You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.23 | চরমপত্র ২৩ জুলাই ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

পাওয়া গেছে। হেই জিনিসের খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন ‘ফরিন মিনিস্টার হামিদুল হক চৌধুরীর খবর পাওয়া গেছে। ব্যাডা একখান। জেনিভাতে মাইয়ার লগে দেখা কইর‌্যা আর হাবিজবি পাবলিসিটির মাইদ্দে না যাইয়্যা একেবারে লেক সাকসেসে জাতিসংঘের সদর দফতরে হাজির হইছেন। সত্তুর বছর বয়স অইলে কি হইবাে, ফুলপ্যান্ট আর পুরাহাতা রঙ্গীন হাওয়াইন সার্ট পিন্দ্যা, মাথায় ফেল্ট ক্যাপ লাগাইয়া দিনা দুই নিউইয়র্কের ব্রডওয়েতে ড্যান্সিং দেহনের পর, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্টের লগে মােলাকাতের টাইমে ভট কইর‌্যা কাইন্দ্যা ফেলাইছেন। তারপর কইলেন, ‘আমাগাে মহব্বতের কি কিছুই দাম নাইক্যা। আমরা রেডিও আর পাকিস্তান অবজার্ভারে (চৌধুরী সা’ব আবার মর্নিং নিউজের নাম মুখে লয়না আর বাংলা কাগজরে হিসাবের মাইদ্দেই ধরে না) এতাে কইর‌্যা রিফিউজি গাে ডাকাডাকি করতাছি, তবুও হেরা আহনের

১৪৬

নাম করতাছে না।

ভাগ্যিস ইয়াহিয়া আর টিক্কা সা’বের সােলজাররা বাংলাদেশের বেবাক লােকগাে বাড়ী ছাড়া করছে। ষাইট লাখের মতাে বর্ডারের হেই মুড়া গেলে কি অইবাে? বাংলাদেশের মাইদ্দেও তাে কয়েক কোটি বাঙালি টাউন থাইক্যা বন্দরে আর বন্দর থাইক্যা গ্রামে ঘুইরা বেড়াইতাছে। আমরা অহন হেইগুলারে বাড়িঘর বানাইয়া দিমু। হেইর লাইগ্যা মাল-পানি চাই। সব পয়সা দুশমনরা বাঙালি রিফিউজিগাে খাওনের নাম কইর‌্যা লইয়্যা যাইতাছে। তা হইলে আমরা কি বুড়া আঙ্গুল চুষুম। আমার ছদ্র ইয়াহিয়া সা’ব আপনার কাছে কবুল করতে কইছে যে, বাংলাদেশে অহন দানা-পানি নাইক্যা আর লােকগুলার খুবই খারাপ অবস্থা যাইতাছে। 

উথান্ট সা’বে জিগাইলাে, এই অবস্থা কেডা করছে? চৌধুরী সা’বে কইলাে, ‘সােলজাররা করছে।’- কইয়্যাই জিবলায় এক বিরাট কামড়। নাঃ নাঃ. স্যার দুঃ-দুঃদুষ্কৃতিকারীরা করছে। ব্যাডায় কিন্তু বুঝতেই পারে নাইক্যা যে, হেতাইনে টিক্কার সােলজরগাে দুষ্কৃতিকারী কইলাে। যাউগ্গা, এই রকম উলডা-পালডা কথাবার্তা চৌধুরী সাব অনেক বচ্ছর আগে থাইক্যাই কইতাছেন। পাকিস্তান অবজার্ভারের পুরনাে ফাইল ঘাটলেই এই রকম ভূরি ভুরি Sample পাওন যাইবাে। যেমন ধরেন আইয়ুব খানের টাইমে দুই চার দিন খুব বাঙালিগাে দরদে কাইন্দ্যা বুক ভাসাইলাে। কিন্তুক যহনই বুঝলাে অহন ধাবাড় আহনের টাইম হইছে, তহনই আবার ঢলা পাতায় চাইর কলাম কইর‌্যা আইয়ুব-মােনেমের কোলাকুলির ফটো ছাপাইয়া ম্যানেজ করলাে।

ইলেকশনের আগে পাকিস্তান অবর্জারভার খুবই রাজা-উজীর মারলাে। কিন্তু Result বাইর হওনের লগে লগে শেখ মুজিব আর আওয়ামী লীগের প্রেমে অক্করে গুলগুল্লা হইয়া পড়লাে। এমনকি রাইত-বিরাইতে যাতায়াত কইর‌্যা লাইন বাইর করণের লাইগ্যা জান অক্করে ফাতা-ফাতা কইর‌্যা ফেলাইলাে। আবার যখনই দেখলাে যে ভােমাভােমা গোঁফওয়ালারা কামান-বন্দুক লইয়্যা আইয়্যা পড়ছে, তখনই লেজ গুটাইয়া গবর্ণমেন্টের প্রেস নােট পর্যন্ত Correction করতে লাগলাে। না-না-না এই জায়গাটাতে একটুক মনে হইতাছে Abnormal Situation-এর গন্ধ রইছে। সব অক্করে Normal হইছে লিখতে হইবাে। তাই শেষ পর্যন্ত অইজ-কাইল ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকী পাকিস্তান অবর্জাভার অফিসে বইস্যাই প্রেস নােট তৈরী করতাছে। কাম বুঝতাছেন? 

