You dont have javascript enabled! Please enable it!

খারঘর বধ্যভূমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংগঠিত গণহত্যাগুলোর অন্যতম ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের খারঘর গণহত্যা। ১৯৭১ এর ১০ অক্টোবর সকালে বড়াইল ও খারঘর গ্রামে অভিযান চালায় পাকসেনারা। কয়েক ঘন্টার এ অভিযানে তারা ৫৩ জন নারীপুরুষকে হত্যা করে। আহত হয় ১১৭ জন। বড়াইল-খারঘর গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ ঘাঁটি। এখন থেকে পরিচালিত হয় অনেক বড়বড় অভিযান। আর এ কারণে পাকসেনারা টার্গেট করে এ গ্রামগুলোকে। একটি জাহাজ ও আরেকটি নৌকায় বোঝাই হয় সেদিন পাকসেনারা আসে এ গ্রামে।

পাক সেনাদের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে বেঁচে আছেন এখনও এ গ্রামের অনেক মানুষ। এমনই একজন রীনা বেগম। তার বয়স ছিল তখন ৪ বছর। তার সারা শরীরেরি নির্মমতার ছাপ। বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শরীর। গ্রামে পাকসেনাদের আগমনের খবরে মায়ের কোলে উঠেই পালিয়েছিলেন নিজ বাড়ি থেকে একটু দূরে। ধারণা ছিল পাকসেনারা বর্ষার পানি ডিঙ্গিয়ে ঐ পর্যন্ত যাবেনা। কিন্তু চলে আসে পাকসেনারা। আশ্রিত বাড়ির মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে থেকেও রক্ষা হয়নি। মামা খোরশেদ আলম বুকে চেপে ধরে আগলে রেখে ছিলেন রীনাকে। পাকহানাদের গুলিতে মামার মৃত্যু হয় সঙ্গে সঙ্গেই। সে সময় মারা যান তার নানা আবদুল জলিলও। আর রীনার শরীর অসংখ্য গুলির আঘাতে হয় ক্ষতবিক্ষত। তার শরীরের কোথায় গুলি ঢুকেনি। সেই সময়ের কথা রীনার খুব একটা মনে নেই। কিন্তু বুলেটের আঘাত কেড়ে নিয়েছে তার জীবনের সবকিছুই।

আরেকজন মোমিনকুল জক সুদন। পাক সেনার বুলেটে বিদীর্ণ হয়েছিল তার বুক। ৫৮ বছর ধরে সেই যন্ত্রনাই ভোগ করছেন তিনি। বেঁচে আছেন পৈশাচিক এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে। সে সময় অনেককে ধরে নিয়ে বেদম মারধোরও করে পাক সেনারা। সুদন জানান, ঐ দিন সকাল ৭টায় এসে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খাড়ঘর গ্রামে অভিযান চালায় পাকহানাদাররা। এরপর চলে যায় বড়াইল গ্রামে। দুপুর দেড়টা নাগাদ গ্রাম ছেড়ে চলে যায় তারা। কিন্তু বইয়ে দিয়ে যায় এক রক্ত গঙ্গা। মারা যান ৫৩ জন নারী-পুরুষ। আহত হয় ১১৭ জন। পাক হানাদারদের জাহাজটি যে ঘাটে ভীড়ে ছিল সেখানেই খাড়ঘর গণকবর। এখানে এক সঙ্গে ২৭ জনকে সমাহিত করা হয়। বাকিদের গ্রামের একটি গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। যুদ্ধকালীন বড়াইল বাজার ক্যাম্প কমান্ডার আল মামুন সরকার বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বড়াইল ও খাড়ঘর গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ ঘাঁটি ছিল। বড়াইল বাজার ক্যাম্পথেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে তখন বড় বড় গেরিলা অভিযানগুলো পরিচালনা করা হয়। ভৈরব রেল সেতু ধ্বংস, লালপুরে মেঘনা নদীতে পাকবাহিনীর খাদ্য ভর্তি কার্গো ডুবিয়ে দেওয়া এবং বদগুনি খালের যুদ্ধসহ আরও অনেক বড় বড় অভিযান চালানো হয় এখান থেকেই। এ কারণে পাকবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় গ্রাম দু’টি।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!