তালাইমারি বাদুড়তলা গণকবর (শিশু কবরস্থান)
৮ এপ্রিল রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চিমবঙ্গ বেতারে খবর পান পাক সেনাদের একটি বিরাট বাহিনী ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে। তারা দাশুরিয়া হয়ে রাজশাহীর দিকে আসছে। মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. আব্দুল মান্নান জানান, মুক্তিযোদ্ধা, ইপিআর, পুলিশ এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরা প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন।
১৩ এপ্রিল বিড়ালদহ সেতুর ওপারে পাকবাহিনী প্রথম প্রতিরোধের মুখে পড়ে। আচমকা আক্রমণ করলেও সেই যুদ্ধে পাক হানাদারদের ভারী সাঁজোয়া বাহিনীর সামনে তারা বেশিক্ষন টিকতে পারে না। অবস্থা বেগতিক দেখে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় তারা। দ্বিতীয়বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে বেলপুকুর রেল ক্রসিংয়ের কাছে। সেখানেও বেশিক্ষন টিকতে পারে না তারা। পিছিয়ে এসে রাজশাহীর তালাইমারিতে অবস্থান নেয় তারা। সন্ধ্যার দিকে পাক হানাদাররা শহরে ঢুকতে গেলে তালাইমারিতে জেবের মিয়ার কাঠের মিলের সামনে যুদ্ধ শুরু হয়। রক্তক্ষয়ী সেই অসম যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের ছত্রভঙ্গ করেদিয়ে পাকবাহিনী বেপরোয়া হয়ে হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। আশপাশের এলাকায় বাড়িতে ঢুকে গুলি করে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। আতঙ্কিত এলাকাবাসী প্রাণ বাঁচাতে পদ্মা নদীর দিকে ছুটতে থাকে। পাক হানাদাররা পদ্মার পাড়েই তাঁদের ব্রাশ ফায়ার করে দেয় সবাইকে। প্রায় ১৬০ জনকে সেদিন পদ্মার পাড়ে হত্যা করে বালিতে পুঁতে রাখে তারা। এই গণকবর এখন তালাইমারি বাদুড়তলা শিশু কবরস্থান বলে পরিচিত।
এরপর তারা নাটোর রোডের পাশে ওই এলাকার ডা. ইমদাদ এবং মো. মহিরুদ্দি মোল্লার বাড়ি দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করে। আশপাশের এলাকায় ও রাস্তায় কাউকে সন্দেহ হলেই তাকে তুলে এনে নির্যাতন ও হত্যা করে লাশ পুঁতে রাখত এই তালাইমারি বাদুড়তলা গণকবরে। অসংখ্য লাশ এই স্থানের পাশেই পদ্মায় ভাসিয়েও দিয়েছে পাক সেনারা। (তথ্যসূত্র: মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. আব্দুল মান্নান)