নতুন সাহেবের মােছ উডলে আয়না দিয়া দ্যাখে। যাইগগা, যা কইতাছিলাম জাতিসংঘের হেড কোয়ার্টারে বইয়্যা অনেক আলাপ আলােচনার পর উথান্ট সাব জাতিসংঘের ঢাকা অফিসের মারফৎ সাহায্যের নির্দেশ দিলেন। লগে লগে ঠাস্ কইর‌্যা একটা আওয়াজ হইলাে। চেয়ার শুদ্ধা হামিদুল হক চৌধুরী সা’ব কাইত হয়া পড়লাে। অনেক কষ্টে খাড়া হওনের পর কইলাে, ‘মাথাডা ক্যামতে জানি একটুকু ঘুর্ণা দিছিলাে।

কিন্তুক আসল ব্যাপারডা অন্যখানে। সেই আটচল্লিশ-উনপঞ্চাশ সালের এ্যালেন বেরী ড্রাম ফ্যাক্টরির পর এইবার মুফতের মাল-পানি কামাইবার একটা Chance

১৪৭

হইছিল। হেই Chance ডাও মাঠে মারা গ্যালাে। কেইসটা কি? রুমাল দিয়া মুখ মুইছ্যা বাইরে আইস্যা ঘেটুরে কইলাে, আইজ আর ব্রডওয়েতে যামু না। কি কইলেন? চৌধুরী সাবের ঘেটুরে চিনলেন না? এইবার সিলেট থনে ইলেকশনে লড়ছিলেন। তার মিডিংএ লােক আহে জনা পঞ্চাশেক। কিন্তু তা হইলে কি হইবাে? মিটিং-এর পর সােজা ঢাকা। মিটিং-এর লােকসংখ্যা পনেরাে-বিশ হাজার বইল্যা নিজ হাতে রিপাের্ট লিখ্যা সােজা মতিঝিলে চৌধুরী সাবের কাছে হাজির। হেরপর পাকিস্তান অবজার্ভারে হেই নিউজ ছাপা হইলাে। কিন্তু ইলেকশনে result-ঘাউয়া’। যেইসব Candidate কতল হইছিলেন, সেই লিস্টির অক্করে উপরের দিকে তার নাম রইছে। উনি আবার বাংলাদেশের একটা Leftist পার্টির মুসলিম লীগ Fraction কিনা? অহন চিনলেন না? তয় কই হুনেন। চোস্ পাজামা। অহন চিনছুইন- আমাগাে মাহমুদ আলী। বাঙলাদেশে যহন যে পার্টিতেই ইনি ছিলেন তহনই সেই পার্টিরই বারােটা বাজছে। হগুগল সময়েই ইনি Vice-President.

এদিকে আবার কেলেংকারিয়াস কারবার হইছে। ঢাল নেই তলােয়ার নেই নিধিরাম সরদার। সীমান্তের হেই পার থাইক্যা রিফিউজি ফেরতের নাম নাইক্যা। কিন্তু দুনিয়ার মাইনষেরে আর একবার ভােগা মারণের লাইগ্য ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার ছদর ইয়াহিয়ার একজন Special Asstt. for Refugee Rehabilitation বানাইছে? ক্যামন বুঝতাছেন? যেখানে একজন আংরেজ রিপাের্টার লিখুছে একটা Refugee Reception Counter-এ মাত্র পাঁচটা বেঁকী কুত্তা দেখতে পাইছেন। সেইখানে এই Special Asstt. সাব কি কামডা করবাে? নাকি এই চাইর ঠ্যাংওয়ালা জিনিষগুলার ঘরবাড়ি বানাইবাে? 

তয় ইয়াহিয়া সা’বের খুবই বুদ্ধি। হেইর লাইগ্যা Special Asstt. ভদ্রলােকরে মন্ত্রী না বানাইয়া মন্ত্রীর সম্মান দিছে। পুরা মন্ত্রী বানাইলে তাে আবার ভূট্টো সা’বে কেউ কেউ কইর‌্যা চিল্লাইয়া উডবাে। কিন্তু বেচারা ডাঃ আবদুল মােত্তালেব মালেক সা’ব মাত্র মাস নয়েক আগেও ইয়াহিয়া সা’বের Cabinet-এ শুধু সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন তাই-ই নয়, আব্বাজান বিদেশে গেলে মাঝে-সাজে ক্ষ্যামতাহীন Acting President-ও হইতেন। আর এইবার ডাঃ মালেক Special Asstt. হইছুইন। মিনিস্টারের Rank পাইতেই অবস্থা কেরাসিন।

কিন্তুক আমি ভাবতাছি কার মুরগি কে খায়? চৌধুরী সা’বে মুরগি তাওয়াইয়া বড় করলাে, আর মালেকা হেইডা খাইলাে।