You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.09 | চরমপত্র ৯ আগস্ট ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

ট্রি করছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া আবার ট্রিকস করছে। ইসলামাবাদ থাইক্যা জঙ্গী। সরকারের জব্বর ট্রিক্স করণের খবর আইছে। আঃ হাঃ আগেই যদি আপনারা হাইস্যা দেন তয় তাে’ হেগাে এই কারবারডা ঠিক মতন গুছাইয়া কইতে পারুম না- সব কিন্তুক

১৮৩

গুলাইয়া ফালামু। রােগীর মরণের আগে যেমতে একটার পর একটা উপসর্গ দেখা দেয়এই যেমন ধরেন যাই-ই খাইতাছে, তাই-ই Return মানে কিনা ফেরৎ আইতাছেনাড়ীর আওয়াজ উল্ট-পাল্ডা হইতাছে, কিংবা ধরেন হেই জিনিষ অক্করে বন্ধ হইয়া গেছে- তখন ডাক্তারে কি করে? আস্তে কইর‌্যা ব্যাগ বন্ধ কইর‌্যা আত্মীয়স্বজনরে ডাকতে কয়। এর মানে বুঝছেন? হইয়া গেছে- শেষ দমডা ছাড়নের টাইম হইয়া গেছে। এইটারেই Gentleman রা ডাক্তরের জওয়াব কয়, এলায় বুঝছেন।

ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের অহন হেই টাইম আইস্যা গেছে। ইরান থাইক্যা চাচাতাে ভাই, সৌদী আরব থাইক্যা খালু, বাহরায়েন থাইক্যা হাউড়ী, কুয়েত থাইক্যা। ফুপা, টার্কি থাইক্যা ভায়রা, জর্দান থাইক্যা শালী আর ওয়াশিংটন থাইক্যা শ্যামু চাচা ছাড়াও পুবের থনে নতুন মামু আইস্যা ব্যাডার মাথার কাছে খাড়াইয়া হাওয়া দিতাছে। ডাক্তার কইছে, সাড়ে চাইর মাস ধইর্যা বহুত ইঞ্জিশন-ফিঞ্জিশন আর দাওয়াই করছিকিন্তু কোনােডাই কামে আইলাে না। এই বিমারের লগে ভিয়েতনাম আর কম্বােডিয়ার বিমারের খুবই মিল দেখতে পাইতাছি। আমাগাে ডাক্তারি কেতাবে এইডার আর কোনাে ওষুধ নাইক্যা। একমাত্র উপায় ট্রিক্স। আমার পেসেন্ট ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারএর মাইদ্দে বহুত ট্রিক্স করছে। | পয়লা শেখ মুজিবরের বাবা-সােনামনি মানে কিনা ভাবী প্রধামনন্ত্রী হিসেবে ডাক দিলাে- কাম হইলাে না। হেরপর বেশুমার বাঙালি মার্ডার কইরা বাহাত্তর ঘণ্টার মাইদ্দে কারবার খতম করতে চাইলাে- কিন্তু কেস কাঁচা হইয়া গেলগা হেগাে আশি হাজার মছুয়া সােলজার আইস্যা বাংলাদেশের কঁাদো আর প্যাকের মাইদ্দে হান্দাইয়া গেল। এইবার হারু পাট্টির নেতা হরিবল হক, খান সবুর, খাজা খয়ের, মাহমুদ আলী, আজমফরিদ, ফকাগাে লইয়্যা খুবই ফাল পাড়ালাে- হেগাে চাচা আর মামুরা পর্যন্ত হাইস্যা দিলাে। লগে লগে আলহাজ্ব জহির উদ্দিনরে ময়দানে নামাইলাে- ব্যাডায় কি খুশি? ১৬৭ডা আওয়ামী লীগ মেম্বারের দশটা জোগাড় করতেই হাজী সাবের কাপড় বাসন্তী রং হইলাে। ৯৬৭ টাকার টিকিট কিন্ন্যা পি.আই.এ. বিমানে বেগম আখতার সােলেমানরে করাচীর থনে ঢাকায় পাড়াইলাে। বেগম সাহেবা ঢাকায় বাকরখানি খাইয়া অক্করে লন্ডনে পাড়ি জমাইলেন। আচ্ছা দেখাইতাছি, কইয়া, সেনাপতি ইয়াহিয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার কইর‌্যা ফেলাইলাে- কার বিচার কে করে? ইয়াহিয়া সা’ব সব চৌদ্দ বছরের ফাঁসি দিলাে আর সম্পত্তি নিলাম করলাে। লগে লগে খােদ ঢাকা টাউনেই বিচ্চুগাে কারবার শুরু হইলাে। গাবুর মাইরের চোটে কুষ্টিয়া-যশাের, রাজশাহীচাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর-রংপুর, সিলেট-ময়মনসিংহ আর কুমিল্লা-নােয়াখালীর বিরাট এলাকার থনে মুছয়াগুলা ভাগােয়াট হইলাে।

