দিনাজপুরের বিরলের বহলা গণকবর
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বহলা গ্রামে সবেমাত্র মাগরিবের আজান শেষ হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে ৪৩ জন শিশুসহ পুরুষকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। বিরল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার রহমান আলী জানান, ১৯৭১ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পাকবাহিনী বিরল থেকে পিছু হটে দিনাজপুর শহরে পালিয়ে যাওয়ার আগে বহলা গ্রামে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পরে হানাদার বাহিনী বহলা গ্রামে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে গ্রামের ৭ বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী পুরুষদের ধরে এনে গ্রামের দক্ষিণে ফাঁকা মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। এ সময় পাশের গ্রামের মসজিদ থেকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসলে পাকবাহিনীর কাছে মাগরিবের নামাজ পড়ার অনুমতি দেয় তারা।
অজু করে সবাই নামাজে দাঁড়ায় কিন্তু নামাজ শেষ করতে দেয়নি তারা। দু’রাকাত নামাজ আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদারদের হালকা মেশিনগানের গুলিতে ঢলে পড়ে ৪৩ জন মানুষ। পুরুষশুন্য হয়ে যায় বহলা পুরো গ্রামটি। এঁদের হত্যা করার পর পাকবাহিনী সেখানে অবস্থান করায় নিহতদের স্বজনরা লাশের কাছে আসতে পারেনি। আশপাশের গ্রামে লুকিয়ে থেকে সারারাত ধরে ডুকরে ডুকরে কেদেছে শহীদের স্বজনরা। ১৩ ডিসেম্বর ভোরে পাকবাহিনী বহলা গ্রাম ছেড়ে দিনাজপুর শহরের দিকে চলে যায়। এরইমধ্যে জমাট রক্ত আর লাশের স্তুপে ভ্যাপসা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শহীদের লাশ শিয়াল-কুকুর খুবলে দেয়। দেশ স্বাধীনের পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর স্থানীয় লোকজন এসে ৪৩ জন শহীদের লাশ গণকবর দেয়। বিরলবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১ সালে গণকবরটি সংস্কার করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন স্থানীয় সাংসদ।