You dont have javascript enabled! Please enable it! সাঘাটা সুজালপুর বধ্যভূমি - সংগ্রামের নোটবুক

সাঘাটা সুজালপুর বধ্যভূমি

একটু অজ পাড়াগাঁ সুজালপুর। এই পাড়া গাঁয়েই কোন কারণ ছাড়াই ৬ ডিসেম্বর সকাল ৯ টার দিকে পার্শ্ববর্তী মেনের পাড়া, পূর্ব ছিলমনের পাড়া, পবনতাইড়, খামার পবন তাইড় গ্রামেও হানা দেয় তারা। তারা গ্রামগুলি থেকে যার যা পেয়েছে তাই লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে পুড়ে দেয় তারা।

ভিটেমাটির মায়ায় বাড়িতে ছিল যারা তাঁদের মধ্যে পূর্ব ছিলমনের পাড়ার ফয়েজ উদ্দিন আহম্মেদ, জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, আমিনুল ইসলাম, ইউসুফ আলী, ছিলমনের পাড়া সিনিয়র মাদ্রাসার আরবি শিক্ষক মৌলভী মো. মোজাম্মেল হক, সুজালপুর গ্রামের মনির উদ্দিন কবিরাজ, ময়ছেন আলী কবিরাজ, শুকালু শেখ, সুজালপুর গ্রামের (বর্তমান বোনারপাড়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ) আবদুল মতিন খন্দকারসহ ১১ জনকে ধরে মাদ্রাসা মাঠে (বর্তমান সুজারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) নিয়ে আসে হানাদাররা। তাঁদের কাছ থেকে মুক্তি বাহিনীর সন্ধান চায়; পাক সেনাদের কাছে থাকা ওই গ্রামগুলির ম্যাট্রিক (এসএসসি) ও আইএ (এইসএসসি) পাশ করা ছাত্রদের ঠিকানা তাঁদের কাছে জানতে চায়। কিন্তু তথ্য না দেওয়ায় তাঁদের উপর নেমে আসে নির্যাতন। এক পর্যায়ে মাদ্রাসা মাথের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দড়ি দিয়ে বেঁধে সার করে তাঁদের দার করানো হয়। এরপর তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

১১ জএর মধ্যে ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে যান সুজালপুর গ্রামের (বর্তমান বোনারপাড়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ) আবদুল মতিন খন্দকার, ছিলমনের পাড়া সিনিয়র মাদ্রাসার আরবি শিক্ষক মৌলভী মো. মোজাম্মের হক ও পূর্ব ছিলমনের পাড়ার মো. আমিনুল ইসলাম মারা গেছেন। সেই অসহ্য যন্ত্রণার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে যান তারা দুই জন।

সুজালপুর গ্রামের আবদুল মতিন খন্দকার (সে সময় তিনি ১০ম শ্রেণীর ছাত্র) জানান, ৪০ টি বছর কেটে গেল, এখনও তাকে প্রতিরাতে ঘুমের মধ্যে পাক সেনা ও তাঁদের দোসররা তাড়া করে। এ তাড়া থেকে বাঁচতে কত চেস্টাই না করেছেন তবুও মুক্তি পাননি তিনি। তবে রাজাকারদের বিচার হলে হয়তো পাকসেনা ও তাঁদের দোসরদের তাড়া থেকে তিনি রেহাই পাবেন।

গত ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ঐ মাঠে সে দিনের ৮ শহীদসহ সাঘাটায় ২৪ অক্টোবর সম্মুখ সমরে শহীদ ১৭ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিতে এখানে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিসৌধ। (তথ্যসূত্র: সুজালপুর গ্রামের (বর্তমান বোনারপাড়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ) আবদুল মতিন খন্দকার ও জেলা বধ্যভূমি সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক জি. এম. মিঠুর সাক্ষাৎকার)