হাতিয়ার দাগারকুটি বধ্যভূমি
১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুটি এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে ৬৯৭ জন মানুষকে হত্যা করে। সেদিন ছিল ২৩ রমজান। ফজরের নামাজের আগে হঠাত করে চারিদিক থেকে বৃষতির মতো গুলি আর মর্টার সেলের গোলা বর্ষণ শুরু হয়। ঘুমন্ত মানুষ হঠাত জেগে দিকবিদিক ছুটতে থাকে। কিন্তু চারদিক ঘিরে ছিল পাক হানাদার বাহিনী। তাঁদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি উলিপুরের অনন্তপুর, রামখানা, নয়াডরা, বাগুয়া, নীলকন্ঠ, দাগার কুটিসহ ৭টি গ্রামের মানুষ। পাকবাহিনী ৬৯৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে দাগার কুটি গ্রামের খালের পাড়ে জড়ো করে কাউকে গুলি করে এবং কাউকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে।
এসব শহীদদের স্মরণে অনন্তপুর দাগারকুটি গ্রামে তৈরি করা হয়েছিল স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধের এখন কোন চিহ্ন নেই। কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দাগারকুটি বধ্যভূমিসহ স্মৃতিসৌধ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন হাতিয়া ইউনিয়নের পরিষদ চত্বরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যে বলা হয়েছে, সেদিন এখানে পাকবাহিনী প্রায় ৭৬৪ জনকে হত্যা করে, ঘন্টাখানেকের মধ্যে গুলি করে সবাইকে হত্যা করে সেখানেই পুঁতে রাখে। এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনন্তপুরের তাহফেল মিয়া। তার অন্তত ৪০০ লোককে গুলি করে হত্যা করতে দেখেছেন। (সূত্রঃ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ – ডাঃ এম এ হাসান, পৃ.-৪১১; একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর – সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-৮১–৮২; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ড – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-২৭৭; দৈনিক সংবাদ, ১৩ নভেম্বর ১৯৯৯)