যা ভাবছিলাম, তাই হইছে। মুক্তিবাহিনীর বিচ্ছগুলার গাবুর, ক্যাচকা আর গাজুরিয়া মাইর, কেবল একটুক কইর্যা কড়া হইয়া উঠতাছে আর খেইলডা জমছে। এর মাইদ্দেই টিক্কা-নিয়াজীর হেই জিনিষ খারাপ হইয়া গ্যাছেগা। তাগাে মাইদ্দেই 7th, 12th আর 14th ডিভিশনের Best সােলজাররা বাংলাদেশের ক্যাদোর মাইদ্দে ঘুমাইয়া
১৪১
পড়ছে। এছাড়া নর্দান রেঞ্জার্স, গিলগিট স্কাউট, লাহাের রেঞ্জার্স, পাকিস্তানী পুলিশ যাগােই ময়দানে নামাইতাছে তারাই খালি আছাড় খাইতাছে। আর এইগুলা আছাড় খাইলে আর কান্দে না। লগে লগে আখেরি দমডা ছাইড়া দেয়। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় হানাদার সােলজাররা ট্রেনে চাপলে ডিনামাইট, রাস্তায় গেলে মাইন, টাউনে ঘুরলে Hand Grenade আর পানিতে নামলেই খালি চুবানি শুরু হইছে। এই রকম একটা অবস্থায় পরায় চাইর মাস যুদ্ধ হওনের পর টিক্কা-নিয়াজী জমা-খরচের হিসাব কইর্যা ভিমরি খাইছেন। এলায় করি কি? দশ লাখ লােক মারলাম ঠিকই, কিন্তুক আমাগাে সােলজারগাে খবর পাইতাছি না ক্যান? হেরায় গেল কই?
হের পর বুঝতেই পারতাছেন? টিক্কা সা’বে পিণ্ডিতে খবর পাডাইতাছে কয়েক হপ্তার মাইদ্দে অবস্থা খতরনাক হইয়া উঠছে- সব কিছুই ক্যান জানি গােলমাল মনে হইতাছে। তাই আব্বাজান, আপনারে ২৪শে জুলাই থনে ২৯শা জুলাই পর্যন্ত বঙ্গাল মুলুক সফরের যে দাওয়াত দিছিলাম তা Withdraw করতাছি। এই রিপোের্ট পাওয়ার লগে লগে আরও দুই ডিভিশন সােলজার পাডাইবেন। এছাড়া কিছু মাল-পানি না হইলে কেইস খুবই খারাপ হইবাে। এই খবরগুলা আবার লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ কাগজে ছাপাইছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া কত আশায় বুক বাঁধছিল। টিক্কা-নিয়াজী সব কিছু কন্ট্রোল কইর্যা ফ্যালাইছে।
এইদিকে মেলেটারি ডেমেক্রেসির খসড়া শাসনতন্ত্র তৈরী। সমস্ত কামই প্লান-মতাে হইতাছে। অবশ্যি ভুট্টোর লগে একটুক খিডিমিডি লাগছে। কিন্তু টিক্কার কাছ থনে এইডা কি রিপোের্ট আইলাে? রিপাের্টের ভিতরে ফুচি মাইরাই ইয়াহিয়া সা’বে নাকের ডগায় চশমা বহাইলাে। রিপাের্টকা অন্দরকামে লিখুখি, পাকিস্তানী সােলজাররা অহন ঢাকা, কুর্মিটোলা, ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট আর চট্টগ্রাম পাের্ট গেরিলাগাে মাইরের হাত থনে বাঁচার জন্যে সিলেট-চিটাগাং রাস্তায় যাতায়াত তাে দূরের কথা, অনেক জায়গায় টেলিফোন লাইন পর্যন্ত ঠিক করতে পারে নাই। এই এলাকায় গেল এক মাসের মাইদ্দে গেরিলারা নব্বইটা কামিয়াবী হামলা চালানাের গতিকে পরায় সতেরােশ’ সােলজারের হয় মউত হইছে, না হয় জখমি হইছে। অহন ঢাকা ছাড়াও নরায়ণগঞ্জেও গেরিলা এ্যাকশন শুরু হইছে।
