রাঙামাটির মানিকছড়ি বধ্যভূমি
১৯৭১ সালের ১৫ মে রাতের অন্ধকারে পাক হানাদার বাহিনী রাঙামাটিতে মানিকছড়ির একটি পাহাড়ে এক বাকপ্রতিবন্ধীসহ একই পরিবারের ৪ জনকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষে কাজ করার “অপরাধে’ তাঁদের হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন, শহীদ মনোরঞ্জন দে, ডা. প্রিয় রঞ্জন দে, অতিন্দ্র লাল দে ও বাকপ্রতিবন্ধী নৃপেন্দ্র লাল দে। শহীদ মনোরঞ্জন দে’র ছেলে ও রাঙামাটির সাংবাদিক শৈলেন দে বলেন, “রাঙামাটিতে সেই সময়ের শান্তি কমিটির দেওয়া তালিকা অনুয়ায়ী রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি বাহিনী বাজারের এক দর্জিকে (মোস্তাক খলিফা) নিয়ে তবলছড়ির দোতলা বাড়িতে যায়। কারণ মোস্তাক বাড়ির ঠিকানা জানতো এবং মনোরঞ্জন দেকে মামা বলে ডাকতো। তিনি মামা বলে ডাকার পর অতিথি জানালে বাড়ির লোকজন দরজা খুলে দেখে পাক সেনাদের। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাক সেনারা ধরে ফেলে। তবে ঐ সময় সত্যরঞ্জন দে ঘরের পিছনে দরজা দিয়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। এরপর পাক সৈন্যরা মনোরঞ্জন দে, ডা. প্রিয় রঞ্জন দে, চাচার দুই ছেলে অতিন্দ্র লাল দে ও বাকপ্রতিবন্ধী নৃপেন্দ্র লাল দে’কে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে রাঙামাটি শহরের অদূরে মানিকছড়ি এলাকার একটি পাহাড়ে তাঁদের গুলিকরে হত্যা করে পাক বাহিনী”।
শৈলেন দে বলেন, “আমার বাবা চাচারা ৫ ভাই। ১৯৭১ সালে তখন যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছিল। স্বতস্ফুর্তভাবে পাড়ায় পাড়ায় যুবকরা সংগঠিত হয়ে নিজেরাই যুদ্ধের মহড়া দিত। সীমান্ত থেকে এক সময় ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস সদস্যরা এসে মানিকছড়িতে অবস্থান নেয়।
সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার-দাবার রসদ সরবরাহসহ অন্যান্য সাহায্য সহযোগিতা করতেন তার বাবা ও চাচারা। রাজাকার হিসেবে পরিচিত সৈয়দ তোফাজ্জল হোসেনের (এইচটি হোসেন) দেওয়া তথ্য ও তালিকা ধরে সেনারা আমার বাবা, চাচা, দুভাইসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি করে হত্যা করেছিল।