You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.16 | চরমপত্র ১৬ জুলাই ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

খুলেছেন। মুখ খুলেছেন। জুলফিকার আলী ভূট্টো অহন মুখ খুলেছেন। দিন কয়েক আগে কোয়েটা বিমান বন্দরে হেতাইনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলােচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্তগুলাে প্রদেশে তার প্রিয় পিপল্স পার্টি মন্ত্রীসভা গঠন করতে সক্ষম। কেমন ব্যাডা একখান! যহন দুনিয়ার সব্বাই সেনাপতি ইয়াহিয়ার ২৮শে জুন তারিখের বেতার ভাষণরে ‘ভােগাচ’ কইছে, তহন ভূট্টো সাব ভটু করে পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ এমনকি বেলুচিস্তানে পর্যন্ত মন্ত্রীসভা গঠনের কথা বলেছেন। কি রকম একখান ফাস্ট কেলাশ লিডার। সীমান্ত প্রদেশের ভূট্টো সাবের পিপলস পার্টি মাত্রক কয়েকটা সিট পাইছে, কিন্তুক তা অইলে কি অইবাে? সেনাপতি ইয়াহিয়া সা’বে তারে Call করলেই তিনি ছম ছম ইন্দর মারার কল’ বলে তিনটে ফুঁ দিলেই মন্ত্রীসভা হয়ে যাবে। অন্যান্য পার্টির মেম্বাররা সব ফাল দিয়া এই Cabinet-এ জয়েন করবাে। অনেক দিন ধইরা হেরা ভূখা রইছে কিনা!

আর বেলুচিস্তানের রেজাল্ট আরাে চমকার। হেইখানে বিশের মাইদ্দে শূন্য। অর্থাৎ কিনা বিশটা সিটের মাইদ্দে পিপলস পার্টি একটাও পায় নাইক্যা। কিন্তু তা অইলে কি অইবাে? আইয়ুব খানের কাছে ট্রেনিং প্রাপ্ত ভূট্টো সা’বে যদি কোনাে রকমে ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের দোয়াখায়ের পায় তা হইলেই কেল্লা অক্করে ফতে। মানে বেলুচিস্তানের মরুভূমির মাইদ্দে তিনি ফুল ফুটাইবেন। কেমন মরদের বাচ্চাখান! বিশটা সিডের একটাও পায় নাই, তবুও সেই বেলুচিস্তানের গবর্ণমেন্ট বানাইবাে। এলায় ক্যামন বুঝতাছেন? পশ্চিম পাকিস্তানের মেলেটারি ডেমােক্রেসির নমুনা?

অবিশ্যি ভূট্টো সা’বের এ ধরনের চিরকিৎ হওয়াটা স্বাভাবিক। কেননা ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার যদি বাংলাদেশে ১৬৯ টা সিটের মাইদ্দে ১৬৭টা সিট দখলওয়ালা আওয়ামী লীগরে ব্যান কইর‍্যা পাঁচ ডিভিশন সৈন্য নামাইয়া দশ লাখ লোেক খুন করণের পরও সব। কিছু Normal বলে চিল্লাইতে পারে, তা হইলে বেলুচিস্তান আর সীমান্ত প্রদেশেও ভূট্টো সা’বরে দিয়া গবর্ণমেন্টও বানাইতে পারে। হেগাে দিয়া কিছুই অসম্ভব নাই।

দ্যাহেন না, সেনাপতি ইয়াহিয়া অহন জাতিসংঘের কাছে নালিশ করছে। তাগাে কিছু প্রজা আর অফিসার গাে নাকি ইন্ডিয়ার মাইদ্দে আটকে রাখছে। তাই হেগাে দিলের মাইদ্দে খুবই চোট লাগছে। Reception Centre খুইল্যা বহু কান্দাকাটি করার পরও এইসব রিফিউজি দেশে না ফেরনের গতিকে জঙ্গী সরকার অহন খুবই Angry হইছেন। কিন্তুক জাতিসংঘের প্রতিনিধি প্রিন্স সদরুদ্দিন বলেছেন, রিফিউজিরা দেশে ফিরে গেলে এদের জীবনের গ্যারান্টি দিতে পারি না, আবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ডেলিগেশনের সদস্যরা বলেছেন ‘একটা Reception Centre-এ দশ দিনে মাত্র ২২৬ জন রিফিউজি দেখেছি। কিন্তু তারা হচাই রিফিউজি কিনা হেই ব্যাপারে খুবই Doubt রইছে। আরেকজন ব্রিটিশ নেতা বলেছেন, বাংলাদেশের দখলকৃত এলাকায় যেসব কাণ্ড দেখেছি, তাতে রিফিউজিদের দেশে ফিরে যেতে বলতে পারি না। তা হইলে কি হইবাে? জঙ্গী সরকারের পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমাগাে মহব্বতের কি কিছুই দাম নেই? রিফিউজিরা কেনাে আইতাছে না? নিশ্চয় ইন্ডিয়া আটকাইয়া রাখছে। কিন্তুক হেগাে জানা উচিত, নাইড়া মাইনষে বেলতলায় দুইবার যায় না। যারা যায়, তারা মাথার। মাইদ্দে লােহার টুপি পিনদ্যা যায়। হেই লােহার টুপিওয়ালা মানুষগুলাের নাম মুক্তিফৌজ।

