ছাতনী গণকবর
১৯৭১ সালের ৪ জুন নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামে নিরীহ ৪শ’ বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়। সেদিনের গণহত্যার কথা জানান ওই গ্রামের বাসিন্দা বাদল। তার বাড়িটি গণকবর পাশেই। অন্যান্য সূত্রেও উল্লেখ রয়েছে এ ঘটনার।
নাটোরের সাবেক সাংসদ প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর উদ্যোগে এখানে একটি সৌধ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রয়াত হানিফ আলী শেখ এই সৌধের উন্নয়ন করেন। তবে বর্তমানে এই স্মৃতিসৌধটি অরক্ষিত।
পাক হানাদার বাহিনী সহযোগিতায় অবাঙালি হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৩ জুন (১৯ জ্যৈষ্ঠ) ছাতনী গ্রামে চালায় ব্যাপক নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ।
এই গ্রামের ৮২ বছর বয়স্ক বৃধ নলিনীকান্ত জানান, “ওরা রাতে এসে ছাতনী দীঘির পাড়ে জমা হয়। রাত তখন প্রায় দুটো। তারা ভোর পাঁচটার দিকে গাঁ ঘিরে ফেলে। ঘরে ঘরে ঢুকে সবাইকে বের করে হাত পেছনে বেঁধে বেঁধে ধরে নিয়ে যায়। ওরা যাকেই পেয়েছে – তাঁকেই হত্যা করেছে। নারীদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে”।
সকাল ৫টা থেকে ৯টা পর্যন্ত একটানা গুলির শব্দ শোনা যায়। চলে অত্যাচার, হত্যা ও পাশবিকতার তান্ডবলীলা। এই হত্যাকাণ্ডে ৪৪২ জন শহীদ হন। হত্যাযজ্ঞ থেকে বেচে যাওয়া আবুক কাশেম জানান, “আমি যখন বুকে হেঁটে জমির আইলের পাশ দিয়ে হানাদারদের চোখের বাইরে যাচ্ছিলাম, তখন কয়েকজন যুবতিকে বিবস্ত্র অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। একজন বৃদ্ধ ও কয়েকজন যুবককে পেছনে হাত বাধা অবস্থায় মৃৎ পড়ে থাকতে দেখেছি”।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আবুল কালাম জানান, “পাকসেনা ও তাঁদের দোসরদের সংখ্যা ছিল ২৫০ জনের মতো। এর সামরিক পোশাকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছিল ৫০ জনের মতো পাক সেনা। বাকিরা সবাই অবাঙালি যাদের হাতে লম্বা লম্বা ছোরা ছিল। হাফেজ আব্দুর রহমান কালো মুখোশ পরা ছিল। তার হাতেও ছিল লম্বা ছোরা ছিল। ভোর চারটার দিকে ওরা গ্রাম ঘিরে ফেলে। ঘরে ঘরে ঢুকে সবাইকে বের করে পিঠমোড়া করে হাত বেঁধে ছাতনী স্লাইস গেটের কাছে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। সকাল পর্যন্ত নির্বিচারে হত্যা ও নারী ধর্ষণ চলে”। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্র: দৈনিক পূর্বদেশ, ৩ মার্চ ১৯৭২; দৈনিক সংবাদ, ৬ জুন ১৯৯৫; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ- ডাঃ এম এ হাসান, পৃ.-৪১৭; একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর – সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১৩৪-১৩৫, ১৮৫-১৮৬)