You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.20 | চরমপত্র ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

দিন কয়েক আছিলাম না। বিচ্ছুগুলার কারবার দেখতে গেছিলাম। যেখানেই গেলাম হেইখানেই অক্করে ছেরাবেরা কারবার। বাহাত্তর ঘণ্টার জায়গায় ১৭৯ দিন ধইরা লাড়াই-এর পরও জোনারেল পিয়াজী বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় টেরেন আর রাস্তা দিয়া যাতায়াতের আশা ছাইড়া দিছেন। বিক্ষুগুলার তুফান কারবারেই মছুয়াগুলার এই অবস্থা হইচে। পয়লা দিকে পিয়াজী আর টিক্কা সা’বে রেল-লাইন-রাস্তাঘাট মেরামতের কামে হাত দিছিলাে। কি সােন্দর একটা Competition শুরু হইলাে। বিক্ষুগুলা ভাঙ্গতাছে, মছুয়াগুলা মেরামত করতাছে। শ্যাষ পর্যন্ত টিক্কা-পিয়াজী হাইরা গেল। খালি পিন্ডির কাছে রিপাের্ট পাডাইলাে যে বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার ম্যাপের লগে কিছুই আর মিল খাইতাছে না। 

এইবার আইলাে ঠ্যাটা মালেইক্যা। ব্যাড়ায় জেনারেল পিয়াজীরে সাজিশন করলাে টেরেন আর রাস্তাঘাট থুইয়া দরিয়া দিয়া যাতায়াত শুরু করলে কেমন হয়? লগে লগে ঢাকার সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে কাঁটাতার দিয়া ঘেরাও কইর‌্যা চেক পােস্ট বহানাে হইলাে। সমস্ত নৌকা, লঞ্চ সার্চিং শুরু হইলাে। নারায়ণগঞ্জের হেইমুড়াও একই কারবার হইলাে। কিন্তু চাঁদপুর? হেইখানে যাওনের পর আমাগাে পিয়াজী সা’বে আঙ্কা কইয়া বইলাে, “ইয়ে কিনা দরিয়া হ্যায় না সমুন্দর হ্যায়?’এমুড়া, হেইমুড়া মাইল বারাের মতাে। এলায় উপায়? ভুড়িওয়ালা জেনারেল কইলাে, ঠিক হ্যায় এক তরফ গার্ড লাগাও দুসরা তরফ আল্লাহ হ্যায়।’

ছক্কু মিয়া অক্করে ফাল পাইড়া উঠলাে, আল্লাহ তাে আছেই, লগে লগে তার বান্দা বিচ্ছুগুলাও রইছে। জেনারেল পিয়াজী চাঁদপুর থনে ঢাকায় সেকেন্ড ক্যাপিটালে ফেরৎ আইয়া দ্যাহে কি? মফঃস্বল থনে Fild Inteligence-এর রিপাের্ট অক্করে পাহাড় হই রইছে। বিসমিল্লাহ বইল্যা পয়লা রিপাের্টটার মাইদ্দে নজর লাগাইলাে। চকু দুই কচলাইয়া পিয়াজী সা’বে দেখলাে- না রিপাের্ট ঠিকই লেখা আছে, ‘সিলেট এলাকা। বিচ্ছুগুলা অনেকগুলা মাল বােঝাই লঞ্চ, স্টিমার আর গাদাবােট মুক্ত এলাকাটা লইয়া গেছে। বিক্ষুগুলার আগুনের ভাঁজ না পাইয়া মছুয়াগুলা ভাগােয়াট হওনের গতিতে এই অবস্থা হইছে।

২৩৭

খুলনার এইদিকে একই অবস্থা। মুক্তি বাহিনী দুইটা লঞ্চ খাতির জমা কইর‌্যা লইয়া গেছে। রাজশাহীর পদ্মায় জোর চুবানীর কারবার চলতাছে। আর টাঙ্গাইলের চাড়াবাড়ীর ভাটিতে অস্ত্র বােঝাই একটা তিন-তলা স্টিমারে বিক্ষুগুলা যা-ইচ্ছা-তাই কারবার করছে। সতেরােটা গয়না নৌকা ভইর্যা কাদেরিয়া বাহিনীর পােলাপান অস্ত্রপাতি লইয়া গেছে। আইজ-কাইল কুমিল্লা-নােয়াখালী ছাড়াও বরিশাল-গােপালগঞ্জেও বিচ্ছুগুলার কায়কারবার অক্করে জিওট বাঁধছে। বিচ্ছুগুলা মানুষ না আর কিছু? | হেইদিন এইগুলা বরিশালের বানােয়ারী থানায় মছুয়াগুলারে তক্তা বানাইছে। পিয়াজী সাবে কি রাগ! বাকী রিপাের্টগুলা দেখনের আগেই চিল্লাইয়া কইলাে, কই হ্যায়? বঙ্গাল মুলুকমে কেনে মাইল দরিয়া হ্যায়, উসকা রিপাের্ট লাও। মওলবী সা’বে যখন দেখলাে শীতের মাইদ্দে চাইর হাজার মাইল আর বারিষের সময় পাঁচ হাজার মাইল নদীপথ রইছে, তখন আকা ঠাস্ কইর‌্যা আওয়াজ হইলাে। পিয়াজী সা’বে চেয়ার থনে পইড়া গেছিলেন।

