আপদ, বিপদ, মুছিবত। ইসলামাবাদে জঙ্গী সরকার অখন এক লগে এই তিনডার। পাল্লায় পড়ছে। আপদ হইতাছে পশ্চিম পাকিস্তানের মাইর পিট, অর্থনৈতিক দূরবস্থা আর বাংলাদেশের মারা যাওয়াইন্যা মছুয়াগুলার বিবি, বাল-বাচ্চার কান্দাকাটি; বিপদ হইতাছে তামাম দুনিয়ার মাইনষে যে জঙ্গী সরকারের গতরের মাইদ্দে থুক মারতাছে হেইডা; আর মুছিবত? হেইডা মনে করলেই সেনাপতি ইয়াহিয়ার বুকের মাইদ্দে খালি ঢেকীর পাড় দেওনের মতাে গুমগুম আওয়াজ হয়। ওঃ হােঃ এখনাে বুঝলেন নামওলবী সাবের মুছিবত কোনটা? বাংলাদেশের বিচ্ছুগুলাই হইতাছে ব্যাডার আলি মুছিবত। এলায় বুঝছেন? আপদ, বিপদ আর মুছিবত এই তিনডা জিনিষ কীভাবে আইস্যা ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের উপর আছর করছে।
একদিন-দুইদিন, এক হপ্তা-দুই হপ্তা, এক মাস-দুই মাস এমতে কইর্যা সাড়ে পাঁচ মাস গেছেগা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে আপদ দিনকা দিন বাইড়াই চলতাছে। হেইখানকার শিল্পপতিরা বাংলাদেশের পৌনে আট কোটি লােকের বাজার হাতছাড়া হওনের গতিকে সিনা চাপড়াইয়া অক্করে মহরমের মাতম শুরু কইরা দিছে, ইয়া আল্লাহ, ইয়ে কেয়া হাে গিয়া।’ পশ্চিম পাকিস্তানের কাপড়ের কলগুলা বেশির ভাগই তখন বন্ধ হওনের পথে। গুদামগুলাতে মাল অক্করে পাহাড় হইয়া আছে। আমদানী লাইসেন্স না থাকনে আর বাজার গড়বড় হওনের গতিকে বহু কলকারখানা বন্ধ হইয়া গেছে।
এর মাইদ্দে আবার বােরকাওয়ালীগে মিছিল বাইরাইতাছে। এই মাতারীগুলা চিল্লাইতাছে, হামলােগ কা শওহর ওয়াপস লাও, ইন্সিওরেন্স কা রুপেয়া দেও। কিন্তু এই বােরখাওয়ালীগগা অনেকেই জানেন না যে হেগাে সােয়ামী মানে হাসবেন্ডগুলা হয়। বাংলাদেশের ক্যাদো আর প্যাকের মাইদ্দে হুইত্যা আছে, না হয় গতরের মাইদ্দে ব্যান্ডেজ বাঁধছে। এইদিকে আবার ইয়াহিয়া- নিয়াজীর দল কোনােরকম ঘােষণা ছাড়াই যুদ্ধ শুরু করণের লাইগ্যা ফউৎ হওয়া মুছয়াগুলার জন্যি হেগাে বিবিরা ইস্যুরেন্সের কোনাে টাকা পাইবাে না। মওলবী সা’বগাে অবস্থা অক্করে কাদা কাদা হইয়া গেছে। এর মাইদ্দে আবার এক গিলাসের দোস্ত ভুট্টোর লগে খান সাবের আইজ-কাইল ফাটাফাটি কারবার শুরু হইছে। পিপলস পার্টির নেতারা বলছেন, তারা ছদর-ইয়াহিয়ার ২৮শা জুন
১৮৯
তারিখের বক্তৃতা Like করতে পারে নাইক্যা। ইয়াহিয়া সা’বে কইছুইন, ক্যাচকার মাইদ্দে পইড়াই ২৮শা জুনের বেতার ভাষণ দিতে হইছিল। আসলে তার অন্য মতলব আছিলাে। ভুট্টো সা’বে কি রাগ? এর মাইদ্দে ইয়াহিয়া সা’বে নাকি পিপলস পার্টির ভাঙ্গনের কোশেশ করতাছেন। পাঞ্জাবের কাসুরী আর ডাক্তার মােবাশ্বার তলে তলে ইয়াহিয়ার লগে হাত মিলাইছে। ভুট্টোও কম যায় না। লগে লগে সীমান্ত প্রদেশে ন্যাপওয়ালী আর জামাতুল উলেমা পার্টির লগে ভুট্টো সা’বে পার্টি বানাইছে। এই দিকে আবার জঙ্গী সরকারের ছয় জেনারেলের জনা দুই ছাড়াও খােদ পশ্চিম পাকিস্তানের মেলেটারির মাইদ্দে মদারু ভুট্টোর লােকজন রইছে। হেগাে মাইদ্দে খেইলটা এখন। সােন্দর জইম্যা উঠছে। এলায় বুঝছেন? জঙ্গী সরকারের আপদ কারে কয়।।
