ইটবাড়ীয়া গ্রামে হত্যা-নির্যাতন
শহর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ইটবাড়ীয়া ইউনিয়নের ইটবাড়ীয়া গ্রাম। ২৪ নং ইটবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনেই আব্দুর রাজ্জাকের মুদি-মনোহরী দোকান। সেখানে ওই এলাকার কাঞ্চন গাজীর সঙ্গে কথা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর। তিনি জানান, যুদ্ধচলাকালীন ১৯ বৈশাখ রোববার দুপুর ২টায় পাক বাহিনীর বড় একটা স্পিড বোট কচাবুনিয়া ঘাটে ভেড়ে। সেখানে নেমেই প্যাদা বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই বাড়ির পুকুর পাড়ে ৪ জনকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। এরপর পাশের সিকদার বাড়িতে হানা দিয়ে আরো ৪ জনকে গুলি করে মেরে ফেলে। পাশের হাওলাদার বাড়িতে আরো ৪ জনকে নির্বিচারে মেরে ফেলে। এলাকার ঝোপঝাড়ের মধ্যে পানি তখন থৈ থৈ করছিল। এসব হত্যাকাণ্ডে আতঙ্কিত এলাকার শিশু ও নারীরা ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে মনোয়ারা বেগম, সকিনা বেগম, জামিনা বেগম, ফুলভানু, ছয়তুন্নেছা, ময়ুরনেছা, হোসনেয়ারাসহ প্রায় ১৫ জন নারীকে শহরের সার্কটি হাউজে ধরে নিয়ে যায় পাক সেনারা।
মনোয়ারাসহ প্রায় সবার কোলেই ছিল ছয় থেকে আটমাসের শিশু। সার্কটি হাউজে নিয়ে নির্যাতন চালায় এসব গৃহবধূদের উপর। রাত চারটায় তাঁদেরকে কালিকাপুরের তুলাতলা নামক স্থানে ছেড়ে দিয়ে যায় পাক সেনারা। সেদিনের নির্যাতিত মৃত মোসলেম সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, তখন তার বয়স ১৮ বছর। তার শ্বশুর সলেমান সিকদারকে মেরে ফেলে পাক হানাদাররা। তার কোলে ৬ মাসের পুত্র সন্তান।
তিনি বলেন, “সেদিন যা হবার তো হয়েই গেছে। সেসব কথা বলে আর কি হবে”। ওই গ্রামে শহীদ হন করম আলী, সামশুল হক, সেরাজ হাওলাদার, মেনাজ সিকদার, অফেজ সিকদার, কদম আলী সিকদার, সলেমান সিকদার, কাঞ্চন গ্যাদা, মোসলেম সিকদারসহ অনেকে।