জল্লাদখানা বধ্যভূমি
ঢাকার মিরপুর ১০ নং সেকশনের ডি ব্লকে অবস্থিত বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ হিসাবে পরিচিত। একাত্তরে পাকহানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিদের বাঙালি নিধনযজ্ঞের নৃশংস নিদর্শন এ বধ্যভূমি। মিরপুর খালের ধারে এই নির্জন এলাকায় দুটি পয়নিষ্কাশন ট্যাঙ্কের উপর একটি পরিত্যাক্ত পাম্প হাউজ ছিল। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় ঘাতকরা একে বধ্যভূমি হিসেবে বেছে নেয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এখানে অনেক স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পরপরই এ বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। সেসময় এর আশেপাশে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল পড়েছিল। স্থানীয় জনগন জল্লাদখানার পাশে এসব দেহাবশেষ দাফন করে। প্রাথমিকভাবে সেসময় এখানকার পাম্প হাউজের প্রায় ৩০ ফিট গভীর ট্যাঙ্ক দুটির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় মানুষের কঙ্কাল। এ পাম্প হাউজের ভেতরে একটি উঁচু বেদীতে উর্দুতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে এটি জল্লাদখানা নামে পরিচিত ছিল।
১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় জল্লাদখানা বধ্যভূমিটি পুনরায় খনন কাজ শুরু করে। খননের পর এ বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলি ও ছোটবড় ৫,৩৯২ টি হাড়গোড় পাওয়া যায়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ দৈনিক পূর্বদেশ, ২১ এপ্রিল ১৯৭২; দৈনিক প্রথমআলো, ২৩ নভেম্বর ১৯৯৯; একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর-সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-২৩, ১৮০-১৮১; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ – ডা. এম এ হাসান, পৃ.-৩৬০; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খণ্ড – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-১৪৯-১৫০)