ইয়াহিয়া-হামিদ-টিক্কার দল আবার ট্রিক্স করলাে। বাঙালি রিফিউজি ফেরৎ আননের লাইগ্যা Reception center খুইল্যা বইলাে। রেডিও রিপাের্টার, টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান, এ.পি.পি.-র সংবাদদাতারা সব তীর্থের কাউয়ার মতাে Reception

১৮৪

centre-এ বইস্যা মাছি মাইর্যা পাহাড় কইরা ফেলাইলাে। হ্যাষে দেহে কি, পাঁচটা হেই জিনিষ আইস্যা হাজির হইলাে। লগে লগে বাংলাদেশের গেরামের মাইদ্দে জ্যান্ত মানুষ ধইর্যা Reception center-এ আননের লাইগ্যা ছ্যাল-কুৎ-কুৎ ছাল-কুৎ-কুৎ– মানে কিনা হা-ডু-ডু খেলা শুরু হইলাে। এই খেইলের মাইদ্দেও যখন হাইরা গেল, তখন কিছু শিক কাবাব খাওয়াইন্যা মানুষরে ধুতি পরাইয়া Reception Centre-এ আইন্যা ফডাে তুললাে। নাহ এইডাও কোনাে কামে আইলাে না-এলায় করি কি? প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খানরে দিয়া ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক বহাবার প্রস্তাব দিলাে। যদি ইণ্ডিয়া টোপটা গেলে। এক ঝাপটে সদরুদ্দিন সা’বে কইলাে, বাংলাদেশে শরণার্থীরা ফেরত গেলে হেগাে লাইফের Risk নিতে পারি না। এর পর ২৮শে জুনের বেতার বক্তৃতা মাঠে মারা গেল।

এইবার খান সাহেব তার রক্তমাখা হাত দুইটা গামছা দিয়া মুইছা ইণ্ডিয়ার লগে বাতচিত্ করণের প্রস্তাব দিলাে। ক্যামন বুঝতাছন হেগাে ট্রিক্স-এর মাইর প্যাচ? লড়াই হইতাছে জঙ্গী সরকার আর বাংলাদেশের মাইদ্দে কিন্তুক মওলবী সা’ব আলাপ করতে চান শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর লগে। যদি রাজী হয় তয়তাে লগে লগে চিল্লাইতে শুরু করবাম, এইডা তাে ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানের ব্যাপার। কিন্তুক শ্রীমতি ইন্দিরা ‘না’ কওনের গতিকে ব্যাডায় কি রাগ? বাংলাদেশের কেইসটা ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের ব্যাপার বইল্যা প্রমাণ করণের লাইগ্যা সেনাপতি ইয়াহিয়া আবার ট্রিকস কইরা কইলাে, আমি কিন্তু ইন্ডিয়ার লগে লড়াই করমু, আমার লগে মামু আছে।

