You dont have javascript enabled! Please enable it!

টাঙ্গন নদীর পুরোনো সেতুর বধ্যভূমি

২০ মে ১৯৭১, বৃহস্পতিবার রাতে ঠাকুরগাঁও ইপিআর ক্যাম্প থেকে আসা পাকিস্তানি একদল সৈন্য শহরের………

ইসলামনগর মহলটি ঘেরাও করে। জড়ো হওয়া আতঙ্কিত মানুষগুলোর কাছে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আফজাল ও ক্যাপ্টেন হারুন অর রশিদ জানতে চায়, গত নির্বাচনে তারা কোন দলকে ভোট দিয়েছে। কয়েকজনকে অকপটে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার কথা বলে। কেন তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন জানতে চাইলে কারণ ব্যাখ্যা করেন স্থানীয় ডা. মোস্তফা আহম্মেদ। এরপর এক সেনা কর্মকর্তা একটা তালিকা বের করে কতগুলো নাম পড়ে শোনায়। এঁদেরকে আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে ক্যাম্পে হাজিরা দিতে বলে। নইলে এই মহল্লার সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। এরপর সেনা কর্মকর্তা দুজন বাহিনী নিয়ে ইসলাম নগর ছেড়ে যায়। সারারাত অনেক ভাবনা-চিন্তা ও পরামর্শ করে এলাকাবাসী ঠিক করলো তালিকাভুক্তদের ক্যাম্পে হাজিরা দিতে পাঠাবে তারা। সেদিন কাউকে হত্যা না করায় তাঁদের ধারণা হয়েছিল ক্যাম্পে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন কোনো যানবহন না থাকায় পরদিন সকালে গরুর গাড়িতে করে তালিকাভুক্ত ৭জন ঠাকুরগাঁওয়ের ইপিআর ক্যাম্পে হাজিরা দিতে যায়। এঁদের মধ্যে খানকা শরীফের পীর সাহেব মরহুম মো. শামসুজ্জোহার ছোট ছেলে ও ডা. মোস্তফা আহম্মেদের ছোট ভাই ছাত্র আহম্মেদ হোসেন (১৯) এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এসএমএ ইসলামুল হক (৫৫), মো. মাহাদি ওরফে দবিরউদ্দিন (৩২), সিরাজউদ্দিন আহম্মদ (৫৫), ইয়াকুব হোসেন (৪৫), মাজহারুল ইসলাম (৪৫) ও মো. নুরুজ্জামান (৩৬)।

তারা ক্যাম্পে যাওয়ার পর কি হয়েছিল তা অনেক খোঁজ করেও জানতে পারেনি স্বজনরা। পরে জানা যায়, ২৪ মে তাঁদেরকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় টাংগন নদীর পুরোনো সেতুর কাছে এক বধ্যভূমিতে। সেখানে আরও ৮ জনের সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁদের। দেওয়া হয় মাটি চাপা। এখানে আর ৮ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করে তাঁদের সঙ্গেই মাটি চাপা দেওয়া হয়। এই ৮ জনকে ধরে আনা হয়েছিল বালিয়াডাঙ্গী থেকে। এঁদের পরিচয় জানা যায়নি। নৃশংসতার সাক্ষী এই বধ্যভুমিটি চিহ্নিত করে বাঁধানো হয়েছে।

অন্য সূত্রেও উল্লেখ আছে-পাক সেনারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে টাঙ্গন নদীতেও ফেলে দেয়। পাকসেনা ও তাঁদের দোসররা ছাত্রনেতা আহমদ আলী, ইয়াকুব হোসেন মোজাফফর, দবিরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান, সিরাজ উদ্দিন প্রমুখকে বেয়নের দিয়ে খুচীয়ে হত্যা করে টাঙ্গন নদীতে ফেলে  দেয়। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর-সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৯৪; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা অ বিচারের অন্বেষণ ডা. এম এ হাসান, পৃ.-৪১২; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খণ্ড মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৬৩; মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর-অংশগ্রহনকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, সুকুমার বিশ্বাস সম্পাদিত, পৃ.-৩১-৩২)

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!