You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.18 | চরমপত্র ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

খাইছে রে খাইছে। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে- এই কতাডার মানে অনেকদিন পর্যন্ত বুঝতে পারি নাইক্যা। অখন বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার অবস্থা দেইখ্যা এই কথাডা হাড়ে হাড়ে বুঝতাছি। আমাগাে শ্রীহট্ট নিবাসী হারু পার্টির নেতা চুষ-পাজামা মাহমুদ আলী যখন ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে ওয়াইপ আর সেয়ানা মাইয়ারে মছুয়া মেলেটারিগাে হেফাজতে রাইখ্যা জাতিসংঘে চাম উঠা মালের মতাে ঘেউ ঘেউ করতাছে বঙ্গাল মুলুক অক্করে Normal হইয়া গেছে, ঠিক তখনই ঢাকা আর চালনা বন্দরে বিক্ষুগুলার কারবার হইছে। ঠ্যাটা মালেকার একজন হেই জিনিষ বােমা খাইয়া মেডিকেলে গেছে, আমেরিকান একটা জাহাজ উবদা হইয়া পানির মাইদ্দে হান্দাইছে। আর World Bank-এর একজন মার্কিন ইঞ্জিনিয়ার Architect Stanely Tigerman সেনাপতি ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকারের অক্করে হােতায়্যা ফেলাইছে। ধােপায় যেমতে কইর‌্যা কাপড় বাইড়ায় Stanely সা’বে হেইরকম একটা কারবার করছে। বচ্ছর পাঁচ আগে ইসলামাবাদের গবর্নমেন্ট বগুড়া, পাবনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট এই সব জায়গায় পলিটেকনিক স্কুলের নকশা বানাইবার জন্যি World Bank-এর মারফত এই সাদা চামড়ার সাবের লগে একটা চুক্তি করছিল, এই কামের লাইগ্যা Stanely সা’বে এর মাইদ্দে ষােলবার বঙ্গাল মুলুকে যাতায়াত করছে। এই বার বাংলা মুলুকে লড়াই শুরু হওনের পর আত্বা ইসলামাবাদ থাইক্যা খবর আইলাে ‘বঙগাল মুলুক Normal হইয়া গেছে। এলায় আপনে আবার কামে হাত দেন।’ Stanely সা’বে কি খুশি? অক্করে হাওয়াই জাহাজে উড়াল দিয়া ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় আইছিলাে। হের পর দ্যাহে কী? কেইস খুবই খারাপ। খােদ ঢাকা টাউনের মাইদ্দেই বিন্দুগুলা ফুটফাট কারবার চালাইতাছে। মফস্বলে যাওন আর মউতের লগে মােলাকাত একই কথা। 

Stanely সা’বে নিজেই কি কইছে হােনেন। ঢাকা এয়ারপাের্টে কাস্টম্স-ওয়ালারা নাইক্যা। মছুয়া মেলেটারিরা হেই কাম করতাছে। আর সার্চিং মানে সার্চিং। ফুল প্যান্টের পকেটের মাইদ্দে পর্যন্ত হাত দিয়া মালপত্র দেখতাছে। এয়ারপাের্টের চাইরাে মুড়া বিমান বিধ্বংসী কামান আর বাংকারগুলার মাইদ্দে মছুয়াগুলা থর থর কইরা কাঁপতাছে। ঢাকা টাউনে সার্চিং, ডর দেখান, চেক পােস্টে পাঞ্জাবি পুলিশ, রাজাকার, মেলেটারি হগল। কিছু মিইল্যা একটা ক্যাডাবেরাস অবস্থার সৃষ্টি হইছে। Stanely সা’বে আরাে কইছে।

২০৪

রেল লাইন নাইক্যা, ঢাকার বস্তিগুলা সাফ, শহীদ মিনার গায়েব, মন্দির হাওয়া, মসজিদ গুড়া। টাউনের মাইদ্দে কাগাে ডরে যেনাে পাঞ্জাবি পুলিশ বেয়নেটওয়ালা জিনিষপত্র লইয়া ঘুরতাছে, বড় গাড়িতে মেলেটারিরা টহল দিতাছে, বহু বাংকার তৈরী করছে, সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাট ধলী- মাইনষে কথা কইতে ডরায়। এইডাতাে Normal কারবারের নমুনা হইতে পারে না।

এই আমেরিকান সা’বে ঢাকার অবস্থা দেইখ্যা ঠিকই আন্দাজ করছে, বিচ্ছুগুলার নমুনা কারবারেই যখন মছুয়াগুলার কাপড় বাসন্তী Colour হইছে তখন আসল কাম শুরু হইলে না জানি কি অবস্থা হয়? এর থাইক্যা আগে কাইট্যা পড়নই ভালাে। এরপর এই মার্কিনী সা’বে বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার থনে ভাইগ্যা যাইয়া ট্রাংককলে Resign করছে। খালি কইছে, বাংলাদেশ পুরা স্বাধীন হইলে আবার আমু- তার আগে আগে না। ও মাই গড। | ছক্ক মিয়া ফাল দিয়া কইলাে, ভাইসাব এই আমেরিকান সা’বে একটা জায়গায় মিছা। কথা কইছে। আইজ ছয়মাস ধইর্যা ঢাকা টাউনে যে অবস্থা দেখতাছি তার একটুকও Change হয় নাইক্যা। মানুষ মার্ডার, বলাকার, মেলেটারির টহল, রাজাকারগাে। লুটপাটে আর বিক্ষুগুলার কায়কারবার এইগুলাই তাে ঢাকা টাউনে Normal ব্যাপার। আসলে অমেরিকান সা’বে Normal ঢাকারে দেইখ্যাই ডরাইছে।

