বাংলাদেশের হানাদার দখলকৃত এলাকায় এখন প্রাক্তন নেতা উপনেতা এম.এন.এ. আর এম.পি-এর দল গিস্ গিস্ করছে। সবাই প্রাক্তন, কেউই আর Current নন। সম্প্রতি প্রাক্তন পাকিস্তানের প্রাক্তন পার্লামেন্টের প্রাক্তন নেতা খান সবুর খান একটা ঘরের মধ্যে। খুলনা অশান্তি কমিটির এক সভা করেছিলেন। সেই সভায় পূর্ব বাংলার প্রাক্তন মন্ত্রী আমজাদ হােসেন আর প্রাক্তন পাকিস্তানের প্রাক্তন পার্লামেন্টের প্রাক্তন এম.এন.এ. মওলবী ইউসুফ বক্তৃতা করেছেন। সে কি বক্তৃতার জোশ! পাকিস্তানের প্রেমে সব্বাই একেবারে প্রাণ জারে-জার করে দিলেন। সভাকক্ষ গম্ গম্ করতে লাগলাে। এর দিন কয়েকের মধ্যেই নাটোরের প্রাক্তন এম.এন.এ. আব্দুল মজিদ এই খুলনাতেই এসে
৪২
মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে নিহত হলাে। খুলনার দালাল সম্রাট আর পালের গােদা সবুর খান বােতলটা উজাড় করে খেয়ে আমজাদকে বললেন, “আর খাসূনে, তােকে এখন ঝাপসা দেখছি আমজাদ। এমন সময় খবর এল বাগেরহাট মিউনিসিপ্যালটির প্রাক্তন চেয়ারম্যন কতল হয়ে গেছে। আবার তােক মারফৎ সংবাদ এল ঢাকায় প্রাক্তন এম.পি.এ. আব্দুল হামিদকে চাকু মেরে হত্যা করা হয়েছে আর রাজশাহীর প্রেমতলীর মুসলিম লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম নিহত হয়েছে। সবুর খান সবার অজ্ঞাতে Army protection চেয়ে বসলেন।
এদিকে পূর্ব বাংলার প্রাক্তন পরিষদের প্রাক্তন স্পিকার আর জেলা লুটপাট সমিতির সভাপতি দিনাজপুর গমিরুদ্দিন প্রধানের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। বেচারা গমির এখন গুমরে মরছে। এতে এক মহাগাড়াকল দেখছি! হানাদার বাহিনী আর অবাঙালিদের সংগে হাত মিলিয়ে একটু টু-পাইস বানাচ্ছি, তাও লােকদের সহ্য হবে না?
পাবনার ঘটনা আরাে এক ডিগ্রি উপরে। সেখানে জনৈক ক্যাপ্টেন জায়েদীকে জেলার কর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলাে জেনারেল ইয়াহিয়াকে বলেছেন যে, অন্ততঃ দখলকৃত এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করাে। তাই ক্যাপ্টেন জায়েদীর কপাল খুলেছে। ইনিও একজন প্রাক্তন এম.এন.এ। পাবনাতে এ ভদ্রলােকের শাহীন এজেন্সিস বলে একটা কোম্পানি ছিল। এই শাহীন এজেন্সিসই পাবনা-জোনে পি.আই.এর এজেন্ট ছিল। কিন্তু যখন হিসেব চাওয়া হলাে, তখন দেখা গেল এই ক্যাপ্টেন জায়েদী কয়েক লাখ টাকা গঁাড়া মেরে দিয়েছে। বেচারার নামে তহবিল তসরুপের মামলা হলে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। ভাগ্যিস পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এসেছিল? তাইতাে রতনে রতন চিনলাে! দাগী আসামী ক্যাপ্টেন জায়েদীকে এরা পাবনার কর্তা বানিয়েছে। এখন বুঝুন পাবনার দখলকৃত শহর এলাকায় কি সােন্দর প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। চোর-বদমাইশ আর গুণ্ডার দল সব অফিসার হয়েছে। হবুচন্দ্র দেশের গবুচন্দ্র মন্ত্রী আর কি?
হায় হায়! একটা জব্বর কথা কইতে কিন্তুক ভুইল্যা গেছি। এই ক্যাপ্টেন জায়েদী কিন্তু প্রাক্তন পাকিস্তানের প্রাক্তন পার্লামেন্টের প্রাক্তন পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন। আর আইয়ুব খান সাহেব একে খুবই পেয়ার করতেন। কিন্তুক চান্দু আমার! একটু সাবধানে থাইকো। তােমার নাম কিন্তু লিস্টির মধ্যে রইছে! ।
যাক আমার মনটা একটু শান্ত হয়েছে! আমাগাে কক্সবাজারের প্রাক্তন মন্ত্রী মওলবী ফরিদ আহম্মদ ৭৯টা নাম জোগাড় করতে পেরেছেন। এই ৭৯টা নাম জোগাড় করে। সেখানে একটা অশান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কী বললেন? আমি ভুল তথ্য দিয়েছি? কিছুতেই না। ফরিদ আহম্মদও একজন প্রাক্তন মন্ত্রী। আমি মনে করাইয়া দিতাছি। মুসলিম লীগ নেতা বােম্বাইয়ের ইব্রাহিম চুন্দ্রীগড়ের কথা মনে আছে? সেই চুন্দ্রীগড় সাহেব যখন মাস কয়েকের জন্য প্রাক্তন পাকিস্তানের পেরধানমন্ত্রী appoint হয়েছিলেন, তখন আমাগাে ফরিদ সাব জেল-ওয়াজির হয়েছিলেন। সেই থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইনি প্রাক্তন মন্ত্রীই থেকে যাবেন- বুঝেছেন! এবারের নির্বাচনে হেরে গেলেও তার এ Credit
৪৩
নষ্ট হয়নি। হবেও না।
সবচেয়ে টেক্কা দিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী বগুড়ার ফজলুল বারী। বেচারা মােনেম খার। উজীর সভায় সাত বছর ধরে মন্ত্রী ছিলেন। অবশ্য এবারের নির্বাচনে এক তরুণ আওয়ামী লীগ কর্মী মােঃ মােজাফফরের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কী? দেশপ্রেমিক নেতাদের কি ঘাপটি মেরে থাকা চলে? তাই তিনি গেল মার্চ মাস থেকেই গােপনে একটু নড়াচড়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু এ যে একেবারে সেম-সাইড হয়ে গেল? মার্চ মাসের শেষের দিকেই রংপুর থেকে একদল হানাদার সৈন্য বগুড়া শহরের নিকটে এসে হাজির হলে, দু’পক্ষেই প্রচণ্ড লড়াই হলাে। কিন্তু কথা নেই বার্তা নেই একদিন দিনে-দুপুরেই হানাদার বাহিনী বগুড়ার কালীতলায় কয়েকটা বাড়ি তল্লাশী করলাে। এর একটা বাড়ি হচ্ছে ফজলুল বারীর। দরজায় ধাক্কা পড়েই বারী সাহেব বেরিয়ে এলেন। হানাদাররা জিজ্ঞেস করলাে, “ইয়ে মােকাম তােমহারা হ্যায়?’ জবাব এলাে ‘I am Ayub Khan’s man. হাম সাত সাল Minister থা। কিসের কি! ততক্ষণে মেসিন গান গর্জন করে উঠেছে। প্রাণহীন দেহটা তার মেঝেতে পড়ে গেল। নিজের জীবনের বিনিময়ে তিনি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা উপলব্ধি করলেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দালালীর পুরস্কার পেলেন।