You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.26 | চরমপত্র ২৬ অক্টোবর ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

চোর-চোট্টা-খাজুরি গুড়, তিন জিনিষ মালেকা চুর। আঃ হাঃ! অস্থির হইয়েন না, অস্থির হইয়েন না। আমগাে গবর্ণর ব্যাটা মালেকার হগুগল দিকেই নজর রইছে। এর মাইদ্দে ব্যাড়ায় এক জব্বর কাম কইর‌্যা বইছে। ঢাকার রমনা থানার উলটা দিকে আর আদামজীর বাড়ির বগলে একুশ বছর ধইর্যা যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশ চিহ্নওয়ালা হােলি ফ্যামিলি হাসপাতাল আছিলাে। ক্যাথলিক মিশনের ওয়ার্কাররা এই হাসপাতাল জানের জান কইরা চালাইতাছিল । কিন্তু গবর্ণর ঠ্যাটা মালেকা হেই হােলি ফ্যামিলি হাসপাতালডারে গ্যাড়া মাইরা বইছে। এর পিছনে একটু ইতিহাস রইছে। ঢাকা মেডিকল হােস্টেলের গেটে তিনজন জামাতে ইসলামির গুণ্ডা, থুকু রাজাকাররে বিচ্ছুরা মার্ডার করণের গতিকে আর মেডিকলের সামনে নয়া মিনিস্টার ইউসুপ্যা বােমা খাওনের পর চিফ সেক্রেটারি মােজাফফর হােসেন, Information ছেক্রেটারি হুমাউন ফয়েজ রসুল, জয়েন্ট সেক্রেটারি আখলাক হােসেন, মেম্বর প্ল্যানিং হাসান জহিরের মতাে ডাহিনা মুড়া দিয়া লিখুন্যা অফিসাররা ছাড়াও ডাঃ হাসান জামান পয়গাম কাগজের মুজিবুর রহমান খার মতাে বাঙালি দালালরা অসুখ-বিসুখে মেডিকলে যাইতে ডরাইতাছে বইল্যাই মালেকায় দিনে দুপুরে পুকুর চুরি কইর‌্যা বইছে। মানে কিনা, কোনাে রকম মাল-পানি না দিয়াই ক্যাথলিক মিশনের তৈরি করা হােলি ফ্যামিলি হাসপাতালডা দখল কইরা বইছে। কিন্তু এমতেই হাসপাতালডা দখল কইর‌্যা সাদা চামড়ার ডাক্তার নার্সগাে খেদাইয়া দিলে, দুনিয়ার মাইনষে গতরের মাইদ্দে আরাে থু দিবাে চিন্তা কইরা ঠ্যাটা মালেকায় এক জব্বর প্ল্যান করছে।

গেরামের মাইদ্দে টাউট মাতব্বরেরা যেমত কইর‌্যা বিধবার জমিজমা হাত করণের টাইমে ডাইল-পটুকি মাইরা আর ডর দেখাইয়া দলিলে মাইদ্দে টিপসই-দস্তখত আদায় করে, ঠ্যাটা মালেকায় হেইরকম একটা কারবার করছুইন। ঢাকার ক্যাথলিক মিশনের লিডাররা ১১ই অক্টোবর তারিখে যখন এইদিকে ওইদিকে তাকাইয়া দেখলাে, ব্রিগেডিয়ার বসির তার জিনিসপত্র লইয়া খাড়াইয়া আছে, তখন আস্তে কইর‌্যা দলিলে দস্তখত কইর‌্যা

২৬৪

দিছে। তা না হইলে তাে’ ডট ডট ডট কারবার হইবাে। হরিবল হক চৌধুরীর পূর্বদেশ পরচামে লিখুখিস্ ‘সুদীর্ঘ একুশ বছর প্রদেশের জনগণের সেবা করে হােলি ফ্যামিলি সােসাইটি বিদায় নিচ্ছে আমাদের এখান থেকে শুনে হঠাৎ খারাপ লাগলাে। ছুটে গেলাম জানার জন্য। বেচা কেনা নয়। ব্যাস্ লগে লগে হাসপাতালের নাম Change হইয়া গেল। ঠ্যাটা মালেকার বুদ্ধিতে ১৮২ বেডওয়ালা এই মিশন হাসপাতাল হাতানাে সম্ভব হইলাে। মালেকায় আবার তার অফিসার দিয়া সাহেব মেম সা’ব ডাক্তার নার্সগাে অক্করে হাওয়াই জাহাজে তুইল্যা দিছে। জেনারেল পিয়াজী এই খবর হুইন্যা কুমিল্লা থনে নিজে আইস্যা ঠ্যাটা মালেকার পিঠ থাবড়াইয়া সাবাশ দিছে- বেড়া একখান! কেমন সােন্দর ট্রিকসে কাম হইলাে।