এদিকে সয়লাব। মানে কিনা বন্যার পানির গতিকে রাওয়ালপিণ্ডিত্র থনে পাঠানাে ম্যাপের লগে এইখানকার রাস্তাঘাডের কোনােই মিল পাইতাছি না। এর মাইদ্দে আবার গেরিলারা বহু চীনা আর মার্কিন অস্ত্রপাতি মছুয়া জোয়ানগাে কাছ থনে কাইড়া লইয়া গ্যাছেগা। বঙ্গাল মুলুকের পানিরও কোনাে দিশা পাইতাছি না। কোথাও দুই তিন ফুট আবার কোথাও পঞ্চাশ ষাইট ফুট। গেরামের রাস্তাঘাট মাইনে ভইর্যা গ্যাছে- ব্রিজগুলা গায়েব। তাই ইস্টার্ন সেক্টরে সেকেণ্ড লাইন অব ডিফেন্সের কথা চিন্তা কইর্যা সােলজার Withdraw করতাছি। অবিশ্যি Withdraw করণের আগেই ধাওয়ার চোটে অনেকেই ভাইগ্যা আইতাছে। এইগুলা গেরিলাগাে ধাওয়ানীতে এতােই ডর খাইছে যে, হেরা দ্যাশে
১৪২
ফেরৎ যাওনের লাইগ্যা অক্করে পাগলা হইয়্যা উড়ছে।
এই দিকে কুষ্টিয়া এলাকার রিপাের্ট আর চাইপ্যা থুইতে পারলাম না। হেইখানে আমগাে সমস্ত সাপ্লাই লাইন দুষ্কৃতিকারীরা অক্করে ছেদাবেদা কইর্যা ফ্যালাইছে। অহন হেইখানে আমাগাে যেসব জোয়ান আটকা পড়ছে তাগাে সাপ্লাই-এর কথা চিন্তা কইর্যা জেনারেল নিয়াজী মাথার চুল ছিড়তাছে। এক আধ-দিনের মাইদ্দে সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা না করলে একটা কেলেংকারীয়াস ব্যাপার হইয়া যাইবাে। ইদানীং দুশমন সৈন্যগগা সংখ্যা খুবই বাইড়া গেছে আর আমাগাে লম্বর তুরন্দ কইম্যা যাইতাছে। নর্দার্ন রিজিয়নের রংপুর-দিনাজপুর সেক্টরের খবর খুবই দেরীতে পাইতাছি। মনে হইতাছে আমাগাে সেক্টর কমান্ডাররাই খবর খতরনাক দেইখ্যা চাপিস করতাছে। এর মাইদ্দে আবার আমাগাে বহু এই দেশী Supporter গাে হেরা কতল করণের গতিকে কাজকামে খুবই অসুবিধা হইতাছে। এছাড়া পেরতে দিনই আমাগাে পাঞ্জাবি ব্যবসায়ীরা করাচীতে ভাগতাছে।
এই রিপাের্টে সবই খুইল্যা লেখলাম। সন্ধ্যার লগে লগে ঢাকা টাউনের মাইদ্দেই খালি বােমাবাজি শুরু হয়। হেইদিন কমলাপুর রেল ষ্টেশনেই এইরকম একটা কারবার হইছে। যাত্রাবাড়ী ব্রিজ ভাঙ্গছে। রাইতে বােমা আর গুলির আওয়াজ না হইলে বলে বাঙালিগাে ঠিক মতন ঘুম হয় না। এইগুলা মানুষ না আর কিছু! হেইদিন আমাগাে এক জোয়ান হাসপাতালে মরণের টাইমে জয়-বাংলা শ্লোগান দিছে। এনকোয়ারি কইর্যা দেহি কি, এই জোয়ানডা জমী হইয়া আহনের পর হের শরীরের মাইদ্দে বাঙালি পােলাপানগাে শরীল থাইক্যা বাইর করইন্যা রক্ত ঢুকানাে হইছিল। হের লাইগ্যাই নাকি মরনের আগ দিয়া ব্যাডায় খালি ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিছে।
