You dont have javascript enabled! Please enable it!

মির্জাপুর বাজার বধ্যভূমি

একাত্তরের ৭ মে পাক হানাদার বাহিনীর হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে বংশাই ও লৌহজং তীরবর্তী মির্জাপুর পরিণত হয় এক ভুতুড়ে পুরীতে। সেদিন ছিল শুক্রুবার। প্রতিসপ্তাহের মতো এদিনও থানা সদরে হাট বসে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম হয় প্রচুর। বেলা আড়াইটা। পৌণে তিনটার দিকে ক্যাপ্টেন আইয়ুব ও তার স্থানীয় সহযোগী মাওলানা ওয়াদুদের নেতৃত্বে একটি জীপ ও দু’টি ত্রাকে করে প্রায় ৭০/৮০ জন পাক সেনা কুমুদিনী হাসপাতালের প্রধান ফটকে এসে নামে। তারা দ্রুত বাশের সাকো পেরিয়ে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মির্জাপুর গ্রামকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে। যাকে সামনে পায় তাঁকেই গুলি করে হত্যা করতে থাকে। প্রায় দেড় ঘন্টার এই হত্যাযজ্ঞে মির্জাপুর ও পার্শবর্তী আন্ধরা গ্রামের আবাল বৃদ্ধা ও বনিতাসহ ২৭ জন সাধারণ বাঙালি শহীদ হন। এরপর শুরু করে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ। সেদিন রাত ও পরদিন হানাদারদের লুটপাট ও নির্যাতনে থানা সদর ও আশেপাশের জনপদ পরিণত হয় বিরাণভূমিতে।

সেদিন যাদের হত্যা করা হয় তাঁদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হচ্ছেন – মধুসূদন সাহা, সুভাষ সাহা, কমল সাহা, উমাচরন সাহা, মঙ্গল চন্দ্র সাহা, ধীরেন্দ্র কুমার সাহা, বলাই সাহা, কেরু শীল, যুগলপদ বণিক, গোপাল বণিক, গণেশ বণিক, সাধু মালী, রাম চন্দ্র সাহা, গণেশ নমদাস, ভ্যাবল নমদাস, ভাদুরি সূত্রধর, সুমতি বণিক, সুভাষ সাহা (২), রনজিত সাহা, গঙ্গাচরণ কর্মকার, নগনি বাশফোড়, নিতাই বণিক, হরিপদ সাহা ও সুভাস চন্দ্র সাহা। ৮ মে সন্ধ্যায় বাসায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় থাকায় ও হানাদারদের কাজে বিরোধীতা করায় মাজম আলীকে মির্জাপুর বাস স্ট্যান্ডে দার করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। (দূর্লভ বিশ্বাস, মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক ও সাংবাদিক, মির্জাপুর এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যসূত্র: যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ ডা. এম. এ. হাসান, পৃ.-৩৬৯; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, তৃতীয় খণ্ড মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৮৯; একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১০৮; দৈনিক সংবাদ, ১১ এপ্রিল ১৯৯৪, ৯ মে ১৯৯৩)

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!