বুরুঙ্গা গণহত্যা
১৯৭১ সালের ২৬ মে শান্তি কমিটি গঠনের জন্য বালাগঞ্জের বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে সভা আহবান করে পাকবাহিনীর দোসররা। ২৬ মে সকালে অনেকে মৃত্যু ভয় নিয়েও বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে উপস্থিত হন। সকাল ৯টার দিকে রাজাকার আবদুল আহাদ (ছাদ মিয়া), ডা. আবদুল খালিকসহ পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন নূর উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সেনা জীপে চড়ে বিদ্যালয়ে আসে। সকাল ১০টায় বিদ্যালয় মাঠে সমবেত লোকদের মধ্যে হিন্দু মুসলমানকে আলাদা করা হয়। হিন্দুদের বিদ্যালয়ের কার্যালয় কক্ষে ও মুসলমানদের দক্ষিণ দিকের একটি শ্রেণী কক্ষে রাখা হয়। এরপর তাঁদের হত্যা করা হয়। প্রীতি রঞ্জন চৌধুরী ও রানু মালাকার নামের দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েও জানালা দিয়ে পালিয়ে বেঁচে যান।
দুপুর ১২ টার দিকে পাক সেনারা প্রায় ৯০ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে বিদ্যালয়ের মাঠে এনে লাইনে দাঁড় করায়। মুহূর্তেই রক্তে রঞ্জিত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সবগুলো দেহ। পাকবাহিনী পড়ে থাকা দেহ গুলোর ওপর কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে গুলি খেয়েও কয়েকজন বেঁচে যান।
দিন-রাত পোড়া, আধাপোড়া ৭৮টি লাশ একই জায়গায় পড়ে থাকার পরদিন সকালে আবার কিছু পাকিস্তানি সৈন্য বুরুঙ্গায় এসে লাশগুলোকে বুরুঙ্গা স্কুলের পাশে (বর্তমানে গণকবরে) একটি গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেয়। হত্যাযজ্ঞ থেকে বা হাতে গুলি খেয়ে বেঁচে থাকা শিক্ষক শ্রী নিবাস চক্রবর্ত্তী বলেন, “আমার চোখের সামনে আমার বাবা ও ভাইকে হত্যা করা হয়েছে”।
১৯৮৪ সালে চারদিকের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি এখানে একটি স্মৃতিস্তভ নির্মাণ করা হয়েছে।