নান্দাইল কালীগঞ্জ রেলওয়ে সেতু বধ্যভূমি
নান্দাইলের কালীগঞ্জ বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদাররা। তবে এখনও সেটি চিহ্নিত করা হয়নি; নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিফলক।
মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রেলওয়ে ব্রিজটি এখনও অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে। উকালীগঞ্জ সেতুটি নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়ন এলাকায় ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে নরসুন্দা নদীর উপর। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদাররা নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে এই সেতুর কাছে হত্যা করত।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী জানান, পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদররা দুর-দুরান্ত থেকে লোকজনকে ধরে এনে ট্রেনে করে আনতো। এরপর সেতুর পাশেই এক বাংকারে নির্যাতন শেষে হাত-পা বেঁধে ওই সেতুর উপর দাঁড় করিয়ে গুলি করে অথবা জবাই করে লাশ নিচে নদীর জলে ফেলে দিতো। কখনো কখনো এক রশিতে অনেককে এক সঙ্গে বেঁধে তারপর গুলি চালাতো হানাদাররা। সাধারণত তারা দিনের বেলা হত্যাযজ্ঞ কম করত। তবে প্রতি রাতেই চলতো তাঁদের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড।
সেতুর পাশের বাসিন্দা রাজগাতী খালপাড় সুজন পাঠান (৭৫) ও বাবর আলী (৭৮) জানান, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক জনগন এ সেতুটি ভেঙ্গে ফেলে। এরপর পাক বাহিনী আশেপাশের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারপর সেখানে বাংকার তৈরি করে অবস্থান নেয়।
সেতুটি ভাঙ্গা থাকায় ট্রেন এসে দু’পাশে থামতো। ট্রেন থেকে আটক করে আনা প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০/৬০ জনকে হত্যা করতো হানাদার বাহিনী। এক সময় তারা সেতুটি সংস্কার করে। তবে আগের মতোই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যায়।
একই গ্রামের ফাইজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, উপজেলার খামারগাও গ্রামের মজুমদার বাড়ির তিন সহোদরকে এখানে হত্যা করা হয়েছে। প্রতি রাতে মানুষের বেঁচে থাকার কাকুতি-মিনতি, কান্নাকাটিসহ সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণের আওয়াজ শোনা যেতো।
এলাকাবাসী আবদুল সালাম (৭৫) বলেন, তখন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা নদী পানিতে সারি সারি লাশ ভেসে যেতে দেখেছি। সেতুর পাশে বাড়ি অবসরপ্রাপ্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল মজিদ (৭৮) বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী খাদিজা পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে আহত হয়ে এখনও সেই স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছি।
স্থানীয় মুশুলী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মইনুল হোসেন আরজু বলেন, এ অঞ্চলে এর চেয়ে বড় আর বধ্যভূমি নেই।