা রাজনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করতে সামরিক জান্তার একটা চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছি, যাদের নিজের অবস্থানই নড়োবড়ে। যখন অধিকাংশ বিপ্লবী নেতাদের অবস্থান এখনো পরিস্কার নয়, এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা নেই যে শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছেন । ১৬৯ এর মাঝে ১৬৭ আসন এবং ৮০ শতাংশ ভোটে নির্বাচনে জয়লাভ তাদের প্রশ্নাতীত কর্তৃত্বের প্রমান দেয় । তাঁরা প্রতিনিধিত্ব করছে ৭.৫ কোটি মানুষকে কিংবা ৫৫ শতাংশকে যা এক সময় পাকিস্তান গঠন করেছিলো । বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার অধিকার নিয়ে ইয়াহিয়া ও তার জান্তাকে বৈধতা দেওয়া ৭.৫ কোটি বাঙালীকে অবমূল্যায়ন করে যারা বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ জনগোষ্ঠী । গণতান্ত্রিক নীতির প্রতিজ্ঞা করার নামে এটা শুধু প্রহসনই নয় , এতে কোনো রাজনৈতিক প্রজ্ঞাও নেই ।

এখন পাকিস্তান সরকার মরিয়া হয়ে পুরো বিশ্বকে একথা বোঝাতে চাইছে যে বাংলাদেশ পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রনে আছে । তারা বলছে যে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো তাদের নিয়ন্ত্রনে আছে এবং বিদ্রোহ দমন করা হয়েছে । প্রমানস্বরূপ তাঁরা বলছে যে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তাদের ঢাকার সভিবালয়ে তাদের অফিসেই পাওয়া যাবে ।

সেখানে তারা এটা বলছে না যে এখনো সচিবালয়ে কোনো কাজই চলছে না কারন আর্মির নির্বিচার হত্যায় আতংকিত হয়ে অধিকাংশ অধঃস্তন কর্মচারি এখনো পর্যন্ত ঢাকার বাইরে অবস্থান করছে । আর্মিরা যে দোকানপাটগুলো জ্বালিয়ে দেয়নি সেগুলোর মাত্র ৫০ শতাংশ খোলা রয়েছে এবং সেগুলোও আর্মিদের লুটপাট এর স্বীকার হবার আশংকায় ভীতকম্পমান অবস্থায় চলছে । ঢাকায় এপ্রিলের শেষ পর্যন্তও রাতে কারফিউ জারি ছিলো এবং সূর্য ডোবার পরে রাস্তা রাস্তাগুলো মূলত জনশুন্য থাকে। একসপ্তাহ আগেই আর্মিকে ঢাকার অদূরের গ্রামগুলোতে ‘দুষ্কৃতিকারী’ অপসারন করতে মর্টার হামলা চালাতে হয়েছে। ২৭ এপ্রিল আর্মিকে মার্শাল ল অর্ডার ১৪৮ জারি করতে হয়েছে, যাতে সরকারি স্থাপনায় সবধরনের নাশকতার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছেঃ

“সকল কিংবা যেকোনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কিংবা এলাকারসমূহের অধিবাসিরা শাশ্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে দায়বদ্ধ থাকবেন ।”

এটা শুধুমাত্রই প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং আর্মির প্রতিক্রিয়ার কাগুজে প্রমান দেয় যা সম্পর্কে ঢাকার বাইরে গিয়েছে এমন যে কেউই জানে।