এইবার হইতাছে বিপদ। কলিকাতা-দিল্লি, লন্ডন-ওয়াশিংটন আর হংকং থাইক্যা দলে দলে বাঙালি কূটনীতিবিদরা জয় বাংলা’ কইয়া চইলা আসনের গতিকে জঙ্গী সরকার অক্করে ধান্ধা মাইরা গেছে। যা থাকে কপালে কইয়া হগ্গল বাঙালির পাসপোের্ট আটক করছে। কিন্তু কলিমুদ্দিন সা’বে বহুত লেইট কইর্যা পেলাইছেন। এর মাইদ্দে ইংল্যান্ড, আমেরিকার খবরের কাগজ, টেলিভিশন আর রেডিওতে জঙ্গী সরকারের অক্করে ধূনকরে যেমতে কইর্যা তুলা ধধানে মেতে কইরা ধূনতাছে। সেনাপতি ইয়াহিয়ার ধচা-মারা গবর্ণমেন্ট অরে পাগলা হইয়া ব্রিটেনের কাছে Protest করছে। এইডা খুবই খারাপ কথা- ইংলন্ডের খবরের কাগজ, রেডিও আর টেলিভিশন কন্ট্রোল করতে হইবাে। না হইলে ইসলামাবাদের লগে ইংলন্ডের মহব্বতে খুবই গ্যানজাম হইবাে। ব্যাডা একখান। এরেই কয় শখের নাম মারানি। লগে লগে ইংলন্ডের কাগজে খবর বাইরাইলাে, বাংলাদেশে মুক্তি বাহিনীর বিচ্ছুগুলা গাবুর মাইর শুরু করছে। যে কোনাে টাইমে যে কোনাে জায়গায় এইসব কারবার হইতাছে। চট্টগ্রাম-চালনা বন্দরে বিক্ষুগুলার ইচ্ছামতাে কারবার চলতাছে। এর মধ্যে আবার আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া থাইক্যা এক জব্বর খবর আইছে। হেইখানকার গবর্ণর মিল্টন শার্প বন্দরের শ্রমিকদের সাবাস বলেছেন। এইসব মাজদূররা পশ্চিম পাকিস্তানের কোনাে জাহাজ থাইক্যা মাল উঠা-নামা করবাে না। হেইদিন এই মার্কিনী শ্রমিকরা জঙ্গী সরকারের একটা জাহাজরে ‘পত্রপাঠ বিদায় করেছেন। হেতােনরা কইছুইন বাংলাদেশ থেকে হানাদার সােলজার ফেরৎ না যাওন পর্যন্ত এই রকম ‘বয়কট’ চলবােই। এই দিকে প্যারিসে অক্টোবর মাসে যে পাকিস্তান Aid Consortium বৈঠক বইবাে হেই ব্যাপারে মহা গ্যানজাম শুরু হইয়া গেছে। এই Consortium এ ১১টা দেশ একত্রে বইস্য জঙ্গী সরকাররে টেকা ধার দেওনের কেইসটা ঠিক করবাে। কিন্তুক ইয়হিয়া খানের গবর্ণমেন্ট আগের কিস্তির ৩৯ কোটি টাকা শােধ না দেওনেই গ্যানজাম হইছে।
গত বিশ বছরে এই ব্যাডারা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ধার কইর্যা বইছে। আন্তর্জাতিক Expert রা হিসাব কইরা দেখছে এই দেশটার লাল বাত্তি জ্বালানাের Time হইছে। আমেরিকার নিকসন সরকার নানা রকম ভাইল-পটকি মাইর্যা ইয়াহিয়া সা’বরে
১৯০
টেকা দিলেও বাঁচাইতে পারবাে না- এইটার আখের দম ছাড়নের আর বেশি দেরি নাইক্যা। এক মাসের হিসাব থনেই দেখা যাইতাছে যে, গত বছরের এপ্রিল মাসে যেখানে বাংলাদেশ থাইক্যা চৌদ্দ কোটি টাকার পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রফতানী হইছিলাে হেইখানে এই বছর এপ্রিল মাসে লুটপাট আর জোর-জবরদস্তি কইর্যা হানাদার সােলজাররা বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার থনে মাত্র ৩৫ লাখ টাকার পাটজাতদ্রব্য বিদেশে কোনাে রকম কাগজপত্র ছাড়া পাড়াইতে পারছে। এরপর আবার চট্টগ্রাম-চালনা বন্দরে বিচ্ছগুলার হেই কাম হইছে। গােটা বারাে বিদেশী জাহাজ অক্করে ছেরাবো হইয়া গেছে। বাকিগুলা ‘ও মাই God’ কইয়া ভাগছে। তবুও ইয়াহিয়া সা’বে একটা ভাঙ্গা ডুঙ্গি হাতে নাঙ্গা হইয়া প্যারিসে Consortium-এর বৈঠকে হাজির হওনের লাইগ্যা গতরের মাইদ্দে কাড়ুয়ার তেল মাখতাছে। এতােসব বিপদের মাইদ্দে মওলবী সা’ব বাংলাদেশের বদলে আবার চান্সিং করনের লাইগ্যা ইরান সফর করনের বুদ্ধি করছে। যদি-ই কোনােমতে ইসলাম ভাই ভাই কইয়া কিছু মালপানি জোগাড় করা যায়। হের পররাষ্ট্র সেক্রেটারি ছােলতাইন্যা মস্কোর থাইক্যা ধাওয়া খাওনে ইয়াহিয়া সা’বে অখন নতুন ট্রিকসের মতলবে আছেন। কিন্তু বিশ্ব শান্তি কাউন্সিল, পােপের ভ্যাটিকান, আন্তর্জাতিক জুরিস্ট হগুগলে খান ছাবের রক্ত মাখা গতরের মাইদ্দে থুক দিতাছে। এইটাই হইতাছে। জঙ্গী সরকারের বিপদ।
এইবার মুছিবতের কথা কমু। মুক্তি বাহিনীর হাজারে হাজারে বিক্ষুগুলাই জঙ্গী সরকারের মুছিবত। মুছিবত আর আজরাইল ফেরেশতা এক লগে জঙ্গী সরকারের উপর আছর করছে। ভােমা ভােমা মছুয়া সােলজারগুলার হাজার চল্লিশেক এর মাইদ্দেই হয় উত হইছে, না হয় হাসপাতালে হুইতা থাইক্যা আল্লাহ-বিল্লাহ্ করতাছে। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার মানুষগুলা এখন বুঝতে পারছে ‘মুক্তি বাহিনী আপনাদের আশেপাশেই রয়েছে। হগ্গল বাঙালিই অখন মুক্তিসেনা। এর মাইদ্দে আবার হানাদার সােলজারগগা বহু কামানমেসিনগান-ডিনামাইট-মাইন মুক্তি বহিনীর কজায় আইছে। তাই অহন ক্যাদো-পানির মাইদ্দে শুরু হইছে মছুয়া মারনের উৎসব। শীঘ্রি বলে আরাে হাজার হাজার বিচ্ছু ময়দানে আইতাছে। তাই আজরাইল ফেরেশতা অখন হানাদার সােলজারগগা জান কবজের পর নাম ঠিকানা লেখনের লাইগ্যা নতুন কেতাব বানাইছে। এতাে কইরা কইলাম এক মাঘে শীত যায় না । না, শুনলাে না। তখন ব্যডাগাে কি চোটপাট। অখন গাবুর বাড়ির চোটে হানাদার সােলজারগাে মােথাডা মানে কিনা টিক্কা সা’ব হারু পার্টির নেতা হইয়া রাওয়ালপিন্ডিতে ভাগছে। আর পিছনে মছুয়াগুলার মউত তুঝে পুকারতা। বাঙালির মাইর দুনিয়ার বাইর। এর মাইদ্দে আবার মওলানা ভাসানী, মনােরঞ্জন ধর, মনি সিং, মুজাফফর আহম্মদের হগ্গল পার্টি মিইল্যা বঙ্গবন্ধুর দোয়া-খায়ের পাওয়া নজরুল ইসলাম-তাজউদ্দিনের স্বাধীন বাংলাদেশ সরকাররে পুরা সমর্থন কইর্যা বিবৃতি দিছে। শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই-এর প্রতি সব্বাই এক কথায় Support দিছে। অখন বাঙালিগাে সামনে একটাই মাত্র কাম- হেইডা হইতাছে ধ্বনা-ধ্বন ডবল আপ কারবার করণের টাইম।
১৯১
মালেক্যা পিয়াজী-ফিয়াজীর কোনাে তেলেসমাতি কারবারই আর চলবাে না। বঙ্গবন্ধুর এক কথার উপরই পুরা Fight হইতাছে। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।