‘ঢাল নাই, তলােয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার। কিন্তুক চোটপাট আর ট্রিসের অন্ত নাইক্যা। বাইছ্যা বাইছ্যা বাঙালি দালাল ম্রাট হরিবল হক, চুষ-পাজামা মাহমুদ আলী, বজ্জাত হােসেন আর মােহর আলীকে ফরিনে পাডাইলাে। লন্ডনে নয়া History হইলাে। হেইখানে ২৫ হাজার লােক জঙ্গী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাইলাে। লগে লগে। পিন্ডির থনে অর্ডার আইলাে রেডিওর Propaganda-র মাইদ্দে কইয়া দাও বাঙালি রিফিউজিরা খুবই কষ্ট পাইতাছে।’ রিফিউজিরা কইলাে মরণ ভালাে না কষ্ট ভালাে। আবার রেডিও গায়েবী আওয়াজ চিল্লাইয়া উঠলাে, ‘দুশমনগাে মাইদ্দে Division হইছে।

বকশি বাজারের ছকু মিয়ার থনে শুরু কইরা দিনাজপুরের গুদরি বাজারের সের কাটু মােহাম্মদ পর্যন্ত হাইস্যা ফেলাইলাে। এরপর যখন ইসলামাবাদে রিপাের্ট আইলাে যে, বাংলাদেশের হানাদার সােলজারগাে বাংকারগুলা পানিতে ভইর্যা পুকুর হইছে, আর যেগুলা ভিতরে আছিলাে হেইগুলা ভিজা বুট আর কাপড় লইয়া উপরে উঠতে পারছে না । আর তখন ঘলঘলাইয়া বন্যার পানি কেবল বাংলাদেশে আইতে শুরু করছে- তখন। হেরা মরণ কামড় দিয়া লাস্ট চান্সিংডা করছুইন। হাতের কাছে থাউক আর না থাউক ১৬৭ জন আওয়ামী লীগ মেম্বারের ৭৯ জনের ইলেকশন কেনচেলের অর্ডার দিলাে- এই সব জায়গায় উপ-নির্বাচন হইবাে। আর ৮৮ জনের নাম ঘােষণা করে বলেছেন, এদের মেম্বারশিপ বহাল রইলাে। কি রকম ব্যাডা একখান। যেমন লাগে এই অর্ডারেই ১৬৭

১৮৫

জনের মাইদ্দে দুইডা ভাগ হইয়া গেল আর কি? 

এরেই কয় বুদ্ধির ঢেকি। What is called পেঁকি? Two man থাপুর ধুপুর One man clearing, that is called সেঁকী। ক্যামন বুঝতাছেন? হেগাে ট্রিক্সডা কোন স্টেজে যাইয়া হাজির হইছে। সেনাপতি ইয়াহিয়ার এই order-এর চোটে অক্করে ৮৮ জন। আওয়ামী লীগের মেম্বার মুক্ত এলাকার থনে দৌড়াইয়া যাইয়া হেগাে কোলে বইবাে আর কি? কেইসটা খেয়াল কইরেন। এখনাে কিন্তু মওলবী সাবের পার্লামেন্টের পয়লা সেশনডাই হয় নাইক্যা। এই সেশন বহনের আগেই ব্যাডায় দশ লাখ মানুষ Marder করছে। সেশন বইলে না জানি কি হইতাে? কিন্তু বাঙালিগাে একতার চোটে মরণ হেচকি উডাইতাছে। চিল্লাইয়া কইতাছে, ‘আজিমপুরও চিনি- নামাজ ঘরও চিনি। খালি বিচ্চুগাে। মাইরের চোটে অহন অক্করে ছেরাবেরা হইয়া গেছেগা। হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম হইয়া গেছে- হেগাে শেষ দমডা ছাড়নের টাইমে হইয়া গেছে। এইডারেই Gentleman বা ডাক্তরের জওয়াব কয়- এলায় বুঝছেন?