You dont have javascript enabled! Please enable it! গোপালপুর গণহত্যা - সংগ্রামের নোটবুক

গোপালপুর গণহত্যা

নোয়াখালিতে বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর বাজারে ৫৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পাক সেনারা। একাত্তরের ১৯ অগাস্ট সকালে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় সেনারা বাজারে প্রবেশ করে।

হত্যাকাণ্ডে বেঁচে যাওয়া সত্তরোর্ধব হাফেজ আজিজুর রহমান বলেন, “১৯ অগাস্ট সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যখন গোপালপুর বাজারের দুই পাশ দিয়ে পাকিস্তানিরা আসছিলো তখন তাঁদের সামনে ছিলো রাজাকাররা। বাজারের পশ্চিম প্রান্তে প্রাইমারি স্কুলের মাঠ পেরিয়ে যখন বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম তখন পদিপাড়ার রাজাকার নাজিম বলে ‘এই দাড়াও’। আমি দাড়াইনি, ইতোমধ্যে মানুষের জটলা বেঁধে গেলে আমি বলি ‘সবাই ভাগো’। মানুষজনকে চলে যেতে বলাউ আমাকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে বাজারের মাঝখানে পাকসেনাদের কাছে যায়। তারা আমাকে চেক করে, এমন সময় দেখি কাপড়ের দোকান থেকে একটা ছেলেকে বের করে এনে অমানুষিক পিটুনি দেয়। এ সময় পাকিস্তানের পক্ষে বক্তব্য দেয় পাক সেনা কমান্ডার। বক্তৃতা শেষ হবার পর সারা বাজার থেকে রাজাকার আর পাক সেনারা বর্তমানে ব্যংকের পুব পাশের খালি জায়গায় ১৩০ জনকে জড়ো করে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় খাল পাড়ে। এ সময় মাহবুবুল হক চৌধুরী (মুসলিম লীগ নেতা নসা মিয়া) পাক সেনাদের অনুরোধ করে এখানে কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। এমন সময় বর্তমানে  ব্যাংকের পু পাশের একটি কাপড়ের দোকান থেকে বাংলাদেশের পতাকা বের করে আনে কয়েকজন পাক সেনা। এতে কমান্ডারটি উত্তেজিত হয়ে নসা মিয়াকে মারধর করে এবং কাপড়-দোকানদেরর ওপর চালায় অমানুসিক নির্যাতন।

রাজাকার ও পাক আর্মিরা বাজার তল্লাশী করে প্রায় আড়াইশ জনকে জড়ো করে খালপাড়ের দিকে নিয়ে যায়। এর থেকে ৫৬ জনকে বেছে খাল পাড়ে লাইনে দাঁড় করায়। নসা মিয়ার অনুরোধে আমাকে এবং পোষ্ট ম্যান আবদুল মান্নানকে ছেড়ে দেয়। আমি যখন হেঁটে বাজার পার হচ্ছিলাম তখন দেখতে পাই লাইনে দাঁড়ানো ৫৪ জনকে একসঙ্গে ব্রাশ ফায়ার করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরিচিত একজন কসাই আমাকে বাড়ি যেতে সহায়তা করে। ১২টার দিকে এসে দেখি খাল ভর্তি হয়ে আছে হতভাগ্য মানুষের লাসে”।

নসা মিয়ার অনুরোধে দুজনের প্রাণ বাঁচলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার অপরাধে রাজাকারদের ইন্ধনে তাকে সহ ৫৪ জনকে খালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা বেলায়েত হোসেন রানু বলেন, “এই নৃশংস বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা এখনো দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। মানুষজন তাঁদেরকে চিনে”।

এ গণহত্যায় শহীদ গোপালপুর বাজারের কাপড় সেলাইয়ের দোকানের মালিক মোহাম্মদ উল্যা দর্জিত ছেলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সকাল ৭টার দিকে বাজারে আসার পর বাবা আমাকে বকুনি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি থেকে গণহত্যার খবর পাই। কিন্তু বাবা মারা গেছে সেটি আমরা জানতাম না। বাবা বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করেছিলো এবং আমাদের দোকানেই সেটা পাওয়া যায়। রাজাকার ইসমাইল তখন আবার বাবাকে দেখিয়ে দিয়েছিল”। স্থানীয় জনতা ক্লাবের উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে এ গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়।