পাঁচগাঁও বধ্যভূমি
মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের অন্যতম হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি পাঁচগাঁওয়ের গণহত্যা। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রামে এ বধ্যভূমি অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১ মে থেকে পাকবাহিনী রাজনগরের বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ৭ মে গভীর রাতে পাক সেনার প্রায় ৫০ জনের একটি দল দুটি ট্রাকে করে পাঁচগাঁওয়ে এসে ঢুকে। দালালদের সহযোগিতায় পাকসেনারা গ্রামের লোকদের ধরে একটি দিঘীর পাড়ে এনে হাত-পা বেঁধে এক জায়গায় জড়ো করে। গ্রামের ঘরে ঘরে তখন পাকসেনাদের লাগানো আগুন জ্বলছে। একসময় জড়ো করা গ্রামবাসীর শরীর থেকে কাপড় খুলে একজনের গলার সঙ্গে অন্যজনের পা বেঁধে জোড়ায় জোড়ায় দিঘীর জলে নিক্ষেপ করে। এরপর ভাসমান লোকদের লক্ষ্য করে পাক হানাদার বাহিনী শুরু করে ব্রাশফায়ার। হাত-পা বাঁধা ৫৯ জন গ্রামবাসী সেদিন এখানে শহীদ হন। পাকসেনারা চলে গেলে গ্রামবাসী স্বজনদের লাশ দিঘী থেকে তুলে এনে দিঘীর পশ্চিম পাড়ে একটি গণকবর দেয়। পাকসেনাদের ভয়ে সেদিন একটি লাশেরও দাহ করা সম্ভব হয়নি। পাঁচগাঁওয়ের হত্যাযজ্ঞে যে শহীদদের পাওয়া গেছে তারা হলেন- বসন্ত নমশুদ্র, উমেশ নমশুদ্র, সুনাতন নমশুদ্র, নগবী শব্দকর, গোপাল শব্দকর, অভি শব্দকর, রমন শব্দকর, নিরদ শব্দকর, মশাই শব্দকর, ইরেশ শব্দকর, ব্রজেন্দ্র শব্দকর, সার শব্দকর, নিত্যবালা শব্দকর, নরেশ শব্দকর, পুতুল অধিকারী, ইরেশ মালাকার, উমেশ মালাকার, আদাই মালাকার, টনা মালাকা, পুতুল মালাকার, সুরিন্দ্রা মালাকার, সুবল মালাকার, বিমল মালাকার, বাদল মালাকার, সুকেশ মালাকার, রস মালাকার, রঘু মালাকার, বিধু মালাকার, নগেন্দ্র মালাকার, গোপেশ কুমার মালাকার, বঙ্কু মালাকার, ও উমেন্দ্র মালাকার। স্বাধীনতার পর গণকবরে দেয়াল ডীয়ে সংরক্ষণ করা হয়। (সূত্র: সজল চক্রবর্তী, রাজনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার; সিলেটে গণহত্যা-তাজুল মোহাম্মদ, পৃ.-১২৩-১২৫, ২৪৮)