কামারজানি বাজার বধ্যভূমি
শহীদের বুকের উপর কাঠ চেরাই কল, কেটে চলছে কাঠ। কাঠের গুড়া নয়, যেন সর্বক্ষণ ঝরছে রক্ত। সেই রক্ত কি তবে কারো গায়ে লাগছে না। ৪০ বছর তো পার হয়ে গেল অসংখ্য শহীদদের বুকের উপর একটু স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হলো না। বসানো হল কাঠ চেরাই কল। কামারজানি বাজারের পান-সিগারেট ব্যবসায়ী বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মেহের আলী এমন ভাবে তার অভিব্যক্তি ব্যাক্ত করেন।
তিনি জানান, গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কামারজানি গ্রাম। কামারজানি হাইস্কুল ’৭১ এ ছিল পাক সেনাদের ক্যাম্প। ক্যাম্পের পশ্চিমে বাজার। ওই বাজারে গাইবান্ধা শহর থেকে দাড়িয়াপুর হয়ে বাজারে ঢুকতেই হাতের ডান ধারে কামারজানি বধ্যভূমি। বর্তমানে ঐ জায়গাটিতে অবু হোসেনের কাঠ চেরাই কল। ’৭১ জায়গাটি ছিল বাঁশ ঝাড় ও নিচু জলা ভূমি। এখানে খাঁন সেনারা মানুষকে হয়া করে মাটি চাপা দেয়। কখনো বা হত্যা করে জলাশয়ে লাশ ফেলে রাখা হতো। শিয়াল কুকুর ছিঁড়ে খেতো শহীদদের দেহের অংশ। পাক হান্দার বাহিনীরা কামারজানিতে ক্যাম্প করে মে মাসের দিকে। নদী পার হয়ে এ মুক্তি সেনারা কুড়িগ্রাম হয়ে ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যেত। তাই এ পথে পাক সেনাদের ছিল কঠোর পাহারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁধ ধরে কামারজানি থেকে দাড়িয়াপুর-রসুলপুর-কাইয়ারহাট-ফুলছড়ি এ পথে পাক সেনাদের অবাধ চলাচল ছিল।
পূর্ব বারো বলদিয়া গ্রামের রহুল আলম জানান, মে মাসের কোনো এক সময়ে পূর্ব গিদারী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন বাড়ি আসেন। দালালদের কাছে এ খবর পেয়ে পাক সেনা তাকে বাড়ি থেকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তারপর তাকে অমানবিক নির্যাতন শেষে কামারজানি গ্রামের উমেদ আলী, ছালামত মিয়া, ময়েজ উদ্দিন, ছাবেদ আলী, জসিজলসহ ৯ জনের সঙ্গে একই দিনে হত্যা করে এখানে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
জেলা বধ্যভূমি সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক জি. এম. মিঠু জানান, ১৯৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর গথির গাইবান্ধা জেলা বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটি তার নেতৃত্বে এক জরিপ চালিইয়ে এ বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করে।