কপালিয়া খেয়াঘাট বধ্যভূমি
মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার ‘অপরাধে’ পাকিস্তানি বাহিনীর দোসররা মণিরামপুরের কপালিয়া এলাকার যুবকদের ৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করে। ’৭১ সালের ৫ অক্টোবর উপজেলার কপালিয়া খেয়াঘাটে ১২ জন যুবক ও ১ জন নারীকে হত্যা করে। ৫ অক্টোবর পর কয়েকদিনের মধ্যে অন্তত আরো ১২ জনকে হত্যা করে হায়না ও তাঁদের দোসর রাজাকার আল বদররা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মণিরামপুরের কাপালিয়া, মনোহরপুর, নলডাঙ্গাসহ কয়েকটি গ্রামের বহু যুবককে রাজাকাররা রাদের শিবিরে নাম লেখাতে ব্যার্থ হয়। তারা চরম প্রতিশোধ নিতে ফন্দি আটতে থাকে। এক পর্যায় কূটকৌশলে ধরা দিয়ে এলাকার অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের রাজাকারদের হাতে তুলে দেয়। ৫ মাসের শিশু সন্তান রেখে কপালিয়া ট্রাজিডির শিকার শহীদ গোলজারের স্ত্রী ফরিদা, সেদিন মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে আসা নির্যাতনের শিকার বর্তমানে কপালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম মোহাম্মদ আলী, আবু তালেব, আইয়ুবসহ অনেকে জানান, মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই এলাকার যুবকরা সংগঠিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করতে থাকে। এর আগে রাজাকাররা ওই যুবকদের তাঁদের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানালেও কেউ তাতে সাড়া না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ কারণে ওই গ্রামের কোনো রাজাকার ছিল না।
পূর্বাঞ্চলের রাজাকার কমান্ডার শরিতুল্যহ তার বাহিনী ওই যুবকদের দমন করতে এলাকায় ঢুকে চরম নির্যাতন চালাতে থাকে। অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে পালাতে থাকে শুরু করে। ২ অক্টোবর সকালে রাজাকাররা এলাকার অভিভাবকদের ডেকে বলে, তাঁদের সন্তানদের রাজাকারদের কাছে আত্মসমর্পন করালে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। অসহায় অভিভাবকরা সেদিন প্রায় ৫০ জন সন্তানকে কপালিয়ার শ্রী নদীর তীরে খেয়াঘাটে রাজাকারদের কাছে নিয়ে যায়। এ সময় রাজাকাররা সবাইকে পিঠমোড়া করে বেঁধে মনোহরপুর কাছারি বাড়িতে ৩ দিন আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। ৫ অক্টোবর রাতে তাঁদেরকে আবারও কপালিয়া খেয়াঘাটে নিয়ে আটক আনছার, গোলজার, ফজলু, সামাদ চিত্ররঞ্জনসহ ১২ যুবককে গুলি করে হত্যা করে। বাকিদের ওপর চলতে থাকে নির্যাতন। পরদিন সেখানে একটি দল আসে উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের রাজাকার কমাণ্ডার তোফাজ্জল ও আফছার। কিন্তু ৭ অক্টোবর রাজগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে রাজাকারদের সম্মুখ যুদ্ধের খবর পেয়ে তোফাজ্জল তার দলবল নিয়ে সেখানে চলে যায়। সেখানে যুদ্ধে তার মৃত্যু হয়।
এ সময় সহকারী রাজাকার কমান্ডার আফসারকে টাকা পয়সা দিয়ে জীবিত সন্তানদের ছাড়িয়ে আনেন তাঁদের অভিভাবকরা। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আরও অনেককে হত্যা করে রাজাকাররা। এই বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিফলক নির্মান করা হয়েছে।