You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09 | চরমপত্র সেপ্টেম্বর ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

দিন দুয়েক আছিলাম না। ঠাণ্ডা লাগনের গতিকে শরীলডা একটু ম্যাজম্যাজ করতাছিল। কই থনে আমাগাে বকশি বাজারে ছকুমিয়া আইস্যা আমারে হড় হড় কইর‌্যা টান দিয়া আনলাে। আমি কইলাম, ছকু, পেরতেক দিনে আমিই তাে কথা কইতাছি, আইজ তুমিই একটা হুনাও দেখি। পশ্চৎ কইর‌্যা একগাদা পানের পিক ফালাইয়া ছক্ক অক্করে ফাল্ পাইড়া উঠলাে। হেইদিন আমাগাে কালু মিয়া আঃ হাঃ কালু মিয়া কইলে তাে আবার চিনবেন না- আমাগাে কাউলা এক মহা মুছিবতের মাইদ্দে পড়ছিল। হের দুই ভাইজত্যা, বাপ মরণের পর থাইক্যা রােজ দিনেই সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা লইয়া চিল্লা-চিল্লি ঝগড়াফ্যাসাদ করতাছিল। মহল্লার মাইনষে অক্করে অস্থির হইয়া উঠলাে। হ্যাশে একদিন রাইত দুপুরে যখন হগ্গলে বিক্ষুগুলার ফুটফাট আওয়াজ হােননের লাইগ্যা কান খাড়া কইর‌্যা রইছে, তখন দুই ভাইয়ের মাইদ্দে বেদম মাইর শুরু হইয়া গেছে। মহল্লার মাইষে অনেক কষ্টে দুইজনরে থামাইয়া মােছলমান লীগের হারু মাল খাজা খয়েরুদ্দিনের কাছে। লইয়া গেল। খাজা সা’বে আবার আইজ-কাইল বিচ্চুগাে ডরে কয়েক গুন্ডারে রাজাকারের খাতায় নাম লেখাইয়া গার্ড বানাইছে। খাজা সা’বে হল কিছু হুননের লাইগ্যা সাক্ষী হিসাবে এই কাউল্যারে ডাক দিলাে। কাউল্যায় কইলাে, কত কইর‌্যা পােলা দুইডারে না করলাম, চিল্লা-চিল্লি মাইর-পিট করিস্ না, করিস না, জমানা খারাপ। লগে লগে খাজা সা’বে কি রাগ। অক্করে উর্দুতে চিক্কুর পইড়া উঠলাে, ‘খায়ের ও দো ল্যাড়কা কো তাে ছােড় দিয়া, আভি কাউল্যা কো মুছিবত হ্যায়- কেউ বাতাই জমানা খারা? ছদর ইয়াহিয়াকা জমানা কভি খারাপ হােতা হ্যায়? হের পর কাউল্যায় এক মহা গেনাজমের। মাইদ্দে পইড়া গেল। শেষ পর্যন্ত আর কি হইবাে? বুঝতেই পারতাছেন- মাল-পানি। জিন্দাবাদের কারবার হইলাে।

হ-অ-অ-অ এদিকার কেইসটা হুনছেন নি? সাদা চামড়ার সাবগুলারে এতাে কইর‌্যা Warning দিতাছি বঙ্গাল মুলুকে ব্যবসা করণের ব্যাপারটা আপাততঃ ক্ষ্যান্ত দাও আর বেড়ানী বন্ধ কর। বিক্ষুগুলা অখন যেভাবে মছুয়া কোবাইতে শুরু করছে, তাতে সামনে যা কিছু পাইবাে সব শ্যাষ। কিন্তু নাহ আমার কথা শুনলাে না। হেইদিন কি সােন্দর একটা আংরেজ জাহাজ কিছু বাণিজ্য করণের আশায় চালনা বন্দরে যাওনের পর কি রকম একটা ক্যাডাভেরা অবস্থা হইছিল। হেই কথা তাে আগেই কইছি। তবুও সাদা চামড়ার মালগুলার শিক্ষা হয় নাই। ঢাকার জার্মান কনস্যুলেটের দুইজন সা’ব মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীরে জিগাইলাে, অনেকদিন পর্যন্ত ঢাকা টাউনে থাকতে থাকতে অক্করে ফাপর মনে হইতেছে, ঢাকার আশে পাশে একটু বেড়াইতে চাই- আপনে কেমন মনে করেন? Prestige ঢিলা হওনের আশংকায় লগে লগে ফরমাইন্যা কইয়া বইলাে না, না, ভয় ডরের কিছু নাইক্যা। দুশমনগাে আমার সােলজাররা Finish কইরা ফেলাইছে।

