রাম্পুরা খাল বধ্যভূমি
নাটোরের অপর একটি বধ্যভূমির নাম রামপুরা খাল। এই খালের ধারে হাজারো নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করা হয়। নাটোর থেকে ১৩ মাইল দূরে বনপাড়া রোমান ক্যাথলিক মিশন। ১৯৭১ সালের ২ মে অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, নিরাশ্রয় একদল নারী-পুরুষ-শিশু এক রাত মিশনে থেকে পরের দিন ভারতে পাড়ি দেবেন এই আশায় এখানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু পাঞ্জাব রেজিমেন্তের মেজর শেরওয়ানী তার দল্বল নিয়ে ৩ মে এই মিশনে হাজির হয়। তার সঙ্গে ছিল এক জল্লাদ হাফেজ আব্দুর রহমান। তারা একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই মিশনে আশ্রিত নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর। আশ্রিতদের সবাইকে জখম করে বেঁধে ফেলে। কয়েকজন পুরুষ পালাবার চেষ্টা করলেও তারা ধরা পড়ে। পাকসেনা ও তাঁদের দোসররা মিশনে আটককৃত সবাইকে দোয়াতপাড়া গ্রামে নিয়ে আসে। গ্রামটি ছিল নাটোর থেকে ৩ মাইল পশ্চিমে। এই গ্রামের আধা মাইল দক্ষিণে রামপুরা খালের পাশে বন্দীদের নিয়ে হত্যা করা হয়। একই রাতে ১৫৭ জন নর-নারীকে হত্যা করেছে খানসেনারা।
প্রত্যক্ষদর্শী জমির উদ্দিনসহ ৭ জন গ্রামবাসী মাটি কেটে লাশগুলো ঢেকে দিতে গেলে কয়েকজনকে জীবিত দেখতে পান। জল্লাদ হাফেজ ও শেরওয়ানী জীবন্ত মুমূর্ষ মানুষগুলোকেও মাটি চাপা দিতে তাঁদের বাধ্য করে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্র: দৈনিক পূর্বদেশ, ১০ মার্চ ১৯৭২; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খণ্ড – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৪৭-৫০; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ- ডাঃ এম এ হাসান, পৃ.-৪১৮; একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর – সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১৩৫, ১৩৮)