ঢাপঢুপ বধ্যভূমি
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের ইসলামপুর ও শুকানপুকুরিসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। ইসলামপুর গ্রামের পাশে ছিল ঢাপঢুপ বিল।
পাক হানাদার বাহিনী আসার খবরে তাঁদের দোসর এদেশীয় রাজাকার-আলবদররা তাঁদের ওপর নানা রকমের অত্যাচার-অনাচার শুরু করে। নির্যাতন দিন দিন বাড়তে থাকে। উপায় না দেখে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় ওরা। ঢাপঢুপ বিলের পাশের আমবাগানে সবাই জড়ো হন।
১৯৭১ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে কোনো এক শুক্রুবার সকালে দলে দলে ভারতের পথে রওনা হন তারা। তখনও অনেকে আমবাগানে অপেক্ষা করছিলেন। রাজাকার-আল্বদরদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী উপস্থিত হয় সেখানে। সেনাদের একটি অংশ আমবাগানে অপেক্ষামাণ গ্রামবাসীদের ঘিরে ফেলে। অপর দলটি ভারতের পথে রওনা হওয়াদের আটক করে আমবাগানে নিয়ে আসে। এমন কি গ্রামের বাড়িতে যে সব পুরুষ ছিলেন তাদেরও একে একে ধরে আনা হয়।
এরপর সবাইকে নির্জন ঢাপঢুপ বিলের পাশে লাইনে দাঁড় করিয়ে হানাদার বাহিনী ব্রাশ ফায়ার করে। এতে অধিকাংশ মানুষই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। একেকটি করে লাশ বিলে ফেলে দেয় হানাদাররা। এঁদের মধ্যে যাঁদেরকে জীবিত মনে হয়েছে তাঁদেরকে পুনরায় নানা রকম নির্যাতন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা। এরপরও কয়েকজন মরে যাওয়ার ভান করে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এঁদের দু’জন সপেন্দ্র নাথ রায় ও বোদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ললিত মোহন রায় এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, তাঁদের হিসেবে ঐ দিন হিন্দু পরিবারগুলোর প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুরুষ সদস্যকে পাক সেনারা হত্যা করে।
এই গণহত্যার স্থানটি ‘ঢাপঢুপ বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। এটি পঞ্চগড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাঁদের দালালদের নির্মমতা এক বড় সাক্ষী।