You dont have javascript enabled! Please enable it!

সোনাপুর, শ্রীপুর ও মহব্বতপুর গণহত্যা

একাত্তরের ১৫ জুন পাক হানাদার বাহিনী ও তাঁদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী নোয়াখালী সদর উপজেলার সোনাপুর, শ্রীপুর ও মহব্বতপুরে নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে।

২৫ মিনিট স্থায়ী হানাদারদের এ তাণ্ডবে ১১৮ জন মুক্তিকামী মানুষ শহিদ হন ও অসংখ্য বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরমধ্যে ৭৮ জন শহীদদের নাম পরিচয় উল্লেখ করা হয় শ্রীপুরে নির্মিত একটি স্মৃতিফলকে।

সোনাপুরের মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক বাদল বলেন, “দুপুর ২টার দিকে দুপুরের খাওয়ার সময় হায়নাদের গুলির শব্দে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পরে। আতংকিত লোকজন সবকিছু ফেলে রেখে প্রান ভয়ে পালাতে শুরু করে। কিন্তু ততক্ষনে পুরো এলাকা হানাদার বাহিনী ঘিরে ফেলে।

সাবেক সাংসদ ফজলে এলাহী বলেন, “ঘটনার কিছুদিন আগে এলাকার মুক্তিকামী জনতা বৃহত্তর নোয়াখালী মুজিব বাহিনী (বিএলএফ) প্রধান মামুদুর রহমান বেলায়েতের নেতৃত্বে সরকারি অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র সোনাপুর দিয়ে পূর্বাঞ্চলে নিয়ে যায়। তারই জের ধরে হানাদাররা এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। হয়নারা শ্রীপুরে ঢুকতেই আহমদিয়া হাইস্কুলের সামনে আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর স্কুলের পেছনের বাড়িতে গিয়ে তার ভাই আলী করিম, আলী হায়দারসহ বাড়িতে থাকা এক অতিথিকে গুলি করে হত্যা করে। এর আগে তাঁদের বাবা সৈয়দ মুন্সি গলায় কোরআন শরীফ ঝুনিয়ে ছেলেদের প্রাণভিক্ষা চাইলে হায়নারা তাকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার সামনেই ছেলেদের হত্যা করে। এরপর ব্যপক লুটপাট করে পুরো বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়”।

“সোনারা দক্ষিণ সোনাপুরের হোমিও ডাক্তার আবু ফররার দোকানে গিয়ে ডাক্তারকে এবং সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা এক মা তার ২ মাসের শিশু কন্যাকে হত্যা করে। এদিনের শহীদদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জোশেফ সোয়ারিশও ছিলেন। হায়নারা দেবেন্দ্র দাস মুচির হাতে জুতা পালিশের পর এবং এক পথচারীর হাতে পানি পান করার পর তাঁদের দু’জনকেই হত্যা করে”।

অন্যসূত্রে জানা যায়, ১৫ জুন সোনাপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে অসংখ্য স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে হত্যা করে। তারা বাড়িঘর লুট করে পরে আগুন ধরিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্র: একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১৪৩; মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালী-জোবাইদা নাসরীন, পৃ.-১২২)

শ্রীপুর গ্রামে ১৫ জুনের গণহত্যায় ৬৮ জন প্রাণ হারান। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্র: একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১৪৩; মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালী-জোবাইদা নাসরীন, পৃ.-১২২)

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!