মাকালকান্দি বধ্যভূমি
হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে মাকালকান্দি হাওর। উত্তরে দৌলতপুর থেকে হারুলী পর্যন্ত সাত মাইল এবং পুবে মকা থেকে পশ্চিমে জিলুয়া পর্যন্ত ৫ মাইল ব্যাসবিশিষ্ট ৩৫ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে এ হাওরের মধ্যস্থলে দ্বীপের মতো ছোট্ট একটি গ্রাম মাকালকান্দি। একাত্তরের ১৭ অগাস্ট সকাল ৯টায় পাক বাহিনী নৌকায় করে মাকালকান্দি গ্রামে আসে। হিন্দু অধ্যুষিত এই গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় সেদিন চণ্ডীমণ্ডপে বিষহরি পূজার আয়োজন চলছে এবং গ্রামবাসী সেখানে অংশ গ্রহণ করেছে। পাকবাহিনী গ্রামটি ঘিরে ফেলে এবং অবিরাম গুলি ছুঁড়তে থাকে। গুলির শব্দ শুনে গ্রামবাসী পালাতে শুরু করে। পাকবাহিনী সমস্ত গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারা গ্রামের বৃদ্ধ-নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সকলকে চণ্ডীমণ্ডপের সামনে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এখানে প্রায় ৮২ থেকে ৮৭ জন নিরীহ মানুষকে মারা হয়। সেদিন যারা শহীদ হন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন- অভিনয় দাস, সূর্য কুমার দাস, তরনী কান্ত দাস, গিরিন্দ্র কুমার দাস, ধীরেন্দ্র কুমার দাস, কৃপেন্দ্র সরকার, নকুল চন্দ্র দাস, কর্ণ সরকার, অন্নদাচরণ দাস, সুভাষিণী দাস, সরলা রাণী দাস, খুশি রাণী দাস, অমরি রাণী দাস, মানদা বালা দাস, তমাল রাণী দাস, সুভা রাণী দাস, সুরেন্দ্র দাস, কুমুদিনী দাস, শৈবালিনী দাস, গিরীশ সরকার, শ্যামল বালা দাস, বিধান চন্দ্র দাস প্রমুখ। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যসূত্র: সিলেটে গণহত্যা – তাজুল মোহাম্মদ, পৃ.-১৮৩-১৮৫; একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর – সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১২৩-১২৪; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ – ডা. এম এ হাসান, পৃ.-৪১৭)