এই দিক্কার কারবার হুনছেন নি? ছয়মাস Time হাতে পাওনের গতিকে এর মাইদ্দেই হাজারে হাজার বিচ্ছুর ট্রেনিং Complete হওনের খবরে মছুয়াগুলা অক্করে পাগলা হইয়া উঠছে। ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা একটা মাস্টার প্ল্যান বানাইছে। এই প্ল্যানে বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকারে চাইর ভাগে ভাগ করছে। কারণ? বিক্ষুগুলার লগে পাইট করনের চিরকিতের লাইগ্যা রাস্তাঘাট বানাইতে হইবাে- রেল লাইন বহাইতে হইবাে- মেরামতির কারবার করতে হইবাে। বিক্ষুগুলার হাতে গাবুর মাইর খাইয়া ভাগনের টাইমে এইসব মেরামত করা রাস্তাঘাট আর রেল দিয়া অইস্যা বাঙালি Public মার্ডার করন লাগবাে। একদিকে বাঙালি আরেক দিকে জাতিসংঘ ও মার্কিনীগাে মাইদ্দে ধান্ধা লাগনের লাইগ্যা কইতে হইবাে এই রাস্তাঘাট দিয়া ভূখা বাঙালিগাে লাইগ্যা খাবার পাঠামু। কি সােন্দর আরাে বাঙালি মারণের লাইগ্যা ঠ্যাটা মালেক-পিয়াজীর বুদ্ধি। আবার গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। রাস্তা মেরামতের আগেই পশ্চিম পাকিস্তান বিদেশ থাইক্যা ট্রাক আনতাছে।

আগের ট্রাকগুলা বিচ্ছুরা গায়েব কইরা ফেলাইছে। নতুন আমদানী ট্রাকে কইরাই মছুয়াগুলা গেরামের মাইদ্দে ঢােকনের বুদ্ধি করছে। উঁই-ই-ই কি হইলাে, কি হইলাে? আরাে দুই চাইর খান যে ব্রিজ-কালভার্ট আছিলাে বিচ্ছুগুলা হেইসব উড়াইয়া দিল। একটা কথা খেয়াল রাইখেন- যেসব গেরামে যাওনের লাইগ্যা রাস্তাঘাট, রেললাইন নাইক্যা, হেইসব গেরামের লােক একটু শান্তিতে থাকবেন। মছুয়াগুলা হেই দিকে আইতে পারবাে না আর কামটুক করণের লাইগ্যা তাে বিচ্ছুরাই রইছে। ছয়মাস ধইরা

২০৫

বিচ্ছুগুলার টেষ্টিং কারবারেই পঁচিশ হাজার মছুয়া আজরাইল ফেরেশতার দরবারে গেছেগা। বাকিগুলার উপর আজরাইল আছর করছে।

ঐদিকে হুনছেন তাে। বাঙ্গালা মুলুকের ক্যাডাবেরাচ অবস্থার ছিক্রেট রিপোের্ট পাইয়া জুলফিকার আলী ভুট্টো আইবাে না বইল্যা ঠিক করছে। সেনাপতি ইয়াহিয়ার একই অবস্থা। ব্যাডায় অখন শরাবন তুহুরায় মাইদ্দে সাঁতার কাটতাছে। এর মাইদ্দে মওলবী সাবে আবার একটা ট্রিক্স করছে। জোট নিরপেক্ষ দেশগুলার যে সম্মেলন শুরু হইতাছে, হেই সম্মেলনে join করণের লাইগ্যা কি কান্দন! আমরা সিয়াটো, সেন্টো, আর.সি.ডি.-র মেম্বার হইলে কি হইবাে? আমরা বহুরূপী। আমাগাে দেশে সামরিক জান্তা থাকলে কি হইবাে- আমরা ঠ্যাটা মালেক্যারে দিয়া গণতন্ত্র বানাইছি। ইয়াহিয়া-পিঁয়াজী খালি গার্জিয়ান হইয়া আছে। বঙগাল মুলুকের গণতন্ত্র অক্করে গেন্দা পােলা কিনা খালি হারু পাটি দিয়াই চলে- হেইখানে Election-এ জেইন্যা ব্যাডারা দেশের দুশমন। খালি বিক্ষুগুলাই মহা গ্যানজাম কারবার শুরু করছে। 

