ধুনটের গণকবর
১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর। বগুড়ার ঘুনট উপজেলার সেই গণহত্যার কথা এখনও মানুষ মনে রেখেছে। সাধারণ মানুষ ঐ ভয়াল দিনের কথা মনে রাখলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ও বেসরকারি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে গণকবরে স্থানে কোন বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না। অযত্ন অবহেলায় রাখা হয়েছে গণকবরস্থান।
ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ জানান, বগুড়ার ধুনট উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক সেনাদের ৩ নভেম্বর দিনব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধ হয়। গভীর রাত পর্যন্ত যুদ্ধ করে অবশেষে সফল হন মুক্তিবাহিনী। শত্রু পক্ষকে পরাজিত করে ক্লান্ত ও বিদ্ধস্ত নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান নেয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের বিষয়টি জানতে পারে স্থানীয় রাজাকার-আলবদররা। রাতেই পাকসেনা ও রাজাকাররা হানা দেয় মুক্তিকামী যোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা ঘুমিয়ে ছিলেন। বাড়ি ঘেরাও করে তাঁদের আটক করা হয়। এভাবেই উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে রাত সারে ১১টায় নিয়ে আসা হয় ধুনট থানা ভবনের মাত্র ২০০ গজ পূর্বে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। আটক ২৯ জনের মধ্যে নুরুল ইসলাম নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা কৌশলে পালিয়ে যান। ৪ নভেম্বর ভোরে পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামের জালাল মণ্ডলের জমিতে ২৮ মুক্তিযোদ্ধাকে সারিবদ্ধ করানো হয়। ব্রাশফায়ার করে মুক্তিসেনাদের হত্যা করে হানাদাররা।
পরে সেখানেই গর্ত তৈরি করে ২৮ মুক্তিযোদ্ধার লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়। যা ধুনটের গণকবর নামে পরিচিত। গণকবরে শায়িত মুক্তিযোদ্ধাদের মদ্যে ধুনট অফিসার পাড়ার জহির উদ্দীন, কান্তনগর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান, শিয়ালী গ্রামের নুরুল ইসলাম, চান্দারপাড়া গ্রামের আবদুল লতিফ, মাজবাড়ী গ্রামের ফরহাদ হোসেন, জিল্লুর রহমান ও পর্বত আলীর পরিচয় মিলেছে। অন্য ২১ জন মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় পাওয়া যায়নি।