সদর ও উদয়পুর মহকুমার শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে লে, গভর্নর শ্রী ডায়াস
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য শরণার্থীরা যে কোনাে কাজ করতে এবং
বাংলাদেশের অবস্থা ভালাে হইলেই তাহারা দেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত
আগরতলা, ১৪ জুন ॥ গত ১৩ জুন (১৯৭১) লে. গভর্নর সদর ও উদয়পুর মহকুমার মধুপুর, গর্জি ও চন্দ্রপুরের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। শিবিরগুলাে মােটামুটি সন্তোষজনকভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। তবু সেগুলাের আরাে সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য লে. গভর্নর কয়েকটি পরামর্শ দেন। মধুপুরে যে শিবিরের আবাসিকদের প্রতিনিধি, স্থানীয় নেতৃবর্গ ও গাঁও প্রধানদের একটি কমিটি শিবির পরিচালনায় সহায়তা করছেন তাতে তিনি আনন্দিত হন। প্রতি পরিবারকে চাল, ডাল ও তেল দেওয়ার পর প্রত্যেক শরণার্থীর প্রায় ৪৫ পয়সা এই কমিটি নিয়ে যান এবং তা থেকে তরি-তরকারি ও সাবান ইত্যাদি প্রয়ােজনীয় দ্রব্য ক্রয় করা হয়। এই কমিটিকে প্রতিদিন অথবা একদিন পর পর মিলিত হওয়ার জন্য এবং জিনিসপত্র যথাযথভাবে ও যথাসম্ভব কম দরে ক্রয় করার জন্য লে. গভর্নর পরামর্শ দেন।
লে, গভর্নর বলেন, শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই কর্মক্ষম ও শিক্ষিত আছেন; তারা শিবির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার কাজে সাহায্য করতে পারেন। তাদের আশ্রয় ও খাদ্যের যে সংস্থান করা হচ্ছে তার জন্য এভাবে স্বেচ্ছামূলক কাজের মাধমেই তারা ভারত সরকারের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেন। তিনি এরূপ পরামর্শ দেন যে, কয়েকজন শরণার্থী শিশুদের জন্য স্কুল চালাতে পারেন; কিছু সংখ্যক শরণার্থী সাময়িক আশ্রয় গৃহের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন আর কয়েকজন শিবির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দিকে নজর দিতে পারেন। শিবিরগুলােতে যে গুঁড়া দুধ সরাহ করা হয় তা দিয়ে দুধ প্রস্তুত করে দুর্বল আবাসিকদের মধ্যে বণ্টনের ব্যাপারেও তারা সাহায্য করতে পারেন। লে, গভর্নর লক্ষ করেন যে, শিবিরগুলােতে চিকিৎসার যথেষ্ট সুযােগ সুবিধা নেই। কিন্তু তিনি শিবিরবাসীদের আশ্বাস দেন যে, শিবিরবাসী শরণার্থীদের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক নিযুক্ত করা হয়েছে এবং অবিলম্বে তারা কাজ শুরু করবেন। তিনি বলেন, ছােট ছেলে-মেয়েদের জন্য ভাঙ্গা গম দিয়ে খিচুড়ির মতাে খুব সাধারণ অথচ পুষ্টিকর ও ভালাে খাবার তৈরি করা যায়।
মধুপুর, গর্জি ও চন্দ্রপুরে যথাক্রমে ২,৩০০, ৩,০০০ ও ৩,০০০ শরণার্থী আছেন। সাময়িক আশ্রয় গৃহ নির্মাণের কাজ দ্রুত চলছে এবং আশা করা যায় শিবিরগুলাের সমস্ত আবাসিকের জন্য অবিলম্বে থাকার ব্যবস্থা হবে।
মধুপুর ক্যাম্পে মুসলমান শরণার্থী আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। উপরাজ্যপালের এক প্রশ্নের জবাবে সকল শরণার্থীরাই বলেন যে, তারা অবস্থা একটু স্বাভাবিক হলেই বাংলাদেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত। শরণার্থীরা আরও বলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তারা যে কোনাে কাজ করতে রাজি আছেন। শরণার্থী শিবিরগুলাে পরিদর্শন করে বেলা ২ ঘটিকায় উপরাজ্যপাল রাজধানীতে ফিরে আসেন।
সূত্র: ত্রিপুরা
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
৫ আশ্বিন, ১৩৭৮