হােলি ফ্যামিলি যখন মুছলমান ফ্যামিলি হইতাছিল, তখন ঠ্যাটা মালেকার রাজত্বে আরেকটা হাসপাতালের কথা কইতাছি। পূর্বদেশ কাগজের পয়লা পাতায় কইছে নরায়ণগঞ্জের দেওভেগে তিরিশ বেড়ওয়ালা যক্ষ্মা সমিতির যে হাসপাতালডা আছিলাে, আইজ পরায় সাড়ে ছয়মাস ধইর্যা হেইডা বন্ধ রইছে। ১৯৭০ সালে পহেলা নভেম্বর গবর্ণর ভাইস এডমিরাল এস.এম. আহসান এই হাসপাতাল চালু করছিল। কিন্তু মাত্র চাইর মাস আট দিনের মাথায় হাসপাতাল বন্ধ। কেইস খতম, পয়সা হজম। এই হাসপাতাল চালু রাইখ্যা তাে’ মছুয়াগাে কোনাে কামে লাগবাে না।

এছাড়া বাঙালি মারণের লাইগ্যা যেখানে হানাদার সােলজাররা বঙ্গাল মুলুকে অইছে, হেইখানে বাঙালিগাে অসুখ সারাইন্যা হাসপাতাল চালু রাখার কোনাে অর্থই নাইক্যা। দেওভােগ যক্ষ্মা হাসপাতালের পহা দিয়া আরাে কিছু মেসিনগান-ট্যাংক কেনন দরকার । ক্যামন বুঝতাছেন হেগাে কারবার সারবার! ঠ্যাটা মালেইক্যা আইজ-কাইল অক্করে Top ফর্মে চলতাছে। খালি বিক্ষুগুলাই কারবার খতনা কইর‌্যা দিতাছে। যেকোনাে টাইমে যেকেনাে জায়গায় কারবার করতাছে। ইসলাম আর মুছলমান, মুছলমান ভাই ভাই’ কত রকম পানি পড়া দিয়াও কাম হইতছে না। World-এর Best পাইটিং পাের্স আইজকাইল নয়া Tactics-এর গতিকে রাইতে বাইর্যায় না বইল্যা বিচ্ছুগুলা মহা আনন্দে কারবার করতাছে।

হাতি ঘােড়া গেল তল, মালেক্যায় বলে কত জল? জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল টিক্কার মতাে ব্যাডারা থুড়ি মাইরা বাহাত্তর ঘণ্টার মাইদ্দে বঙ্গাল মুলুক দখল করবাে বইল্যা যে চাপাবাজী করছিল হেই ওমর, মিঠঠা,পীরজাদা-টিক্কা হগলেই লেজ গুটাইয়া রাওয়ালপিণ্ডিতে ভাগছে। সব মওলবী সা’বেই অখন বঙ্গাল মুলুকের বেলায় Deaf & Dumb স্কুলের হেডমাস্টার হইছে। এলায় ভােদাই ঠ্যাটা মালেকারে সামনে দিয়া জেনারেল পিয়াজী, জেনারেল ফরম্যান, জেনারেল রহিম, ব্রিগেডিয়ার ফকিরমােহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার আতা, রিয়ার এডমিয়াল শরীফ মাঠে নামছে। লগে লগে ছল্লাৎ কইর‌্যা খালি আওয়াজ হইতাছে। মাঠ খুবই পিছলা কিনা- তাই ব্যাডারা খালি আছাড় খাইতাছে। আর মেজর সিদ্দিক সালেক সমানে

২৬৫

Hand Out আর Press Note ছাড়তাছে। বিক্ষুগুলার কারবাররের খবর আইলেই হিন্দুস্তানীরা করছে কইতে হইবাে। আইজ-কাইল আবার নয়া ভ্যাস ধরছে। Publcity দেওনের টাইমে কইতাছে ইন্ডিয়া আর বিচ্ছুরা মিইল্যা কারবার করতাছে। মছুয়াগুলা আখেরি দম ছাড়নের খবর আইলেই বাঙালি মাইয়া আর গেদা পােলা মারতাছে কইয়া বােগাচ Publicity দিতাছে। কিন্তু কোনােডাই আর কামে আইতাছে না। সকালদুপুর-বিকাল-রাইত রেডিও গায়েবী আওয়াজে খালি কান্দাকাটির আওয়াজ। গেছিগেছি, বিচ্ছুরা কোবাইয়া মারলােরে, কোবাইয়া মারলাে। নােয়াখালী-ফেনী, কুমিল্লাময়নামতী, আখাউড়া-শালদিয়া ছাতক-সুনামগঞ্জ এলাকায় দিন কয়েক ধইর্যা বিচ্ছুগুলার গাজুরিয়া মাইর শুরু হইয়া গেছে। মছুয়াগুলার ভাগনের রাস্তা পর্যন্ত বন্ধ। অনেক জায়গায় বিক্ষুরা মছুয়াগাে ঘেরাও দিয়া বইয়া আছে- দেখি দানাপানি ছাড়া কয়দিন চিরকিৎ রাখতে পারাে।