ওহ্ হােঃ! আসল কথা তাে কই-ই নাই। হেইদিন বিক্ষুগুলার লগে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীতে গেছিলাম। আঙ্কা দেহি কি, একটা ছিপ নৌকা স স কইর‌্যা আমাগাে গয়না নৌকার নজদি আইয়া পড়লাে। কয়েকটা জোয়ান ব্যাডায় ছিপ্ নাও থনে চিল্লাইয়া উঠলাে, ডরাইয়েন না, ডরাইয়েন না, আমরা মেলেটারি না- আমরা ডাকাত- আমরা মানুষ মারি না, খালি মাল-কড়ি লমু’। কেমন বুঝতাছেন, আইজ-কাইল দখলীকৃত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা! আমি অক্করে তাজ্জব বইন্যা গেলাম। এরপর বুঝতেই পারতাছেন। বিক্ষুগুলা জনা চারি ডাকাতরে হেই কারবার কইর‌্যা দিলাে। বাকীগুলা পানির মাইদ্দে ফাল্ দিয়া পড়লাে।

আরাে কয়েক মাইল ভাটিতে আইস্যা নদীর পাড়ে একটা গেরামের মাইদ্দে গেলাম। আমাগাে পাইয়া গেরামের মাইনিষে বােরখা পরা একটা মাইয়া গেরিলারে লইয়া আইলাে। পয়লা এর মাজমাডা বুঝতে পারি নাইক্যা। হেরপর একটা ছ্যাড়ায় বােরখার নেকাবটা মানে কিনা মুখের পর্দাটা তুললাে। দেহি কি, একটা বােমা সাইজের দাড়িওয়ালা ব্যাডায় খালি কাঁদৃতাছে। বিচ্ছুগুলা ব্যাডারে প্যাদানী দেওনের লগে লগে ব্যাডায় ভর ভর কইর‌্যা কইয়্যা ফেলাইলাে মছুয়া মেলেটারিগাে রাস্তা দেখানাের লাইগ্যা এই বােরখা পরছি। পাবলিকে হেরে ছইরুদ্দি বইল্যা চিন্ন্যা ফেলাইবাে গতিকেই এই কারবার করছে। কিন্তু গেরামের পােলাপান তাড়িঙ্গা লম্বা সাইজের বােরখাওয়ালী দেইখ্যা। Doubt কইর‌্যা এরে ধইর্যা ফেলাইছে। এলায় বুঝছেন মছুয়াগুলার কারবার অইজকাইল কোন স্টেজে গেছে?

হ-অ-অ-অ এই দিক্কার কারবার হুনছেন নি? দিন কয়েক আছিলাম না। এর মাইদ্দে ঠ্যাটা মালেইক্যা চান্সিং করছুইন। ব্যাডা ঠেকা কাম চালাইবার জন্যি আর দুনিয়ার মাইনষের কড়া ডােজের ভােগা মারনের লাইগ্যা জনাদশ পাতি দালাল লইয়া ১৭ই সেপ্টেম্বর হের উজির সভা বানাইছে। সা’বে কইছে কিসের ভাই আহল্লাদের আর

২৩৮

সীমা নাই। শ্যাম চাচা সেনাপতি ইয়াহিয়া খানকে বলেছেন, অক্টোবরে Pakistan Aid Consortium-এর বৈঠক আর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আগে বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় এমন ট্রিক্স করতে হইবাে- যাতে কইরা দুনিয়ার মাইনষেরে বুঝানাে যায় যে, অবস্থা অক্করে Normal হইয়া গেছে। আর বেসামরিক লেতারা কি। সােন্দর গবর্ণমেন্ট চালাইতাছে। 

যেই রকম বুদ্ধি হেই রকম কাম। ঠ্যাটা মালেইক্যা অক্করে গরু খোঁজা শুরু করলাে। হারু পার্টির গাবুর সাইজের মানে কিনা ফ-কা, ফরিদ, ঠাণ্ডা সবুর, খাজা-আজমের সাইজের মাল লইলে হাতে নাতে ধরা পড়বাে ভাইব্যা হারু পার্টির ব’ টিমের মালপত্র খুঁইজ্যা বাইর করছে। বাঙালি পাবলিকগাে উপরে তাগাে খুব কন্ট্রোল। হেগাে দেখনের লাইগ্যা মানইষেগাে দিল অক্করে জার জার করতাছে। কিন্তুক মওলবী সাবরা একটুক হিসাব কইরা চইলেন। বিষ্টুগুলার নােট বইয়ের মাইদ্দে আপনাগাে নাম-ঠিকানা চেহারামােবারক দেখছি। যেকোনাে টাইমে, যেকোনাে জায়গায় কারবার হইয়া যাইতে পারে। ঠেটা মালেইক্যায় যেসব মালপত্র যােগাইছে হেগাে দুই চাইরটা মালের নমুনা কইলেই বুঝতে পারবেন। এইগুলা কোন পদের জিনিষ।

