You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাগবাটি বধ্যভূমি

১৯৭১ সালের ৩১ মে ভোরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী। সিরাজগঞ্জ থানা সদর থেকে ১৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এ এলাকাকে নিরাপদ ভেবে বগুড়া, শেরপুর, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও সিরাজগঞ্জ শহরের অসংখ্য নারী, শিশু ও ব্যবসায়ী বাগবাটি, হরিণা গোপাল ও উত্তর আলোকদিয়া গ্রামে আশ্রয় নেয়। এই ৩টি গ্রাম ঘিরে পাকসেনার ভোরে ঘুমন্ত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ১৯৯৯ সালে এলাকাটিকে সরকার বধ্যভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করে। তবে বধ্যভূমি এলাকাটি বর্তমানে গো-চারণ ও জনবসতি পূর্ণ হয়ে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সঙ্গীত শিক্ষক সন্তোষ শিকদার জানান, প্রথমে বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের দিক থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসে। কিছুক্ষণ পরই হায়েনারা গ্রামের মধ্যে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতন চালায়। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত হত্যাযজ্ঞ চলে। পাকিস্তানি সেনারা চলে যাবার পর ৩০টি লাশ গুনেছেন তিনি। নিজ হাতে বাগবাটি গ্রামের ক্ষুদু বাবু দারোগার কুয়াতে ১১টি লাশ ফেলেছেন। তিনটি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে পুঁতে রাখা হয় অসংখ্য লাশ। খুঁড়লে এখনো হাড়গোড় পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, সে দিন জ্ঞানেন্দ্র দেব দুই সেনাকে জাপটে ধরে। তার হাত থেকে ছুটতে না পেরে বাশি বাজিয়ে অন্য সেনারা এসে জ্ঞানেন্দ্রকে হত্যা করে। ১৯৯৯ সালে সদর উপজেলার তৎকালীন ইউএনও বিএন ঘোষাল বাগবাটি বধ্যভূমি চিহ্নিতকরনের উদ্যোগ নেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ৩৭ জন শহীদ গ্রামবাসীর তালিকা প্রস্তুত করেন। এঁরা হলো-উত্তর আলোকদিয়া গ্রামের ভানু দত্ত, ছানু দত্ত, কালীপদ দত্ত, জ্ঞানেন্দ্রনাথ দত্ত, দুলাল চন্দ্র, হরিণা গোপাল গ্রামের কানাই লাল, নমদাস নালু রাহা, অলক কুমার পোদ্দার, বিমুলেন্দু রায়, হেমেন্ত চন্দ্র রায় (ক্ষুদ্র রায়), শমনাথ রায়, হরিমঙ্গল হালদার, রতন চক্রবর্তী, সদা সরকার, নরেন্দ্র নাথ ভাম্বলী, গুটুতাম্বলী, যোগেশ চন্দ্র শলি, পুষ্প হালদার, ফণীভূষণ কাওয়ালী, চেংগু পাল, মন্টু পাল, হারান পাল, শুটা পাল ও যুধীষ্টীর পাল। মালিগাতি গ্রামের হুন্ডি খা, মাংগন আলী খা, শেরপুরের যতীন্দ্রনাথ দত্ত, সিরাজগঞ্জ শহরের তারা কর্মকার, সন্তু সাহা গেদা হালদার।

শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। বাগবাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী আমজাদ হোসেন এ তথ্য জানান।

অন্য তথ্য সূত্রেও এ ঘটনার বিবরণ রয়েছে। ’৭১ এ ৩১ মে সংঘটিত পাকহানাদার বাহিনীর পৈশাচিকতা ও বর্বরতার বিবরণ দিয়ে হরিণাগোপাল গ্রামের মঙ্গল মালাকার জানান, পাকবাহিনী এদিন তাঁদের স্থানীয় দোসর সুবর্ণগাতি গ্রামের তমেজউদ্দিন, ঘোরচড়া গ্রামের আজম বিহারি, মনু মুন্সী ও তফিজ ভূঁইয়াকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসে। সেদিন ৮০ জনকে হত্যা করে পুঁতে ফেলা হয়। পরেশচন্দ্র জানান, তার বাবা হরিপদ, কাকা শ্যামাপদ, ঠাকুরদা কালীপদ দত্ত ও পিসেমশাই তারাপদ দত্তকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হানাদাররা। প্রভাতচন্দ্রের মা বাসনা রাণীও গণহত্যায় হারিয়েছেন তার স্বামীকে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যসূত্র: একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৩৭২-৩৭৩; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ ডা. এম এ হাসান, পৃ.-৪২১; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খণ্ড মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৭১-২৭২; দৈনিক ভোরের কাগজ, ৩ নভেম্বর ১৯৯৯)

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!