২৩৪

আপনারা ইচ্ছামতাে বেড়াইতে পারেন। রাস্তার মাইদ্দেও আমাগাে বহুত Camp আছে। ব্যাস্ ফরমান আলীর ভােগা কথাবার্তায় দুইজন জার্মান সা’বরে মউতে Call করলাে। ঢাকার থনে যে রাস্তাটা ডেমরার উপর দিয়া শীতলক্ষ্যা, ছােট মেঘনা, বড় মেঘনার ফেরী পার হইয়া কুমিল্লা মুহী গেছে, গেল এতােয়ারের দিন জার্মান কনস্যুলেটের দুইজন সা’ব। হেই রাস্তা দিয়া বেড়াইতে বাইরাইলাে। ব্যাডারা একবারও চিন্তা কইর‌্যা দেখলাে না যে, বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় অখন দিনে মছুয়া, রাইতে বিছু। আবার কোনাে কোনাে জায়গায় অক্করে চুপচাপ। রাইতে বিছু-দিনেও বিছুর কারবার। 

ঢাকার থনে এই দুই সা’বে ফরমান আলীর আশ্বাসে গুনগুন্ স্বরে গান গাইতে গাইতে রওয়ানা হইলাে। শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝিরা পর্যন্ত অবাক হইয়া গেল। এই সাদা চামড়াগুলার কি মরনের ভয়-ডর নাই নাকি? মেঘনা-শীতলক্ষ্যর চরের মাইদ্দে আলাদা পাইয়া এর মাইদ্দে তাে বিচ্ছুরা, আহারে! বেবাক মছুয়া সাবাড় কইর‌্যা থুইছে। আবার ঢাকার থনে নতুন মছুয়া যাতে অইতে না পারে হের লাইগ্যা যেখানে সেখানে মাইন বহাইছে।

হ্যাঃ হ্যাঃ যা হইবার তাই-ই হইলাে। ব্যাটা মালেকার গবর্ণমেন্ট হাউস থাইক্যা মাত্ৰক মাইল বাইশেক দূরে সােনার গাঁয়ে যেইখানে এক সময় স্বাধীন বারাে ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া ঈশা খাঁর রাজধানী আছিলাে, হেইখানে মাইন Burst করণের গতিকে দুইজন জার্মান সা’বে হালাক হইলাে। রেডিও গায়েবী আওয়াজ আবার গাড়ােলের মতাে কইয়া বইছে, হিন্দুস্তানী এজেন্ডারা এই কাম করছে। যদি এই রকম Publicity কইর‌্যা পাবলিক-এর মাইদ্দে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যায়। বাংলাদেশের গেরামের সইরদ্দিগয়েরদ্দির পােলাপানরা যখন খােদার কসম খাইয়া রক্তের বদলে রক্ত লইতে শুরু করছে, তখন সেনাপতি ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা কত রকমের ভাইল পটুকিই না দেখাইলাে! যাউকগা সাদা চামড়ার মানুষগুলারে কইয়া দিতাছি, বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় বিচ্ছুরা অখন মছুয়া আর রাজাকার দালাল মারতে মারতে অক্করে পাগলা হইয়া উঠছে। তাই মফস্বলের দিকে বেড়ানী অক্করে বন্ধ কইর‌্যা ফেলান। আপাততঃ ব্যবসা-বাণিজ্যের আশা ছাড়ান দেন। আর মছুয়া জেনারেলগাে ভােগা কথাবার্তায় বিশ্বাস করবেন না। তলে তলে এইসব জেনারেলরা কিন্তু নিজেরাই সুটকেস গুছাইয়া থুইছে আর বিচ্চুগাে ডরে হাওয়াই জাহাজ-হেলিকপ্টার ছাড়া মফস্বলের দিকে যাতায়াত বন্ধ করছে। 

অ্যাঃ অ্যাঃ। টাঙ্গাইলের খবর হুনছেন নি? হেইদিকে বলে তুফান কাদেরিয়া মাইর শুরু হইয়া গেছে। টাঙ্গাইল টাউন, ঘাটাইল, কালিহাতি আর মির্জাপুর থানা হেড কোয়ার্টার ছাড়া বে-বা-ক জায়গা থনে মছুয়া Clear- ব্যাডাগাে নাম ঠিকানা পর্যন্ত। নাইক্যা। টাঙ্গাইলের বিচ্চুগাে দুসরা নাম হইলাে কাদেরিয়া বাহিনী। মছুয়াগাে সামনে খালি কাদেরিয়া বাহিনীর নাম কইয়া দেইখেন- আস্তে কইর‌্যা সব খাকী ফুলপ্যান্ট বাসন্তী Colour হইয়া যাইবাে। হেইদিন চাড়াবাড়ী, বল্লা, ভূয়াপুর, এইসব জায়গায় মছুয়াগে আলাদা না পাইয়া আরে মাইর-রে-মাইর। মছুয়াগুলা খালি Wireless-এর মাইদ্দে