এই ধরেন খুলনার মওলানা ইউসুফ। ব্যাডায় খবরের কাগজের হকার-এজেন্ট। হঠাৎ পলিটিক্স করণের সখ হইলাে। লগে লগে জামাতে ইসলামের মাইদ্দে নাম লেখাইলাে। মওলানার সবচেয়ে বড় ক্রেডিট- এইবার Election অক্করে হুইত্যা পড়ছিল- মানে কিনা হারু মওলানা। এরপর ব্যাডায় খুলনাতে মছুয়াগুলার লগে মিইল্লা বাঙালি মার্ডার করছে।

দুই নম্বরে ছলু মিয়া। আহহা ছলু মিয়ারে চিনলেন না? হেই যে পােষ্টাল ডিপার্টমেন্টের কেরানী আছিলাে। কি সব মালপত্র চুরি করণে চাকরি গেছিলাে। এখনও চিনলেন না ‘কিসে নাই চাম রাধা-কৃষ্ণ নাম। উনি হইতাছেন One man party মানে। কিনা উনার একটা পৃথক দল রইছে। হেইডার প্রেসিডেন্ট থাইক্যা পিওন পর্যন্ত হগুগল কিছুই এই ছলু মিয়া। ব্যাডা একখান! এইবার Election-এ Contest করণের চিরকিৎ হইছিল। কিন্তুক হাওয়া বুঝতে পাইর্যা ব্যাডায় লেজ গুটাইছিল। এইবার চিনছেন। ইনি হইতাছেন ঢাকায় পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপের মাইনে করা দালাল কৃষক-শ্রমিক পার্টির চেয়রম্যান মােহাম্মদ ছােলায়মান- Short cut-এ ছুলু মিয়া।

তিন নম্বরে জয়পুরহাটের আব্বাস আলী মওলানা। রাজশাহী বিভাগের জামাতের নাজমে। ব্যাডায় খুবই পপুলার কিনা। তাই এবারের ইলেকশানে গাব্বা মারছে। তিন জনের মাইদ্দে থার্ড হইছিলেন। ক্যামন কড়া কিসিমের মাল, বুঝছেন?

হ-অ-অ-অ পালের গােদাডার নাম কই নাই নাঃ। ইনি হইতাছেন আসামের মাইনকার চরের আবুল কাসেম। হের একটা সাপ্তাহিক কাগজ আছিলাে। নাম ‘বিপ্লব’। কিন্তু মাত্র একটা কাপড়ের মিল বহাইছে। এই মওলবী সা’বে বচ্ছর বাইশেক আগে মরা পকিস্তানের পার্লামেন্টে কইছিল, বিশ বচ্ছরের জন্যি সমস্ত রাজনৈতিক পার্টিরে বেআইনী

২৩৯

ঘােষণা কইরা খালি মুসলিম লীগরে জিন্দা রাখলে কেমন হয়? এই প্রস্তাবে মরহুম লিয়াকত আলী খান পর্যন্ত হাইস্যা ফেলাইছিল। কিন্তুক ব্যাডার লজ্জা-শরম, কিছুই নাইক্যা। এইবার রংপুরের দুই জায়গার থনে Election-এ Luck টেরাই করছিলেন। কি সােন্দর Result? দুই জায়গার থনেই ডাব্বা। ঠ্যাটা মালেইক্যায় এই Record দেইখ্যা লগে লগে Apointment দিয়া দিছে।

আমাগাে ছক্কু মিয়া অক্করে ফাল পাইড়া উঠলাে, তা হইলে কাউলা, মেহামত মিয়া, সেরকটু মােহাম্মদ- এরা কি দোষ করলাে?”

আমি কইলাম আবে এই ছক্ক, তগাে দোস্তগুলাই তাে মন্ত্রী হইছে। একই কথা। মাজেসাঝে যাইয়া গুলগুল্লা খাইয়া অহিস্ আর কি?

আইজ আর টাইম নাইক্যা। বাকীগুলার History পরে কমু।আহহা তপন্ ধইর্যা টাইনেন না- তপন ধইর্যা টাইনেন না। কিরা কাটতাছি। কোন ব্যাডায় কিভাবে টাকা মারছে, আর কয়বার Election-এ ডাব্বা খাইছে, সব কমু। হেইর লাইগ্যা কইছিলামদিন কয়েক আছিলাম না- এর মাইদ্দেই ঠেটা মালেইক্যায় চান্সিং করছুইন। ব্যাডা একখান। কি সােন্দর মন্ত্রীসভা বানাইছুইন। এরেই কয় ‘ঢাল নাই, তলােয়ার নাই নির্ধিরাম সর্দার। সবই ইয়াহিয়া-পিঁয়াজীর কেরামতি।