এই রিপাের্ট পাওনের পর আপনারা আন্দাজ করতে পারেন সেনাপতি ইয়াহিয়ার কি রকম ধ্যাড়-ধ্যাড়া অবস্থা হইতে পারে। হের মােটা আর কাঁচা পাকা গুলা কুঁচকাইয়া গেল। হেতনে একটা ট্রিক্স করলাে। হেই সময় কানাডার একটা পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল ইসলামাবাদ সফর করণের লাইগ্যা গেছিলাে। সেনাপতি ইয়াহিয়া লজ্জা-শরমের মাথা খাইয়া খুব-ই আস্তে হেই মেম্বরগাে কানে কানে কইয়্যা ফ্যালাইলাে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধীর লগে যে কোনাে টাইমে যে কোনাে জায়গায় মােলাকাত করতে পারি। মনে লয় এই ট্রিক্সটা কেউই বুঝতে পারলাে না। কেইসটা হইতাছে বাংলাদেশ আর ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের মাইদ্দে ফাটাফাটির কেইস। হেইখানে সাবে আলাপ করতে চায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর লগে। ক্যামন বুঝতাছেন? হেতানের হইছে ম্যালেরিয়া বিমার আর দাওয়াই লইতে চান আমাশয়ের। তাই যা হওনের তাই হইছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘সরি’ কইয়্যা ফেলাইছে। ব্যস সাবের চান্দি অক্করে গরম, লাল হইয়্যা উড়লাে। এর থনে ইডিয়ট’ কইলেও ভালাে আছিল। এরপরই হইলাে হেই কারবার।
খালি কলসের আওয়াজ বেশি। ঠং ঠং কইর্যা আওয়াজ হইলাে। বাংলাদেশে ক্যাদোর মাইদ্দে আড়াই ডিভিশন সােলজার নষ্ট করণের পর ইয়াহিয়া সা’ব এলায় আঙ্কা ইন্ডিয়ার লগে যুদ্ধ করণের ধমক দেখাইছেন। ব্যাডা একখান! হেতাইন কইছে
১৪৩
ইন্ডিয়া যদি বাংলাদেশের কোনাে এলাকায় দখলী লইতে চায়, তয় যুদ্ধ ঘােষণা করুম। আর আমি একলা নাইক্যা আমার লগে মামু আছে।
ক্যামন বুঝতাছেন? হেতনে জ্ঞান পাগল হইছে। যারা বাংলাদেশ থনে ইয়াহিয়া সা’বের সােলজারগাে খ্যাদাইয়া, পিটাইয়া, মাইর্যা, ধাওয়াইয়া একটার পর একটা এলাকা মুক্ত করতাছে; বেডা হেগাে নাম উচ্চারণ করতাছে না। মওলবী সা’বে কিন্তুক পরায় চাইর মাস ধইর্যা তাগাে লগে যুদ্ধ করতাছে দুনিয়ার হগ্গল মাইনষে মুক্তিফৌজের বিচ্ছগুলার এই ক্যাচকা মাইর দেখতাছে। তয় তাে ইয়াহিয়া সা’বরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দোবারা যুদ্ধ ঘােষণা করতে হইবাে। কিন্তু বাংলাদেশের যুদ্ধে তাে অহনও পর্যন্ত সেনাপতি ইয়াহিয়ার মামুগাে দেখা পাইলাম না। নাকি মারা যাওনের পর জানাজা পড়াইতে মামু আইবাে। হেইর লাইগ্যা কইছিলাম- যা ভাবছিলাম তাই-ই হইতাছে।