তাঁরা বুঝতে পারবে সিলেট, যেখানে চা বাগানের ভেতরের বনাঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক ঢাল হিশেবে কাজ করে, এখনো পর্যন্ত অপরিচিত এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়ন্ত্রনাধীন । চিটাগাং পার্বত্য অঞ্চল এখনো একটি ফোর্স দখল করে রেখেছে । সমগ্র বাংলাদেশেই সশস্ত্র বাঙালী গ্রামাঞ্চলগুলোতে সরে পড়ছে এবং এবং আর্মি ইউনিটগুলোর ওপর গেরিলা হামলা চালাচ্ছে। সামনে এর মাত্রা ও তীব্রতা আরও বাড়বে এবং এই ধরনের যুদ্ধ কৌশল প্রতিরোধ করতে আরও পারদর্শীতা, অতিরিক্ত রসদ যোগান ও অস্ত্রের প্রয়োজন যা পাক আর্মির কাছ থেকে বিপুল পরিমানে কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং মৌসুমী বর্ষা তাদের পন্য সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যাকে আরও অনিশ্চিত করে দিয়েছে । সেখানে আরও দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সামর্থ্য আছে এবং পাক আর্মির চালিয়ে যাওয়া যুদ্ধে বাছবিচারহীন গতিপ্রকৃতি জনগনের রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও দৃঢ় করেছে। আর্টিলারির সীমারেখার মাঝের সমস্ত গ্রামকে ধ্বংস করে এবং সে স্থানগুলোকে ‘উন্মুক্ত গোলাবর্ষন এলাকা’ বলে ঘোষণা দিয়ে তাঁরা পাকিস্তান আর্মিকে ঘৃনার বস্তু এবং সাড়ে ৭কোটি বাঙালির নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকীতে পরিনত করেছে , যারা এই হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কিংবা প্রতিরোধে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

তীব্র আতংক এখন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের জন্য খুব সামান্যই কাজে এসেছে । তাঁরা যে শহরগুলো নিয়ন্ত্রন করছে সেগুলো পরিত্যাক্ত , জনশুন্য , অর্থনৈতিক কার্যকলাপশূন্য এবং প্রশাসনিক কাঠামোহীন । জনসংখ্যার বড়জোর ১০ শতাংশ মানুষ সেখানে রয়ে গিয়েছে , তা হলে প্রশাসন, যারা মূলত শহরগুলো মুক্ত করার সময় প্রতিরোধের সাথে কাজ করেছিলো , সেখানেই থেকে যাবার কোনো সুযোগ নিচ্ছে না । তার অর্থ এই যে প্রদেশজুড়ে আর্মিদের নিয়ন্ত্রন থাকলেও বাস্তবে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের বড়জোর এককোটি মানুষ তাদের তাদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনে আছে । আর্মি মূল সড়কগুলোর সংযোগস্থল দখলে রেখেছে এবং সড়ক ব্যবস্থার কাঠামোর উপর ভিত্তি করে সক্রিয় আছে, ফলে তাঁরা ভারিঅস্ত্রসজ্জিত মোটর কনভয়গুলো এক শহর থেকে আরেক শহরে স্থানান্তর করতে পারছে ।

দেশজুড়ে এমন অসার নিয়ন্ত্রনের কারনে অর্থনৈতিক জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে । এমনকি ঢাকা , চট্টগ্রাম , খুলনার যে সকল ইন্ডাস্ট্রিগুলো ইচ্ছে করেই ধ্বংস করা হয়নি সেগুলোও ধুঁকে ধুঁকে চলছে কারন আর্মিদের পুনরায় হামলার আশংকায় শ্রমিকদের অধিকাংশই এখনো গ্রামে রয়ে গেছে । যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং বাজার ব্যবস্থা ব্যহত হওয়ায় রপ্তানি বন্ধ রয়েছে । পাট ও অন্যান্য পন্যদ্রব্য বাজারজাত করার সাথে জড়িত অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি, এবং আমদানিকারক, পশ্চিম পাকিস্তানি কিংবা হিন্দু । তারা পালিয়ে গেছে কিংবা খুন হয়েছেন , তাই অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আমদানি কিংবা রপতানি খুব কমই হবে বলে আশা করা যায় । বন্দর শ্রমিকেরা অব্যাহতভাবে অনুপস্থিত থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর নিশ্চল হয়ে আছে যা সমস্যার প্রকোপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়াটা ইয়াহিয়া সরকারের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ন নয় । যুক্তরাষ্ট্র অর্থসাহায্যের সাবরজেট কিংবা চাইনিজ মিগ ব্যবহার করে চালানো জ্বালাও-পোড়াও নীতিতে ধ্বংস হয়েছে শস্যভান্ডার , চা বাগান এবং … গুদাম [ব্রাহ্মনবাড়িয়া] যা আর্মির ভয়ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিশেবে দূর্ভিক্ষ এবং অর্থনৈতিক মন্দার দিকে নির্দেশ করছে ।