ঢাকা থেকে রয়টারের এক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, এই বিচ্চুর লাহাল পােলাগুলা কুমিল্লায় একটু ডাংগুলি খেলছে। আর হেইর লাইগ্যা পাঁচ দিন ধইরা হেইখানে বিজলী বাতি নাইক্যা। আবার সেনাপতি ইয়াহিয়া যখন রেডিওর থেকে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন কুমিল্লার এয়ারপাের্ট এলাকায় চারটা বড় আকারের বােমা বিস্ফোরিত হয়েছে। বিবিসির সংবাদদাতা মিঃ মার্ক টালি জানিয়েছেন, খােদ ঢাকা শহরেই পরিস্থিতি আয়ত্বের মধ্যে আনা সম্ভব হয়নি। পাঞ্জাব থেকে আমদানী করা সশস্ত্র পুলিশ দল এখন মিলিটারির সংগে ঢাকার রাস্তায় টহল দিচ্ছে। এদিকে বাঙালিরা জেনারেল ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই অবস্থা খুবই নাজুক বলে মনে হচ্ছে।

হগৃগলেই অহন বুঝতে পারতাছেন, ইয়াহিয়া সা’বের ঘুড্ডি আইজ-কাইল খুবই কান্নি আর গােত্তা মারতাছে। যে কোনাে টাইমে এই ঘুড়ি জমিনের মাইদ্দে হুইত্যা পড়তে পারে। এরই মধ্যে আবার জোর বারিষ শুরু হইছে। হানাদার সৈন্যরা এদ্দিন ধইরা যত ম্যাপ বানাইছিলাে হেইগুলা আর মিলছে না। তাই গুলি শামুক যেতে ডরাইলে খােলের মাইদ্দে হান্দায়, ইয়াহিয়া সাবের সােলজাররা অহন ক্যান্টনমেন্টের মাইদ্দে ভাগতাছে। হের মাইদ্দে শুরু হইছে মুক্তিফৌজের কোদালিয়া মাইর। সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, চাপাইনওয়াবগঞ্জ, পাঁচবিবি, ঠাকুরগাঁ, কুড়িগ্রাম, সিলেট, টাঙ্গাইল আর কুমিল্লা এলাকায় অহন কি রকম জানি একটা হাউকাউ ব্যাপার চলতাছে। তাই আইজকাইল করাচী এয়ারপাের্টে বােরকাওয়ালীগগা নম্বর খুবই বাইড়া গ্যাছে। আহহা এই জায়গাডা বুঝলেন না? এইসব বােরকাওয়ালীরা কখন তার সাবের লাশ পিআইএ বিমানে আইস্যা হাজির হয়, হের লাইগ্যা Airport- এ Wait করতাছে। অবিশ্যি জোয়ানগাে বিবিরা লাশ দ্যাহনেরও Chance পায় না। জোয়ানগাে কবর বাংলাদেশের প্যাকের মাইদ্দেই হইতাছে। 

এতাে সব কারবার দ্যাহনের পর ভুট্টো সা’বে খুবই ‘ ট্রিক্স’ কইরা মুখ খুলছেন। হেতাইনে বাংলাদেশের ব্যাপারে একবারে খামুশ রইছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন। হেইখানে অহন ‘খতম-তারাবী’ শুরু হইছে। এই বর্ষাটা পার হয় কিনা সন্দেহ। তাই বুট্টো সা’বে তার পার্টি ঠিক রাখার চেষ্টায় শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলােতে মন্ত্রীসভা গঠন করণের জন্য ম্যান ম্যান কইর‍্যা কথা কইছেন। বেডায় খালি টিরিসের পর টিরিক্স করতাছেন।