You dont have javascript enabled! Please enable it! শহীদ খুশীর কবর - সংগ্রামের নোটবুক

শহীদ খুশীর কবর

রাজবাড়ীর এক বীর সন্তানের নাম আব্দুল আজিজ খুশী। মুক্তিযোদ্ধা নওয়াব আলী বলেন, “পাক হানাদারদের সাঁজোয়া বাহিনীর আক্রমণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা রাজবাড়ীর আলাদীপুরের সেতুটি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২২ নভেম্বর রাতের সম্ভাব্য অভিযানের কথা জানতে পেরে রাজাকার, আলবদর ও অবাঙালি বিহারিরা দলবল নিয়ে আলাদীপুর সেতুর পাশে বাংকারে ওঁৎ পেতে থাকে। ওরা ছিল সেতুর পশ্চিম পাড়ে রাস্তার ওপর তৈরি বাঙ্কারে। মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয় তাঁদের বিপরীত দিকে।

সেই রাতে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল গুলি বিনিময় হয়। আব্দুল আজিজ খুশী সেতুটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য গ্রেনেড নিয়ে সামনে এগুতে থাকে। এসময় একটি বুলেট মুক্তিযোদ্ধা খুশীর মাথার ডান দিকে বিদ্ধ হয়। সহযোদ্ধারা গুলিবিদ্ধ খুশীকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর খুশী মারা যান। তার লাশ নিয়ে সহযোদ্ধারা বেশ কিছুদূর এসে একটি ধান ক্ষেতের মধ্যে খুশীর লাশ রেখে যেতে বাধ্য হয় সহযোদ্ধারা।

পরদিন সকালে রাজাকাররা গুলিবিদ্ধের পড়া রক্ত অনুসরণ করে ধান ক্ষেতের মধ্যে গিয়ে শহীদ খুশীর লাশ পেয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধার লাশ পেয়ে হানাদার বাহিনী পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠে। রাজাকারের দল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশের ওপরও নানা রকম অত্যাচার চালায়। বিহারি নেতা ও স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রধান সৈয়দ খামারকে খবর দেওয়া হয়। রাজবাড়ীর কুখ্যাত রাজাকার প্রধান সৈয়দ খামার রাজবাড়ি থেকে একটি মোটর যান নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে। তারপর সেখান থেকে খুশীর লাশ সেই মোটর যানের উপর তুলে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাজবাড়ি এনে সারা শহর ঘোরায়। সেদিন রক্তে রঞ্জিত রাজবাড়ীর রাজপথে খুশীর লাশ নিয়ে এই বীভৎস দৃশ্য দেখে অনেকে শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। উল্লাস শেষে শহীদ খুশীর নিউকলোনীর বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। রাজবাড়ীর অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে গার্ড নজরুল ইসলাম জানান, এরপর খুশীর লাশ তার নিউকলোনীর বাড়ির পাশে শিয়াল কুকুরের খাবারের জন্য ফেলে রেখে যায়। ওদের নিষ্ঠুরতার অবসান হলে রাতের আঁধারে এলাকার কয়েকজন লোক খুশীর লাশ বর্তমান কবরস্থানে সমাহিত করে।

পরদিন কবর দেওয়া কথা জানতে পেরে যারা কবর দিয়েছিল তাঁদের অস্ত্র হাতে হন্যে হয়ে খুজতে থাকে অবাঙালি বিহারি রাজাকাররা। মুক্তিযোদ্ধার খুশীর নামে রেলওয়ে খেলার মাঠটির নামকরণ করা হয়েছে।