আপাতত বেশি দুর্ভাবনার হলো, দেশের বৈদিশিক মুদ্রার আয়ের ৫০ শতাংশের আনুষঙ্গিক ক্ষতি, যেটি বাংলাদেশ থেকে আসত পাটজাত পণ্যের মাধ্যমে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ৮০ শতাংশ মুক্ত বৈদিশিক বিনিময় কাজে লাগানো হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। পশ্চিম থেকে রপ্তানি বাড়িয়ে এটির আশু বিকল্প বের করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে বৈদিশিক বিনিময় ঘাটতির কারণে এখানকার শিল্প-কারখানাগুলোর উৎপাদন যখন ইতিমধ্যেই ৪০ শাতংশ কমে গেছে। পাকিস্তান সরকার এই প্রান্তিকে চাপ দিচ্ছে ঋণসেবার সম্ভাব্যতা পুনর্গঠন করতে, যেটি করতে জুনের শেষ নাগাদ সমস্ত পাওনাদারদের পরিশোধ করতে হবে প্রায় ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড। সর্বোপরি, এসবের বাইরেও পাকিস্তানের প্রয়োজন নতুন নতুন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি, বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য আমদানি করে যাতে রুগ্ন শিল্পকে তাজা করা যায় এবং উন্নতির গতি ধরে রাখা যায়। বাংলাদেশের রপ্তান বন্ধের কারণে যখন বৈদিশিতক বিনিময় ভীষণ ভাবে কমে গেছে, নিজেদের বিনিময় বেশি ধরে রাখা প্রয়োজন। স্বাভাবিক সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের রপ্তানির চেয়ে আমদানি দ্বিগুণ কিন্তু এখন বাংলাদেশের যুদ্ধে টিকে থাকতে তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। ফরাসী অস্ত্র সরবাহকদের ঋন পরিশোধের মূলতুবির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং ইনটেরালিয়া, ৩০ মিরেজ ফাইটারের মতো আরও ভালো অস্ত্রের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সরবাহের সত্যিকার বা প্রত্যাশিত মজুদের জন্য উন্মুক্ত অস্ত্র বাজারে নগদ বৈদিশিক বিনিময়ের প্রয়োজন হবে। মি. এম.এম আহমেদের সফর তাই বিশেষভঅবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশ্বব্যাংক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দাতাদের কাছে পাকিস্তানের প্রত্যাশা এই অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উদ্ধার করা এবং কার্যত বাংলাদেশে সামরিক অভিযানে সম্মতি দেওয়া। এই সাহায্য বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষ দূর করায় এবং যুদ্ধজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠায় ব্যবহৃত হবে বলে কোনো ধরণের কথা হলে সেটি ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুল প্রচার। সরকারের আদেশ তার সীমার বাইরে সম্প্রসারিত হয় না এবং পরিকল্পিত সাহায্যের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবায়নের দক্ষতার ঘাটতিও আছে। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পাঠানো সাহায্যগুলি হয়ত পশ্চিমে পাঠিয়ে হয়ত দখলদার সেনাবাহিনীর খাদ্যের জোগান দেওয়া হবে, অথব রাজনৈতিক দমন ও পৃষ্ঠপোষণার সহায়ক হিসেবে কাজে লাগানো হবে। এটির প্রেক্ষিতেই কোনো সাহায্য দাতার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের কোনো প্রশ্ন নেই। পাকিস্তানী প্রশাসনের আহবানে সাড়া দিলে আদতে তারা কোনো মানবিক কাজ তে করবেই না, বরং সামরিক অভিযানকেই স্বীকৃতি দেবে। ঋণসেবার সম্ভাব্যতা পুনর্গঠনের পাকিস্তানের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে এবং প্রক্রিয়াধীনসহ সাহায্যসহ আরও সব ধরণের সাহায্যের প্রতিশ্রুতিকে স্থগিত করে এই সামরিক অভিযানের পুরো মূল্য সরকারকে চুকাতে বাধ্য করা যেতে পারে। গোটা বিশ্বকে বুঝতে হবে যে, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ও ১৯৬৮ সালে আয়ূব সরকারের পতনের পর যেমন ছিল, সাহায্য দেওয়ার ব্যপারটি কখনোই আর ‘যথারীতি কারবার’ চেহারায় ফিরবে না। হোক ঋন-ঘাটতি তা অন্য কোনো রূপে, পাকিস্তানকে সরলমতি বলে ফুটিয়ে তোলে, এই ধরণের যে কোনো চাতুরির বিরুদ্ধে এভাবেই অবস্থান নিতে হবে দাতাদের। নাম না জানা ২ লাখ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের খুনিরা সরলমতির অর্থই জানে না। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মূল্য ইতিমধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তানকে দিতে হয়েছে নিশ্চিত বাজার হারিয়ে। পশ্চিম পাকিস্তানের রপ্তানির ৪০ শতাংশ যেত যেখানে, সেই বাংলাদেশে এখন কোনো ক্রেতা নেই, আয় বা বাজারজাতের কাঠানো নেই।