২৩৫

চিল্লাইতাছে Help Help- আজরাইল ফেরেশতা অক্করে খাতা কলম লইয়া দৌড়াইয়া আইছে। এইতাে Help করতে আইছি। আয় মেরি লাল, ঘৎ কইর‌্যা আখেরি দমডা ছাড়লেই খাতায় নামডা লেইখ্যা লইতাছি। টাঙ্গাইল টাউনের মছুয়ারা কাদেরিয়া মাইরের খবর না পাইয়া কি কাঁপন? খালি খাতার মাইদ্দে লেইখ্যা খুইলাে Wireless out of | order. টাউনের থনে বাইরাইলেই তাে মউত খাড়াইয়া আছে। চাড়াবাড়ী-বল্লাভূয়াপুরের মছুয়াগাে Help করণের আগে নিজেগােই তাে Help-এর দরকার হইবাে। এই দিকে ঢাকা- টাঙ্গাইলের রাস্তাও তাে একেবারে ছেরাবেরা হইয়া আছে।

এই রকম একটা ক্যাডাভেরা অবস্থায় মুরগির আণ্ডার যেই রকম হালি হয়, হেইরকম হালি হালি হিসাবে চাড়াবাড়ী-বল্লা-ভূয়াপুরে মছুয়ারা স.অ.ব কেদো আর পাঁকের মাইদ্দে হান্দায়া গেল। এইডারেই কয় কাদের বাহিনীর কাদেরিয়া মাইর। নদীর চর, গাং-এর পানি, গেরাম, মাঠ, রাস্তা-ঘাট, জঙ্গল, পাহাড়, টাঙ্গাইলের হগগল এলাকাই মুক্ত হইয়া গেছে। এইসব জায়গায় বাংলাদেশ সরকারের অফিসাররা কাজ কাম শুরু করছে আর কাদেরিয়া বাহিনীর বিচ্ছুরা টাঙ্গাইল টাউন, কালিহাতি, ঘাটাইল, মির্জাপুর থানা ঘেরাও দিয়া বইস্যা রইছে। দেখি দানাপানি ছাড়া মছুয়া মহারাজরা আর কতদিন থাকতে পারে। বাইরাইলেই মাইর। বাইরাইলেই মাইর।

কি হইলাে? কি হইলাে? সেনাপতি ইয়াহিয়া-ঠ্যাটা মালেক্যা-পিঁয়াজীর দল আপনাগাে চোটপাট আইজ-কাইল আর হুনতাছি না কেন? কইছিলাম না- এক মাঘে শীত যাইবাে না? অখন বিচ্চুগাে মাঘ মাস আইস্যা গেছে। মাইরের দেখছেন কি? আরাে হাজার হাজার বিচ্ছুর ট্রেনিং Complete হইয়া গেছে। এইগুলা আপনাগাে এক একজনের কইর‌্যা গতরের চাম খুইল্যা লইবাে। টাঙ্গাইলের হিসাব পাইচেন তাে? দুই হাজার মছুয়া সােলজার প্যাকের তলায় হাড্ডি হইয়া আছে। ৮০০ রাজাকার Where is your leg কইয়া ছারেনডার করছে আর ১৩৭ জন দালাল মীর জাফররে বিচ্ছুরা খাতির জমা কারবার কইরা দিছে। ছলু মিয়ারে জিগাইয়েন। আঃ হাঃ ছলুরে চিনলেন না? One man Party। ঠ্যাটা মালেকার মিনিস্টার হেই ছলু মিয়ার টাঙ্গাইলে মিডিং করণের চিরকিৎ হইছিলাে। আত্তা কই থনে টাঙ্গাইলের আসলি খবর পাইয়া খট খট খট খট আওয়াজ হইতে শুরু করলাে। ডরাইয়েন না, ডরাইয়েন না। ছলু মিয়র হাঁটুতে হাঁটুতে বাড়ির আওয়াজ পাওয়া যাইতাছে। এর পর বুঝতেই পারতাছেন। জরুরি কাজে আটকা পড়নের গতিকে নেতার মিডিং ক্যানচেল হইলাে।।

কিন্তুক ছলু মিয়ার নিজের এলাকা নারায়ণগঞ্জের সােনারগাঁয়ে বিক্ষুরা সােনা ফলাইতে শুরু করছে।

তখন খালি একটা বাের্ড লাগাইতে হইবাে, ‘অতীতে কোনাে এক টাইমে এইখানে মছুয়া নামক এক প্রকার হানাদার সােলজার আসিয়াছিল। উহাদের সকলেই অকালে এইসব চরের মাইদ্দে চিরন্দ্রিায় শায়িত রহিয়াছে। ইহাদের সেনাপতি ইয়াহিয়া স্থানীয় পােলাপানদের বিছু নামক বাহিনীর ভয়ে দেড় হাজার মাইল দূরে রাওয়ালপিন্ডিতে বসিয়া

২৩৬

বসিয়া যুদ্ধ শেষে পরাজয় বরণ করিয়াছে। কিন্তু ৮০ হাজার মছুয়া হানাদার বাহিনীর কেহই আর দেশে ফিরিয়া যাইতে পারে নাই। ঐতিহাসিকদের মতে চাচা আর মামুর। Help না করায় বিক্ষুরা মহা আনন্দে এইসব মছুয়াদের বঙ্গাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে সাবাড় করিয়াছে। হের লাইগ্যাই কইছিলাম ছুঃ মন্তর ছুঃঅখন দিনেও বিছু রাইতেও বিছু।