কলাপাড়া বধ্যভূমি
সিলেট শহর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে তিন মাইল দূরে কলাপাড়া। টুলটিকর ইউনিয়নের এই অঞ্চলের জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিল। আর এদিকে কলাপাড়ার সীমানা ঘেঁষে টিলাগুলোর ওপরই ছিল পাক সেনাদের তাবু। ৬ এপ্রিল বিকাল তিনটায় কলাপাড়া বস্তিতে পাক হানাদার বাহিনীর এক বিরাট বহর নেমে আসে। তারা প্রতিটা নর নারীকে তাঁদের তাবুতে হাজির হতে বলে। কিন্তু তাঁদের ডাকে কোন বাঙালিই সাড়া না দিলে বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে লোকজনকে ধরে নিয়ে যায় তারা। কলাপাড়ার একটি বাড়ির সামনে সবাইকে জড়ো করে তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তাঁদের হিন্দু-মুসলমান দুই ভাগ করে মুসলমানদেরকে মুক্তি দিয়ে হিন্দুদেরকে ধরে একটি টিলার উপরে নিয়ে যায়। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তাঁদের গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদাররা। এই ঘটনায় যারা শহীদ হন, তাঁদের কয়েকজনের নাম হচ্ছে – কালিয়া উড়িয়া, নকুল উড়িয়া, সধব উড়িয়া, বীর উড়িয়া, বেণী উড়িয়া, নিতাই উড়িয়া, রমণ উড়িয়াম ছকু উড়িয়া। পাক সেনারা এসময় কলাপাড়া আগুনে ভস্মীভূত করে দেয়। পাড়ার অনেক মেয়ের ওপর নির্যাতন চালায়। তারপর জল্লাদরা যাঁদেরকে ধরে নিয়ে টিলার ওপর গুলি করে হত্যা করতো, তাদের লাশ আবার টিলা থেকে নিচে ফেলে দিত। সেই লাশগুলো শেয়াল-কুকুর টেনে-ছিঁড়ে খেতো। আবার লাশের স্তূপ জমে গেলে সেই লাশগুলোতে জল্লাদরা কখনো আগুনে জ্বালিয়ে দিত, কখনো আবার মাটিচাপা দিয়ে রাখতো। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যসূত্র: সিলেটে গণহত্যা – তাজুল মোহাম্মদ, পৃ.-২৫-২৭; একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর – সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১১৮)