পাকিস্তান তাদের মোট রপ্তানির ৪০% বাংলাদেশে পাঠাই। শিল্প বাণিজ্য যা তাদের পণ্য বিশ্বের মূল্যের চেয়ে ১০০% উপরে তাদের পণ্য বিক্রি করতো তা ধ্বংশের মুখোমুখি হওয়াতে পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিক মন্দার হুমকিতে পড়ে। ৫০% মূল্য মূদ্রাস্ফিতিও আশংকা করা হচ্ছে আগামী তিন মাসের মধ্যে শিল্পের ইনপুট ও আউটপুট পতনের কারণে। কড়কড়ে বৈদেশিক মূদ্রা আয় প্রাধান্য পাবে বিনামূল্যে আমদানি, ৪৭ টি আইটেমের আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ এবং নগদ অথবা বোনাস উভয় আমদানি লাইসেন্স প্রাপ্ত হবে। বস্তুত সব আমদানি বোনাসের মাধ্যমে এবং একটি আংশিক অবমূল্যায়ন ইতিমধ্যে ধার্য করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দেশকে চাপে ফেলে যা দাতা দেশগুলো কর্তৃক দেয়া হয়ে থাকে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাপ ব্যবহৃত হতে পারে রাজনৈতিক আলোচনার বিকল্প হিসেবে সামরিক পদক্ষেপ সমাপ্তির উপরই এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার ভাবে নিহিত। এখানে আলোচনা একমাত্র নেতা ও বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে হতে পারে। এগিয়ে যাওয়া প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক হ্যাকার যা সাম্প্রতিক নির্বাচনে তাদের জন্য খোঁড়া রাজনৈতিক কবর হতে পুনরুত্থিত করেনা তা সরকারকে শুধুমাত্র উপহাসের পাত্র করে- যা বস্তুত কোন নিরাপদ সমঝোতা দেয় না।

আজ রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হাতে তাদের রাজনৈতিক অবকাঠামো অক্ষত এবং সুরক্ষিত মুজিবের জন্য, যার শারীরিক উপস্থিতি বাংলাদেশ সরকারের আচার। সমগ্র পার্টি অনুক্রমে গঠিত মন্ত্রীপরিষদ, যা এপ্রিল ১৭, ১৯৭১ এ বিশ্বে নিজেকে উপস্থাপন করেছে। বেসামরিক প্রশাসনের যারা আর্মির বন্দুক পরিসীমা অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির শক্তি তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার গ্রামাঞ্চলে একটি আনুষ্ঠানিক প্রশাসনিক অবকাঠামো এবং কমান্ড লাইন স্থাপন করার চেষ্টা করছে। কাজটি ভীষণ কঠিন কারণ হলো- যৌক্তিক সমস্যার নতুনত্ব ও মহাত্ম।

কিন্তু একটা সময় পর এটি গেরিলা যুদ্ধকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিকাঠামো প্রদান করবে- যেটা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হচ্ছে এবং অনির্দিষ্ট কালের জন্য টেকসই হতে পারে।

