You dont have javascript enabled! Please enable it! কুরুলিয়া খাল বধ্যভূমি - সংগ্রামের নোটবুক

কুরুলিয়া খাল বধ্যভূমি

যুদ্ধে পরাজয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ৬ ডিসেম্বর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার থেকে বের করে গাড়িতে তুলে ৪০ জনকে বধ্যভূমির দিকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনের ছোট ভাই আফজল হোসেন ওইসব জল্লাদের অনেক অনুনয়-বিনয় করে বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে হত্যা করো, আমার ভাইকে হত্যা করো না। আমি নিজেকে মুক্তি বাহিনীর গেরিলা বলে স্বীকার করছি। আমি ছেলে মানুষ। আমি আবিবাহিত। আমাকে মেরে ফেলা হলে কারো কোন ক্ষতি হবে না। আমার ভাই বিবাহিত। তিনি তিনটি শিশু সন্তানের বাবা। ওই শিশুদের তোমরা এতিম করো না। ওদেরকে দেখা শুনা করার মতো কেউ আর পৃথিবীতে নাই”। কিন্তু সেই আকুল আবেদন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলো। পাষাণের হৃদয়ের এতোটুকু করুণা হলো না। গর্জে উঠলো জল্লাদের অস্ত্র। একসঙ্গে লুটিয়ে পড়লো দুই সহোদর সহ ৪০ জনের তাজা প্রান। প্রসঙ্গত আকবর হোসেন তৎকালীন ঢাকাস্থ ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের আলী নগর গ্রামে। ’৭১ এর নভেম্বরের শেষ দিকে তিনি আলী নগর গ্রাম থেকে হানাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে আসে।

এই চল্লিশ জনের মধ্যে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক শহীদ বুদ্ধিজীবী লুৎফুর রহমান সহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল ও রাজনৈতিক কর্মী। তাঁদেরকে রাতের আঁধারে কুরুলিয়া খালের পাড়ে গুলি করে হত্যা করে তারা। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যসূত্র: একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১৩৮-১৪০; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ ডা. এম এ হাসান, পৃ.-১৮৩, ৩৮৭; দৈনিক বাংলা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২; দৈনিক পূর্বদেশ, ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২; মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-জয়দুল হোসেন, পৃ.-১৮৬-১৮৭)।