হারু পাড়ির লােকজনগুলা এইভাবে মন্ত্রী হইতাছে দেইখ্যা আমাগাে চাটিগার ফ,কা, চৌধুরীর মুখ দিয়া অক্করে লালা পড়তে শুরু করছে। ব্যাড়ায় ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে কইছে সেন্টারের মাইদ্দে ন্যাশনাল গবর্ণমেন্ট বানাইতে হইবাে- হেইখানে হেতােনে হইবাে সেন্টার ফরােয়ার্ড। ক্যামন বুঝতাছেন? কি জিনিষরে লাই দিলে মাথায় উডে। বিচ্ছগুলা আবার এর মাইদ্দে ফ.কা. চৌধুরীর পােলারে একটুক ঘইষা দিছে। মওলবী সা’ব হাসপাতালে আল্লাবিল্লা করতাছে। ওবায়দুল্লাহ মীরজাফর-ঘুরি মজুমদার ননায়াখালী থাইক্যা ঠ্যাটা মালেকার নতুন মন্ত্রী। হেইদিন ইস্টার্ন কম্যান্ডের হেড কোয়ার্টার ছেকেণ্ড ক্যাপিটালে যাইয়া জেনারেল পিঁয়াজীরে কইলাে কি? ‘চ্যার আঁই একটা Statement দিউমা। ব্যাস্ মেজর সালেকের এপিপির থনে একটা পােলায় তার। কাছে দৌড়াইয়া গেল। ব্যাড়ায় কইছে কি জানেন?– কিছুই কয় নাইক্যা। মেজর সালেক যে কাগজডা লেইখ্যা দিছে হেইডার মাইদ্দে দস্তখত কইরা দিছে। পরদিন মীরজাফর সাবে খবরের কাগজের মাইদ্দে দেখলাে ব্যাডায় নাকি মাস দুই-এর জন্য ইন্ডিয়াতে গেছিল। এইডারেই কয় নিজ কলের তৈরী সুতায় প্রস্তুত কাপড়।

অহনই কি মীরজাফর সা’ব? জেনারেল পিয়াজী যেভাবে আপনাগাে ঘেড়ি ধরবাে ঠিক হেইভাবেই ঘেউ ঘেউ আওয়াজ দেওন লাগলাে। এ্যার মাইদ্দেই পিঁয়াজী সা’ব হারে। কইছে, ‘কেয়া মেজর কা বাচ্চা, দুশমন লােককো যে Surrender করণের কো Time দিয়া থা কমসে কম উসকো এক বুট হিসাব তাে দে দেও? আমাগাে মেরূহামত মিয়া অক্কর ফাল পাইড়া উডলাে, বুঝছি, বুঝছি, ঠ্যাটা মালেক্যা যেমতে কইর‌্যা গবর্ণর। হওনের আগে রিফিউজি ফেরৎ আননের টেরাই কইর‌্যা পাঁচটা ঘেঁকী কুত্তা ফেরৎ পাইছিল। হেইরকম একটা কারবার হইছে না!

ধুঃ ও ঘাউয়া- এইবার তাও-ও হয় নাইক্যা। হেইর লাইগ্যাই তাে’ জেনারেল পিঁয়াজী কি রাগ! মেজর ছালেক একটা মেলেটারি জিপে কইর‌্যা সােজা ঢাকার পুরানা

২০৬

পল্টনের চৌ মাথায় এসােসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের দফতরে যাইয়া হাজির হইলাে। কইলাে হাশিম সা’ব আজ টেলিপ্রিন্টার মে এক খবর দে দিজিয়ে। গিয়া তিন হফতাকা আন্দর দো হাজার দোশ বিশ আওয়ামী লীগ Worker, Bengal Regiment, ‘ইপিআর, Government officer সব Surrender কিয়া। গবর্ণর মালক সাহাবকো হাম দরকীকে লিয়ে ইয়ে হােতা হ্যায়। ইয়ে লােককো বকেয়া তনখা ভি মিল রাহা হ্যায়। ব্যাস টেলিপ্রিন্টারে খটখট কইর‌্যা মিছা কথার খবর যাইতে শুরু করলাে। মেজর সালেকের কি বুদ্ধি! হপনের মাইদ্দেই যখন খাইতাছেন তহন রসগােল্লা খাইতে দোষটা কি? আওয়ামী লীগ Worker থনে শুরু কইরা Government Officer ফেরৎ অইন্যা বেতন পর্যন্ত দিয়া ফেলাইছে। 

আঃ হাঃ কি পােলারে বাঘে খাইলাে। এই ফলসিং কারবারটা অল্পের জন্যি গড়বড় হইয়া গেছে। হেগাে ফেরৎ আইন্যা আত্মীয়-স্বজনের লগে দেখাড়া না করাইলেও পারতাে। কেননা আত্মীয় স্বজনগাে অখন তাে’ মাটির নিচে, কয়েকটা হাড়ি ছাড়া আর কিছুই নাইক্যা। হেগাে তাে’ মছুয়াগুলা আগেই মার্ডার করছে। আসলে যদি-ই টোপ গিল্যা দুই-চাইর জন আইস্যা পিয়াজীর ফাঁদে পা দেয়- তা’ হইলেই তাে হেই কাম করণের কী সুবিধা? এই বুদ্ধিরেই গাড়ােল-বুদ্ধি কয়। হেইর লাইগ্যা কইছিলাম খাইছে। রে খাইছে। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।