এই বিশ্বাসে বিশ্বকে প্রতারিত করা উচিৎ নয় যে, তারা অলস বসে থাকতে পারে তাদের মতামতে বিরত থাকতে পারে। যুদ্ধ যতই দীর্ঘায়িত হতে থাকছে ততই বর্তমান নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ক্ষুন্ন হচ্ছে। আজ এখনও নেতৃত্ব মধ্যপন্থিদের হাতে, যারা বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করার জন্য নিরোধীতা প্রতিরোধের কৌশল হিসেবে মূল সেতু ও অত্যাবশ্যক অর্থনৈতিক স্থাপনা উড়িয়ে দিতে ব্যাপক উদ্ভগ্ন এখনও। আর্মি সন্ত্রাসী, দীর্ঘায়িত চরমপন্থা বাধ্য করবে বিদ্যমান সামাজিক জীব হিসেবে একটি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। দীর্ঘায়িত যুদ্ধের কারণে সামাজিক পরিণতি নিয়ে ইতিহাস অনেক শিক্ষা দেয় যা, উপলদ্ধিতে রাখা এক্ষেত্রে প্রয়োজন।

এরপরও পদক্ষেপহীনতা হতে পারে মানবজীবনের মূল্য দেয়া। পশ্চিম পাকিস্তানের আর্মি স্বয়ং লক্ষ ক্ষেত্রে বাঙালী জীবনের মূল্য নিতে পারে। যুদ্ধে পশ্চিমভাগে বাঙ্গালী ও পূর্বভাগে অবাঙ্গালীদের মধ্যে প্রতিহিংসামূলক সাম্প্রদায়িক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে আর্মিদের দ্বারা যুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে আরো এক লক্ষ মৃত্যু যোগ করবে- যা দাঁড়াবে ২ লক্ষের উপরে। আমরা যদি দূর্ভিক্ষে মৃতর সংখ্যা যোগ করি তবে এটা হবে সম্ভবত ঐতিহাসিক মানব মৃত্যুর ঘটনা।

পরাশক্তি দ্বন্দ্বের প্রতিযোগিতায় প্রদেশটির মুক্ত থাকার কথা কেউ আশা ও করেনি।ভারত ও চীন উভয়ই বাংলাদেশকে ঘিরে রয়েছে এবং তারা নিষ্কৃয় দর্শকের মতো সীমান্তে ঘটে যাওয়া গৃহযুদ্ধের দাবানল দেখতে পারেনা।ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ ধাপে আরো একটি বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডের সাক্ষী হয়ে থাকা কদাচিৎ পরাশক্তির স্বার্থের মধ্যে পড়ে; তাও এমন একটি ভূখন্ডের যারা প্রতিজ্ঞা করেছে এ পর্যন্ত দেখতে পাওয়া সকল আয়তনের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার।

দেশটির জন্মলগ্নে আন্তর্জাতিক সংকট দেখা দিতে পারে।রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য দেশে এখনো নেতৃত্ব প্রদানকারী দল রয়েছে।একটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে দেশ বিভাজনের বন্দোবস্ত করা আবশ্যক।গণহত্যার দ্বারা পরিষ্কার ভাবে ইয়াহিয়ার যুদ্ধের নির্দেশ পাওয়া যায় এবং সে ধরে নেয় পাকিস্থান মৃত এবং সে জাতির জন্য মানবতা প্রকাশের কোনো লক্ষণই ছিলোনা।আকস্মিক এই যুদ্ধের ফলে সমগ্র বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ক্ষয়ক্ষতির পুরণ অচিন্তনীয়।যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ এই জাতিকে ভবিষ্যতে টিকে থাকার জন্য দরিদ্রতা,অনাহার ও রোগ বালাই থেকে মুক্ত হবার জন্য বাস্তব্যতা নিরীক্ষণের মাধ্যমে একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কর্মসূচী নিতে হবে।এধরনের কোনো কর্মসূচী যার দ্বারা যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্ববাসীর বিবেক কে জাগ্রত করতে পারে।পর্যাপ্ত পরিমাণের আন্তর্জাতিক সাহায্যের দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অবকাঠামো তৈরী করতে পারবে।

————-

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!