জামতলার গণকবর
যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে জামতলা বাজারের কাছে ৭১’র একটি গণকবর রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এটাকে পাঁচ কবর বা পাকা মাজার বলা হয়। জেলা সদর সড়ক পথে ৩৫ কিলোমিটার দূরে শার্শা উপজেলায় এটির অবস্থান।
নভেম্বর কলারোয়ার পাচনলের মতিয়ার, রশিদ ও সামছুরকে ধরে নিয়ে যায় কলারোয়া থানার অবাঙালী সিপাহীরা। বাবার আবেদন নিবেদনে গভীর রাতে সামছুর মুক্তি পেলেও শার্শার জামতলায় মতিয়ার ও রশিদকে গুলি করে হত্যা করা হয় বললেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক কলেজ পরিদর্শক উপাধ্যক্ষ আবু নসর।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে রাজাকারদের সহায়তায় খান সেনারা ৫ যুবককে ধরে এনে রাতে রাস্তার পাশে গুলি করে হত্যা করে ফেলে রাখে। পরদিন সামটা গ্রামের জাহান আলীরা তিন ভাই মাঠে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় লাশ ৫টি একটি গণকবরে সমাহিত করে বলে জানান ওই তিন ভাইয়ের মধ্যে বর্তমানে জীবিত সামটা গ্রামের চান্দালী। জামতলার গণকবর সম্পর্কে ৭১’র কলারোয়া উপজেলা সংগ্রাম পরিষদের সেক্রেটারি ও ভাষা সৈনিক শেখ আমানুলাহ বলেন, কলারোয়ার হামিদপুরের বিখ্যাত আলেম মরহুম পীর মৌলনা ময়জদ্দীন হামিদীর ছোট ছেলে পীরজাদা শামসুজ্জামান হামিদী তার প্রতিবেশী মতিয়ার ও রশিদ নামে আমার দুই প্রিয় ছাত্রকে রাজাকারদের হাতে ধরিয়ে দেয়। তিনি দুই ছাত্রের হাত বাধার জন্য রাজাকারদের নিজেই দড়ি এনে দেন। তিনি বলেন, মতিয়ার ও রশিদকে গাড়িতে তুলে নিয়ে জামতলা বাজারের কাছে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করার পর তাঁদের লাশ সেখানেই ফেলে রাখে।
এই হত্যাকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করে নুরুল হক ও তিনজন অবাঙালি কনস্টেবল। এই দু’জন ছাত্রের সঙ্গে আরও ৩ জনকে তারা সেখানে নিয়ে এসে হত্যা করে। যাদের পরিচয় আজও জানা যায়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কবরটি পাকা করার ব্যবস্থা করে সরকার। কবরের মাঝখানে জাহান আলির লাগানো বটগাছটি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।