এই দিকে রাজাকারগাে ‘হােগিয়া ভাই’- এর অবস্থা। ফাস্ট চান্সেই ছারেন্ডার। শও হিসাবে রাজাকার এই করবার করতাছে। আর এইগুলার এক একটার চেহারা সুরৎ একেক রকম। কেউ গেঞ্জী গায়ে লুঙ্গিপিনদ্যা চাইনিজ মেসিনগান লইয়া ছারেণ্ডার করতাছে আবার কেউ ঢলঢল ফুলপ্যান্ট পরনে আমেরিকান রাইফেল গ্রেনেড লইয়্যা ধরা দিতাছে। আবার কেউ কেউ খালি চিল্লাইতাছে আমিও বিচ্ছু হমু, আমিও বিচ্ছু হমু।’ মহাচীনে চিয়াং কাইশেকের কুয়ামিনটাং বাহিনীরে ডাবিশ করণের টাইমেও এই রকম। কারবারই হইছিল। বঙ্গাল মুলুকের এই রকম একটা কুফা অবস্থায় সিলেটের চুষপাজামা মাহমুদ আলী ছুটি লইয়া জাতিসংঘ থাইক্যা ঢাকায় কুর্মিটোলায় বউ মাইয়ার লগে মােলাকাত করতে আইছিল। বেডায় আবার নিউইয়র্কের পথে পাকিস্তানে গেছে। চুষ-পাজামা করাচীতে সাংবাদিকগাে কাছে কইছে না থাউক আইজ কমুনা- যদি ঘােড়ায় হাইস্যা দেয়। কইতাছি, কইতাছি তপন ধইর্যা টান দিয়েন না। মাহমুদ আলী সা’ব কইছুইন বঙ্গাল মুলুক অক্করে Normal, এমন Normal যে হাজারে হাজার রিফিউজি চুষ-পাজামা কই? চুষ-পাজামা কই?’- চিল্লাইয়া ফেরত আইতাছে।

খালি হের আব্বাজান সেনাপতি ইয়াহিয়া খান ২১০ দিন ধইর্যা ফাইট করণের পর হালে পানি না পাইয়া সােমবার দিন হাউ হাউ কইর‌্যা কাইন্দা ভরাইছে। বেড়ার আগে তাে খুবই চোটপাট আছিলাে। জোর গলায় কইছিল আমারে আটকাও, না হইলে India Attack করমু- আমার লগে নতুন মামু আছে, কত কি? আর অখন? হে-এ-এ, উথান্ট তুমি আইস্যা দেইখ্যা যাও বিষ্টুগুলা আমার Best সােলজারগাে কিভাবে কোবাইতাছে, আমি অখন চাইর দিকে খালি হইলদ্যা দেখতাছি। ৭২ ঘণ্টায় যে লাড়াই শ্যাষ করমু ভাবছিলাম, হেই লাড়াই ৭২ ঘণ্টার জায়গায় সাত মাস পার হইয়া আট মাসে পা দিছে-কিন্তু কোনাে কুল-কিনারা তাে পাইতাছি না।

আমি পয়লা Internal Affair কইয়া রেড ক্রসের পেলেন পর্যন্ত বঙ্গাল মুলুকে যাইতে দেই নাই। ৩৩ জন ফরিন Journalist ঢাকার থনে খেদাইছিলাম। কিন্তু অখন

২৬৬

রেডক্রস, জাতিসংঘ, CIA, আমেরিকা, চায়না, ইরান, ইন্দোনেশিয়া তােমরা হলে বঙ্গাল মুলুক আইলেও আপত্তি নাই। একটার পর একটা এলাকা বঙ্গাল মুলুকে বিচ্ছুরা দখল করতাছে। বর্ষার পর ভাবছিলাম আমরা জোর Attack করমু। অখন বর্ষার বলে বিচ্ছুরাই উল্টা আমাগাে Attack করছে। জেনারেল পিয়াজী ভাগােয়াট কারবারের মাইদ্দে পড়ছে, এলায় করি কি? হে উথান্ট, হে আমেরিকা, হে অমুক, হে তমুক এইডা কি গ্যাড়াকলে পড়লাম? আমি বঙ্গাল মুলুক 0.G.L. কইর‌্যা দিলাম। এইদিকে নূরুল আমীনের বুদ্ধিতে ঠ্যাটা ম্যালেক্যারে দিয়া হারু পার্টির মালভর্তি মন্ত্রীসভা বানাইলাম। কিন্তু কিছুই হইলাে না। মধ্যে থাইক্যা ঠ্যাটা মালেকায় তুফান মাল-পানি কামাইতাছে। আমি ডরের চোটে ঢাকায় যাইতে পারি না গতিকেই মালেকায় এই মাহে রমজানের মাইদ্দে মাল-পানি খাওনের রেইট বাড়াইয়া দিছে। হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম, ‘চোর চোট্টা খাজুরের গুড়, তিন জিনিষ মালেকা চুর।